খোলা আকাশের নীচে মরিয়ম বিবি বসে চোখ মুছছেন । কোথায় যাবেন তিনি জানেন না। সামনে অপেক্ষা করে আছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত।
মাথার উপর এতদিন যে এক টুকরো ছাদের আশ্রয় ছিল আজ থেকে তা আর থাকছে না। উচ্ছেদ অভিযানের কারণে তাও চলে গেছে। বৈধ অবৈধ কি জিনিস তা তিনি খুব ভাল জানেন না। তিনি যা জানেন, তা হচ্ছে মাথার উপর এক টুকরো আশ্রয়, যেখানে তিনি তার সন্তান নিয়ে দিন কাটাতে পারেন।
ঠিক মতো এখনও ভোরের আলো ফোঁটতে শুরু করেনি। ভোর হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। শীতের ঠান্ডা বাতাসে উনার বাচ্চারা কাঁপছে। শাড়ীর আঁচল দিয়ে তিনি বাচ্চাদের শরীর ঢাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তিন বাচ্চার শরীর ঢাকার জন্যে উনার শাড়ীর আঁচল যথেষ্ট নয়।
সামনে বিশাল এক বহুতল ভবন মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক- দুই তলা করে তিনি গুণতে শুরু করেন। এক সময় ক্লান্ত হয়ে যান, গুণে শেষ করতে পারেন না। মরিয়ম বিবির খুব জানতে ইচ্ছে করে ঐ সব দালানে কারা থাকে। তারা কি তাদের মতোই সাধারণ মানুষ।
ছোট বেলায় মা খুব সুন্দর করে পরকালের গল্প করতেন। বুঝলি রে মরিয়ম, দুই দিনের এই দুনিয়ায় মানুষ আসছে কষ্ট করার জইন্যে। সব সুখ আল্লাহ পাক জমা রাখিছেন বেহেস্থে। যারা ভাল কাজ করিবে তারাই শুধু বেহেস্থে যাতি পারবে। সেইখানে খাওয়া পড়ার কোন চিন্তা নাই, খিদার কষ্ট নাই।
মরিয়ম বিবি চোখ বন্ধ করে বেহেস্থের সুখের কথা চিন্তা করার চেষ্টা করেন। তিনি কখনও বেহেস্থে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা জানেন না। তিনি জীবনে তেমন কোন পূণ্যের কাজ করেননি। আবার কোন বড় পাপও তো করেননি। তাহলে উনার ভাগ্যের খাতা হচ্ছে শূন্য । এদের জন্যে পরকালে কি ব্যবস্থা রয়েছে।
বেহেস্থে নাকি মা সন্তান বলতে কোন কিছু নেই। উনাকে যদি শুধু একা স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়, তবে কি তিনি তার তিন সন্তানকে ফেলে স্বর্গে যাবেন। এক সময় উনার চিন্তা- ভাবনা ঘোলাটে হয়ে আসে।
এখন সবার আগে ইহ জগতের ক্ষুধার কষ্টই তীব্র ভাবে জানান দিচ্ছে। শুরু হতে যাচ্ছে অনাহারে থাকার এক ক্ষুধার্ত দিন। মাথার উপরে সৃষ্টিকর্তার এত বড় আকাশ, কিন্তু এ আকাশের উনার কোন দরকার নেই। উনার এখন দরকার মাথা গোঁজার এক টুকরো আশ্রয়, বাচ্চাদের জন্যে এক টুকরো রুটি।
(বর্তমান সরকারের উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে ফেলা হচ্ছে অবৈধ বাসস্থান। কিন্তু এর সাথে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে সমাজের নিম্নস্তরের অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ। এরা হচ্ছে ল্যাবটরির গিনিপিগের মতো। যখন যে ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন তা এদের উপর প্রয়োগ করা যায়। সমাজের কিছু অসৎ লোক সরকারী জমি নিজের নামে দখল করে সেই জমিতে তাদের অবৈধ ভাবে থাকার সুযোগ করে দিয়ে ভাড়া আদায় করছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে ঐ সব নিরীহ লোকদের। বাকীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
দেরীতে হলেও শেষ পর্যন্ত সরকার উদ্যোগী হয়েছেন এদের পূর্নবাসনের ব্যপারে। দেখা যাক সরকারের এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখতে পারে কিনা। কারণ, আমরা আমাদের সমস্যাগুলি সৃষ্টিকর্তার ঘাড়ে চাপিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পছন্দ করি। আমাদের ধারণা উনি স্বয়ং এসে এর সমাধান করে দিয়ে যাবেন।)
Thursday, June 5, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment