সুমন আধো জাগরনের মাঝে বুঝতে পারছে না সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি এটা বাস্তবে ঘটছে। এখন আর অনুভুতিগুলি ঠিকমত কাজ করছে না।
আজ কয় দিন হয়ে গেছে তারা এতগুলি লোক এই মাঝ সাগরে ভাসছে। দালালরা তাদের সামান্য কিছু খাবার দিয়ে ছোট্র একটি নৌযানে তুলে দিয়ে মাঝ সাগরে ছেড়ে দিয়েছে। আজ কয় দিন হয়ে গেছে ডাঙার দেখা নেই।
বাবার গ্রামের জমি জমা সব বিক্রি করে দিয়ে সুমন এখানে এসেছিল বিদেশে যাবার আশায়। একবার বিদেশে যেতে পারলে তার টাকা দিযেই সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসবে। তার মত আরও অনেকেই এভাবে এসে প্রতারিত হয়েছে। দালালের হাতে তারা তাদের সারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় তুলে দিয়েছে। প্রথম প্রথম অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত দালালরা তাদের নৌপথে বিদেশে পাঠাবে বলে জানায়। এতে তাদের কম খরচ পড়বে। কম খরচে বিদেশ যাবার আশায় তারা তাতেই রাজী হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের এই অবস্থায় ফেলে রেখে দালালের সব লোকজন কেটে পড়েছে। এক সময় ফুরিয়ে এসেছে খাবার। কিন্তু গন্তব্য না জানা থাকায় তারা ভেসে চলেছে অনিম্চিত ভাবে।
তারা এতগুলি লোক দিনের পর দিন অনাহারে আছে। প্রচন্ড ঠান্ডা শরীরের মাংস কেটে হাড়ে কামড় বসাচ্ছে। ঠান্ডায় সমস্ত শরীর নীল হয়ে গেছে। এক জনের পর একজনকে মৃত্যু এসে গ্রাস করে নিচ্ছ। কি অবলীলায় তারা মৃতদেহগুলি সাগরে ছুড়ে ফেলছে। সাগরের ঢেউ এসে নিয়ে যাচ্ছে দেহগুলি। সুমন জানে এক সময় তার সঙ্গীরা তাকেও সাগরে ছুড়ে ফেলবে। মৃত্যু এখন শুধু অপেক্ষার ব্যাপার মাত্র। আর কোন দিন তার দেখা হবে না আপনজনদের প্রিয় মুখগুলি। সবাই অপ্রকৃতিস্থতের মত আচরণ করছে। কয়েকজন বাঁচার আশায় ঝাপিয়ে পড়েছে খোলা সাগরে। কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালায় নিজের শরীর কামড়াচ্ছে।
সুমন দেখছে সে একটি পাখি হয়ে গেছে। পাখিটি আটকা পড়েছে একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে। বের হবার কোন পথ পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে পাখিটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে আলো দেখতে পায়। পেয়ে যায় বের হবার পথ। আহা মুক্তির কি আনন্দ। পাখিটি ডানা মেলে মুক্ত নীল আকাশে।
সুমন মারা যাবার আগে প্রলাপ বকতে শুরু করে-হে ঈশ্বর, যারা আমাদের এই অবস্থার জন্যে দায়ী তাদের তুমি ক্ষমা করো না। ক্ষমা করো না সেই সব লোকদের যারা চোখের সামনে দিনের পর দিন এধরনের অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকে।
(বিদেশে যাবার আশায় দালালের হাতে প্রতারিত হয়ে আবারও ঝরে গেছে অনেকগুলি তাজা প্রান। এবার যা ঘটেছে তা অতি ভয়াবহ। কয়েকশ লোককে একটি নৌযানে উঠিয়ে দিয়ে সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে লাইট হাউসের অলোকে ডাঙা ভেবে অনেকে ঝাপিয়ে পড়েছে সাগরে । তাদের কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে। বাকীরা হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতো। একটু ঠান্ডা মাথায চিন্তা করলে এটাকে ঠান্ডা মাথার খুন ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। কয়েকটি প্রতারক চক্র অর্থের লোভে একগুলি মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিয়েছে। দেশে এত সব মানবাধিকার সংস্থা থাকার পরও বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দেশে এত সব বুদ্ধিজীবি, ক্ষমতাবান লোকজন তারা নিশ্চুপ কেন। এমনিতেতো হেন তেন বিষয় নিয়ে তারা টিভি সেটে আসেন আলোচনায় যোগ দিতে। সরকার আর দূতাবাসের এত সময় কোথায় এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর। আর মিডিয়াগুলির কাজ হচ্ছে কয়েকদিন পর পর আমাদের এ ধরনের চমকপ্রদ খবর উপহার দেয়া। বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কিছু দিন পর পর গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। তারাতো ইচ্ছে করলেই এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না আমরা এই সমস্যাটাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহন করব ততদিন পর্যন্ত এটা বার বার চলতেই থাকবে। আর আমরা কিছু দিন পর পর খবরের কাগজে এ ধরনের নিউজ পড়ব আর বলব-আহা এটা কি হল!)
আজ কয় দিন হয়ে গেছে তারা এতগুলি লোক এই মাঝ সাগরে ভাসছে। দালালরা তাদের সামান্য কিছু খাবার দিয়ে ছোট্র একটি নৌযানে তুলে দিয়ে মাঝ সাগরে ছেড়ে দিয়েছে। আজ কয় দিন হয়ে গেছে ডাঙার দেখা নেই।
বাবার গ্রামের জমি জমা সব বিক্রি করে দিয়ে সুমন এখানে এসেছিল বিদেশে যাবার আশায়। একবার বিদেশে যেতে পারলে তার টাকা দিযেই সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসবে। তার মত আরও অনেকেই এভাবে এসে প্রতারিত হয়েছে। দালালের হাতে তারা তাদের সারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় তুলে দিয়েছে। প্রথম প্রথম অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত দালালরা তাদের নৌপথে বিদেশে পাঠাবে বলে জানায়। এতে তাদের কম খরচ পড়বে। কম খরচে বিদেশ যাবার আশায় তারা তাতেই রাজী হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের এই অবস্থায় ফেলে রেখে দালালের সব লোকজন কেটে পড়েছে। এক সময় ফুরিয়ে এসেছে খাবার। কিন্তু গন্তব্য না জানা থাকায় তারা ভেসে চলেছে অনিম্চিত ভাবে।
তারা এতগুলি লোক দিনের পর দিন অনাহারে আছে। প্রচন্ড ঠান্ডা শরীরের মাংস কেটে হাড়ে কামড় বসাচ্ছে। ঠান্ডায় সমস্ত শরীর নীল হয়ে গেছে। এক জনের পর একজনকে মৃত্যু এসে গ্রাস করে নিচ্ছ। কি অবলীলায় তারা মৃতদেহগুলি সাগরে ছুড়ে ফেলছে। সাগরের ঢেউ এসে নিয়ে যাচ্ছে দেহগুলি। সুমন জানে এক সময় তার সঙ্গীরা তাকেও সাগরে ছুড়ে ফেলবে। মৃত্যু এখন শুধু অপেক্ষার ব্যাপার মাত্র। আর কোন দিন তার দেখা হবে না আপনজনদের প্রিয় মুখগুলি। সবাই অপ্রকৃতিস্থতের মত আচরণ করছে। কয়েকজন বাঁচার আশায় ঝাপিয়ে পড়েছে খোলা সাগরে। কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালায় নিজের শরীর কামড়াচ্ছে।
সুমন দেখছে সে একটি পাখি হয়ে গেছে। পাখিটি আটকা পড়েছে একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে। বের হবার কোন পথ পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে পাখিটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে আলো দেখতে পায়। পেয়ে যায় বের হবার পথ। আহা মুক্তির কি আনন্দ। পাখিটি ডানা মেলে মুক্ত নীল আকাশে।
সুমন মারা যাবার আগে প্রলাপ বকতে শুরু করে-হে ঈশ্বর, যারা আমাদের এই অবস্থার জন্যে দায়ী তাদের তুমি ক্ষমা করো না। ক্ষমা করো না সেই সব লোকদের যারা চোখের সামনে দিনের পর দিন এধরনের অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকে।
(বিদেশে যাবার আশায় দালালের হাতে প্রতারিত হয়ে আবারও ঝরে গেছে অনেকগুলি তাজা প্রান। এবার যা ঘটেছে তা অতি ভয়াবহ। কয়েকশ লোককে একটি নৌযানে উঠিয়ে দিয়ে সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে লাইট হাউসের অলোকে ডাঙা ভেবে অনেকে ঝাপিয়ে পড়েছে সাগরে । তাদের কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে। বাকীরা হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতো। একটু ঠান্ডা মাথায চিন্তা করলে এটাকে ঠান্ডা মাথার খুন ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। কয়েকটি প্রতারক চক্র অর্থের লোভে একগুলি মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিয়েছে। দেশে এত সব মানবাধিকার সংস্থা থাকার পরও বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দেশে এত সব বুদ্ধিজীবি, ক্ষমতাবান লোকজন তারা নিশ্চুপ কেন। এমনিতেতো হেন তেন বিষয় নিয়ে তারা টিভি সেটে আসেন আলোচনায় যোগ দিতে। সরকার আর দূতাবাসের এত সময় কোথায় এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর। আর মিডিয়াগুলির কাজ হচ্ছে কয়েকদিন পর পর আমাদের এ ধরনের চমকপ্রদ খবর উপহার দেয়া। বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কিছু দিন পর পর গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। তারাতো ইচ্ছে করলেই এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না আমরা এই সমস্যাটাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহন করব ততদিন পর্যন্ত এটা বার বার চলতেই থাকবে। আর আমরা কিছু দিন পর পর খবরের কাগজে এ ধরনের নিউজ পড়ব আর বলব-আহা এটা কি হল!)
No comments:
Post a Comment