তুহিন তুই বোস, তোর ট্রেন তিন ঘন্টা পর আসবে- আমি আসছি।' আসলাম সেই যে উধাও হল এখন র্পযন্ত কোন খবর নেই।
তুহিনের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই ভুতূড়ে স্টশেনে ট্ট্রেনের জন্যে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে। কয়েক দিন ধরে এমনিতেই তার দম ফেলার সময় নেই। তারপরও আসলামের বোনের বিয়েতে এক দিনের ছুটি নিয়ে এই মফস্বলে আসতে হয়েছে। আজই ঢাকা ফিরে যেতে হবে।
এমনিতেই স্টেশনে তেমন লোকজন নেই তারপর মাথার উপরে টিমটিম করে যে স্বল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে তাতে করে রাতের এই অন্ধকার তেমন দূর হচ্ছে না।
সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যপার হচ্ছে স্টেশনের বেঞ্চে তার পাশে বাইশ-তেইশ বছরের এক মেয়ে বসে রয়েছে। সম্ভবত এই ট্রেনেরই যাত্রী হবে। প্রথমে তুহনি ভূত ভেবে ভয় পেয়েছিল।
ভয়ে ভয়ে তুহনি জিঞ্জেস করে, আপনি কি ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করছেন? ট্ট্রেন তিন ঘন্টা লেট। আপনি একা আপনার সাথে কি আর কেউ নেই।
আপনার কোন অসুবিধা আছে। আর একা কই, আপনে আছেন না।
তুহনি কিছুই বুঝতে পারে না। এই মেয়ের সমস্যা কি।
কি ব্যপার আপনে এই ভাবে তাকাই আছেন কেন? কোন সময় মেয়ে মানুষ দেখেন নাই।
আপনি এ রকম বাজে ভাবে কথা বলছনে কেন?-তুহিন অবাক হয়।
আমি বাজে মেয়ে, এই জন্যে বাজে ভাবে কথা বলছি।
তুহিন হতভম্ব। কোন কথা বলতে পারে না।
আপনে কি করেন? - মেয়েটি একটু পর জানতে চায়।
আমি সফটওয়্যার বিক্রি করি। আর আপনি কি করেন?
আমি আত্না বিক্রি করি।
বুঝলাম না।
বেশী বুইঝা লাভ নাই। আপনের ঐ জিনিস কি ওয়্যার বিক্রি কইরা প্রতিদিন কত পান?
বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার নীচে কোন সফটওয়্যার আমরা বানাই না।
মেয়েটির চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠে। জানেন আত্না বিক্রি কইরা প্রতিদিন আমি মাত্র ১০০-২০০ টাকা পাই।
আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন?
আপনে ভদ্রলোক তো তাই বুঝতে পারছনে না। আপনার মত ভদ্রলোকরা প্রতিদিন আমার কাছে আসে, তারার নোংরা হাত আমার গায়ে রাখে তারপর ঘন্টা হিসাব কইরা তারা আমার আত্না কিননা নেয়।
হঠাত করে তুহিনের মনে হয় চারদিকে এতো খোলা বাতাস তারপরও সে ঠিক মতো নি:শ্বাস নিতে পারছে না। অনেক্ষণ পর জিঞ্জেস করে-তুমি এরকম এক অন্ধকার জীবন কেন বেছে নিলে?
মেয়েটির মুখে বিষন্ন হাসি দেখা দেয়। কেউ কি আর ইচ্ছা কইরা এই জীবন বাইছা নেয়। সৃষ্টিকর্তা আমার ভাগ্যে এইটা রাখছেন। প্রতদিনি সকালে যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখি তখন খুব লজ্জা হয়। নিজেকে ঘৃণা করতে ইচ্ছা করে। তারপর আবার সব কিছু ভুইলা যাইতে হয়।
দুনিয়াতে খাওয়ার কষ্ট সবচাইতে বড় কষ্ট। এর জন্যেই আপনে সফটওয়্যার বেচেন, আর আমি বেচি আত্না। দুইটাই ব্যবসা। পার্থক্য শুধু, একটা আলো আর একটা আঁধারের।
সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করছ কেন? তিনি তো কারো অমঙ্গল চান না।
শুনছি পরকালে দোজখে একটা লোকের বার বার মৃত্যু ঘটব, তারপর তারে বার বার জীবিত কইরা শাস্তি দেয়া হইব। আর এইখানে প্রতদিনি আমার আত্নার মৃত্যু ঘটে। এইটা সৃষ্টিকর্তার কেমন বিচার।
তুহিন কোন কথা বলতে পারে না। নিজের ভেতরে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব কর। এটা কি এই মেয়ের জন্য? সে জানে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুহনি বলে- আমি যদি তোমাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাই তবে কি তুমি আমার সাথে যাবে? অন্তত চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি, নতুন ভাবে আবার সব কিছু শুরু করা যায় কিনা।
ঢাকা তো আমি এই ট্রেনেই আপনার সাথে যাচ্ছি, কিন্তু তারপর আমি যাব আমার রাস্তায় আর আপনি আপনার পথে।
দেখ তুমি চাইলে আমি ঢাকাতে তোমার জন্যে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
উপরে তাকায় দেখেন ভোর হইয়া আসছে। ভোরের আলোয় রাতের অন্ধকারের কোন কথা আপনার মনে থাকব না। কারো থাকে না। মেয়েটির মুখে চাপা হাসি ফুটে উঠ।
ভোররে আলো আঁধারের মাঝে তুহিনের মনে হয়, এ রকম র্স্বগীয় হাসি সে অনেক দিন দেখেনি।
====০====
( বাংলাদেশের একজন বির্তকিত নারীবাদী লখিকা, যার লেখা একসময় এই দেশে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। তিনি র্বতমানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে বির্তকিত লেখার জন্যে ভিসা জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন। এই লেখিকার সমগ্র পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার প্রতি রয়েছে সীমাহীন ঘৃণা।
নারী স্বাধীনতার পেছনের বাধাসমূহ তিনি একটি একটি করে খুঁজে বের করার চষ্টো করেছেন। প্রথম বাধা হচ্ছে আমাদের র্ধমগ্রন্থসমগ্র, উনার মতে এখানে নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। তারপর র্ধমপ্রচারকরা, এরা সবসময় নারীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। র্সব শেষ বাধা পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা।
নারী স্বাধীনতা আমার মতে খুব কঠিন একটি জিনিস, অতএব এত বড় একজন লেখিকাকে নিয়ে আমি কোন ধরনের মন্তব্য করতে যাচ্ছি না, সেই ধৃষ্টতাও আমার নেই।
আমার উদ্দশ্যে ভিন্ন।
মুম্বাইয়ের যে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে তিনি এক সময় থাকতেন তার ভাড়া ছিল মাসিক পয়তাল্লিশ হাজার রুপি। আমাদের দেশে মাত্র পয়তাল্লি শত টাকার জন্যে একটি মেয়ের বিয়ে ভেংগে যায়। দারিদ্রতার কারণে মা তার তিন সন্তানকে পুকুরে ডুবিয়ে মেরে নিজে গলায় ফাঁস দেন। সৃষ্টিকর্তা যদি আপনাকে সার্মথ্য দিয়ে থাকেন তাহলে নারী স্বাধীনতা নিয়ে গলা না ফাটিয়ে ঐ সব মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।)
Wednesday, June 4, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment