Tuesday, April 28, 2009

বিখ্যাতদের মজার উত্তর

বিখ্যাতরা প্রায়ই বিভিন্ন প্রশ্নের মজার উত্তর দিয়ে থাকেন। তাই শিরোনাম- বিখ্যাতদের মজার উত্তর। যেহেতু তারা বিখ্যাত।
তবে এ ধরনের বেফাস মন্তব্য আমি করলে শিরোনাম হত- ছাগু ব্লগারের আতলামি। যেহেতু আমি অখ্যাত।

১. সুপারম্যান খ্যাত অভিনেতা ক্রিস্টোফার রীভকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল -সুপারম্যান আর জেন্টেলম্যান এর মধ্যে পার্থক্য কি?
তিনি গম্ভীর মুখে উত্তর দিলেন- সহজ পার্থক্য। জেন্টেলম্যানরা আন্ডারঅয়্যার পরে প্যান্টের নিচে আর সুপারম্যান পরে ওপরে।

২. কিংবদন্তীমুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে প্লেনে উড়বার আগে সিট বেল্ট বাঁধার কথা মনে করিয়ে দিলেন বিমানবালা। আলী অহংকারী গলায় উত্তর দিলেন- সুপারম্যানের সিট বেল্ট বাধার প্রয়োজন হয়না।
কিন্তু সত্যিকার সুপারম্যানের প্লেনে চড়বারও দরকার হয় না-বিমানবালা চটপট উত্তর দেয়।

৩. স্বামী বিবেকানন্দের বাবা তার বৈঠকখানায় অনেকগুলি হুকো রাখতেন যেন এক জনের পান করা হুকো মুখে দিয়ে অন্যের জাত না যায়। একদিন বিবেকানন্দ সবগুলো হুকোয় একবার করে টান দিলেন।
এ তুমি কি করলে -ক্ষেপে গিয়ে উনার বাবা জানতে চাইলেন।
দেখলাম জাত যায় কিনা-বিবেকানন্দের উত্তর।

৪. একবার এক মহিলা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য কিছু পিঠা বানিয়ে নিয়ে যান। কেমন লাগল পিঠা জানতে চাইলে কবি গুরু উত্তর দেন- লৌহ কঠিন, প্রস্তর কঠিন, আর কঠিন ইষ্টক, তাহার অধিক কঠিন কন্যা তোমার হাতের পিষ্টক।

৫. কবি মাইকেল মধুসুদনের অর্থিক অনটনের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। একদিন এক মাতাল উনার কাছে সাহায্য চাইতে এলে বিদ্যাসাগর বললেন-আমি কোন মাতালকে সাহায্য করি না।
কিন্তু আপনি যে মধুসুদনকে সাহায্য করেন তিনিওতো মদ খান-মাতালের উত্তর।
বিদ্যাসাগর উত্তর দেন -ঠিক আছে আমিও তোমাকে মধুসুদনের মত সাহায্য করতে রাজী আছি তবে তুমি তার আগে একটি মেঘনাথ বধ কাব্য লিখে আন দেখি।

৬. বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর মেধার তুলনায় চেহারা ছিল নিতান্তই সাদামাটা। একবার এক সুন্দরী অভিনেত্রী প্রস্তাব দেন-চলুন আমরা বিয়ে করে ফেলি। তাহলে আমাদের সন্তানের চেহারা হবে আমার মত সুন্দর আর মেধা হবে আপনার মত প্রখর।
কিন্তু যদি ঠিক এর উল্টোটা ঘটে তবে কি হবে-আইনস্টাইন নির্বিকার ভাবে উত্তর দেন।

৭. স্যার উইন্সটন চার্চিলের তর্ক হচ্ছিল নারী নেত্রী ন্যান্সি অ্যাস্টয়ের সাথে। তর্ক একসময় রীতিমতো ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যায়। গলা উচিয়ে ন্যান্সি বলেন-তোমার সাথে বিয়ে হলে কফিতে বিষ মিশিয়ে আমি তোমাকে খুন করতাম।
চার্চিল উত্তর দেন- তোমার মত বউ হলে বিষ খেয়ে মরতে আমার কোনও আপত্তি থাকত না।

৮. একবার এক ছাত্র মার্ক টোয়েনের কাছে এসে বলল-আমি ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের উপকার করতে চাই।
মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন-তুমি ডাক্তারী পড়া ছেড়ে দিয়ে এমনিতেই মানবজাতির অনেক উপকার করেছ। আর উপকার না করলেও চলবে।

৯. মার্ক টোয়েন একবার উনার এক সাংবাদিক বন্ধুকে বললেন বছর দশেক লেখালেখি করার পর বুঝতে পারলাম এ ব্যাপারে আমার কোনও প্রতিভা নেই।
তাহলে এটা বুঝবার পরও তুমি কেন লেখালেখি চালিযে যাচ্ছ-বন্ধু জানতে চায়।
মার্ক টোয়েন উত্তর দেন-কি করব, ততদিনে আমি রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছি যে।

১০. সমাধীস্থলের চারদিকেল দেয়ালের জন্য মার্ক টোয়েনের কাছে চাঁদা চাইতে গেলে তিনি উত্তর দেন-সমাধীস্থলের চারদিকে দেয়াল দেয়ার কোন প্রয়োজন দেখি না। কারণ যারা ওখানে থাকে তাদের বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা নেই। আর যারা বাইরে থাকেন তাদের ওখানে যাবার কোন ইচ্ছে আছে বলে আমার মনে হয় না।

সংগ্রহ: আসমার ওসমান সম্পাদিত বিখ্যাতদের সত্যি জোকস।









Monday, April 27, 2009

রাজনীতির কৌতুক

১. আলোচনা হচ্ছিল মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের এক মন্ত্রীর মধ্যে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী: আমরা আমাদের দেশের লোকদের বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। ধরা যাক শীতার্ত একজন লোক। তাকে আমরা আগুন জ্বালানো শিখিয়ে দেই। ফলে তার আর কখনই উষ্ণতার অভাব হয়না।
বাংলাদেশের মন্ত্রী: আমাদের নীতি আরও সহজ। একজন শীতার্তকে আগুন জ্বালানো শিখানো সমসাপেক্ষ কাজ। আমরা বলি একজন শীতার্তকেই আগুনে পুড়িয়ে দাও, তাহলে বাকী জীবন আর তার
উষ্ণতার দরকারই হবে না।

২. মারা গেছেন বুশ। ততদিনে আমেরিকা সারা বিশ্বে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত বিধ্বস্থ। তাই বুশের মৃত্যুতে আমেরিকানরা উল্লসিত। বুশকে কবর দেয়ার দায়িত্ব নিতে চাইল তার আজীবনের বন্ধু ইহুদীরা। ইহুদীদের প্রধান এ ব্যাপারে আমেরিকানদের কাছে আবেদন জানাল। কিন্তু আমেরিকানরা এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল-যা ব্যাটা, তোদের বিম্বাস নেই। তোরা যীশু খৃষ্টকে কবর দিয়েছিলি, তিনি তিনদিন পর বেঁচে উঠেছিলেন। বুশকে পুনর্জন্ম নেবার কোন রিক্স আমরা নিতে পারি না।

৩. জর্জ ওয়াশিংটন এক দিনের জন্য পৃথিবীতে আসার ইচ্ছা পোষণ করলে ঈশ্বর তার ইচ্ছা পূরণ করেন। কফিন থেকে পুর্নজন্ম নিয়ে বেরিয়ে এসে সামনে কবরস্থানের কেয়ারটেকারকে দেখতে পান। জর্জ ওয়াশিংটনের খুব ক্ষিদে পেয়েছে। কেয়ারটেকারকে বললেন-তুমি কি আমার জন্য একটু শিক কাবাবের ব্যবস্থা করতে পারবে। সামনে জলজ্যান্ত ওয়াশিংটনকে দেখে কেয়ারটেকারের ভিমরি খাবার অবস্থা। এক্ষুণি ব্যবস্থা করছি স্যার-কেয়ারটেকার পড়িমড়ি করে ছুট লাগাল। প্রথমেই সে গিয়ে ফোন দিল জর্জ বুশের কাছে। জর্জ বুশ কেয়ারটেকারকে নিয়ে ছুটে চলে আসেন কবরস্থানে। বুশকে দেখে ওয়াশিংটন বিরক্ত গলায় কেয়ারটেকারকে বলেন- তোকে আনতে বললাম শিক কাবাব, আর তুই কিনা আস্ত গরুটাই এখানে নিয়ে এলি।

৪. দেশের সেরা দশজন রাজনীতিবিদ নিয়ে দূর গ্রামে বিধ্বস্থ হয়েছে একটি হেলিকপ্টার। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দল রওয়ানা হল। গ্রামে পৌছে দেখল দশটি সারিবদ্ধ কবর। গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই তাদের কবর দিয়ে ফেলেছ। উদ্ধারকারী দলের নেতা পাশে দাড়ানো গ্রামবাসীর কাছে জানতে চাইলে- সবাই কি এক সাথেই মারা গিয়েছিল।
লোকটি দাঁত কেলিয়ে বলল-দুয়েক জন অবশ্য কবর দেয়ার আগ পর্যন্ত বলছিল যে, তারা মরেনি, বেঁচে আছে। আমরা তাদের কথা মোটেও বিশ্বাস করিনি। কারণ আপনারাতো জানেনই যে, রাজনীতিবিদ নেতারা কত মিথ্যা কথা বলে থাকেন। আমরা সবাইকেই কবর দিয়েছি।

৫. বাংলাদেশের টি.এন্ড.টি মন্ত্রী গেছেন ব্রিটেনে। ব্রিটেনের টি.এন্ড.টি মন্ত্রী উনাকে জংলা মত একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে বললেন-মাটি খুড়ুন।
বাংলাদেশের মন্ত্রী মাটি খুড়তে শুরু করলেন। দশ ফুট মাটি খুড়ে পাওয়া গেল জীর্ণ টেলিগ্রাফের তার। ব্রিটেনের মন্ত্রী সগর্বে বললেন-দেখলেনতো দুইশ বছর আগেও আমাদের দেশে টেলিগ্রাফের প্রচলন ছিল।
এর কিছুদিন পর ব্রিটেনের টি.এন্ড.টি মন্ত্রী এসেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মন্ত্রীও উনাকে জংগলে গিয়ে মাটি খুড়তে অনুরোধ করলেন। মন্ত্রী খুড়তে আরম্ভ করলেন। দশ-বিশ-ত্রিশ ফিট পর্যন্ত খোড়া হল। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। ব্রিটেনের মন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন-কই, কোন তারইতো পাচ্ছি না।
এবার গর্বের সাথে উত্তর দিলেন বাংলাদেশের মন্ত্রী-তাহলেই বুঝুন, দুইশ বছর আগেই আমাদের দেশে মোবাইল ফোনের প্রচলন ছিল।

৬. আমাদের দেশের এক রাজাকার মন্ত্রী যাচ্ছেন গ্রামের রাস্ত দিয়ে। হঠাৎ করে একটি শূকর ছানা উনার গাড়ীর নিচে চাপা পড়ল। মন্ত্রী ড্রাইভারকে বললেন -আহা, কার জানি শূকর ছানা। তুমি গ্রামের ভিতরে গিয়ে এর মালিককে উপযুক্ত দাম দিয়ে এস।
ঘন্টা খানেক পর মন্ত্রীর ড্রাইভার হাসতে হাসতে হাতে একটি ঝুড়িতে করে অনেক ফলমূল-শাকসব্জি নিয়ে আসছে-গ্রামবাসীরা ভালবেসে আমাকে এ সব উপহার দিয়েছে।
মন্ত্রী খুব অবাক হলেন। জানতে চাইলেন-তুমি তাদের গিয়ে আসলে কি বলেছ?
ড্রাইভার উত্তর দিল-আমি গিয়ে বললাম, আমি অমুক মন্ত্রীর ড্রাইভার। তারপর একটু থেমে বললাম, শুওরের বাচ্চাটাকে রাস্তায় আমিই মেরে ফেলেছি। তারপর সবাই খুশি হয়ে আমাকে এই সব দিল।

৭. বিরোধী দলীয় নেতা সমুদ্র সৈকতে একটি প্রাচীন বোতল কুড়িয়ে পেলেন। বোতলের ছিপি খুলতেই ভেতর থেকে এক দৈত্য। নেতাকে কুর্নিশ করে দৈত বলল-আপনি আমাকে জাদুর বোতল থেকে মুক্ত করেছেন, তাই আমি আপনার তিনটি ইচ্ছা পূরণ করব। তবে শর্ত হচ্ছে আপনি যা পাবেন আপনার প্রতিপক্ষ নেতা পাবে এর দুই গুণ।
ঠিক আছে-নেতা রাজী হলেন। আমার প্রথম ইচ্ছা একটি বিলাস বহুল বাড়ী, ২য় ইচ্ছা একটি বিলাস বহুল গাড়ী, আর শেষ ইচ্ছা আমি আমার একটি কিডনি জনস্বার্থে দান করে দিতে চাই।

৮. নির্বাচন সামনে রেখে এক ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানের মধ্যে কথা হচ্ছিল।
ডেমোক্রেট-আমি যখন কোন টেক্সিতে চড়ি তখন সেই টেক্সি ড্রাইভারের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করি। প্রথমে তার ছেলে মেয়ের কোজ খবর নেই, তাকে মোটা বকশিস দেই। এবং নামার সময় বলি ডেমোক্রেটদের ভোট দিও।
রিপাবলিকান-আমি টেক্সিতে উঠেই ড্রাইভারকে গালাগালি দিতে শুরু করে দেই। সিগারেট ধরিয়ে তার মুখে ধোয়া ছেড়ে দেই, এক টাকাও টিপস দেই না। তবে নামার সময় তোমার মতই বলি ডেমোক্রেটদের ভোট দিও।



সংগ্রহ: আরিফ জেবতিক সম্পাদিত পলিটিক্যাল জোকস।


Saturday, April 25, 2009

পৃথিবী বিখ্যাত সব ব্যর্থ কাহিনী

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিভিন্ন ব্যর্থতার কাহিনী। এখানে পৃথিবীর বিখ্যাত সব ব্যর্থতার কাহিনী দেয়া হল। যা পড়ে আমাদের নিজেদের ব্যর্থ জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসতে পারে। অতএব Don’t worry be happy.

১. ব্যর্থতম লেখক: জার্মানীর এক লেখক তার জীবনে ৬৪ টা বই লেখেন যার মধ্যে মাত্র ৩টি বই এর প্রকাশক ধরতে তিনি সমর্থ হন। এর মধ্যে একটি বই প্রকাশক তার নিজের নামে ছাপিয়ে ফেলে। দ্বিতীয়টি ভুলক্রমে লেখকের নাম ছাড়াই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর তৃতীয়টির ক্ষেত্রে এ রকম কোন সমস্যা হয়নি। পুরো বইযের বান্ডিল মার্কেটে যাবার পথে মিসিং হয় আর সে বই এর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য এক ঠোঙ্গা বিক্রেতার কাছে হারানো বই এর হদিস পাওয়া যায়। তবে বই হিসেবে নয় ঠোঙ্গা হিসেবে।

২. ব্যর্থতম ব্যাংক ডাকাত: ১৯৭১ সালে তিনজন ব্যাংক ডাকাত ডাকাতির উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের স্থানীয় একটি ব্যাংক এ ঢুকে পড়ে। এটা ছিল তাদের প্রথম ব্যাংক ডাকাতি। তাই উত্তেজনাবশত তারা ভুল করে ব্যাংক এ না ঢুকে পাশের ডির্পামেন্টাল স্টোরে ঢুকে পড়ে। হাতের অস্ত্র উচিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে আমরা ব্যাংক লুট করতে এসেছি। দোকানের কর্মচারীরা এটাকে উচুদরের রসিকতা ভেবে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। তাদের হাসি শুনে ডাকাতরা ঘাবড়ে গিয়ে কিছু না বুঝেই এক গাদা কয়েন চকলেট নিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।

৩. ব্যর্থতম কম্পিউটার প্রোগ্রামার: জার্মানীর জন মারথুস পেশায় একজন সৌখিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তার কাজ হচ্ছে এন্টি ভাইরাস প্রোগ্রাম তৈরী করা। একবার বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে তিনি একটি এন্টি ভাইরাস তৈরী করে পরীক্ষামূলক ভাবে বন্ধুর পিসিতে এটাকে টেস্ট রান করান। পিসিটি চালাতে গিয়ে দেখা গেল তার এন্টি ভাইরাসটি আসল ভাইরাস হয়ে বন্ধুর পিসির হার্ডডিস্ক ক্রাশ করে ফেলেছে।

৪. ব্যর্থতম বই: পশ্চিমা লেখক রুডলফ স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি নামে একটি গবেষণামূলক বই লেখেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বইটি বেস্ট সেলার বই এর তালিকায় চলে যায়। এর মধ্যে আকস্মাৎ লেখকের মৃত্যূ হলে ময়না তদন্ত করে ডাক্তার সার্টিফিকেট দেন। তাতে মৃত্যুর কারণ দেখানো হয় পুষ্টিহীনতা। এ খবর প্রচার হলে পরের সপ্তাহেই বই এর বিক্র বেস্ট সেলার থেকে ওর্স্ট সেলারে নেমে আসে।

৫. ব্যর্থতম আর্কিওলজিস্ট: মরক্কোর আবিওয়ালা আল রাজি একজন সৌখিন আর্কিওলজিস্ট। পেশায় তিনি একজন ইন্জিনিয়ার হলেও তার নেশা হচ্ছে প্রাচীণ কালের হাড়-গোড় খুজে বের করা। দীর্ঘ বার বছর পরিশ্রম করে তিনি নিজের এলাকাতেই নিয়ানডারথল যুগের মানুষের চোয়াল খুজে পান। যা নিয়ে আর্কিওলজিস্টদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পরে কার্বন টেস্টে ধরা পড়ে যে ঐ চোয়ালটি কোন নিয়ানডারথল যুগের মানুষের নয় তারই মৃত দাদার চোয়াল।

৬. ব্যর্থতম শিক্ষক: আফ্রিকার এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক প্রাইমারী স্কুল। স্কুলের অবস্থা খুবই করুণ। ঐ স্কুলে কোন ঘন্টা ছিল না। ফলে তারা ক্লাশ শেষ হলে বা ছুটির আগে স্কুলের বাইরে অপেক্ষমান এক আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে ঘন্টা ধার করে এনে বাজাত। কিন্তু এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আইসক্রিমওয়ালা ঐ স্কুলে ঘন্টার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকুরী দাবী করে বসে। স্কুলে শিক্ষকের কিছু স্বল্পতাও ছিল আবার ঘন্টারও দরকার তাই তার চাকরী হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর ঐ ঘন্টা স্কুল থেকে চুরি হয়ে গেলে ঐ আইসক্রিমওয়ালা শিক্ষকের চাকরী চলে যায়।

৭. ব্যর্ততম ধূমপায়ী: কলম্বিয়ার মাইকেল জর্জ কখনই ধূমপান করতেন না। কিন্তু বিয়ের পর তার স্ত্রী তাকে ধূমপান করতে উৎসাহিত করেন। কেননা তার স্ত্রীর ধারণা পুরুষ মানুষ সিগারেট না খেলে ম্যনলি লাগে না। স্ত্রীর অনুরোধে জর্জ একদিন বিমর্ষ মুখে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে এনে একটি ধরালেন। সিগারেটে টান দেয়া মাত্র তিনি কাশতে কাশতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে আসলে তিনি একটি চিঠি পান। তার স্ত্রীর ডিভোর্স লেটার।

৮. ব্যর্থতম উদ্ধার অভিযান: ১৯৭৮ সালের ১৪ জানুয়ারী সম্ভবত পৃথিবীর সব চাইতে সফল পশু উদ্ধার ঘটনাটি ঘটে বৃটেনে। এক বৃদ্ধার পোষা বিড়াল ছানাটি কি ভাবে যেন এক বিশাল বৃক্ষের মগডালে উঠে আটকে যায়। তখন দমকল বাহিনীর ধর্মঘট চলছিল বলে বৃটিশ সৈন্যরা বিপুল উদ্যমে ঐ বিড়ালটিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। এবং অসাধারণ দক্ষতায় বিড়ালটিতে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। সমস্ত ব্যাপরটিতে বৃদ্দা এতই খুশি হন যে তিনি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সৈন্যদের না খাইয়ে ছাড়েন না। সৈন্যরা বিদায় পর্ব শেষ করে গাড়ীতে উঠে যাওয়ার সময় উদ্ধারকৃত বিড়ালটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। কারণ কোন ফাকে বিড়ালটি বৃদ্ধার কোল থেকে নেমে গাড়ীর চাকার নিচে অবস্থান করছিল তা কেউই লক্ষ্য করেনি।

৯. ব্যর্থতম সার্কাস: ফ্রান্সে মিস রিটা থান্ডারবার্ড নামে এক মহিলা কামানের গোলা হিসেবে খেলা দেখাতেন সার্কাসে। খেলার নিয়ম অনুযায়ী তিনি কামানের ভেতর গিয়ে ঢুকতেন, কামান দাগা হলে তিনি ছিটকে গিয়ে দূরবর্তী জালে গিয়ে পড়তেন। একদিন শহরের মেয়র আসলেন খেলা দেখতে। যথারীতি কামান দাগা হল। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে মিস রিটার পরিবর্তে তার অর্ন্তবাসটি ছিটকে গিয়ে মেয়রের মাথায় পড়ে। কামানের ভেতর মিস রিটার কাছে দ্বিতীয় অর্ন্তবাসটি পৌছানো পর্যন্ত সার্কাস বন্ধ রাখতে হয়।

১০. ব্যর্থতম রাজনৈতিক হত্যা প্রচেষ্টা: ফিদেল কাস্ট্রো ভাগ্যবানদের একজন। ১৯৭৪ সালের ভেতরেই উনাকে অন্তত ২৪ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। এবং প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়। একবার কোল্ড ক্রিমের ডিব্বায় বিষ ভরা ক্যাপসুল রাখলে তা গলে যায়। আরেকবার কালো চুলের এক মায়াবিনী ঘাতক উল্টো্ উনার প্রেমে পড়ে যায়। আরেকবার ফ্রিজে রাখা চকলেট মিল্ক শেকে বিষ মিশিয়ে রাখা হয়। কিন্তু তা জমে বরফ হয়ে গিয়ে খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ে। উনাকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন সময়ে প্রচুর পয়জন পেলেটস ছোড়া হয় যা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। আরেকবার এক আস্ত বাজুকা নিয়ে মারতে আসা দুই ঘাতক ধরা পড়ে যায়। বিস্ফোরিত একগাদা সী শেল মাত্র চল্লিশ মিনিটের জন্য ক্যাস্ট্রোকে মিস করলেও মূল হাভানা শহরের সমস্ত ট্রাফিক লাইট ফিউজ করে দিতে সক্ষম হয়।

১১. ব্যর্থতমবিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী: বাংলাদেশের বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে দেশের বিদ্যুত সমস্যাকে টর্নেডো, সুনামির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে তুলনা করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেমন মানুষের সাধ্যের বাইরে তেমনি বর্তমানে দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতিও সমাধান করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। খুবই চমৎকার যুক্তি। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিদ্যুত খাতের সমস্যা সমাধান করার জন্য। তিনি যেন শীঘ্রই একজন দেবদূত পাঠিয়ে আমাদের দেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করে দেন।

* মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি পৃথিবীর বর্থ্যতম একজন মানুষ হিসেবে এই জীবনে কিছুইতো করা হল না । মাঝে মাঝে মা-বাবাকে বলতে ইচ্ছে করে তোমরা ভুল মানুষকে নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখলে? ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে আয়ু। হায়! জীবন এত ছোট কেন?

সংগৃহীত: আহসান হাবীব সম্পাদিত পৃথিবী বিখ্যাত সব ফেলটুস। (১১ নম্বরটি বাদে)

Thursday, April 23, 2009

সেলিব্রেটিদের শৈশব স্মৃতি

১. বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমাযূন আহমেদ তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন-
আমি অতি সুবোধ বালকের মত ক্লাসে গিয়ে বসলাম। মেঝেতে পাটি পাতা। সেই পাটির উপর বসে পড়াশোনা। ছেলেমেয়ে সবাই পড়ে। মেয়েরা বসে প্রথমদিকে, তাদের পেছনে ছেলেরা। আমি খানিক্ষণ বিচার-বিবেচনা করে সবচেয়ে রূপবতী বালিকার পাশে ঠেলেঠুলে জায়গা করে বসে পড়লাম। রূপবতী বালিকা অত্যন্ত হৃদয়হীন ভঙ্গিতে তুই তুই করে সিলেটি ভাষায় বলল, এই তোর প্যান্টের ভেতরের সবকিছু দেখা যায়।

ক্লাসের সবকটা ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে হেসে উঠল। মেয়েদের আক্রমণ অনুচিত বিবেচনা করে সবচেয়ে উচ্চস্বরে যে ছেলেটি হেসেছে, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হাতের কুনুইয়ের প্রবল আঘাতে রক্তারক্তি ঘটে গেল। দেখা গেল ছেলেটির সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গ গেছে। হেডমাস্টার সাহেব আমাকে কান ধরে সারাক্ষণ দাড়িয়েঁ থাকার নির্দেশ দিলেন। ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দিলেন-এ মহাগুন্ডা। তোমরা সাবধানে থাকবে। খুব সাবধান। পুলিশের ছেলে গুন্ডা হওয়াই স্বাভাবিক।
ক্লাস ওয়ান বারটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। এই দুই ঘন্টা আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

ক্লাস টুতে উঠে আমি আরেকটি অপকর্ম করি। যে রুপবতী বালিকা আমার হৃদয় হরণ করেছিল, তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলি। গম্ভীর গলায় জানতে চাই বড় হয়ে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী আছে কিনা। প্রকৃতির কোন এক অদ্ভূত নিয়মে রুপবতীরা শুধু যে হৃদয়হীন হয় তাই না, খানিকটা হিংস্র স্বভাবের হয়। সে আমার প্রস্তাবে খুশি হবার বদলে বাঘিনীর মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খামচি দিয়ে হাতের দু-তিন জায়গার চামড়া তুলে ফেলে। স্যারের কাছে নালিশ করে। শাস্তি হিসেবে দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে আমাকে নীল ডাউন হয়ে বসে থাকতে হয়।

প্রেমিক পুরুষদের প্রেমের কারণে কঠিন শাস্তি ভোগকার নতুন কোন ব্যাপার নয়, তবে আমার মত এত কম বয়সে প্রেমের এমন শাস্তির নজির বোধহয় খুব বেশি নেই।

২. বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর স্কুল জীবনের এক শিক্ষক সম্পর্কে স্মুতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন-
স্যারের কানমলা চিরকালই ছিল অত্যন্ত শিল্পসম্মত ও উচ্চস্তরের। কোন ছাত্র কোন ভুল উত্তর দিয়েছে কি অমনি ডান হাতের তর্জনি দিয়ে ফিল্মী রংবাজদের কায়দায় দুবার তাকে নিজের দিকে আহবান করতেন। তারপরেই ডান হাতে খপ করে তার কান চেপে ধরতেন। হ্যাঁ, কাচের গুড়োঁয় মাঞ্জা দেওয়া সেই বিখ্যাত হাতের চেপে ধরা। কানের গোড়াসুদ্ধ মাথাটাকে হ্যাঁচকা টানে তাঁর দিকে টেনে নিতেন। আর তারপরই দ্বিতীয় পর্যায়। এক ধাক্কায় কান-মাথাসুদ্ধ ছাত্রটাকে সোজা পাঠিয়ে দিতেন বেঞ্চের সিটে। সেদিনও ঘটল একই ব্যাপার। উত্তর ভুল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্যারের ব্যতিক্রমহীন আহবান শোনা গেল। আমার কানের ওপর হাত পড়তেই খুশিতে বড় বড় হয়ে উঠল স্যারের দুই চোখ, যেন অভাবিত কোন খাবার দেখেছেন সামনে। গভীর পরিতৃপ্তির সঙ্গে গড়গড় শব্দও হচ্ছে মনে হয় গলা থেকে-বাহ্ তোর কান দুটো বেশ বড় রে।
আলতো ভাবে কানদুটো নেড়েচেড়েও দেখলেন কিছুক্ষণ-বাহ্, বেশ নরমও তোর কান দুটো।
আর তারপরে সেই অতিপরিচিত দৃশ্যকাব্য। কান মাথাসুদ্ধ নিজের সিটে আমার প্রত্যাবর্তন। গোড়াসুদ্ধ সারাটা কান তখন যন্ত্রণায় চিঁ চিঁ করছে।
সেদিন থেকে স্যার আমার কানের একনিষ্ট ভক্ত হয়ে গেলেন। জোড় বেতের বিদ্যুত ঝলক আমার জন্য প্রায় নিষিদ্ধই করে দিলেন। পরিবর্তে আমার বড় বড় আর নরম কান দুটোকে মধ্যাহ্নফলার হিসেবে ব্যবহার শুরু করলেন।

৩. প্রখ্যাত কবি-লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতির কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেছেন-
এ বছরই প্রথম দেখি গ্রামোফোন যন্ত্রটি। বাংলায় যার নাম কলের গান। অমন গ্রামদেশে ওই বস্তুটি খুবই অভিনব। আমাদের মত বাচ্চাদের অবস্থা হিজ মাস্টার্স ভয়েস-এর কুকুরটিরই মতন, আমরা হাঁটু গেড়ে অবাক বিস্ময়ে শুনতে শুনতে ভাবতাম, ওই বাক্সটির মধ্যে গুটিশুটি মেরে একজন লোক গানগুলো গাইছে। এটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নয়, এর মধ্যে যথেষ্ট সংশয়ও ছিল। একই লোক বিভিন্ন গান, বিভিন্ন রকম গলায়, এমনকি মেয়েদের মতন গলাতেও গায় কী করে? কমিক গুলিতে চার-পাঁচজন লোকের গলা এক সঙ্গে শোনাযায়। এই বাক্সের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ থাকা তো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়!


সংগৃহীত: আসমার ওসমান সম্পাদিত বিখ্যাতদের সত্যি জোকস্

Monday, April 20, 2009

জনপ্রিয় ব্লগার হতে চাইলে কি করবেন?

স্যার, আমি কিভাবে আপনার মত একজন জাদরেল ব্লগার হতে পারব? অল্প দিনের মধ্যেই আপনার পেইজের হিটের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। একটি গাধার আত্ন কাহিনী লিখে ব্লগে ছেড়ে দিলেও হিটের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। শ দুয়েক মন্তব্য চলে আসে। বেশীর ভাগ ব্লগারের প্রিয় পোস্টের লিস্টে আপনার পোস্ট শোভা পায়। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে?

তুমি কি অল্প সময়ের মধ্যে একজন জনপ্রিয় ব্লগার হতে চাও?
জ্বী স্যার, কিন্তু আমি তো ভাল লেখতে জানি না।

তোমাদের নতুন ব্লগারদের এই একটি সমস্যা। চট করে একটি কমেন্টস করে বসবে। তোমাকে কে বলেছে যে ভাল ব্লগার হতে হলে ভাল লেখালেখি জানতে হবে। এই পদ্ধতিতে আগালে কয়েক বছর লেগে যাবে তোমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে। আমার পলিসি হচ্ছে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন।

স্যার, আমাকে তাহলে দয়া করে কিছু টিপস দিয়ে দেন।

১ম টিপস: লগ ইন টা জরুরী। আমি অনেক সময় টানা কয়েক দিন লগ ইন অবস্থায় থাকি। তবে মনে করো না যে লগ ইন করে থাকা মানে তোমাকে সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে খাওয়া ,বাথরুম সেখানেই সারতে হবে। লগ ইন করে তুমি হাওয়া হয়ে গেলে কেউতো আর তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না। সা.মু তে ঢুকলে কিছু ব্লগারকে তুমি সব সময় লগ ইন অবস্থায় পাবে। তোমার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে এরা তাহলে ঘুমায় কখন।

২য় টিপস: তোমার কয়েকটা নিক থাকতে হবে। মানুষের যেমন কয়েকটি নাম থাকে। অফিসে এক নাম, বাড়ীতে এক নাম, গার্লফ্রেন্ড এর কাছে এক নাম। একটি পোস্ট দিবে তারপর নিজের অন্য একটি নিক থেকে সেই পোস্টে মন্তব্য করবে। মন্তব্য আর কিছুই নয়: + পিলাস দিলাম। এখানে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করলে হৃদয়ের টান বাড়ে। সবশেষে পোস্ট নিয়ে যাবে প্রিয় পোস্টের তালিকায়।

৩য় টিপস: আস্তিক নাস্তিক বিষয়ক পোস্ট। আস্তিক বিষয়ক পোস্ট হলে ড. জাকির নায়েকের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে। ইউ টিউব থেকে নিয়ে আসলেই হবে।
আর নাস্তিক বিষয়ক পোস্ট হলে আরজ আলী মাতুব্বর এর নাস্তিকের ধর্ম কথা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরতে হবে। জাস্ট, কপি পেস্ট করে দিলেই হবে।

৪র্থ টিপস: ধর্ম বিষয়ক পোস্ট। বাজার থেকে অখ্যাত কিছু মৌলানাদের সম্পাদিত হাদিসের সংকলন সংগ্রহ করা যেতে পারে। এর মধ্য থেকে যে সব হাদিস নিয়ে বেশী বিতর্ক রয়েছে সেগুলি দেয়া যেতে পারে। যেমন- ইসলামে পর্দা প্রথা, নারীর অধিকার, মাজার প্রসঙ্গ ইত্যাদি।

৫ম টিপস: ১৮ + কৌতুক। এ ব্যাপারে তোমার আদর্শ হতে পারেন সাবেক সাপ্তাহিক হায় হায় ম্যাগাজিনের সম্পাদক। তিনি সেক্সকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়ে ছিলেন। আর না হলে নেটে এ্যাডাল্ট জোকস এরতো কোন কমতি নেই সেখান থেকে দুই একটা মেরে দিলে কেউ বুঝতে পারবে না।

স্যার, আমি এভাবে জনপ্রিয় ব্লগার হতে চাই না। একজন ব্লগার এখানে লেখবে তার আনন্দের জন্য। একজন মমতা নিয়ে একটি পোস্ট দিবে অন্যরা সেখানে মন্তব্য করবে। ভাল লাগলে ভাল বলবে, নতুবা খারাপ লাগার কারণ ব্যাখা করবে। অবশ্যই তা শালীন এবং যৌক্তিক ভাবে।
জঙ্গলে একটি হরিণ সব সময় হিংস্র প্রাণীদের ভয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে থাকে। এই বুঝি কোন বাঘ তার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল। অরণ্যের যে একটু নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে একটি হরিণ কখনই তা উপলব্ধি করতে পারে না।
তেমনি আমাদের মত নতুন ব্লগাররা আপনার মত ব্লগারদের কারণেই এখানে লেখালেখি করতে ভয পায়। এই বুঝি কোন একটা পোস্ট বা মন্তব্যে আমি কোন ভুল করে ফেললাম। আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে সবাই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। ব্লগের যে একটা নিজস্ব চমৎকার পরিবেশ রয়েছে আপনাদের কারণে আমরা তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। আমরা ভুলে যাই প্রত্যেকেই আমরা এখানে মায়ার এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ। আবার এমন ব্লগারও এখানে আছেন যারা খুব সাধারণ একটি পোস্ট নিয়ে যে মন্তব্যটুকু করেন তা অনেক সময় হৃদয় ছুয়ে যায়। তাদের জন্যেই অনেক সময় লেখতে ইচ্ছে করে।

ব্যাটা ফাজিল তুই তাহলে এতক্ষণ আমার এত সময় নষ্ট করলি কেন। তুমি জান জিন্দা লাশ, মরা গাধা, জানের দুশমন- এগুলি কাদের নিক?
না স্যার, আমি জানি না।
তুমি কি ছাতার ব্লগার হে। কিছুই দেখি জান না। এরা সবাই বড় বড় ব্লগার। এরা আমার পদ্ধতি অনুসরণ করে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় ব্লগারে পরিণত হয়েছে।

স্যার, আপনি কি জানেন পরাণ ব্ন্ধু কার নিক?
না, আমি জানি না।

আপনিও দেখি কিছুই জানেন না। এটা হচ্ছে আপনার পাশের ভাড়াটিয়ার নিক।
তো, এটার সাথে আমার কি সম্পর্ক?

আপনি যখন ব্লগে আপনার রেটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন এই ভদ্রলোক আপনার বউ এর সাথে ডেটিং এ ব্যস্ত থাকে।

(এটি কোন উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট নয়। জাস্ট একটি ফান পোস্ট।)

বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা ও আমাদের করণীয়

বিশ্ব অর্থণীতির মন্দা প্রবেশ করেছে আমাদের অর্থনীতিতেও। কিন্তু আমাদের অর্থ মন্ত্রীকে তেমন একটা বিচলিত হতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি আগাম ভবিষ্যতবাণী করে বসে আছেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাতে আমাদের বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এরই মধ্যে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বিদেশে অনেক বাঙ্গালী চাকুরী হারাচ্ছে। অনেক বাঙ্গালীকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিদেশে আমাদের ঢিলেঢাল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিদেশে কোন কোম্পানী থেকে লোক ছাটাই হলে এর প্রথম শিকার হয় বাংলাদেশের শ্রমিকরা। এমনিতেই বেতন বৈষম্য তার উপর এ ধরণের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণের জন্য আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর দায়ী। তারা কঠোর অবস্থান নিলে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ আপনারা সময় থাকতেই এর গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। আপনাদের ধীরে চল নীতিতে চললে অনেক দেরী হয়ে যাবে তখন হয়ত আমাদের করার আর কিছুই থাকবে না। বিদেশে আমাদের অবস্থা হবে অনেকটা পুরনো সেই কৌতুকের মত -

নিয়ইয়র্কের ব্যস্ততম রাস্তা। হঠাৎ দেখা গেল কেথা থেকে যেন একটি পাগলা কুকুর ছুটে এসেছে । সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড়াচ্ছে। এ সময় পাশের পার্ক থেকে ছোট একটি শিশু বের হচ্ছিল। কুকুরটি ধেয়ে গেল তার দিকে। আতঙ্কে শিশুটি ততক্ষণে নীল হয়ে গেছে। এমন সময় এক সুঠাম যুবক লাফিয়ে পড়ল কুকুরটির সামনে। জাপটে ধরল কুকুরটিকে। ধস্তাধস্তি চলল কিছুক্ষণ। তারপর যুবকটি কুকুরটির গলা জড়িয়ে ধরল। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এক সময় কুকুরটি মারা গেল।
উপস্থিত লোকজন যুবকটির সাহস দেখে মুগ্ধ। ছুটে এসে হাত মিলাচ্ছেন অনেকেই। ঘটনাস্থলে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি এসে যুবকটিকে বললেন- আপনার সাহস অনেকের জন্যই অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে।

কালকের পত্রিকায় আমি শিরোনাম দেব- সাহসী আমেরিকান যুবক কর্তৃক শিশুর প্রাণ রক্ষা।

যুবক বিব্রত হয়ে বলে উঠল- আমি কিন্তু আমেরিকান নই। একজন ইমিগ্রান্ট।

সাংবাদিক একটু চিন্তা করে বললেন - কোন সমস্যা নেই। শিরোনাম হবে সাহসী ইন্ডিয়ান কর্তৃক শিশুর প্রাণরক্ষা।

যুবকটি পুনরায় বলে উঠল-আপনি আবারও ভুল করছেন। আমি ইন্ডিয়ান নই , একজন বাংলাদেশী।

সাংবাদিকটি যুবকের ছবি উঠিয়ে চলে গেলেন।

পরদিন ঠিকই পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হল। শিরোনাম হচ্ছে- বাংলাদেশী টেরোরিস্টদের হাত থেকে অবোধ পশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। নিউইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায় এক বাঙ্গালী যুবক কর্তৃক খুন হয়েছে নিরীহ এক কুকুর।

একটি কুইজ!


দেখুনতো ছবির এই ভদ্রলোককে চিনতে পারেন কিনা? মাথায় টুপি, মুখে সাদা দাড়ি, নূরানী চেহারা। ঠিক ধরেছেন তিনি ফেনীর সাবেক গডফাদার, প্লেবয় জয়নাল হাজারী। গত ১৫ এপ্রিল তিনি ছয়টি মামলায় আত্নপক্ষ সমর্থন করে জামিন প্রার্থনা করেন। পাঁচটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েও যান। যেখানে কোর্ট থেকে একটি জামিন পাওয়াই কষ্টকর সেখানে একই দিনে পাঁচটি মামলার জামিন পাওয়া রীতিমতোভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের দেশেই হয়ত এটা সম্ভব। কিন্তু তারপরও বাধ সাধেন একটি মামলার বিচারক। তিনি জামিন না মন্জুর করে দেন। হাজারী সাহেবও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি একে উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আদালত চত্বরেই হ্যান্ড মাইকের সাহায়্যে ১৫ মিনিট বক্তৃতা দেন। এবং এর দাঁত ভাঙা জবাব তিনি দেবেন বলে উনার ভক্তদের আশ্বস্ত করেন।

যে মামলায় উনার জামিন হয়নি সেই মামলার বিচারক অনুপস্থিত ছিলেন বিধায় উনার জামিন পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যদি বিচারক উপস্থিত থাকতেন তবে হাজারী সাহেব উনাকে একটি কুইজ দিতে পারতেন। জজ সাহেব যদি এর সমাধান বের করতে পারেন তবে জামিন হবে না, আর না পারলে জামিন দিতে হবে।
হাজারী- আচ্ছা জজ সাহেব, ধরুন আমার বাবর এক ছেলে, মার এক ছেলে অথচ আমার কোন ভাই বোন নেই তাহলে ছেলেটি কে?
জজ সাহেব উত্তর দিতে ব্যর্থ হলেন। হাজারী উত্তর দিলেন আরে এটাতো সহজ। সেই ছেলেটি আমি হাজারী। অতএব হাজারী সাহেব বীরের মত জামিন নিয়ে বের হয়ে আসলেন।

জজ চমৎকৃত হলেন। তিনি ঠিক করলেন তিনি উনার সহকারী জজকে এই প্রশ্নটি করবেন। যথারীতি তিনি তা করলেন- আচ্ছা তুমি বল দেখি, আমার বাবর এক ছেলে, মার এক ছেলে অথচ আমার কোন ভাই বোন নেই, তাহলে ছেলেটি কে?
সহকারী জজ অবাক হয়ে উত্তর দিল আরে এটাতো সহজ। সেই ছেলেটি হচ্ছেন গিয়ে আপনি।
জজ হেসে উত্তর দিলেন আমি জানতাম তুমি পারবে না। সঠিক উত্তর হচ্ছ-সেই ছেলেটি হচ্ছে জয়নাল হাজারী।

Monday, April 13, 2009

সাদা ঘোড়সওয়ারী

ছেলে বেলায় আমাদের কাছে তাকে এক রহস্যময় মানুষ বলে মনে হত। মাথায় লম্বা চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখ দুটি রাতে না ঘুমানো লোকের মত সব সময় লাল। এমনিতে কথা বার্তা খুব কম বলতেন। প্রতিদিন বিকালে পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন শতাব্দী প্রাচীন বট গাছের নিচে বসতেন। হাতে থাকত মাটির ছোট্র একটি নলের মত জিনিস যার ভেতরে আবার আগুন দেখা যায়। এতে মাঝে মাঝে টান দিতেন আর নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তেন। এই সময় তার মুখে কথার খই ফুটত।

ছেলে বেলায় বুঝতাম না এটা গাজার নেশার প্রলাপ। তখন শুরু হত সৃষ্টি ছাড়া সব গল্পের আসর। আমরা চোখ কপালে তুলে তা শুনতাম-
বুঝলা আমি কিন্তু তোমাদের এই মানুষের দুনিয়ার কেউ না। আমি হইলাম গিয়া জ্বীনদের দুনিয়ার লোক। তোমাদের মত জ্বীনদেরও দুনিয়া আছে। আমরা হইলাম আগুনের তৈরী। এই দেহ আমার হাতের এইডা থেইক্যা আগুন বাইর হয়। আমরা হা করে দেখতাম তার চোখ মুখ দিয়ে গলগল করে ধোয়া বের হচ্ছে।

তাকে আমরা জ্বীন মানুষ বলে ডাকতাম। তিনি থাকতেন পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন একচালা একটি কুড়েঘরে। কর্তৃপক্ষ তাকে এমনি এমনি দয়া করে থাকতে দেয়নি। এর বিনিময়ে তাকে কবরস্থান দেখা শুনা করতে হত। এক কথায় বলতে গেলে কবরস্থানের কেয়ারটেকার।
সাথে তার বউ আর এক ছেলে থাকত। সেই দুজনকে আবার সাধারণ মানুষ বলেই আমাদের মনে হত। আমরা বুঝতাম না তারা এই জ্বীন মানবের সাথে কিভাবে থাকে।

হেইদিন হইল কি শুন- রাত তখন তৃতীয় প্রহর হইব। বাইরে চাদনী পসর রাইত। আমি বাইর হইলাম কবরস্থানের দিকে। তখন দেখি কি....
এই টুকু বলে তিনি ঝিম মেরে যান। আমরা অস্থির হয়ে পড়ি তারপর কি হল জানার জন্যে। কিন্তু এখন যদি উনাকে তাগাদা দেয়া হয় তবে তিনি আজ আর মুখ খুলবেন না। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । তিনি প্রায়ই গল্পের মাঝে এ ধরনের কান্ড করে আমাদের দেখে মজা পান।

ঐ দিন এক ছোট বাচ্চার নতুন এক কবর হইছে। আমি দেখি কে যেন উপুর হইয়া সেই কবর থেইকা কি বাইর করতাছে। আমার ত বুক ধক কইরা উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম কে কে। কোন উত্তর নাই। তখন আমি সাহস কইরা আগাইয়া গেলাম। যা দেখলাম তোমরা পুলাপান মানুষ তোমাদের কাছে না কইলেই ভাল হইব। তারপর তিনি আবার চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে যান। উনার এই পদ্ধতির সাথে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। জানি এর একটু পরই তিনি আবার মুখ খুলবেন।

দেহি এক লোক কবর থাইকা বাচ্চার লাশ টাইননা বাইর করতাছে। রক্ত ছাড়া ধবধইববা ফরসা মুখ। চোখ দিয়া যেন আগুন বাইর হইতাছে। আমারে দেইখা এক লাফ দিয়া উইঠা দাড়ায়। আমিত চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে দুয়া দুরুদ পড়তে শুরু কইরা দিছি। একটু পরে চোখ খুইলা দেহি সাদা এক ঘোড়ার পিঠে চইড়া ঐ লোক হাওয়া। সকাল বেলা আবার লাশ কবরে ঢুকাইয়া কবর ঠিক ঠাক কইরা দিছি।
কে এই লোক-আমরা সমস্বরে জানতে চাই। লাশ নিয়ে সে কি করবে।

সে এই জগতের কেউ না। বাচ্চারাতো ফেরেশতা। সে বাচ্চাদের লাশ তার জগতে নিয়া যাইব তারপরে তারমাঝে জান দিব। যদি ভাল মা বাবা হয় তবে একদিন হেই বাচ্চা তার বাবা মার কাছে ফিরা আসব।

এখন পর্যন্ত কি কোন বাচ্চা ঐ জগত থেকে ফিরত এসেছে? আমরা জানতে চাই।

না। এখনকার মানুষ পাপী হইয়া গেছে। তবে সাচ্চা মানুষ হইলে তার বাচ্চা ঠিকই ফিরা আসব।

তখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নতুন কবর থেকে লাশ গায়েব হয়ে যায়। এ তাহলে সেই সাদা ঘোড়সওয়ারের কান্ড। তখন বুঝতাম না নতুন কবরের মাটি নরম থাকার কারণে অনেক সময় শিয়াল লাশ বের করে ফেলে।

এর পর থেকে সাদা ঘোড়সওয়ার আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতংকে পরিণত হয়। সব সময় মনে হত এই বুঝি আসছে।

একদিন এই জ্বীন মানবের ছেলে হঠাৎ করে মারা গেল। আমরা তাকে পেলাম কবর খুড়তে থাকা অবস্থায়। এই কবরেই তার ছেলেকে শোয়ানো হবে। তাহলে আজ রাতে আবার সেই ঘোড়সওয়ার আসবে জ্বীন মানবের বাচ্চার লাশ নিতে।

পরদিন বিকালে জ্বীন মানবকে দেখলাম হতে আগুন ছাড়া। এই প্রথম আমরা একটি অদ্ভূত জিনিস দেখলাম। জ্বীন মানবের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরে জ্বীনেরা কি আবার কাঁদে নাকি। তাদের আবার দুঃখ কষ্ট আছে নাকি।

এরমধ্যে আমরা উশখুশ করতে শুরু করেছি গল্প শুনার জন্য। কাল রাতে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারী এসে ছিল কিনা জানতে। কিন্তু আজ আর জ্বীন মানব কোন গল্প বলল না। তারপর থেকে আমরা প্রতিদিন তাকে ঐ জায়গায় একই রকম বসা অবস্থায় দেখতে পেতাম। তার চোখ দুটি এক দৃষ্টিতে তার ছেলের কবরের দিকে নিবদ্ধ থাকত। কি যেন খুঁজে ফিরত তার দুই চোখ।

সবাই বলত ছেলের মৃত্যুতে জ্বীন মানবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানতাম আসল কারণটা। জ্বীন মানব আসলে সেই সাদা ঘোড় সওয়ারকে খোঁজে ফিরত। যে এসে তার ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই ঘোড় সওয়ারী আর আসে না।
হচ্ছে।

তাকে আমরা জ্বীন মানুষ বলে ডাকতাম। তিনি থাকতেন পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন একচালা একটি কুড়েঘরে। কর্তৃপক্ষ তাকে এমনি এমনি দয়া করে থাকতে দেয়নি। এর বিনিময়ে তাকে কবরস্থান দেখা শুনা করতে হত। এক কথায় বলতে গেলে কবরস্থানের কেয়ারটেকার।
সাথে তার বউ আর এক ছেলে থাকত। সেই দুজনকে আবার সাধারণ মানুষ বলেই আমাদের মনে হত। আমরা বুঝতাম না তারা এই জ্বীন মানবের সাথে কিভাবে থাকে।

হেইদিন হইল কি শুন- রাত তখন তৃতীয় প্রহর হইব। বাইরে চাদনী পসর রাইত। আমি বাইর হইলাম কবরস্থানের দিকে। তখন দেখি কি....
এই টুকু বলে তিনি ঝিম মেরে যান। আমরা অস্থির হয়ে পড়ি তারপর কি হল জানার জন্যে। কিন্তু এখন যদি উনাকে তাগাদা দেয়া হয় তবে তিনি আজ আর মুখ খুলবেন না। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । তিনি প্রায়ই গল্পের মাঝে এ ধরনের কান্ড করে আমাদের দেখে মজা পান।

ঐ দিন এক ছোট বাচ্চার নতুন এক কবর হইছে। আমি দেখি কে যেন উপুর হইয়া সেই কবর থেইকা কি বাইর করতাছে। আমার ত বুক ধক কইরা উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম কে কে। কোন উত্তর নাই। তখন আমি সাহস কইরা আগাইয়া গেলাম। যা দেখলাম তোমরা পুলাপান মানুষ তোমাদের কাছে না কইলেই ভাল হইব। তারপর তিনি আবার চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে যান। উনার এই পদ্ধতির সাথে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। জানি এর একটু পরই তিনি আবার মুখ খুলবেন।

দেহি এক লোক কবর থাইকা বাচ্চার লাশ টাইননা বাইর করতাছে। রক্ত ছাড়া ধবধইববা ফরসা মুখ। চোখ দিয়া যেন আগুন বাইর হইতাছে। আমারে দেইখা এক লাফ দিয়া উইঠা দাড়ায়। আমিত চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে দুয়া দুরুদ পড়তে শুরু কইরা দিছি। একটু পরে চোখ খুইলা দেহি সাদা এক ঘোড়ার পিঠে চইড়া ঐ লোক হাওয়া। সকাল বেলা আবার লাশ কবরে ঢুকাইয়া কবর ঠিক ঠাক কইরা দিছি।
কে এই লোক-আমরা সমস্বরে জানতে চাই। লাশ নিয়ে সে কি করবে।

সে এই জগতের কেউ না। বাচ্চারাতো ফেরেশতা। সে বাচ্চাদের লাশ তার জগতে নিয়া যাইব তারপরে তারমাঝে জান দিব। যদি ভাল মা বাবা হয় তবে একদিন হেই বাচ্চা তার বাবা মার কাছে ফিরা আসব।

এখন পর্যন্ত কি কোন বাচ্চা ঐ জগত থেকে ফিরত এসেছে? আমরা জানতে চাই।

না। এখনকার মানুষ পাপী হইয়া গেছে। তবে সাচ্চা মানুষ হইলে তার বাচ্চা ঠিকই ফিরা আসব।

তখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নতুন কবর থেকে লাশ গায়েব হয়ে যায়। এ তাহলে সেই সাদা ঘোড়সওয়ারের কান্ড। তখন বুঝতাম না নতুন কবরের মাটি নরম থাকার কারণে অনেক সময় শিয়াল লাশ বের করে ফেলে।

এর পর থেকে সাদা ঘোড়সওয়ার আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতংকে পরিণত হয়। সব সময় মনে হত এই বুঝি আসছে।

একদিন এই জ্বীন মানবের ছেলে হঠাৎ করে মারা গেল। আমরা তাকে পেলাম কবর খুড়তে থাকা অবস্থায়। এই কবরেই তার ছেলেকে শোয়ানো হবে। তাহলে আজ রাতে আবার সেই ঘোড়সওয়ার আসবে জ্বীন মানবের বাচ্চার লাশ নিতে।

পরদিন বিকালে জ্বীন মানবকে দেখলাম হতে আগুন ছাড়া। এই প্রথম আমরা একটি অদ্ভূত জিনিস দেখলাম। জ্বীন মানবের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরে জ্বীনেরা কি আবার কাঁদে নাকি। তাদের আবার দুঃখ কষ্ট আছে নাকি।

এরমধ্যে আমরা উশখুশ করতে শুরু করেছি গল্প শুনার জন্য। কাল রাতে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারী এসে ছিল কিনা জানতে। কিন্তু আজ আর জ্বীন মানব কোন গল্প বলল না। তারপর থেকে আমরা প্রতিদিন তাকে ঐ জায়গায় একই রকম বসা অবস্থায় দেখতে পেতাম। তার চোখ দুটি এক দৃষ্টিতে তার ছেলের কবরের দিকে নিবদ্ধ থাকত। কি যেন খুঁজে ফিরত তার দুই চোখ।

সবাই বলত ছেলের মৃত্যুতে জ্বীন মানবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানতাম আসল কারণটা। জ্বীন মানব আসলে সেই সাদা ঘোড় সওয়ারকে খোঁজে ফিরত। যে এসে তার ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই ঘোড় সওয়ারী আর আসে না।

টিপস: কিভাবে অল্প সময়ের মধ্য একজন জনপ্রিয় লেখক হবেন।


স্যার, আমায় চিনতে পেরেছেন?

না।

ফাস্ট ইয়ার, সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট। আমি আপনার সবগুলি ক্লাস নিয়মিত এটেন্ড করতাম।

হ্যা, এই বার চিনতে পেরেছি। আমার সবগুলি পরীক্ষায় তুমি নিয়মিত ফেল মারতে। তা এখন কি করছ?

এই স্যার, লেখালেখি করে পেট চালাই আরকি।

আচ্ছা। তাহলে কেউ যদি তোমার পেটের দায়িত্ব নিয়ে নেয় তবে তুমি আর লেখালেখি করবে না।

ঠিক তা নয় স্যার। আমার স্বপ্ন আপনার মত একজন জনপ্রিয় সাই-ফাই লেখক হওয়া।

সাই বাবার নাম শুনে ছিলাম। সাই-ফাই আবার কি জিনিস, ঠিক বুঝলাম না।

ও আল্লা! এটা আধুনিক সায়েন্স ফিকশন। সংক্ষেপে সাই-ফাই। আমার ধারণা সায়েন্সের ছাত্র হওয়াতে আমি এই লাইনে ভাল করব। তাই আপনার কাছে এসেছি একটি ভাল সায়েন্স ফিকশন নামাতে হলে কি কি লাগে তার টিপস জানতে।

তোমার ধারণা বাজারের ফর্দ লেখার মত যে কেউ চাইলেই লেখালেখি শুরু করে দিতে পারে।

স্যার আমার এই স্ক্রিপ্টটা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন আমি কত জাদরেল লেখক।

ঠিক আছে তুমি রেখে যাও আমি সময় করে দেখব।

স্যার আমি আপনাকে একটু পড়ে শুনাই।

এতো ভালই মুসিবতে পড়া গেল।

-এক দল অভিযাত্রী উত্তর মেরু অভিযানে বের হয়েছে। জুল ভার্নের-ক্যাপটেন হ্যাটেরাস’ নামে এ রকম একটি কাহিনী আছে। আমারটা আরও ভয়াবহ। টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ। যেখানে শূন্য ডিগ্রীতে পানি বরফ হয়ে যায়। তাহলে বুঝেন অবস্থা। কঠিন অবস্থা। সবার অবস্থা কেরাসিন। সব চেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে পেশাব করা নিয়ে। কেউ পেশাব করতে পারছে না। পেশাব জমে বরফ হয়ে গেছে। তারপর……..

থামো, আমরা ধারণা জুলভার্ন বেঁচে থাকলে তোমার এই কাহিনী শুনে নির্ঘাত সুইসাইড করার চেষ্টা করতেন। পদার্থ বিদ্যার সূত্র অনুযায়ী -২৭৩ ডিগ্রীর নীচে টেম্পেরেচার পৌছতে পারে না। সেখানে টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ তুমি কোথায় পেলে।

স্যার, এবার তাহলে আরেকটা শুনাই। এবার একদল অভিযাত্রী মহাকাশ পর্যবেক্ষণে বের হয়েছে। নভোযান পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে পৌছে গেল মহাকাশে। আমি জুলভার্নের- এ জার্নি টু দ্যা মুন’ গল্পটিকে কাট ছাট করে চালিয়ে দেব। কেউ ধরতে পারবে না। অভিযাত্রীদের মধ্যে রয়েছে এক পাড় মাতাল। এক মুহূর্ত এ্যালকোহল না হলে তার চলে না। পকেট থেকে একটু পর পর বোতল বের করে চুমুক দিচ্ছে। তারপর তারা নামল চন্দ্র পৃষ্টে। চাঁদে হাঁটা খুব কষ্টকর। একেক জনের পা যেন দশ মণ ভারী হয়ে রয়েছে। উঠতেই চায় না।

স্টপ। লেখক চিৎকার দিয়ে উঠেন। আরে আগেতো সায়েন্স, তারপর না ফিকশন। মহাশূন্যে গিয়ে কেউ চুমুক দিয়ে তরল পান করছে এটাতো আমি বাপের জন্মে শুনিনি। কোন নভোযান যখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে অতিক্রম করে যাবে তখন মহাশূন্যে থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করলেও বোতল থেকে উপুড় করে পানি ঢালা যাবে না। আর চন্দ্র পৃষ্টেও একই জিনিস ঘটবে। অভিকর্ষ বলের কারণে মানুষ তার ওজন হারাবে। অভিযাত্রীরা এমনিতেই নিজেদের ওজনশূন্য অনুভব করবেন। সেই জায়গায় পা দশ মণ ভারী হয়ে আছে-যত্তসব।

স্যার তাহলে আরেকটা শুনাই।

আমাকে এবার মুক্তি দাও। আর তুমি অন্য লাইনে চেষ্টা কর।

স্যার প্লীজ, এই লাস্ট। এবারের কাহিনী অতি আধুনিক । মেট্রিক্স ছবিতো আপনি নিশ্য়ই দেখে থাকবেন। অনেকটা তার ছায়া অবলম্বনে লেখা। আমার গল্পের নায়ক পুলিশ অফিসার ক্রিমিনল ধরতে ছুটে বেরাচ্ছে। পরনে তার বিশেষ পোশাক। নীল প্যান্ট, নীচে লাল আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে।

এক মিনিট। প্যান্টের নীচে তুমি কিভাবে আন্ডারওয়্যার দেখতে পেলে।

এটা আধুনিক স্বচ্ছ পলিমারের প্যান্ট। আর আগের সুপারম্যান প্যান্টের উপরে আন্ডারওয়্যার পরত। কিন্তু আমার আধুনিক সুপার হিরো এত আবুল নয়। পাঠক যখন ভাবতে শুরু করে দিয়েছে পুলিশ ক্রিমিনাল ধাওয়া করছে এ আর এমন নতুন কি। তখনই আমি আসল চমক দেখাব। কারণ আমার হিরো কোন মানুষ নয়। মানুষের মত দেখতে একটি নবম স্কেলের রোবট।

থামো। তুমি এই মুহূর্তে তোমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে এখান থেকে বিদায় হবে। তুমি আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাকেও জুলভার্নের মত অকালে বিদায় নিতে হবে। নীল প্যান্টের নীচে, লাল আন্ডারওয়্যার। রঙ্গীন কাপড়ের নীচে অন্য কোন রঙ্গীন কাপড় কাল দেখাবে। আর তুমি দেখছ লাল।
তুমি এই কঠিন লাইনে চেষ্টা বাদ দিয়ে প্রথমে হালকা মানের লেখা দিয়ে শুরু কর। যেমন- বাচ্চাদের ছড়া। প্রেমের কবিতা ইত্যাদি।

ঠিক আছে স্যার, আমি পরবর্তীতে আরও ভাল স্ক্রীপ্ট নিয়ে আপনার কাছে আসব। আমাকে একজন ভাল সাই-ফাই লেখক হতেই হবে।

এক বছর পর। এই লেখক এখনও পুরো দমে তার লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি বাংলা সিনেমার কাহিনী লেখেন। এখানে যুক্তি-অযৌক্তিক এর কোন বালাই নেই।

নায়িকা রোড এ্যাকসিডেন্টে আহত। হাসপাতালে নেবার সময় নেই। রক্ত দরকার। নায়ক পকেট থেকে নেশা করার সিরিঞ্জ বের করে নিজের শরীরের রক্ত টেনে বের করে নায়িকার শরীরে ঢুকাতে শুরু করল। ব্লাড মেচিং এর কোন দরকার নেই। ভালোবাসার মাঝে রক্তের গ্রুপ কোন সমস্যা নয়। একটু পর নায়িকা চোখ মেলল। চৈত্রের ভর দুপুরে শুরু হল বৃষ্টি। আর তারসাথে বৃষ্টি ভেজা হেভী জোসীলা নাচ-গান।

নায়ক গেয়ে উঠল- নেশা আছে হেরোইনে, নেশা আছে প্যাথেডিনে
তারচাইতেও অধিক নেশা কইন্যা তোমার যৌবন সুধাতে…এ…এ…এ।

নায়িকা গেয়ে উঠল- আমার আঁচল উড়াইয়া নিল মরার বাতাসে
আমার যৌবন ভাসিয়া গেল বৃষ্টির জলে….এ….এ….এ।

এখানে একটি তিন ঘন্টা ছবি চলার মত কাহিনী হলেই চলে। আর কাহিনীরও তেমন কিছু নেই। কয়েকটি হিন্দী-ইংরেজী ছবির কাহিনী কাট-পেস্ট করে দিলেই চলে। বর্তমানে তিনি এখন জনপ্রিয় একজন কাহিনী লেখক।

(সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর মিল খুঁজতে চাইলে যে কেউ নিজ দায়িত্বে তা করতে পারেন।)


Tuesday, April 7, 2009

ঈশ্বরের ঠিকানা

মাঝে মাঝে এই হাসপাতালের চার দেয়ালের ভিতরে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। শাহেদ খুবই যুক্তিবাদী একটি ছেলে। সে কখনও প্রকৃতির মাঝে রহস্য খোঁজার চেষ্টা করেনি। প্রকৃতিতে রহস্য বলে কোন কিছু নেই। তার বিশ্বাস প্রকৃতিতে কোন কিছু এমনিতেই ঘটে না। সব কিছুর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। যুক্তির বাইরে কোন কিছুতে সে কখনই বিশ্বাস করে না।

বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কি এমন কোন শক্তি লুকিয়ে আছে যা এই মহাবিশ্বের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তার মতে এটা একদমই বাজে কথা। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন একটি বিন্দু থেকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। তারপর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে গ্রহ, নক্ষত্র আর সব কিছুর। যদিও এই থিওরি তার মনে জন্ম দিয়েছে অনেক অজানা সব প্রশ্নের। বিগব্যাং এর পূর্বে কি ছিল? প্রাণের সৃস্টি কিভাবে হল? নিজে নিজে যদি প্রাণের সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে ল্যাবরেটরিতে কেন আমরা প্রাণ সৃষ্টি করতে পারছি না? তবে তার বিশ্বাস একদিন মানুষ এই সব প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজে বের করে ফেলবে। তখন আর সৃষ্টির রহস্য বলে কোন কিছু থাকবে না।

তার মতে ভাল মন্দের শিক্ষা দেয়ার জন্য ও সৎ জীবন যাপনের জন্য ধর্মগ্রন্থগুলি মানুষই বিভিন্ন সময়ে তৈরী করে গেছে। এখানে যে সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হয়েছে তা শুধুই মানুষকে ভয় দেখাবার জন্য। যাতে করে তারা অন্যায় কাজ করতে ভয় পায়।

ধীরে ধীরে শাহেদের জীবন রেখা সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছেন। এগিয়ে আসছে মৃত্যু। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষ অমর নয়, মরণশীল। শাহেদেরও তা ভাল করে জানা আছে। মরতেতো হবেই, একদিন আগে আর একদিন পরে।

তারপরও মাঝে মাঝে মন বিদ্রোহী হয়ে উঠে। মনে হয় যদি এই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কোন এক সুপার পাওয়ার থাকত, যে সব কিছুই করতে পারত তবে শাহেদ তার কাছে আরও কয়েকটা দিন সময় চাইতে পারত। ধুর, কি সব বোকা আস্তিকবাদীদের মতো সে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছে। সৃষ্টিকর্তা বলতে কোন কিছু নেই। মানুষ তার কল্পনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে তৈরী করে নিয়েছে। সে নিজে একজন ঘোর নাস্তিকবাদী। তাহলে কেন সে এই সব যুক্তি ছাড়া জিনিস কল্পনা করবে। প্রকৃতির সব কিছু তার নিজস্ব নিয়মে চলবে। এখানে কারও ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু যায় আসে না।

আজ বাইরে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি হচ্ছে। শাহেদ হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। নিঃশ্বাসে ভেসে আসছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ। গাছের পাতাগুলি সব বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। আহা কত সাধারণ, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কি অপূর্ব একটি দৃশ্য। ইচ্ছা করলেও সে আজ বৃষ্টির পানি ছুতে পারবে না। ক্যান্সার তার সারা শরীরে বাসা বেধে ফেলেছে। এখন সে বিছানা থেকেই উঠতে পারে না। অনেক চেষ্টা করে তার হাতটুকু সামনে বাড়িয়ে দেয়। সে জানে এতদূর থেকে সে বৃষ্টি স্পর্শ করতে পারবে না। ধপ করে তার হাতটা বিছানার উপর এলিয়ে পড়ে ।

একসময় শাহেদের সব চিন্তা ভাবনা কেমন এলোমেলো হয়ে আসে। মাথায় আবার ভোতা যন্ত্রনা শুরু হয়। নিজের অজান্তেই মনে মনে বলতে থাকে-হে মহাশক্তি, আমাকে একবার শুধু ঐ জানালা পর্যন্ত পৌছার শক্তিটুকু দান কর। প্রাণপন চেষ্টা করে সে উঠে বসে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে জানালার দিকে। অনেক দিন পর আজ সে উঠে দাঁড়াতে পারছে। আরেকটু, তাহলেই সে পৌছে যেতে পারবে। অবশেষে সে পৌছতে পারে। শাহেদ চমকে উঠে। তাহলে কি কোন অদৃশ্য শক্তি তার মনের ইচ্ছা পূরণ করে চলেছে। শাহেদ হাত বাড়িয়ে দেয় জানালার বাইরে। কত দিন পর আজ বৃষ্টির স্পর্শ অনুভব করছে। আহ্ কি শান্তি। শাহেদের দুই চোখ ভিজে আসে। হায়! বেঁচে থাকা এত আনন্দের কেন।

ইস্ এখন যদি কোন মিরাকল ঘটত। ঐশ্বরিক কোন শক্তির কল্যাণে সে যদি হঠাৎ করে ভাল হয়ে যেত। তবে কি তার এত দিনের বিশ্বাসে চিড় ধরতে আরম্ভ করেছে। শাহেদ মাথা থেকে এ ধরণের চিন্তা সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ঈশ্বর বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ সব শুধুই মানুষের অবচেতন মনের কল্পনা। কিন্তু শাহেদের চোখ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে কি যেন খোঁজে ফিরে। আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে তার দৃষ্টি চলে যায় দূরে, আরো দূরে। এই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কি তাহলে লুকিয়ে রয়েছে এমন কোন ঐশ্বরিক শক্তি বা ঈশ্বর যিনি সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। যার জাদুর স্পর্শে সব কিছু বদলে যেতে পারে।

শাহেদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফিস ফিস করে বলতে থাকে-হে অজানা ঐশ্বরিক শক্তি, আমাকে আর কয়েকটা দিনের আয়ু দান কর। আমি এই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর কয়েকটি দিন দেখে যেতে চাই।

শাহেদ মারা যায় এর কিছুক্ষণ পরই । একজন ক্যান্সার আক্রান্ত লোকের স্বাভাবিক মৃত্যু। কোন মিরাকল ঘটেনি । প্রকৃতিতে সব কিছু তার মত করে ঘটে। প্রকৃতি তার সব রহস্য মানুষের কাছে প্রকাশ করে না। স্রষ্টা সব সময় তার সৃষ্টি নিজের মত করে পরিচালনা করেন। স্রষ্টা তার সব ক্ষমতা মানুষকে দেখাতে পছন্দ করেন না।

(আমি সব সময় দুইটা বিষয় সযত্নে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক বির্তক, অপরটি ধর্মীয় বির্তক। দুটি ক্ষেত্রেই লোকজন খুব আক্রমণাত্নক হয়ে উঠে। মুহুর্তেই পক্ষে বিপক্ষে দুটি দল তৈরী হয়ে যায়।

আমি কোন বির্তক করার জন্য এই পোস্ট দিচ্ছি না। আমার কথা হচ্ছে মতভেদ থাকতেই পারে। সেই পুরনো কৌতুকের কথা মনে পড়ছে।
জজ আসামীকে বলছেন- তোমাকে অন্তত ৫ জন লোক চুরি করতে দেখেছে।
আসামী উত্তর দিচ্ছে-স্যার, আমি অন্তত ৫০ জনকে এই কোর্টে হাজির করতে পারব যারা আমাতে চুরি করতে দেখেনি।

পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি পাল্টা যুক্তি থাকবেই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই রয়েছে। প্রত্যেক মানুষেরই রয়েছে নিজস্ব দর্শন । আমি আমার দর্শন অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমার দর্শন সাদরে গ্রহণ করছে।

আমরা বিজ্ঞানের মতবাদ বিশ্বাস করি না। আবার পরক্ষণেই জানতে চাই- আকাশ কেন নীল।
আমরা সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করি না। কিন্তু যখন বিপদে পড়ছি, তখন আবার সেই সৃষ্টিকর্তার কাছেই প্রার্থনা করছি আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য।
এখানে দুইটাকেই পাশাপাশি চলতে দেয়া যায়। একটিকে অপরটির প্রতিপক্ষ ভাবার কোন কারণ নেই। বিজ্ঞান হোক আর ধর্মই হোক প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতবাদ রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব যুক্তি। আমার মতবাদই ঠিক, তোমারটা ভুল এমন ভাবার কোন কারণ নেই। প্রতিনিয়তই আমরা নতুন কিছু শিখছি। তারপরও কি কেউ দাবী করতে পারবেন যে তিনি সৃষ্টির সমস্ত রহস্য জেনে বসে আছেন। এখন পর্যন্ত এই বিশ্বব্রম্মান্ডের সব কিছুর ব্যখা কি মানুষ আদৌ করতে পেরেছে। যদি না পারে তবে সেই দিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যেদিন আমরা বলতে পারব সৃষ্টির রহস্য বলতে আসলে কোন কিছু নেই। তার আগে তোমার ধর্ম অযৌক্তিক আর আমার বিজ্ঞান যুক্তি সম্পন্ন এমন বলার কোন অধিকার আমার নেই।)