Friday, December 5, 2008

দায়বদ্ধতা

ঢাকা শহরের মেয়র দুপুরে অফিসে বসে লাঞ্চ করছেন। টেবিলে মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে শুরু করে বিদেশী জুস কোন কিছু বাদ নেই। তারপরও মেয়র সাহেব একটু টেনশন নিয়ে খাচ্ছেন। কারণ চারদিকে যে রকম ভেজাল চলছে ভয় পাওয়ারইতো কথা। এই যে মিনারেল ওয়াটার তিনি খাচ্ছেন এর ভিতরে কি আসলেই মিনারেল ওয়াটার আছে নাকি ট্যাপের পানি বোতলে ভরে কোম্পানী বাজারজাত করছে। কোম্পানীগুলি আজকাল এমন হারামী হয়ে উঠেছে বলার মতো না। লাভের জন্যে এরা পারে না এমন কিছু নেই। আর এই যে বিদেশী জুস এটা কতটুকু নিরাপদ। বিদেশী কোম্পানীগুলিতো আরও এক কাঠি বাড়া। এরা যতসব বাতিল মেযাদ উত্তীন্ন জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেবে আমাদের দেশে। আর আমরা কোন কিছু না দেখেই তা দেদারসে খাচ্ছি। বিদেশী লেবেল দেখলে আমাদের মাথা ঠিক থাকে না।বাইরে কিসের হইচই হচ্ছে। মেয়র সাহেব ভ্রূ কুচকে পি.এ কে তলব করেন। -স্যার বাইরে কিছু লোক এসে জড় হয়েছে।-কি চায় তারা?-আপনার সাথে দেখা করতে চায়।-কারা এরা?-এরা সুইপার। এরা মূলত সুইপার এর কাজ করে। গতকাল যে সুইপার কলোনীতে আগুন লেগে ছিল এরা সেখানকার বাসিন্দা।মেয়র সাহেবের খাবার রুচি নষ্ট হয়ে গেল। কোথায় দুপুর বেলা একটু খেয়ে বিশ্রাম করবেন তানা কোথা থেকে কোন উটকো ঝামেলা এসে হাজির। -আগুন লাগলেতো ফায়ার ব্রিগেডের কাছে যাবে আমার কাছে কি?-না, স্যার আগুনে এদর সমস্ত কিছু পুড়ে গেছে। ঘরে পড়ার জন্যে কাপড়, খাবার জন্যে ভাত কিছুই নেই। এলাকার মেয়র হিসেবে আপনার সহযোগিতা চাচ্ছে তারা।-ঠিক আছে এদের বলে দাও- আমরা একটি তদন্ত টিম গঠন করে এদের এলাকায় পাঠাব। তদন্ত টিম, তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে আগুন কেন লাগল, কিভাবে লাগল। জান-মালের কি রকম ক্ষয় ক্ষতি হল। তারপর আমরা সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করব। তারপর সরকার ফাইনাল রিপোর্ট দিলে আমরা পরবর্তীতে তাদের পূর্নবাসনের জন্যে করণীয় ঠিক করব।পি.এ ছেলেটা কম বয়সী। সে সরকারী অফিসের মার প্যাচের সাথে তেমন অভ্যস্ত নয়। তার মাথায় ঢুকছে না এভাবে তদন্ত কমিটি নিয়ে কাজ শুরু করা হলে কয়েক মাস লেগে যাবে সিদ্ধান্ত নিতে। আর তদন্ত কমিটি তদন্ত করে কি বের করবে আগুনে পুড়ে যে ছাই তৈরী হয়েছে তা দিয়ে কতগুলি বাসন মাজা যাবে। যারা মারা গেছে তারা কি সত্যিই আগুনে পুড়ে মরেছে, নাকি হার্ট এট্যাক করেছে।-কি হল ছাগলের মতো দাড়িয়ে আছ কেন?-না স্যার, আমি ভাবছিলাম এভাবে তো অনেক সময় লেগে যাবে। ততদিন তারা কি খেয়ে বেচে থাকবে।-দেশের ১৫ কোটি লোকের খাবারের ব্যবস্থা করাতো আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এদের দুখে দুখি। কিন্ত সামনে নির্বাচন। মেয়র হিসেবে আমার কত কাজ। এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মত আমার মাথা কোথায়-সরি আমার সময় কোথায়। যাও এদের দু একটা আশার কথা শুনিয়ে আপাতত বিদেয় করে দাও।মেয়র সাহেবের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। থেকে থেকে টক ঢেকুর উঠছে। খাবারটা সম্ভবত ঠিক মতো হজম হয়নি। মেয়র সাহেব জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। বাইরে কয়েকশ লোক জড়ো হয়েছে। বেশীর ভাগের পরনে শতছিন্ন কাপড়। তা লজ্জা ঢাকার বদলে তাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। বিশেষত্বহীন ভাঙ্গাচোরা চেহারা। নোংরা চুল দাড়ি জট পাকিয়ে রয়েছে। দুই চোখে কোন জীবিত মানুষের অনুভুতি নেই। যেন কোন মরা মানুষের চোখ। তাহলে এরাই সুইপার। এদের কাজ সমাজের আবর্জনা পরিস্কার করা।এক সময় লোকগুলি ধীরে ধীরে চলে যায়। কিন্তু চারপাশটা এরা কেমন নোংরা করে দিয়ে গেছে।মেয়র সাহেবের হুংকারে পি.এ ছুটে আসে। কি হয়েছে স্যার?-বাইরে এত নোংরা কেন। পরিস্কার করার ব্যবস্থা কর।পি.এ ভয়ে ভয়ে বলে স্যার বাইরে সব ঠিক আছে, কোন আবর্জনা নেই।-আবার মুখে মুখে তর্ক। আমি কি ভুল দেখছি নাকি। কি আশ্চর্য উনার এসি রুমটা কিভাবে যেন আবর্জনা দিয়ে ভরে যাচ্ছে। আবর্জনার র্দূগন্ধে তিনি ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছেন না।পি.এ বুঝতে পারছে না তার স্যার রুমে পাগলের মতো এয়ার ফ্রেশনার ছড়াচ্ছেন কেন।

No comments: