স্বর্গের দারোয়ান খুব হই চই শুরু করে দিল।
একজন লোক বিনা অনুমতিতে স্বর্গে প্রবেশ করতে চাচ্ছে।
দারোয়ান তাকে কিছুতেই ঢুকতে দিবে না।
সেই লোকও নাছোড়বান্দা।
অবশেষে দারোয়ান তাকে স্বর্গের দেবদূতের কাছে নিয়ে গেল।
দেবদূতকে দেখেই লোকটা হড়বড় করে বলতে শুরু করে দিল, মিস্টার দেখুন, আমি বুঝতে পারছি না, আমাকে কেন স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমি একজন সন্মানিত লোক, স্বর্গই আমার উপযুক্ত স্থান হওয়া উচিত।
দেবদূত কিচুণ ভ্র“ কুচকে থেকে গম্ভীর গলায় বললেন, কিন্তু আমি যতদূর জানি, তোমাকে তো নরকে প্রবেশের টিকেট দেয়া হয়েছে। এই টিকেটে তো তুমি স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না।
তাহলে নিশ্চয়ই আপনাদের সফটওয়্যারে কোন ঘাপলা হয়েছে। না হলে এই ধরনের ভুল হতে পারে না।
দেবদুত অবাক হয়ে জিঞ্জাসা করলেন, সফটওয়্যার? সেটা আবার কি জিনিস?
এবার অবাক হওয়ার পালা ওই ব্যক্তির। তারমানে বলতে চাচ্ছেন, আপনাদের স্বর্গে কোন কম্পিউটার নেই। তাহলে আপনারা আপনাদের হিসেব পত্র কিভাবে করেন।
দেবদূত বিরক্ত গলায় বললেন, কি যা তা বলছো। তোমাদের ধর্মগ্রন্থে কি স্বর্গের বর্ণনা দেয়া নেই, সেখানে কি কম্পিউটারের কথা লেখা আছে?
লোকটা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে বলে, না সেটা বলছি না। কিন্তু ধর্মগ্রন্থে যে স্বর্গের বর্ণনা দেয়া আছে তা তো হাজার বছরের পুরনো স্বর্গ। এরমধ্যে পৃথিবী এত এগিয়ে গেছে, স্বর্গেও নিশ্চয়ই ব্যাপক পরিবর্তন যটেছে।
গাধার মতো কথা বলো না। দেবদূত ধমকে ওঠেন। তুমি কি কখনও সূর্যকে পশ্চিম দিকে উঠতে দেখেছ, মাছ কে আকাশে উড়তে অথবা পাখিকে নদীতে সাতার কাটতে। এটা এমনই একটা সিস্টেম যা কখনই ক্রাশ করে না। তাহলে কোন যুক্তিতে ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা পরিবর্তিত হবে।
ঠিক আছে, আপনার কাছে অনুরোধ করছি, আমার ফাইলটা পুনরায় রি-ওপেন করে দেখা হোক।
দেবদূত লোকটাকে হিসাবরক্ষণ অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
অফিসার ফাইলপত্র যেটেযুটে লোকটার ফাইলটা খুজে বের করেন। ফাইল উল্টিয়ে
অফিসার চেঁচিয়ে ওঠেন, সর্বনাশ! ফাইলে দেখা যাচ্ছে, জীবিত অবস্থায় তুমি একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলে, তাও তৃতীয় বিশ্বের দূর্নীতিগ্রস্থ একটি দেশের। তাহলে তুমি এমন একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে নিজেকে কিভাবে সৎ এবং আদর্শবান লোক হিসেবে দাবি করছ। তোমার জন্যে তো নরকই উপযুক্ত স্থান। সেখানে খোঁজ করলে তুমি তোমার অনেক বন্ধু-বান্ধবও পেয়ে যেতে পার।
লোকটা এবার মরিয়া হয়ে ফাইলের কিছু পেপার কাটিংয়ের দিকে অফিসারের দৃষ্টি আকষণ করে বলে ওঠে, তাহলে এগুলো কি? এ ছবিগুলিই প্রমাণ করে, আমার সময় দেশের লোকজন কত সুখে ছিল। এখানে সবগুলিই হাসি-খুশি লোকজনের ছবি। আমার একেকটি সভায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হতো। আমি অসৎ ব্যক্তি হয়ে থাকলে এটা কিভাবে সম্ভব?
হিসাবরণ অফিসার কিছুণ চিন্তা করে বলেন, বুঝতে পারছি না তোমাকে নিয়ে আসলে কি করা উচিত। তোমার রিপোর্টের সঙ্গে তোমার কথাবার্তার কোন মিল নেই। বেশ জটিল কেস। সবচেয়ে ভাল হয়, তুমি ঈশ্বরের সাথে কথা বল।
ঠিক আছে, সেই ভাল, লোকটা উৎসাহিত হয়ে উঠে ঈশ্বরকে কখন পাওয়া যাবে?
এখানে সময় বলতে কোন জিনিস নেই। হিসাবরণ অফিসারের ঠোট উল্টিয়ে বলে ওঠেন।
তাহলে আপনাদের এখানে আইনস্টাইন-এর টাইম অফ রিয়েলিটির সূত্র কাজ করছে।
ঐটা আবার কি জিনিস? অফিসার জানতে চান।
আইনস্টাইন হচ্ছেন অনেক বড় একজন বিঞ্জানী। এটা তার বিখ্যাত একটি সূত্র। আচ্ছা তার তো আপনাদের এখানেই থাকার কথা।
হ্যাঁ এবার চিনতে পেরেছি। অফিসার বলে ওঠেন। কিন্তু তার মামলা তো এখনও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
কি বলছেন, এতো মহৎ একজন বিঞ্জানী! তিনি এখনও স্বর্গে যাননি!
আমি ঠিক জানি না। তুমি এ ব্যাপারে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারো।
অবশেষে এক সময় ওই লোক ঈশ্বরের মুখোমুখি হয়। বিনীতভাবে জানতে চায়, ঈশ্বর,
প্রথমেই আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি আইনস্টাইনকে কেন এখনও স্বর্গে পাঠানো হচ্ছে না। তিনি মানুষের উপকারের জন্যে কত বড় বড় আবিস্কার করেছেন। মানুষের সেবাইতো সবচেয়ে বড় ইবাদত, তাই নয় কি!
ইশ্বর গম্ভীর স্বরে বললেন, তোমার এই বিঞ্জানী আনবিক শক্তি নামের একটি ভয়াবহ জিনিসও আবিস্কার করেছে। একেকটা আণবিক বোমা যখন একেকটা শহরকে গুড়িয়ে দেয়, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায় তখন তুমি এর জন্যে কাকে দায়ী করবে? যতোদিন তোমরা আণবিক বোমা তৈলী বন্ধ না করবে ততোদিন পর্যন্ত তো তোমাদের আইনস্টাইন স্বর্গে যেতে পারছে না।
কিন্তু ঈশ্বর, এর জন্যে তো আমরা মানুষরাই দায়ী। আইনস্টাইন তো নিশ্চয়ই মানুষ মারার জন্যে আণবিক বোমা তৈরী করা হবে এ কথা আগে থেকে জানতেন না।
ঈশ্বর মৃদু হেসে বললেন, তোমার কথা আংশিক ঠিক। তোমাদের আইনস্টাইন ভালভাবেই জানতো তার এই আবিস্কার কি কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে এটা ঠিক, এর মতা যে এত ভয়াবহ হবে এটা বোধহয় সেও জানত না। ঠিক আছে, তোমার যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়েছি। এতো দিনে নিশ্চয়ই তোমাদের বিঞ্জানীর স্বর্গে যাওয়ার সময় হয়েছে। তাকে স্বর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
ধন্যবাদ ইশ্বর। এবার আমার কেসটা একটু দেখবেন।
তুমি তোমার দেশের জনগণকে সুখে রেখেছিলে এটা কি প্রমাণ করতে পারবে?
অবশ্যই পারব।
এই দেখুন। বলে লোকটা পকেট থেকে অনেকগুলি রঙ-বেরঙ এর চশমা বের করে।
লোকটা একটা চশমা এগিয়ে দেয় ঈশ্বরের দিকে। আমার দেশের চারদিকে যখন অন্যায়-অত্যাচার বেড়ে যেতো তখন আমার দেশের জনগণকে এই চশমা পরতে বলতাম।
চশমা চোখে দিয়ে ঈশ্বর অবাক হয়ে বলেন, আশ্চর্য! তোমার চশম্ দিয়ে তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
মজা তো এখানেই, লোকটা উৎসাহিত হয়ে বলে।
আপনি এই চশমা পরলে আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অত্যাচার কিছুই দেখতে পাবেন না। আবার আমার দেশের জনগণ যখন কষ্টে থাকতো তাদের এই ভার্চুয়াল চশমা পরতে বলতাম। এই চশমা পরলে আপনার সামনে একটি কল্পনার জগৎ তৈরি হবে। এখানে আপনি যা দেখতে চান তা-ই দেখতে পারবেন। দুঃখ-কষ্ট আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
ঈশ্বর মৃদু হাসলেন।
তোমার চমৎকার আইডিয়াতে মুগ্ধ হয়ে এক্ষুণি তোমাকে স্বর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। কিন্তু এখানে ছোট্র একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্বর্গে যাওয়ার শেষ গাড়িটা একটু আগেই ছেড়ে গেছে। গাড়িতে একটা সিটই খালি ছিল। তোমার কথামতো ওই সিটে তোমাদের বিঞ্জানীকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তোমাকে পরবর্তী গাড়ির জন্যে অপক্ষা করতে হচ্ছে।
কোন সমস্যা নেই। তা আপনাদের পরবর্তী গাড়ি কয়টা সময় ছেড়ে যাবে। লোকটা হাত নেড়ে জানতে চায়।
আজ থেকে ঠিক এক হাজার বছর পর। ঈশ্বর নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দেন। ততোদিন পর্যন্ত তোমাকে নরকেই কাটাতে হচ্ছে। আমার মনে হয় তোমার কোন সমস্যা হবে না। কারণ তোমার কাছে তোমার ভার্চুয়াল চশমা তো রয়েছেই। এটা দিয়েই তুমি নরকে বসে দিব্যি স্বর্গ দেখতে পাবে।
Thursday, June 5, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment