Thursday, June 5, 2008

পাঠকের কাঠগড়ায়

ঈশ্বরের বিচার সভা। বিচারের কাঠগড়ায় দাড়ানো একজন মানুষ। স্বর্গ এবং নরকের দেবদূতরা নিজ নিজ পক্ষের যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করছেন।
স্বর্গের দেবদূত: মাই লর্ড, এই লোককে অবশ্যই স্বর্গে পাঠানো উচিত। জীবিত অবস্থায় এই লোক একজন লেখক ছিল। এই লোক তার লেখনি দিয়ে অনেক লোককে হাসিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে। সে মারা গেছে কিন্তু তার লেখা এখনও জীবিত রয়েছে। যা দ্বারা মানুষ তার মৃত্যুর পরও তাকে মনে রাখবে, তার লেখা পড়ে আনন্দ পাবে। তার মৃত্যুর পরে অনেক ভক্ত কান্নাকাটি করেছে। অনেক মানুষের শুভ কামনা রয়েছে তার জন্যে । অতএব এমন জনদরদী একজন লোকের জন্যে স্বর্গই উপযুক্ত স্থান হওয়া উচিত।

নরকের দেবদূত: মাই লর্ড, আমি আমার প্রতিপক্ষের সাথে একমত হতে পারছি না। এই লেখক ভদ্রলোক তার লেখা দিয়ে অনেক মানুষকে কাঁদিয়েছে, অনেককে রাগিয়েছে। অনেকের মনে দুঃখ দিয়েছে। সে মারা গেছে কিন্তু তার অত্যাচার বন্ধ হয়নি, কারণ তার লেখা এখনও বেঁচে রয়েছে। তার মৃত্যুর পর এখন থেকে তাদের আর জঘন্য সব লেখা পড়তে হবে না ভেবে অনেকে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে । এখনও লোকজনের বিতৃষ্ণা তার উপর বর্ষিত হচ্ছে। এমন একজন বিতৃষ্ণা উৎপাদনকারী লোকের জন্যে নরকই উপযুক্ত স্থান হওয়া উচিত।

ঈশ্বর পড়লেন খুব সমস্যায়, দুই পক্ষের বক্তব্যেই যুক্তি আছে। শেষ পর্যন্ত যম দূতকে খবর পাঠালেন। এই লোককে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠানো হবে। কিছুদিন তাকে অবর্জাবেশনে রেখে দেখা হবে, তার জন্যে স্বর্গ না নরক কোনটা উপযুক্ত হবে।

এতক্ষণ লোকটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে এদের কথাবার্তা শুনছিল। এবার হাত জোর করে বলে উঠে, মহামাণ্য আমাকে যদি পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাতে চান তবে দয়া করে লেখক বানিয়ে পাঠাবেন না। কারণ পাঠকের কাঠগড়া আপনাদের এই কাঠগড়ার চেয়েও ভয়াবহ। যা আমি জীবিত অবস্থায় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। লেখকের কোন লেখা ভাল লাগলে পাঠকরা তাকে মাথার উপর বসিয়ে রাখবে আর দুঃভাগ্যক্রমে কোন লেখা মনঃপুত না হলে তাকে নর্দমায় ছুড়ে ফেলবে। লেখকেরা যেন মানুষ নয় লেখা ছাপানোর মেশিন। এদের জন্মই হয়েছে মানুষকে অনন্দ দেবার জন্যে। যেন লেখকের নিজস্ব কোন ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের অনুভুতি থাকতে পারে না।

অতএব আমার বিনীত প্রার্থনা হচ্ছে, আমাকে গাধা-খচ্চর যা খুশি বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠান আমার আপত্তি নেই, কিন্তু দয়া করে পুনরায় লেখক বানিয়ে পাঠাবেন না।

No comments: