রহিম আলীর বয়স প্রায় ৬০ ছুই ছুই। পরিবারে ৪ সদস্য। সারাদিন রিকসা টানেন। সেই টাকায় কোন রকমে না খেয়ে দিন কাটে। এখন বয়স হয়ে গেছে। দূর্বল শরীরে রিকসা টানতে পারেন না। তারপরও কিছু করার নেই। না হলে না খেয়ে থাকতে হবে। ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে।এখন আর উনাকে তাদের প্রয়োজন নেই। উনার বরং তাদেরকে প্রয়োজন। কিন্তু একজন রিকসাওয়ালা বাবার সন্তান হওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই গর্বের কিছু নেই। তারাও তাই কাউকে উনার পরিচয় দিতে আগ্রহী নয়। উনার সাথে তারা থাকেও না।
বুড়ো রিকসাওয়ালার রিকসায় কেউ সাধারণত চড়তে আগ্রহী নয়। কারণ ব্যাটা বড় ধীরে টানে। কিন্তু তিনি কি আর করবেন। এই শরীরে যথাসম্ভব জোরে চালানোর চেষ্টা করে যান।
সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে তিনি বসেছেন এক চা দোকানে। দোকানের মালিক দোকানে টিভি লাগিয়েছে। এত করে কাস্টোমার ধরা যায়। কাস্টোমাররা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে টিভি দেখে। ব্যবসার ভাল পদ্ধতি। চা স্টলে তুমুল বির্তক হচ্ছে। লোকজনের চোখে মুখে উল্লাস খেলা করে। টিভিতে এই মাত্র অসম্ভব এক সার্কাস (থুক্কু অনুষ্টান) দেখিয়েছে। যেখানে দুই নেত্রী এক সাথে বসেছেন। আল্লার কি কুদরত তারা আবার নিজেদের মধ্যে কথাও বলেছেন। ইয়া মাবুদ রক্ষা কর- তারা পরস্পর কুশল বিনিময়ও করেছেন।
এবার হবে দেশের একটা বড় কিছু হবে। হতেই হবে। চারদিকে সুখ শান্তির বন্যা বয়ে যাবে। দেশের লোকজন তিন বেলা পদ্মার ইলিশ দিয়ে পেট ঢিম করে ভাত খাবে। কেউ আর দরিদ্র থাকবে না। মারহাবা-মারহাবা চারদিক থেকে লোকজনের কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে।
রহিম আলী অস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে আসেন। চা খাওয়ার মতো টাকা উনার কাছে নেই। চারদিকের আনন্দ উল্লাস রহিম আলীকে স্পর্শ করে না। মাছ-ভাত তিনি কখন খেতে পাবেন উনার জানা নেই। কিন্তু আজ রাতে উনার পরিবার নিয়ে তিনি কি খাবেন উনার জানা নেই। সারা দিন আজ কোন রোজগার পাতি নেই। পকেটে নেই একটি টাকাও।
সামনে এগিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর এক ক্ষুধার্ত রাত। উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। পেটে অসম্ভব ক্ষুধা আর মাথায় এক রাশ চিন্তা নিয়ে রাজপথ ধরে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন ক্লান্ত দেহ আর ক্লান্ত পা নিয়ে।
Friday, December 5, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment