Saturday, January 31, 2009

ভালোবাসার অশ্রু

রিক্সাওয়ালা ছোকরার চেহারা দেখলে মনে হবে বেচারা এই মাত্র সদ্য ভুমিষ্ট হয়েছে। হাসান মনে মনে গাল দেয়-হারামজাদা। রিক্সা নয় যেন হারামজাদা হেলিকপ্টার চালাচ্ছিল। তবে হাসানই তাকে তাড়াতাড়ি চালানোর জন্যে উৎসাহ দিচ্ছিল। আনিকা তার জন্যে কলা ভবনের সামনে অপেক্ষা করছে। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে।
ছোকরা রিক্সাওয়ালা ১০-১২ বছরের ছোট একটি বাচ্চা ছেলের গায়ের উপর রিক্সা উঠিয়ে দিয়েছে। একটু সুযোগ পেলে অবশ্য হাসান কেটে পড়তে পারত। কিন্তু লোকজন এরই মধ্যে জটলা পাকিয়ে ফেলেছে। রক্তে বাচ্চাটির কাপড় চোপড় ভিজে যাচ্ছে।
আহারে কার বাচ্চা এমন করে এক্সিডেন্ট করল। চারদিক থেকে বিভিন্ন মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে। তাড়াতাড়ি একে হাসপাতালে পৌঁছানো দরকার। দেখা যাচ্ছে লোকজন সবাই বেশ সহানুভুতি সম্পন্ন।
পাবলিক সেন্টিমেন্টস খুব ভয়ঙ্কর জিনিস। মারপিটের কাজ পাবলিক খুব ভাল পারে। আর পাবলিক একবার মার শুরু করলে ইন্নালিল্লাহি না পড়ে ক্ষান্ত হয় না। তাই খুব সাবধানে এগুতে হবে। চিন্তা ভাবনা করে চাল দিতে হবে। চালে ভুল হলে সর্বনাশ।
হাসান ঠাস ঠাস করে রিক্সাওয়ালা ছোকরার দুই গালে চড় বসিয়ে দেয়। ফাজিল তোকে কে বলেছিল এভাবে রিক্সা চালাতে। আমি বার বার করে তোকে সাবধান করলাম। তোরা হলি গিয়ে লাত্থি-উষ্টার মানুষ। মুখের কোন কথা তোদের ভাল লাগে না।
প্রথম পর্ব শেষ। এবার লোকজন ভাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
হাসান চোখ মুখ করুন করে ফেলে। আহারে কোন মায়ের বুকের ধন। ভাইরা আসুন একটু সাহায্য করেন। একে হাসপাতালে পৌছানোর ব্যবস্থা করি।
এবার কাজ হল। একজন দুইজন করে লোকজন আস্তে আস্তে কেটে পড়তে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত হাসান আর রিক্সাওয়ালা রয়ে গেল। কে যায় উটকো ঝামেলাতে জড়াতে। রাস্তায় ভিড় করে এক্সসিডেন্টে আহত কোন ব্যক্তিকে দেখে আহা উহু করা এক জিনিস। এখানে যে কোন সময় কেটে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর দায়িত্ব নিয়ে তাকে হাসপাতালে পৌছে দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আরেক জিনিস। এর মানেই হল বজ্র আঁটুনিতে আটকে পড়া। তার অভিভাবককে খবর দাও। বেশী আহত হলে পুলিশ এসে জেরা করবে। যত্তসব ফালতু দরবার।
হাসান রিক্সাওয়ালা ছোকরাকে কেটে পড়তে ইশারা দিয়ে নিজেও কেটে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। কিছুদূর গিয়ে পেছনে ফিরে দেখে ছোকরা তার গায়ের শার্ট খুলে বাচ্চাটির মাথার রক্ত মুছে দিচ্ছে। শালার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি। তাকে ঝামেলা থেকে বাচানোর চেষ্টা করছি আর সে কিনা গাধার মত কাজ করছে।
হাসান হন হন করে এগিয়ে আসে। এ্যাই তুই বসে রয়েছিস কি মনে করে তাড়াতাড়ি ভাগ এখান থেকে।এ্যাইটুকু একটা বাচ্চারে এইভাবে একলা ফাল্যাইয়া চ্যইললা যামু। এরে হাসপাতালে না নিলে এতো মইরা যাইব।
হাসানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ব্যাটা বলে কি। তুই হাতেম তাই এর শেষ বংশধর নাকি। এখন সমস্যা হচ্ছে রিক্সাওয়ালা ছোকরাকে কোনভাবেই নাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে হাসানও যেতে পারছে না। কারণ এখন সে চলে গেলে সামান্য এই রিক্সাওয়ালার কাছে হেরে যেতে হবে। এটা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। কোথায় আমি হাসান একজন ইউনিভার্সিটিতে পড়া ব্রিলিয়ান্ট একজন স্টুডেন্ট আর কোথায় এই রিক্সা ড্রাইভার। যে কাজটা আমার করা দরকার তা এই ছোকরা করে ফেললে আমার তো মান সন্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।
হাসান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। হাসান বাচ্চাটাকে নিয়ে রিক্সার সিটে উঠে বসে। রক্তে অবশ্য হাসানের কাপড় নষ্ট হচ্ছে। কি আর করা। আনিকার সাথেও আজ আর দেখা হচ্ছে না। আজ হাসানের জন্মদিন। আনিকা তাকে উইশ করার জন্যে গিফট নিয়ে অপো করছে। খুব রেগে যাবে। এমনিতেই আনিকা অল্পতেই রেগে অস্থির হয়ে যায়। হাসানের একবার মনে হয় সব ফেলে সে চলে যায়। কিন্তু সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সায় বসে থাকে।
এ্যাই তুই কাছের কোন হাসপাতালে রিক্সা নিয়ে চল।আনন্দে ছোকরার দাঁত বেরিয়ে পড়ে। মহা উৎসাহে সে রিক্সা টেনে নিয়ে চলে। হাসান বুঝতে পারছে না গর্দ্ধভটা এত খুশির কি দেখল।
সারাদিন হাসানের হাসপাতালেই কাটে। আজকাল হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করানোও মহা ঝামেলার ব্যাপার। কিভাবে এক্সসিডেন্টে হল। পেশেন্ট আপনার কি হয়। প্রভৃতি নানান ধরনের প্রশ্ন।
বাচ্চাটির পকেটে তার স্কুলের আইডি কার্ড থাকাতে সেখান থেকে তার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে তার মা-বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এসে পড়লে হাসানের ছুটি। বাকী ঝামেলা তারাই সামলাক। এর মধ্যে অবশ্য হাসান উধাও হয়ে যেতে পারত। কিন্তু বাচ্চার মা-বাবা অনুরোধ করেন তারা না আসা পর্যন্ত সে যেন হাসপাতালেই থাকে।
বাচ্চার মা-বাবা চলে এসেছেন। মা থেকে থেকে চোখ মুছছেন। বাবা কয়েকটা পাঁচশত টাকার নোট হাসানের পকেটে গুজে দেন। বাবা তুমি আমার ছেলের মত। আমাদের একমাত্র ছেলের জন্যে তুমি যা করলে তোমার এই ঋণ আমরা কখনও শোধ করতে পারব না। না হলে আজকাল কে কার জন্যে এতকিছু করে। শুধু চিকিৎসার খরচ বাবদ তোমাকে এই টাকা কটি দিলাম। ফিরিয়ে দিলে আমরা মনে খুব কষ্ট পাব।
হাসান মনে মনে ভাবে এরা বোধ হয় জানে না তাদের ছেলে হাসানেরই রিক্সা দিয়ে এক্সসিডেন্টে করেছে। আর আসলেই তার হাসপাতালের ডাক্তার ওষুধ প্রভৃতির পেছনে অনেক টাকা চলে গেছে। তাই এই টাকা সে ফিরিয়ে দেবে এত বোকা সে নয়। তারপরও সে চেহারায় গোবেচারা একটি ভাব ফুটিয়ে তোলে যেন খুব অনিচ্ছা সত্বেও সে এই টাকা নিচ্ছে।
এবার বিদায়ের পালা। সৌজন্যমূলক দু একটা কথা বলে হাসান বিদায় নেয়। একটু পরে হাসান ঘাড় ফিরিয়ে দেখে মা-বাবা দু জনেই তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। দু জনের চোখেই পানি টলমল করছে। সেন্টিমেন্টস জিনিসটা হাসান একদম সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এই মুহূর্তে সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই সে তাড়াতাড়ি ঘাড় ফিরিয়ে নেয়। কারণ তাদের এই অশ্রু ভালোবাসার অশ্রু। এর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তার চোখও ভিজে আসবে। সে তার চোখের পানি কাওকে দেখতে দিতে চাচ্ছে না।
বাইরে বেরিয়ে সে অবাক হয়, সেই রিক্সাওয়ালা ছোকরা এখনও রয়েছে। বাইরে বারান্দার এক কোনে বসে রয়েছে। হাসান তাকে ধমক দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। রাগী গলায় বলে- কিরে তুই বসে আছিস কি মনে করে। তোরতো এমনিতেই সারাদিন কোন রোজগার হয়নি।কেমন গাধা দেখ। ধমক শুনেও কি রকম দাঁত বের করে রেখেছে। যেন সারাদিন রোজগার না হওয়াটা কোন চিন্তার বিষয় না। হাসান ঘোর লাগা চোখে ছোকরার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সামান্য পুঁচকে ছোকরা নিজের অজান্তে আজ হাসানকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে।
হাসান তার পকেট থেকে পাঁচশত টাকার নোট কটি বের করে ছোকরার হাতে ধরিয়ে দেয়। বাড়ী চলে যা। বাচ্চা ভাল আছে। তার মা-বাবা চলে এসেছেন। আর কোন চিন্তা নেই।
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাসান হন হন করে হাঁটতে শুরু করে দেয়। একবারও সে পিছনে ফিরে তাকায় না।
(ব্রিটিশ গায়ক ইউসুফ ইসলাম গাজার শিশুদের জন্য একটি গান গেয়েছেন। এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার সহায়তা তহবিলে দান করা হবে। অন্য ব্রিটিশ চ্যানেলগুলি সেই গান প্রচারে রাজী হলেও বিবিসি চ্যানেল অপারগতা প্রকাশ করেছে। বিবিসির মহাপরিচালক এর যুক্তি হচ্ছে এতে করে সবাই ভাববে আমরা গাজা এবং ইসরাইলের মধ্যে যে যুদ্ধ হল সেখানে আমরা গাজার জনগণের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছি। কি চমৎকার যুক্তি! সভ্য দুনিয়ার সভ্য একজন লোকের একি ভাষ্য।
১৯৭১ এ জর্জ হ্যারিসন নামে এক বিদেশী গায়ক হাতে গিটার তুলে নিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহের আশায়। গেয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত মর্মস্পর্শী এক গান। গানের প্রতিটি সুরে ঝরে পড়েছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ ছিল অসম্ভব হৃদয়বান এক মানুষের আমাদের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সব কিছুর উপরে এখানে স্থান পেয়েছে মানুষের প্রতি মমতা, ভালোবাসা। অন্য কোন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য এখানে কাজ করেনি।
তাই বিবিসির এ ধরনের আচরণে বলতে বাধ্য হচ্ছি- হায়! বিবিসি তোমার অপার লীলা কে বুঝিতে পায়।)

Wednesday, January 14, 2009

যুদ্ধ বনাম মানবতা

গাজায় ইসরাইলী অন্যায় হামলার প্রতিবাদ এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি থাকার প্রতিবাদে মহাথীর মোহাম্মদ এর আহবানে মালয়শিয়ায় মার্কিনপণ্য বর্জন শুরু হয়েছে। প্রথম পদক্ষেপে কোমল পানীয় বিক্রি বন্ধ হতে যাচ্ছে। পরবর্তীতে আরও ১০০ টি পণ্য বর্জন করা হবে। মহাথীর মোহাম্মদ বিম্বের সফল রাষ্ট্রনায়কদের একজন। বলা হয়ে থাকে একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক ভবিষ্যত দেখতে পান। ক্ষমতায় থাকাকালীন উনার অজান্তে কিছু দিন উনার অফিস সময় সূচী ট্রেক করা হয়। এমন কোন দিন পাওয়া যায়নি যেদিন তিনি অফিস আওয়ারের পর অফিসে পৌছেছেন। সেই মহাথীর যখন কোন কথা বলবেন নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন যুক্তি থাকবে।
প্রথমে মনে হতে পারে তিনি আবেগে বশবর্তী হয়ে এধরনের একটি অযৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে এর কারণটা বোঝা যাবে। বর্তমানে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি হচ্ছে মার্কিন পণ্য বাজারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। মার্কিন রাজস্বের একটা বড় অংশ আসে এখান থেকে। বিশ্বের যে সব দেশগুলিতে মার্কিন পণ্যের বড় ধরনের বাজার রয়েছে সে সব দেশগুলিতে যদি মার্কিন পন্য বর্জন শুরু হয় তবে মার্কিন অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে বাধ্য। এবং এটাই একমাত্র উপায় মার্কিন প্রশাসনের অহঙ্কারী মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেবার। মার্কিন প্রশাসন মুখে যত বড় বড় কথাই বলুক তাদের অর্থনীতির উপর কোন ধরনের আঘাত আসলে তারা যে কোন অবস্থায় তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। এবং এভাবেই তাদের নতজানু করে কোন দাবী আদায় সম্ভব হবে।

এর বড় একটি উদাহরণ হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে কিছুদিন আগে এক ঝাড়ুদার পদের জন্য ডক্টরেট করা একজন বিজ্ঞানী এ্যাপ্লাই করেছেন। বাংলাদেশ থেকে কোরিয়া অনেক ডেভেলপমেন্ট একটি কান্ট্রি। সেখানেই এ অবস্থা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কর্তৃপক্ষ উনাকে নেননি কারণ একজন বিজ্ঞানী আর যাই পারুক ঝাড়ু দেয়ার কাজ ঠিক মত করতে পারবেন না। এ থেকেই বোঝা যায় পশ্চিমা বিশ্বও বর্তমানে তাদের অর্থনীতি নিয়ে খুব চিন্তিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে মিটিং, সভা সমিতি আর রাস্তায় বিক্ষোভ আর মিছিল করে মার্কিন প্রশাসনের খুব একটা কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ শুধু আবেগ দিয়ে যুদ্ধে জয় লাভ করা যায না। ইসরাইলের মত ছোট একটি দেশ বিশ্ব জনমতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের যুদ্ধ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই সাহসের পেছনে এক মাত্র কারণ হচ্ছে তাদের প্রাণের দোসর আমেরিকা তাদের পেছনে রয়েছে। এদের কাছে মানবতা বলে কোন কিছু নেই। স্বার্থের জন্য এরা পারে না এমন কিছু নেই।

তবে এর উল্টা দিকও আছে। অনেক দেশ থেকে বিভিন্ন পন্য আমেরিকায় যায়। এটা করা হলে ঐ সব দেশের অর্থনীতিও হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়বে। সাময়িক এ ক্ষতিটুকু আমাদের মেনে নিতে হবে। কারণ ভাল একটা কিছু করতে গেলে কিছু সমস্যা আসবেই।

এখন মধ্যপ্রাচ্যের আরব শেখদের মাথায় এটা ঢুকলেই হয়। কারণ মার্কিন বিলাসী পণ্য ছাড়াতো তাদের আবার এক দিনও চলে না। মদ থেকে শুরু করে বাথরুম করার টিস্যু পেপারটা পর্যন্ত তাদের মার্কিন হওয়া চাই। এখন সময় এসেছে তাদের হারেম থেকে বেরিয়ে এসে গায়ের চর্বি একটু কমানোর। কয়েক দিনের জন্য সুরা পান একটু বন্ধ রাখলে খুব একটা ক্ষতি হবে না।
ভাল কোন কিছুর জন্য এগিয়ে আসলে ঈশ্বর অবশ্যই সহায়তা করবেন।

Monday, January 12, 2009

নরকের দূত

নরকে শয়তানের দিন খুব একটা ভাল কাটছে না। অনেক দিন পৃথিবীতে মজার কোন ঘটনা ঘটছে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ আর কতকাল ভাল লাগে। পৃথিবীতে উনার সাগরেদরা (বুশ-কন্ডোলিনা-ডিক চেনি-ব্লেয়ার সহ আরও অনেকে) আজকাল তেমন ভাল কাজ দেখাতে পারছে না। তবে তাদের খুব একটা দোষ দিয়েও কোন লাভ নেই। পৃথিবীতে টেকনোলজির এত দ্রুত উন্নতি ঘটছে যে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। দুনিয়া চলে আসছে মানুষের হাতের মুঠোয়। তবে এর একটা ভাল দিকও আছে। মানুষ দিন দিন হয়ে পড়ছে আবেগশূন্য। তেলের জন্য ইরাকে, এক খন্ড জমির জন্য গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। বড় বিচিত্র এ যুগের মানুষ। এদের বোঝা খোদ ইবলিশ শয়তানের পক্ষেও দুস্কর।

তবে সেদিন পৃথিবী থেকে উনার এক সাগরেদ মেইল পাঠাল। মেইল পড়ে হাসতে হাসতে উনার অবস্থা কাহিল। অনেক দিন এমন মজার ঘটনা ঘটেনি। ঢাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়ানোর তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই দল মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি এবং এক পর্যায়ে জুতা চালাচালি চলেছে।

দিন দিন মানুষের কাছে জুতা খুব পছন্দের জিনিসে পরিণতে হয়ে পড়ছে। সেদিন ইরাকে বুশকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করা হল। সংসদের মধ্যে অনেক সময় এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে জুতা চালাচালি করে। আর আজ মসজিদে ইমামতি করা নিয়ে জুতা মারার ঘটনা ঘটল। তবে মজার ঘটনা হচ্ছে এই সব মুসল্লিরাই ধর্ম নিয়ে বেশী চিল্লা ফাল্লা করে থাকে। কথায় কথায় মসজিদ আল্লার ঘর বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। রাস্তার পাশে গড়া ভাস্কর্য ভাঙার জন্য মাথায় পাগড়ি বেঁধে ইয়া আলী বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই তারাই মসজিদের ভেতরে এরকম এক ঘটনা ঘটাল। তখন ধর্মের কোন সমস্যা হয়নি। প্রথম এ্যাকশন শুরু হয় নামাজের পূর্বে। যখন ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করার জন্য উঠে দাঁড়ান। পুনরায় দ্বিতীয় এ্যাকশন শুরু হয় নামাজের পর।
আবার এই দেশের ছেলেরাই তাদের ভাষা, তাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

এই দেশের লোকদের কোন ভাবেই বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত নরকের শয়তান সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়-সত্যিই বড় বিচিত্র এই দেশ। আরও বিচিত্র এই দেশের লোকজন।

Friday, January 9, 2009

যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায় মৃত্যু


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজের কাছাকাছি একটি হোটেলে বর্তমানে অবস্থান করছেন। এই হোটেলটি বেছে নেবার প্রধান কারন হচ্ছে উনার মেয়ে। উনার দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। এদের পড়াশোনা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, এরা প্রতিদিন যাতে সহজে স্কুলে যেতে পারে এর জন্যে তিনি স্কুলের কাছাকাছি এই জায়গাটি বেছে নিয়েছেন। একজন আদর্শ বাবার মত কাজ। ভাল লাগল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি তার পরিবার, তার সন্তানদের প্রতি উনার কর্তব্য ভুলে যাননি।

অন্য দিকে বর্তমানে গাজায় ইসরাইলী বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে তা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এখানে এদের নতুন বছর শুরু মৃত্যুর বার্তা নিয়ে। নতুন বছরের শুরুটা এদের কাছে বিভিষীকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন এখানে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত্যু, বারুদ আর রক্তের গন্ধ।

ওবামা আপনি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় এতদূর পর্যন্ত এসেছেন। গাজায় সংঘটিত অন্যায় নিয়ে পৃথিবী ব্যাপী সচেতন মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেখানে আপনি নিশ্চুপ। আপনার ভালোবাসা শুধু আপনার সন্তানের জন্য সীমাবদ্ধ। গাজার হাজার হাজার শিশুর জন্য আপনার কোন সহানুভুতি নেই। এরাওতো কারো সন্তান। আপনার বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলের পর আনন্দ করে বাড়ী ফিরে আসে। সেই মুহুর্তে এখানকার বাচ্চারা মৃত্যু ভয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটাছুটি করছে। এটা হয়ত আপনাকে স্পর্শ করেনা। রাতে আপনি নিশ্চেন্তে ঘুমিয়ে থাকেন পরদিন ভোরের অপেক্ষায়। এখানকার লোকজন জানে না রাতের পর তারা পরদিন ভোরের আলো দেখতে পাবে কিনা। কারণ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। আপনি চলেন যুক্তি দিয়ে। আবেগ দিয়ে চললে আপনি ভালো প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।

ইসরাইল আপনাদের মিত্র দেশ। ইসরাইল যে মরণাশ্রগুলি গাজায় ব্যবহার করছে তা আপনাদেরই তৈরী। গাজায় যে বুলেটগুলি রক্ত ঝরাচ্ছে তার প্রতিটির গায়ে লেখা থাকছে মেড ইন ইউ.এস.এ। আপনার কিবা করার আছে। কারণ আপনিতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এদের লাশ পাড়ি দিয়ে আপনাকে যেতে হবে অনেক দূর।

ওবামা আপনাকে কি নব বর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাব?
কিন্তু আমাদের কার্ডেতো শুধু মৃত্যু আর লাশের ছবি।
আপনাদের এখানে বাতাস কি খুব নির্মল?
বাতাসে বারুদের গন্ধে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারি না।
আপনাদের আকাশটা কি আজ খুব নীল?
আমাদের এখানে আকাশ সবসময় রক্ত লাল।
আপনি কি প্রতিদিন নিম্চিন্তে ঘুমাতে পারেন?
আমরা ঘুমাতে পারি না মর্টার আর গুলির শব্দে ।
আপনাদের শিশুর জন্যে আমরা পাঠালাম শুভ কামনা
আমাদের শিশুদের জন্য আপনারা কি পাঠাবেন?

Tuesday, January 6, 2009

একটি স্বপ্নের মৃত্যু



তখনও ভাল করে ভোরের আলো ফোটেনি। রান্নাঘর থেকে দালিহার বাসনপত্র নাড়াচাড়ার শব্দ ভেসে আসছে। তার স্বামী খুব ভোরে কাজে চলে যায়। তার জন্য খাবার তৈরীতে দালিহা ব্যস্ত। খাবার শেষ করে দালিহার স্বামী ঘুমন্ত দুই বাচ্চার গালে চুমু খায়। দালিহার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
প্রভাতের প্রথম রশ্মি তার ঘুমন্ত বাচ্চাদের মুখে এসে পড়ে। একটার বয়স আট, অপরটির চার। দালিহা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। ভোরের এই আলোয় তার সন্তানদের মুখ স্বর্গের দেবদূতের মতো মনে হয়। ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের বাড়ী। এক সময় তাদের স্বচ্ছল পরিবার ছিল। কিন্তু তাদের দেশে বিদেশী সৈন্যদের অগ্রাসনের পর থেকে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। এখন তাদের সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে খাবার যোগাতে হয়। তারপরও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা সব কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে। তারা স্বপ্ন দেখে একদিন তাদের দেশ স্বাধীন হবে। দূর হয়ে যাবে সব কষ্ট।
একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও তাদের নিজ ইচ্ছায় কোন কিছু করার স্বাধীনতা নেই। তাদের দেশ কি কখনও সত্যিকারভাবে স্বাধীন হবে না। দালিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হঠাৎ করে তাদের বাড়ীর ছাদের উপর দিয়ে একটি প্লেন উড়ে যায়। অজানা আশংকায় দালিহার বুক কেঁপে উঠে। দালিহা ছুটে যায় তার ঘুমন্ত দুই শিশুর দিকে। কিন্তু মাঝ পথেই তাকে থেমে পড়তে হয়। তাদের বাড়ীর ছাদ তার উপর ভেঙে পড়ে। ইসরাইলি যুদ্ধ বিমান তাদের বাড়ীর উপর বোমা নিক্ষেপ করেছে। দালিহা মারা যাবার আগে আগে ফিসফিস করে বলতে থাকে-হে, করুণাময় আমার প্রানের বিনিময়ে হলেও তুমি আমার সন্তানদের রক্ষা কর। দালিহার জানা নেই তার দেব শিশুরা তার আগেই মারা গিয়েছে।
(টিভিতে বা পত্রিকায় যখন আফগানিস্তানে ইসরাইলী হামলার খবরগুলি পড়ি তখন মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপর খুব অভিমান হয়। কিন্তু পরক্ষণে মনে হয় অভিমানতো করে আছেন তিনি আমাদের উপর। ইসরাইল কি এমনই এক মহাশক্তি যাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে খোদ সৃষ্টিকর্তাকে পৃথিবীতে নেমে আসতে হবে। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষরা তাহলে কি করব। স্বয়ং ইসরাইলে এ হামলা বন্ধ করার জন্য রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছে। তারপরও আমেরিকা এ হামলাকে বৈধতা দেযার চেষ্টা করছে। ওসামা-বুশ সব একই পথের পথিক। আর পম্চিমা বিশ্বের পদলেহনকারী সংস্থা জাতি সংঘের কথা নাই বা বললাম। ইসরাইলী বাচ্চারা মিসাইলের উপর দুষ্টুমি করে ছড়া লিখছে আর সেই মিসাইল ফেলা হচ্চে আফগান শিশুদের উপর।)
সব মৃত্যুই কষ্টের। কিন্তু কিছু মৃত্যু আছে যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না..........
এখানে প্রতিদিন ভোর হয় ট্যাংক, মর্টার আর গুলির শব্দে
তোমরা কি তা শুনতে পাও?
এখানে বাতাসে ভেসে বেড়ায় মৃত্যু আর লাশের গন্ধ
তোমরা কি তা অনুভব করতে পারো?
মরুভূমির মাঝে দুপুর আসে প্রখর রৌদ্র তাপ নিয়ে
পুড়িয়ে দিয়ে যায় সব কিছু আর তার সাথে পুড়তে থাকে
দুমড়ানো পুতুলের মত রাস্তায় পড়ে থাকা বাচ্চাদের মৃত দেহগুলি
তোমরা কি তা দেখতে পাও?
সন্ধ্যার গোধূলি রক্তে রাঙিয়ে দেয় আকাশটাকে
তোমরা কি জানো এটা আমাদেরই রক্ত?
চুপি চুপি রাত আসে আমাদের আধাঁরে ঢেকে দিতে
এই আধাঁরে ঢেকে যায় আমাদের সব স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্খা
এই আধাঁর কি ঢেকে ফেলতে পারবে তোমাদের ব্যার্থতার লজ্জা?

হবু প্রেসিডেন্ট বনাম অশ্বডিম্ব


অবশেষে কে হতে যাচ্ছেন আমাদের দেশের ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যেই দুই দেশ রত্নের মাঝে শুরু হয়ে গেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। শেষ পর্যন্ত যিনি বড় হাড্ডিটি পাবেন (থুক্কু যিনি সরকারী দলের অধিক সমর্থন পাবেন)তিনিই হবেন আগামী দিনের প্রেসিডেন্ট। ১৫ কোটির লোকের ভাগ্য তার উপর নির্ভর করে আছে।
স্বর্গের দারোয়ান খুব হই চই শুরু করে দিল। একজন লোক বিনা অনুমতিতে স্বর্গে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। দারোয়ান তাকে কিছুতেই ঢুকতে দিবে না। সেই লোকও নাছোড়বান্দা। অবশেষে দারোয়ান তাকে স্বর্গের দেবদূতের কাছে নিয়ে গেল।
দেবদূতকে দেখেই লোকটা হড়বড় করে বলতে শুরু করে দিল। ‌মিস্টার দেখুন, আমি বুঝতে পারছি না, আমাকে কেন স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমি একজন সন্মানিত লোক, স্বর্গই আমার উপযুক্ত স্থান হওয়া উচিত। দেবদূত কিছক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থেকে গম্ভীর গলায় বললেন, কিন্তু আমি যতোদূর জানি, তোমাকে তো নরকে প্রবেশের টিকেট দেয়া হয়েছে। এই টিকেটে তো তুমি স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না। তাহলে নিশ্চয়ই আপনাদের সফটওয়্যারে কোন ঘাপলা হয়েছে। না হলে এই ধরনের ভুল হতে পারে না।দেবদুত অবাক হয়ে জিঞ্জাসা করলেন, সফটওয়্যার? সেটা আবার কি জিনিস?এবার অবাক হওয়ার পালা ওই ব্যক্তির। তারমানে বলতে চাচ্ছেন, আপনাদের স্বর্গে কোন কম্পিউটার নেই। তাহলে আপনারা আপনাদের হিসেব পত্র কিভাবে করেন।
দেবদূত বিরক্ত গলায় বললেন, কি যা তা বলছো। তোমাদের ধর্মগ্রন্থে কি স্বর্গের বর্ণনা দেয়া নেই, সেখানে কি কম্পিউটারের কথা লেখা আছে?লোকটা কিছুটা অপ্রসতুত হয়ে পড়ে বলে, না সেটা বলছি না। কিন্তু ধর্মগ্রন্থে যে স্বর্গের বর্ণনা দেয়া আছে তা তো হাজার বছরের পুরনো স্বর্গ। এরমধ্যে পৃথিবী এত এগিয়ে গেছে, স্বর্গেও নিশ্চয়ই ব্যাপক পরিবর্তন যটেছে।
গাধার মতো কথা বলো না। দেবদূত ধমকে ওঠেন। তুমি কি কখনও সূর্যকে পশ্চিম দিকে উঠতে দেখেছ, মাছ কে আকাশে উড়তে অথবা পাখিকে নদীতে সাতার কাটতে। এটা এমনই একটা সিস্টেম যা কখনই ক্রাশ করে না। তাহলে কোন যুক্তিতে ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা পরিবর্তিত হবে।ঠিক আছে, আপনার কাছে অনুরোধ করছি, আমার ফাইলটা পুনরায় রি-ওপেন করে দেখা হোক।দেবদূত লোকটাকে হিসাবরক্ষণ অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
অফিসার ফাইলপত্র ঘেটেযুটে লোকটার ফাইলটা খুজে বের করেন। ফাইল উল্টিয়ে অফিসার চেঁচিয়ে ওঠেন, সর্বনাশ! ফাইলে দেখা যাচ্ছে, জীবিত অবস্থায় তুমি একটি দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলে, তাও তৃতীয় বিশ্বের দূর্নীতিগ্রস্থ একটি দেশের। তাহলে তুমি এমন একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে নিজেকে কিভাবে সৎ এবং আদর্শবান লোক হিসেবে দাবী করছ। তোমার জন্যে তো নরকই উপযুক্ত স্থান। সেখানে খোঁজ করলে তুমি তোমার অনেক বন্ধু-বান্ধবও পেয়ে যেতে পার।
লোকটা এবার মরিয়া হয়ে ফাইলের কিছু পেপার কাটিংয়ের দিকে অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে ওঠে, তাহলে এগুলো কি? এ ছবিগুলিই প্রমাণ করে, আমার সময় দেশের লোকজন কত সুখে ছিল। এখানে সবগুলিই হাসি-খুশি লোকজনের ছবি। আমার একেকটি সভায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হতো। আমি অসৎ ব্যক্তি হয়ে থাকলে এটা কিভাবে সম্ভব?
হিসাবরক্ষণ অফিসার কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন, বুঝতে পারছি না তোমাকে নিয়ে আসলে কি করা উচিত। তোমার রিপোর্টের সঙ্গে তোমার কথাবার্তার কোন মিল নেই। বেশ জটিল কেস। সবচেয়ে ভাল হয়, তুমি ঈশ্বরের সাথে কথা বল।ঠিক আছে, সেই ভাল, লোকটা উৎসাহিত হয়ে উঠে ঈশ্বরকে কখন পাওয়া যাবে?এখানে সময় বলতে কোন জিনিস নেই। হিসাবরক্ষণ অফিসার ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ওঠেন।তাহলে আপনাদের এখানে আইনস্টাইন-এর টাইম অফ রিয়েলিটির সূত্র কাজ করছে।এটা আবার কি জিনিস? অফিসার জানতে চান।আইনস্টাইন হচ্ছেন অনেক বড় একজন বিঞ্জানী। এটা তার বিখ্যাত একটি সূত্র। আচ্ছা তার তো আপনাদের এখানেই থাকার কথা। হ্যাঁ এবার চিনতে পেরেছি। অফিসার বলে ওঠেন। কিন্তু তার মামলা তো এখনও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।কি বলছেন, এতো মহৎ একজন বিঞ্জানী! তিনি এখনও স্বর্গে যাননি!আমি ঠিক জানি না। তুমি এ ব্যাপারে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারো।
অবশেষে এক সময় ওই লোক ঈশ্বরের মুখোমুখি হয়। বিনীতভাবে জানতে চায়, ঈশ্বর, প্রথমেই আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি আইনস্টাইনকে কেন এখনও স্বর্গে পাঠানো হচ্ছে না। তিনি মানুষের উপকারের জন্যে কত বড় বড় আবিস্কার করেছেন। মানুষের সেবাইতো সবচেয়ে বড় ইবাদত, তাই নয় কি!
ইশ্বর গম্ভীর স্বরে বললেন, তোমার এই বিঞ্জানী আনবিক শক্তি নামের একটি ভয়াবহ জিনিসও আবিস্কার করেছে। একেকটা আণবিক বোমা যখন একেকটা শহরকে গুড়িয়ে দেয়, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন তুমি এর জন্যে কাকে দায়ী করবে? যতোদিন তোমরা আণবিক বোমা তৈরী বন্ধ না করবে ততোদিন পর্যন্ত তো তোমাদের আইনস্টাইন স্বর্গে যেতে পারছে না।কিন্তু ঈশ্বর, এর জন্যে তো আমরা মানুষরাই দায়ী। আইনস্টাইন তো নিশ্চয়ই মানুষ মারার জন্যে আণবিক বোমা তৈরী করা হবে এ কথা আগে থেকে জানতেন না।ঈশ্বর মৃদু হেসে বললেন, তোমার কথা আংশিক ঠিক। তোমাদের আইনস্টাইন ভালভাবেই জানতো তার এই আবিস্কার কি কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে এটা ঠিক, এর ক্ষমতা যে এত ভয়াবহ হবে এটা বোধহয় সেও জানত না। ঠিক আছে, তোমার যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়েছি। এতো দিনে নিশ্চয়ই তোমাদের বিঞ্জানীর স্বর্গে যাওয়ার সময় হয়েছে। তাকে স্বর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
ধন্যবাদ ঈশ্বর। এবার আমার কেসটা একটু দেখবেন।তুমি তোমার দেশের জনগণকে সুখে রেখেছিলে এটা কি প্রমাণ করতে পারবে?অবশ্যই পারব। এই দেখুন বলে লোকটা পকেট থেকে অনেকগুলি রঙ-বেরঙ এর চশমা বের করে। লোকটা একটা চশমা এগিয়ে দেয় ঈশ্বরের দিকে। আমার দেশের চারদিকে যখন অন্যায়-অত্যাচার বেড়ে যেতো তখন আমার দেশের জনগণকে এই চশমা পরতে বলতাম। চশমা চোখে দিয়ে ঈশ্বর অবাক হয়ে বলেন, আশ্চর্য! তোমার চশমা দিয়ে তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মজা তো এখানেই, লোকটা উৎসাহিত হয়ে বলে। আপনি এই চশমা পরলে আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অত্যাচার কিছুই দেখতে পাবেন না। আবার আমার দেশের জনগণ যখন কষ্টে থাকতো তাদের এই ভার্চুয়াল চশমা পরতে বলতাম। এই চশমা পরলে আপনার সামনে একটি কল্পনার জগৎ তৈরি হবে। এখানে আপনি যা দেখতে চান তা-ই দেখতে পারবেন। দুঃখ-কষ্ট আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
ঈশ্বর মৃদু হাসলেন।তোমার চমৎকার আইডিয়াতে মুগ্ধ হয়ে এক্ষুণি তোমাকে স্বর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। কিন্তু এখানে ছোট্র একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্বর্গে যাওয়ার শেষ গাড়িটা একটু আগেই ছেড়ে গেছে। গাড়িতে একটা সিটই খালি ছিল। তোমার কথামতো ওই সিটে তোমাদের বিঞ্জানীকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তোমাকে পরবর্তী গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।কোন সমস্যা নেই। তা আপনাদের পরবর্তী গাড়ি কয়টা সময় ছেড়ে যাবে। লোকটা হাত নেড়ে জানতে চায়।
আজ থেকে ঠিক এক হাজার বছর পর। ঈশ্বর নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দেন। ততোদিন পর্যন্ত তোমাকে নরকেই কাটাতে হচ্ছে। আমার মনে হয় তোমার কোন সমস্যা হবে না। কারণ তোমার কাছে তোমার ভার্চুয়াল চশমা তো রয়েছেই। এটা দিয়েই তুমি নরকে বসে দিব্যি স্বর্গ দেখতে পাবে।

আহা মুক্তির আনন্দ!


সুমন আধো জাগরনের মাঝে বুঝতে পারছে না সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি এটা বাস্তবে ঘটছে। এখন আর অনুভুতিগুলি ঠিকমত কাজ করছে না।
আজ কয় দিন হয়ে গেছে তারা এতগুলি লোক এই মাঝ সাগরে ভাসছে। দালালরা তাদের সামান্য কিছু খাবার দিয়ে ছোট্র একটি নৌযানে তুলে দিয়ে মাঝ সাগরে ছেড়ে দিয়েছে। আজ কয় দিন হয়ে গেছে ডাঙার দেখা নেই।
বাবার গ্রামের জমি জমা সব বিক্রি করে দিয়ে সুমন এখানে এসেছিল বিদেশে যাবার আশায়। একবার বিদেশে যেতে পারলে তার টাকা দিযেই সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসবে। তার মত আরও অনেকেই এভাবে এসে প্রতারিত হয়েছে। দালালের হাতে তারা তাদের সারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় তুলে দিয়েছে। প্রথম প্রথম অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত দালালরা তাদের নৌপথে বিদেশে পাঠাবে বলে জানায়। এতে তাদের কম খরচ পড়বে। কম খরচে বিদেশ যাবার আশায় তারা তাতেই রাজী হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের এই অবস্থায় ফেলে রেখে দালালের সব লোকজন কেটে পড়েছে। এক সময় ফুরিয়ে এসেছে খাবার। কিন্তু গন্তব্য না জানা থাকায় তারা ভেসে চলেছে অনিম্চিত ভাবে।
তারা এতগুলি লোক দিনের পর দিন অনাহারে আছে। প্রচন্ড ঠান্ডা শরীরের মাংস কেটে হাড়ে কামড় বসাচ্ছে। ঠান্ডায় সমস্ত শরীর নীল হয়ে গেছে। এক জনের পর একজনকে মৃত্যু এসে গ্রাস করে নিচ্ছ। কি অবলীলায় তারা মৃতদেহগুলি সাগরে ছুড়ে ফেলছে। সাগরের ঢেউ এসে নিয়ে যাচ্ছে দেহগুলি। সুমন জানে এক সময় তার সঙ্গীরা তাকেও সাগরে ছুড়ে ফেলবে। মৃত্যু এখন শুধু অপেক্ষার ব্যাপার মাত্র। আর কোন দিন তার দেখা হবে না আপনজনদের প্রিয় মুখগুলি। সবাই অপ্রকৃতিস্থতের মত আচরণ করছে। কয়েকজন বাঁচার আশায় ঝাপিয়ে পড়েছে খোলা সাগরে। কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালায় নিজের শরীর কামড়াচ্ছে।
সুমন দেখছে সে একটি পাখি হয়ে গেছে। পাখিটি আটকা পড়েছে একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে। বের হবার কোন পথ পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে পাখিটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে আলো দেখতে পায়। পেয়ে যায় বের হবার পথ। আহা মুক্তির কি আনন্দ। পাখিটি ডানা মেলে মুক্ত নীল আকাশে।
সুমন মারা যাবার আগে প্রলাপ বকতে শুরু করে-হে ঈশ্বর, যারা আমাদের এই অবস্থার জন্যে দায়ী তাদের তুমি ক্ষমা করো না। ক্ষমা করো না সেই সব লোকদের যারা চোখের সামনে দিনের পর দিন এধরনের অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকে।
(বিদেশে যাবার আশায় দালালের হাতে প্রতারিত হয়ে আবারও ঝরে গেছে অনেকগুলি তাজা প্রান। এবার যা ঘটেছে তা অতি ভয়াবহ। কয়েকশ লোককে একটি নৌযানে উঠিয়ে দিয়ে সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে লাইট হাউসের অলোকে ডাঙা ভেবে অনেকে ঝাপিয়ে পড়েছে সাগরে । তাদের কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে। বাকীরা হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতো। একটু ঠান্ডা মাথায চিন্তা করলে এটাকে ঠান্ডা মাথার খুন ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। কয়েকটি প্রতারক চক্র অর্থের লোভে একগুলি মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিয়েছে। দেশে এত সব মানবাধিকার সংস্থা থাকার পরও বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দেশে এত সব বুদ্ধিজীবি, ক্ষমতাবান লোকজন তারা নিশ্চুপ কেন। এমনিতেতো হেন তেন বিষয় নিয়ে তারা টিভি সেটে আসেন আলোচনায় যোগ দিতে। সরকার আর দূতাবাসের এত সময় কোথায় এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর। আর মিডিয়াগুলির কাজ হচ্ছে কয়েকদিন পর পর আমাদের এ ধরনের চমকপ্রদ খবর উপহার দেয়া। বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কিছু দিন পর পর গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। তারাতো ইচ্ছে করলেই এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না আমরা এই সমস্যাটাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহন করব ততদিন পর্যন্ত এটা বার বার চলতেই থাকবে। আর আমরা কিছু দিন পর পর খবরের কাগজে এ ধরনের নিউজ পড়ব আর বলব-আহা এটা কি হল!)

Friday, January 2, 2009

গণতন্ত্রের ফাঁকা বুলি


বনের সব পশুরা মিলে ঠিক করল তাদের নতুন একজন রাজা থাকা উচিত। সেই আদি কাল থেকে চলে আসছে সিংহ পশুদের রাজা। যুগ যুগ ধরে সিংহ জঙ্গলে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে আসছে। যথন তখন বনের পশুদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। এই অনিয়ম আর চলতে দেয়া যায় না। এখন গণতন্ত্রের যুগ। তাই শৈরশাসন আর চলতে পারে না।

যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই সিদ্ধান্ত নিল ভোটের মাধ্যমে একজন বনের রাজা নির্বাচিত করা হবে। প্রত্যেকে একজন পশুর নাম প্রস্তাব করবে। যেই পশু সব চেয়ে বেশী ভোট পাবে তাকেই বনের রাজা নির্বাচিত করা হবে।

পুরো কাজের দায়িত্ব বাঘকে দেয়া হল। বাঘ সম্পূর্ন নিরপেক্ষ ভাবে একজন রাজা ঠিক করে দেবে।

সারাদিনের উত্তেজনা শেষে ভোট দান শেষ হল। এবার গণনার পালা। গণনা শেষ। এবার ফল প্রকাশের অপেক্ষা। দেখা গেল সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে গাধা। বনের সব পশুরা অবাক। এটা কি করে সম্ভব। এটা ঠিক তারা সবাই চেয়েছে সিংহ নির্বাচনে ফেল করুক। তাই সিংহকে ভোট দেয়নি। কিন্তু তাই বলে গাধা পাশ করুক তাও চায়নি। সবাই ভাল করেই জানে জঙ্গলের আইন ঠিক রাখতে হলে যে মেধা এবং শক্তি দরকার তা গাধার নেই।

এদিকে সিংহ থেকে থেকে হুংকার ছাড়ছে। এই পাতানো নির্বাচন মানি না, মানব না।

বাঘ দেখল এই সুযোগ।
বাঘ গম্ভীর স্বরে বক্তৃতা আরম্ভ করল-ভাইসব, আপনারা জানেন দীর্ঘ দিনের শৈরশাসনের যুগ শেষ হয়ে এই বনে গণতন্ত্রের সূচনা হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের ভার যার তার হাতে দিয়ে দিতে পারি না। যেহেতু আপনারা সিংহের অত্যাচার থেকে মুক্তি চান। আবার গাধাকেও বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান না। তাই আমি বলছিলাম কি, আপনাদের সামনে এখন একটিই পথ খোলা রয়েছে। সেটা হচ্ছে মধ্যবর্তী পন্থা। আপনারা নিরপেক্ষ কাউকে নির্বাচিত করতে পারেন। আর আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তবে আমি এই পদ অলঙ্কিত করতে রাজী আছি।
বনের সব পশুর মাঝে গুঞ্জন উঠল। শেষ পর্যন্ত অনেক তর্ক বিতর্কের পর বাঘকেই পশুর রাজা নির্বাচিত করা হল।

বেশ কিছুদিন ভালই গেল। তারপর বাঘ যখন তখন বনের পশুদের ধরে ধরে খাওয়া শুরু করল।

বনের পশুরা শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করল গণতন্ত্র-ফন্ত্র আসলে কিছুই নয়। সব হাওয়া কখনই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।

ঈশপের আধুনিক উপদেশ: গণতন্ত্র সবার জন্যে নয়।সবাই এটাকে ঠিকমত হজম করতে পারে না।

( দেশে যে সরকারই নির্বাচিত হয়ে আসুক তারা কিছুদিন খুব চিল্রাফাল্রা করেন-আমরা দেশে গণতন্ত্রের শাসন প্রতিস্ঠিত করেছি। গণতন্ত্র কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। দেশের জনগণ কি চাচ্ছে। তারা কি বলছে তাদের তা একটু শুনা উচিত। এবং সেই মত কাজ করা উচিত। তাহলেই দেশে সত্যিকার ভাবে গণতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্য আর কোন ধরনের গলাবাজির দরকার নেই।)