কোরবানী ঈদ আসন্ন। বর্তমানে আমাদের দেশে এক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগ অনুভুতি কতটুকু কাজ করে আমার জানা নাই। কারণ আমরা বাঙালীরা এরই মধ্যে একে চরম বিনোদনের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি। কমন কিছু ব্যাপার প্রতি বছরই ঘটে থাকে। রাস্তায় বের হরেই বিভিন্ন প্রশ্নে সম্মুখীন হতে হয়। যেমন-
১. ভাই আপনি ছাগল না গরু? অর্থ হচ্ছে-আপনি ছাগল না গরু কি কুরবানী দিচ্ছেন।২. দাম কত? ৩. গোস্ত কতটুকু হবে? ধর্মীয় ভাবে মাংস শব্দটি উচ্চারণ করা নাকি নিষেধ। সম্ভবত এটা আমাদের দেশের হুজুর নিজস্ব আবিস্কার । বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ তাদের বাংলা ডিকশনারীর পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশের আগে এই শব্দটি এডিট করে নেবেন প্লিজ।৪. তারপর মন্তব্য। আপনি কি জিতেছেন নাকি ঠকেছেন।
একেক জন ধারালো দা ছুরি নিয়ে রাস্তায় বের হবে। ভয় পাবার কিছু নেই গরু জবাই করার জন্যে এগুলি লাগবে।
পত্রিকায় গলায় মালা পরা গরুর ছবি দিয়ে হেডলাইন হবে আজ হাটের সবচেয়ে বড় গরুটি কিনে নিয়েছেন অমুক ব্যবসায়ী। সম্ভবত বর্তমানে দেশে আর এর চেয়ে জরুরী কোন নিউজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইনি এবার সংসদ প্রদপ্রার্থী হিসেবে সবার দোয়া চেয়েছেন্। যদিও এই ভদ্রলোকের নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ আছে উনার বছরে আয় মাত্র ২৫ হাজার টাকা। অতএব এই বড় গরু কেনার রহস্য আমরা আন নাই বা বললাম। পেছনে গলায় মালা পরা, হাতে গরুর রশি নিয়ে গরুর মালিকের ছবি। যদিও নিন্দুকেরা এটাকে আরেকটা গরুর ছবি বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করে থাকে।
মোবাইল কোম্পানিগুলি আমাদের সেবায় সবার আগে এগিয়ে আসবে। গরু-ছাগলের হাটের অবস্থান জানতে আপনি আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন...তারপর সেন্ড করুন....নাম্বারে। দাম জানতে হলে গরু বা ছাগল লিখে সেন্ড করুন....নাম্বারে। প্রথনে আপনি খুশি হতে পারেন এই ভেবে মোবাইল কোম্পানীগুলি সম্ভবত ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। কিন্তু না অচিরেই আপনার ভুল ভেঙে যাবে যেই মাত্র আপনি মেসেজ পাঠাতে শুরু করবেন। কারণ বিঞ্জাপনের নীচে মাইক্রোস্কোপিক ফন্টে লেখা ছিল কন্ডিশন এ্যাপ্লাই। যা আপনি তাড়াহুড়ায় খেয়াল করেননি বা দেখলেও এর রহস্য ভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।এরই মধ্যে আপনার মোবাইলের ব্যালেন্সের দফারফা।
তারপর রয়েছে বিনোদন ম্যাগাজিনগুলিতে রান্নার মজাদার সব রেসেপি।গরুর কোন অংশ না ফেলে পুরা গরুটাকে কিভাবে রান্না করা যায় তার ইউনিক সব আইডিয়া।
ফ্রিজের দোকানগুরিতে ভিড়ের কারণে ঢুকা যাবে না। একটা ডিপ ফ্রিজ কোম্পানীর বিঞ্জাপন ছিল এ রকম-একটি গরু ফ্রিজের ভিতরে বসে আছে। মানে হচ্ছে এই কোম্পানীর ফ্রিজে এত জায়গা যে পুরো একটি গরুকে এর ভিতরে ঢুকানো যাবে। বলা বাহুল্য ঐ ফ্রিজের বিক্রি এবার সবোর্চ্চ ছিল। কারণ বাঙালী হচ্ছে হুজুগে জাতি।
টিভিতে কোমল পানীর বিঞ্জাপনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। কারণ গরুতো শুধু খেলেই হবে না একে হজমও করতে হবে। এদের ভাষা হবে এরকম-গরু হাম্বা হাম্বা করে, ঈদের আনন্দ বাড়ে.....।
টিভি অনুষ্ঠানের নামে কিছু বস্তা পচা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। যাতে গরু ছাগল নিয়ে কিছু স্থুল রসিকতা করে দর্শক হাসানোর চেষ্টা করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলির যদি ৫০ ভাগও আপনার ক্ষেত্রে মিলে যায় তবে আমাদের এই পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমরা ধরে নেব।
Thursday, December 11, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment