Thursday, June 5, 2008

দেবদূত

বিশ্বের সবচেয়ে মতাশালী ব্যক্তি । একটি নির্জন খোলা মাঠের মাঝখান দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন। উনাকে তাড়া করেছে কতগুলি ক্ষুদে দেবদূত। কোথায় যেন শুনেছিলেন ছোট বাচ্চারা মারা গেলে দেবদূত হয়ে যায়।
তিনি প্রাণপনে দৌড়াচ্ছেন তারপরও পিছনে তাকিয়ে দেখেন দেবদূতরা উনাকে প্রায় ধরে ফেলেছে। এক সময় উনার দম ফুরিয়ে আসে। এবার দেবদূতরা উনাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে। ধীরে ধীরে তারা বৃত্ত ছোট করে আনতে শুরু করে। উনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
ভোর ৫.০১ মিনিট। লোকটি নিজেকে আবিস্কার করে নিজের বেডরুমের বিছানায়। এতক্ষণ তা হলে আমি দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। লোকটির মুখে ফোটে উঠে পরিতৃপ্তির হাসি।
পর মুহুর্তে বুকের মাঝখানে চিনচিনে এক ব্যথার অনুভূতি অনুভব করেন। এ অনুভূতি ধীরে ধীরে উনাকে গ্রাস করতে শুরু করে। তিনি বুঝতে পারছেন না স্বপ্নে দেখা ব্যথার অনুভূতি তো বাস্তবে অনুভব করার কথা না। এক সময় তিনি বুঝতে পারেন তিনি ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। প্রচন্ড যন্ত্রণায় তার চোখ মুখ কুঁচকে আসে। কখনও তিনি ঈশ্বরকে ডাকার প্রয়োজন অনুভব করেননি। কারণ পৃথিবীর মানুষের ভাগ্য তিনি নির্ধারণ করেন ঈশ্বর নয়। তারপরও এক সময় ফিসফিস করে বলতে শুরু করেন- ঈশ্বর দয়া কর, দয়া করো করুণাময়।
এক সময় ব্যথা কমতে শুরু করে। তিনি স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে। বাইরে ততক্ষণে ভোর হয়ে এসেছে। ভোরের আলো উনার জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করছে।
তিনি জানালা খোলে দেন। একঝলক ঠান্ডা বাতাসে উনার শরীর কেঁপে উঠে। আজ কি চমৎকার লাগছে এই ভোরের আকাশ। বহুদূরে ইরাকের আকাশও কি এমনই সুন্দর, কখনও দেখা হয়নি। এমুহূর্তে কেন জানি ইচ্ছে করছে, সমস্ত যুদ্ধ বন্ধ করে দিতে। এই সুন্দর পৃথিবীটা যেন সুন্দরই থাকে। যুদ্ধের নোংরা থাবা যেন এটাকে গ্রাস করতে না পারে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, জানেন এটা কোন অসম্ভব কাজ না। তারপরও উনার পক্ষে এটা করা সম্ভব না। এত কিছু দেখলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেদিন তিনি শপথ নেন, সেদিন অনেকগুলি শপথের সাথে মনে মনে আরও একটা শপথ নিয়েছিলেন। যে দিন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সেদিন তিনি তার সম¯ত্ত আবেগ, মূল্যবোধ একটি বাক্সে তালা বন্ধ করে সেই তালার চাবি সাগরে ফেলে দেবেন। যেদিন মতা চলে যাবে সেদিনই শুধু তিনি ঐ চাবি খোঁজার চেষ্টা করবেন তার আগে নয়। চাবি পেলে ভাল, না পেলেও কোন সমস্যা নেই।
কিছুক্ষণ পরেই উনাকে নিতে হোয়াইট হাউজের গাড়ী আসছে। কারণ, আজ সংসদে খুব জরুরী একটা বিল পাস হবে ইরাকে আরও নতুন ২১৫০০ সৈন্য পাঠানোর ব্যপারে ।

(আমেরিকান রাষ্ট্রদূতদের নাক সম্ভবত খুব লম্বা, যার জন্যে তারা সুযোগ পেলেই আমাদের সব বিষয়ে নাক গলাতে পছন্দ করেন। প্রায়ই তারা বাঁকা মন্তব্য করে থাকেন, তোমরা বাঙালীরা কি বোকা। নিজেদের অর্থনীতির বারটা নিজেরাই বাজাচ্ছ। এক দিনের -হরতাল অবরোধে দেশের কোটি কোটি টাকার সর্বনাশ করছ। নিজেদের ভাল মন্দ বোঝার কোন মতাই তোমাদের নেই।
আমার মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে-
জনাব রাষ্ট্রদূত, আমরা বাঙালীরা সম্ভবত বোকা। শুধু বোকা নই, মহা বোকা। কিন্তু আপনারা কতো বড় বোকা, জর্জ বুশের মতো বদ্ধ উন্মাদ লোককে দুই বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেন। যে লোক শুধু মাত্র ইরাক যুদ্ধের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অপচয় করছে। লক্ষ লক্ষ লোককে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
তারপরও ইরাকে আরও সৈন্য পাঠানোর জন্যে আপনারা সমর্থন দেন, যেখানে অন্য সব দেশ ইতিমধ্যেই সৈন্য প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে। আরও সৈন্য মানে আরও মৃত্যু, আরও ধ্বংস। আপনাদের বুদ্ধিমান ব্রেইনগুলি তখন কি কাজে ব্যস্ত থাকে।।
আমরা বোকা হলে, আপনারা গাধা,- শুধু গাধা নন, মহা গাধা।)

No comments: