Thursday, June 5, 2008

জ্যোতিষী

শ্রী অলোকনাথ চক্রবর্তী (ত্রিকালদর্শী)
ভূত (অতীত) - বর্তমান - ভবিষ্যত : বিশেষজ্ঞ
(হস্থরেখা বিশারদ)

পঞ্চাশ উর্ধ্ব অলোকনাথ পূর্বপুরুষের জ্যোতিষী বিদ্যাটাকে পরম যত্নে ধরে রেখেছেন। যদি প্রশ্ন করা হয়-এই বিদ্যা কতটুকু বিঞ্জানসম্মত তবে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর করেন-হে বৎস বিশ্বাসে ঈশ্বর মেলে তর্কেতে তা বহুদূর। তিনি এই শ্রাস্ত্র মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন কারণ উনার পূর্বপুরুষদের এত দিনের বিশ্বাস মিথ্যে হতে পারে না।
অনেক ধারনের লোক উনার কাছে হাত দেখাতে আসে, উনি পুরনো নথি পত্র ঘেটে তাদের হস্থ রেখা বিচার করেন। কারো কারো ক্ষেত্রে উনার ভবিষ্যতবাণী আশ্চর্য রকম ভাবে ফলে যায়, কারো কারো ক্ষেত্রে তা ভূয়া প্রমাণিত হয়। এ ক্ষেত্রে উনার ব্যাখা হচ্ছে গ্রহ- নত্রের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য রেখা পরিবর্তিত হতে পারে, এতে উনার কোন দোষ নেই। অনেকে উনার এই যুক্তি বিশ্বাস করে অনেকে মুখ টিপে হাসে।
চিরকুমার অলোকনাথ বিয়ে থা করেননি, একলা মানুষ কোন ঝুট ঝামেলা নেই। হাত দেখে আর পূজা পাঠ করে উনার দিন কেটে যায়।
একদিন উনার ভক্তদের নিয়ে বারান্দায় বসে তিনি আলোচনায় মগ্ন। হঠাৎ করে এক ভক্ত মুথ ফস্কে বলে বসে-অলোক বাবু আপনি হাত দেখে মানুষের জন্ম -মৃত্যু বলে দিতে পারেন, কখনও কি নিজের হাত দেখেছেন? এক মুহূর্তের জন্যে অলোকনাথ থমকে যান, এ কথাটা উনার কখনও মনে হয়নি।
তিনি এড়িয়ে যেতে চান কিন্তু ভক্তরা উনাকে চেপে ধরে। অগত্য অলোকনাথ ব্যাগ থেকে পুরনো আঁতশী কাঁচটা বের করে বসে পড়েন নিজের হস্থ রেখা বিচার করতে। অনেকণ ধরে পরীক্ষা করে তিনি চমকে উঠেন, উনার মৃত্যু ৬১ বছর বয়সে - চৈত্র মাসের কোন এক আমবস্যার রাতে। বিড়বিড় করে কথাকটি উচ্চারণ করে তিনি উঠে বাসার ভেতরে চলে যান।
মাঝে বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। অলোক বাবুর বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। কিন্তু এখনও তিনি আগের মতই কর্মম আছেন। এখনও মাঝে মাঝে ভক্তদের নিয়ে তিনি বসেন। মাঝে মাঝে ভক্তরা ঠাট্টা করে বলে-’কি হে অলোক বাবু আর তো মাত্র এক বছর আমরা আপনাকে আমাদের মাঝে পাচ্ছি , তারপর তো আপনি ইহলোকের মায়া ছেড়ে পরলোকে যাত্রা করছেন। অলোক বাবু কিছু বলেন না।
এক বছর পেরিয়ে গেছে। অলোকনাথ বয়স এখন ৬১।
আজ ১৪ চৈত্র-পঞ্জিকা মতে আজ ঘোর আমবস্যা। আজ সারাদিন অলোকনাথ মুখে কিছু দিতে পারেননি, সন্ধ্যার পর থেকে তিনি অস্থিরতায় ভূগতে শুরু করেন। আজ কি তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত, নাকি আজ তার পূর্ব পুরুষের এত দিনের শাস্ত্র মিথ্যা প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। উনার পূর্ব পুরুষেরা প্রায় সবাই শতবর্ষী ছিলেন।
রাত্র যত গভীর হতে শুরু করে, উনার বুকের ধুক-পুকানি ততই বাড়তে শুরু করে। বিরাট পাথরের বোঝা যেন উনার বুকের উপর চেপে বসে। নিজের মনেই তিনি বিড়বিড় করতে থাকেন না-না আমার এত দিনের বিশ্বাস মিথ্যে হতে পারে না । তবে যে আমি সবার কাছে একজন মিথ্যা জ্যোতিষী বলে প্রমাণিত হব। সবাই আমাকে নিয়ে হাসা-হাসি করবে। বলবে, ঐ দেখ এক জোচ্চর জ্যোতিষী , তার পূর্বপুরুষেরাও নিশ্চয়ই তার মতই জোচ্চর ছিল। এ অপমানের বোঝা তিনি কিভাবে বহন করবেন।
অলোকনাথ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন- উনাকে কি করতে হবে, তার কারণে তার পূর্বপুরুষের সন্মান তিনি এভাবে ধুলায় লুটাতে দেবেন না। এক সময় উনার বুকটা হালকা হয়ে আসে।
পরদিন সবাই অলোকনাথের ঝুলন্ত দেহ আবিস্কার করে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগানো অবস্থায়। ভক্তদের মাঝে গুঞ্জন উঠে -শেষ পর্যন্ত তাহলে অলোক বাবুর ভবিষ্যত বাণীই সত্য প্রমাণিত হল। কারণ, মৃত্যুর দিন ক্ষণ তিনি ঠিক ঠিক ভাবে বলে গেছেন, কিন্তু কিভাবে মৃত্যু হবে তা আর বলেননি।
অলোকনাথ চক্রবর্তী নেই কিন্তু উনার বাড়ীর সামনের রং ওঠে ঝাপসা হয়ে যাওয়া সাইনবোর্ড খানা আজও আছে, শুধু এতে দুইটা নতুন লাইন ভক্তরা যুক্ত করেছে-


শ্রী অলোকনাথ চক্রবর্তী (ত্রিকালদর্শী)
ভূত (অতীত) - বর্তমান - ভবিষ্যত : বিশেষজ্ঞ
(হস্থরেখা বিশারদ)
উপমহাদেশের সেরা জ্যোতিষী (উনার মৃত্যুই এর জ্বলন্ত প্রমাণ)
ইহলোকের মায়া ত্যাগ: ১৪ চৈত্র আমবস্যা রাতে (মাত্র ৬১ বছর বয়সে)



(খুব কম লোকই পাওয়া যাবে যিনি প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে সেইদিনের নিজের রাশি ফলটা না দেখেন। সবাই যে এই জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস করেন এমন না। কিন্তু তারপরও মনের মাঝে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে। যেদিন লেখা থাকে আজ আপনার দিনটি শুভ যাবে, সেদিন অজান্তেই মনের মাঝে এক ধরনের আনন্দ কাজ করে। আবার যেদিন লেখা থাকে আজ আপনার দিনটি খারাপ যাবে সেদিন মনটাই খারাপ হয়ে যায়। তবে আমি মনে করি একজন মানুষের জীবনে ভাগ্যের হয়ত কিছুটা ভূমিকা আছে, কিন্তু মানুষ তার ভাগ্য নিজেই পরিবর্তন করতে পারে। এর জন্যে তাকে কোন জ্যেতিষীর শরণাপন্ন হওয়ার কোন দরকার নেই।)

No comments: