Tuesday, December 29, 2009

তদন্ত কমিটি

রোগীর আত্নীয় স্বজনরা খুবই হই চই শুরু করে দিল। বেচারার দুইটা মাত্র পা। তার মধ্যে ভুলে ডাক্তাররা ভাল পাটা কেটে বাদ দিয়ে ফেলেছে। এখন বাকী যে একটা পা রয়েছে সেটাও যদি কেটে ফেলতে হয় তবে রোগী হাঁটবে কেমন করে। 

সবাই মিলে হাসপাতালের জিনিসপত্র মনের আনন্দে (আসলে মনের দুঃখে হবে) ভাঙতে শুরু করে দিল। সাথে এসে যোগ দিল আরও লোকজন যারা রোগীর আত্নীয় নন এবং কখনও রোগীকে দেখেননি। কিন্তু এই ধরনের সুযোগতো আর প্রতিদিন আসে না। লক্ষ টাকা দামের যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেল কেউ তোমাকে কিছু বলতে পারবে না। কারো হয়ত কোন পুরনো ক্ষোভ রয়েছে এদের প্রতি। এখন তার শোধ নাও।


অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাইকে আশ্বস্ত করলেন। তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং রোগীকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
রোগী প্রতিক্ষার প্রহর গুণে। তদন্ত আর শেষ হয় না। এক দিন, দুই দিন, এক সপ্তাহ করে পার হয়ে যায় এক মাস। অবশেষে রোগী তার এক পা সম্বল করে ভয়ে ভয়ে হাসপাতারের প্রধান চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়।

-স্যার আমার কেইসটা একটু দেখবেন।
-তদন্ত কমিটিতো তাদের রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে। আপনার যে পাটা কাটা হয়েছিল সেই পায়ে গ্যাংগ্রিন ছড়িয়ে পড়ে ছিল। পা না কাটলে তা আপনার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ত। তখন আপনাকে বাঁচানোই মুসকিল হত। আমিতো সেই তরিৎকর্মা ডাক্তারের প্রশংসা করি।


-কিন্তু স্যার আমার পা কাটতে হলে তো আমার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর আমার পায়ে তেমন বড় কোন সমস্যা ছিল না যে পা একে বারেই কেটে ফেলতে হবে।
- সেটাতো আর আপনি বললে হবে না। আপনিতো আর ডাক্তার নন। তারপরও আমরা ঐ ডাক্তার প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে তিন দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর আপনার জন্য ভাল খবর হচ্ছে আপনার অপারেশনের টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফেরত দিয়েছে। এখন আপনি আপনার পা নিয়ে যেতে পারেন। ফরমালিনে চুবানো একটি বড় পাত্রে করে কাটা পা ডাক্তার রোগীর সামনে এনে হাজির করেন।


-স্যার আমি এই পা দিয়ে কি করব। এই পা আমার কি কাজে লাগবে।
-সেটাতো ভাই আমি জানি না। আপনার জিনিস আপনি নিয়ে যান। আর এক মাস ধরে আপনার এই পা যত্নের সহিত সংরক্ষণ করতে গিয়ে আমাদের যে খরচ হয়েছে তার বিল আপনি দিয়ে যান।


-রোগী চোখ কপালে তুলে ফেলে। আপনাকে কে বলেছে পা রেখে দিতে। এখন আমি টাকা দেব কোথা থেকে।
-তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ততো আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ঠিক আছে বিলের টাকা দিতে না পারলে অপারেশনের যে টাকা আপনি ফেরত পেতেন সেখান থেকে আমরা তা কেটে রাখছি। তা কেটে রাখার পরও হাসপাতাল আপনার কাছে টাকা পাওনা হয়। সেটা আমরা আপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ মাফ করে দিচ্ছি। আমাদরেকে আপনার এখন আর কোন টাকা দিতে হবে না। কি, এবার খুশি তো।


(আমাদের দেশে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটে। তদন্ত করার দায়িত্ব পড়ে ডাক্তারদের উপর। পুলিশের হাতে আসামির মৃত্যু হয় তদন্তের ভার থাকে পুলিশের হাতে।

সম্প্রতি পর পর কয়েকটি লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এখানেও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা এই টুকুই জানি। তার পরের খবর আর পাই না। সেই তদন্ত কি কখনও আলোর মুখ দেখে আমরা জানতে পারি না। বেশীর ভাগ লঞ্চেরই ফিটনেস নেই। নেই যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। যে লোকগুলি মারা গেল। যে পরিবারগুলি তাদের আপন জনদের হারাল তাদের খবর আর আমরা পরবর্তীতে নেই না।


লঞ্চ ডুবির ছাব্বিশ ঘন্টা পর উদ্ধারকারী জাহাজ (সবেধন নীল মণি রুস্তম আর হামজা) ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌছ। মানুষ না শুধু লাশ উদ্ধার করার জন্য। বড় জাহাজ উত্তোলনের মত ক্ষমতা তাদের নেই। রাজনৈতিক নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেন।

কয়েক দিন পত্রিকার পাতায় লেখা লেখি হবে তারপর সব হারিয়ে যাবে। বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগলে টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট দেখানো হয়। সব পত্রিকার সাংবাদিক কে কার আগে খবর সংগ্রহ করবেন তার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আর লঞ্চ ডুবিতে বড় জোর কি হয়। কয়েকশ দরিদ্র কিছু মানুষের সলিল সমাধি ঘটে। ১৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে এ আর এমন কি। )











শপথ

দেশে এখন শুধু শপথ এর ছড়াছড়ি। এত সব শপথ যদি আসলেই বাস্তবায়িত হত তবে বিরাট কাজের কাজ হত। এখন চলছে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার শপথ। সরকারী দলের লোকজনেরা এই কাজে ঝাপিয়ে পড়েছেন। চারদিকে মিটিং, মিছিল, ব্যানার আর বক্তৃতার ছড়াছড়ি।


সবাই শপথ করছেন। অনেক বুদ্ধিজীবি, মডেল, মিডিয়ার লোকজনরা রয়েছেন এই কাতারে। তবে আমি আর বাদ থাকি কেন। না হলে মান সন্মান বুঝি আর থাকে না। তাই একটি শুভ দিন দেখে আমিও শপথ করলাম-আমি দেশকে একটি দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। নিজেই নিজের পিঠ চাপরাতে ইচ্ছে করছে। অনেক বড় একটি কাজের কাজ হয়েছে।


এখন সমস্যা হল শপথতো করলাম কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশকে আমি কিভাবে ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত দেশ করব সেটাইতো জানি না। এই দেশের কত জন লোক বেকার, কত জন লোক তিন বেলা খেতে পায় না-এই পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। এই দেশের লোকদের গড় আয় কত, আমাদের দেশের বার্ষিক বাজেট ঘাটতি কত- সে হিসেব করতে গেলে আমার মাথা ঘুরায়। আরে বোকার দল এটাতো অর্থনীতিবিদদের কাজ, আমার এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ কি। আমার দরকার ছিল শুধু মাত্র শপথ করা তা আমি দায়িত্বপূর্ণ ভাবে সম্পাদন করেছি। সবাই করেছে, আমিও করলাম- ব্যাস। ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে এখন বলতে পারব-আমি শপথ করেছি, আপনি করেছেন কি। মনে মনে বলব- আতলামি আর কাকে বলে রে।


চারদিকে রঙিন বেলুন আর রঙ বেরঙ এর ব্যানারে রাজপথ ছেয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কে কার থেকে আকর্ষনীয় ভাবে সংবাদ উপস্থাপন করবেন। বিষয়- দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার শপথ চলছে চারদিকে। যারা এই দলে যোগ দেবেন না, তারা আসলে দেশের ভাল চান না।


চারদিক আনন্দের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। এক দল দরিদ্র ক্ষুধার্ত শিশু রোদের মাঝে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে-আসলে কি হচ্ছে। এরা অপেক্ষা করে আছে খাবারের জন্য, এক টুকরো রুটির জন্যে। অলোচনা শেষ হলে যদি তাদের কিছু খেতে দেয়া হয় সেই আশায়। সবার আনন্দ তাদেরকে স্পর্শ করছে না।


এই মুহুর্তে ক্ষুধাটাই হচ্ছে বাস্তব, আর সব কিছুই অবাস্তব-মেকী।



অমানুষ


বেশ কয়েক বছর আগে দেখা জেমস ক্যামেরনের বিখ্যাত ছবি টাইটানিক এখনও মনে দাগ কেটে আছে। বিশেষ করে শেষ মুহুর্তের সেই আবেগময় দৃশ্য- জাহাজ ডুবে গেছে। ছবির নায়ক জ্যাক বরফ শীতল পানিতে ডুবে আছে। তার প্রেমিকা রোজকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপন লড়াই করে যাচ্ছে। এক সময় জ্যাক মারা যায়, বাঁচিয়ে দিয়ে যায় তার প্রেমিকাকে। তারপর তার প্রেমিকা রোজ তার স্মৃতি নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়।


সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে জাহাজের এতগুলি লোক মারা গেল তাদের জন্য আমার যতটুকু দুঃখ বোধ হয় তার চেয়ে অনেক বেশী দুঃখ হয় জ্যাক বেচারার জন্য। জাহাজের অন্য লোকজন মারা যায় যাক কিন্তু পরিচালক ব্যাটাতো জ্যাককে অন্তত রোজের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে পারত। যদিও সিনেমা, তারপরও তখন নায়কের জন্য বুকে এক ধরনের হাহাকার অনুভব করি। ছবির আবেগময় শেষ দৃশ্যের সাথে সাথে আমাদের চোখও ভিজে আসে।


২০০৮ ডিসেম্বর কিছু হতদরিদ্র বঙ্গ সন্তান অভাবের তাড়নায় শেষ সহায় সম্বল বিক্রি করে দিয়ে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। দিন দশেক পর থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমায় পৌছলে সে দেশের কোস্ট গার্ড তাদের আটক করে সাত দিন পাহাড়ের উপর খোলা আকাশের নীচে রেখে নির্যাতন চালায়। তারপর নৌকাগুলির ইঞ্জিন খুলে বড় একটি জাহাজের পেছনে দঁড়ি দিয়ে বেধে সমুদ্রে নিয়ে যায়। দুই দিন পর জাহাজ থেকে কিছু চাল, বিস্কুট , পানি দিয়ে তাদের নৌকাগুলি গভীর সমুদ্রে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ৮-১০ দিন ভাসতে ভাসতে নৌকাগুলি আন্দামানে পৌছালে ভারতীয় কোস্টগার্ড স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে। সম্প্রতি দীর্ঘ ৮ মাসের নরক যন্ত্রণার পর এরা সহায় সম্বলহীন অবস্থায় দেশে ফিরতে শুরু করেছে।


এদের থেকে বেঁচে ফিরে আসা একজনের মর্মস্পর্শী কাহিনী ছিল অনেকটা এ রকম-
ছোট্র একটি ট্রলারে আমরা ১১৯ জন ভাসছি। সাগর আর শেষ হয় না। তৃষ্ণা মেটানোর জন্য সাগরের লোনাপানি খেয়েছি। লোনা পানি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চোখের সামনে ছটফট করে আমাদের সঙ্গের ১৯ জন মারা গেল। চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না। তাদের লাশ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। এভাবে কেটে যায় ১০-১২ দিন। গভীর সাগরে ভাসতে ভাসতে নিকোবার নামের একটি দ্বীপে গিয়ে নৌকা ভিড়ে। সেখানে পাতা সিদ্ধ করে খেয়ে কোনমতে ক্ষুধা মিটিয়েছি। এদের ভাষ্য মতে এদের দলে ৫০০ এরও বেশী লোক ছিল্। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ মারা যায় সাগরে ডুবে। তাদের সাথে যাওয়া মোট ৩০৫ জনের মত মারা গেছে।


আমি কিছু দিন পূর্বে একটি প্রথম শ্রেণীর জাতয়ি দৈনিকের শেষ পাতায় খবরটি পড়ি। আমি সকালের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরটি পড়ি, আমার কোন ভাবান্তর হয় না। এই সব খবর শেষের পাতায় আসবে এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ এই সব হতভাগ্য লোকদের করুণ কাহিনী নিয়ে আমাদের পাবলিসিটির সুযোগ কম। পাবলিক এই সব জিনিস সহজে খেতে চায় না। তারচেয়ে মিডিয়াতে কোন রান্নার রেসিপি দেখানো যেতে পারে। যেমন, মরিচের ঝাল হালুয়া। তাছাড়া এর চেয়ে অনেক বড় বড় কাজ আমাদের রয়েছে। দেশকে বদলে ফেলার কাজ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ। আরও কত্ত কি।


প্রতি বছর এ ধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে আর পত্রিকার এক কোনায় এই খবর পড়ার কিছুক্ষণ পর আমরা এদের কথা ভুলে যাব। এটাই স্বাভাবিত। অথচ সিনেমায় জাহাজ ডুবি দেখে আমরা চোখের জল ফেলি। কারণ এরাতো আর সিনেমার কোন স্টার নয় যে এদের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে। পশুদের অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। পশুদের উপর কোন নির্যাতন হলে এরা সোচ্চার হয়ে উঠে। এতগুলি মানুষ মারা গেল, এতগুলি লোকের উপর এই অমানবিক আচরণ করা হল, আমাদের কোন বিকার নাই। কারণ এরাতো আর পশূ নয়। পশুরও অধম, এরা হচ্ছে মানুষ নামের অমানুষ।

শিকার


ছেলেটির চোখে মুখে লাজুক চাহনি। চেহারায় এক ধরনের সরলতা রয়েছে। ছেলেটি যথাসম্ভব চেহারায় কাঠিন্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এতে করে তার ছেলেমানুষি ভাব আরও প্রকট হয়ে ফুটে উঠছে। আশরাফ সাহেব হেসে ফেলেন। ১৬-১৭ বছর বয়সের এই ছেলেটি হয়ত উনাকে কিছু বলতে চায়। নার্ভাসনেসের কারণে বলতে পারছে না।


খোকা তুমি কি আমায় কিছু বলবে?
ছেলেটি কোন উত্তর দেয় না। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তার একটি হাত ধীরে ধীরে ঢুকে যায় প্যান্টের পকেটে। একটু পর সে হাতটা বাইরে বের করে নিয়ে আসে।

আশরাফ সাহেব বিস্ফোরিত ভাবে ছেলেটির হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলেটির হাত একটু একটু কাঁপছে। তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। ছেলেটির হাতে ধরা ছোট্র একটি আগ্নেয়াস্ত্র উনার দিকে তাক করা। একটু আগের লাজুক সেই ছেলেটিকে তিনি আর এখন চিনতে পারছেন না।
ছেলেটিকে এখন আর দেবদূত বলে মনে হচ্ছে না। যেন তার ভেতর থেকে একটি দানব বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। 

ছেলেটি পর পর দুবার গুলি করে। আশরাফ সাহেব মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। উনার বিস্ময় ভাব এখনও কাটেনি। মনে হচ্ছে যেন এ সব কিছুই স্বপ্ন দৃশ্য। বাস্তবে ঘটছে না। 

ছেলেটির কোন ভাবান্তর হয় না। যত কঠিন হবে বলে সে ভেবেছিল কাজটা তত কঠিন হয়নি। বস ঠিকই বলে ছিল মানুষ খুন কার আসলে খুব একটা কঠিন কাজ না। একটু সাহস থাকলেই হয়। সে কোন তাড়া অনুভব করে না। তার কাজ শেষ হয়েছে। পার্টিকে এখন জানিয়ে দিতে হবে কন্ট্রাক মত সব কাজ শেষ হয়েছে। 

ছেলেটি ধীর পায়ে সামনে এগুতে থাকে তার দ্বিতীয় শিকারের দিকে। পকেটে হাত দিয়ে দুই হাজার টাকার অস্তিত্ব অনুভব করার চেষ্টা করে। তার প্রথম রোজগার। নিজের উপার্জনের প্রথম টাকায় গভীর মমতা মেশানো থাকে। সে কখনই সেই মমতা অনুভব করতে পারবে না। এই টাকা সে তার প্রিয়জনদের হাতে তুলে দিতে পারবে না। এই টাকায় রক্ত লেগে আছে। আর একজন ভাড়াটে খুনির কোন পরিবার কোন প্রিয় মানুষ থাকে না। মানুষ থেকে সে কখন দানবে রুপান্তরিত হয়ে পড়েছে তা নিজেও জানে না। 

(উপরের ঘটনাটি কাল্পনিক। রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু নীচের বর্ণনাটি মোটেও কাল্পনিক নয়। ২০ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেয়া-
পিচ্চি আল আমিনের বয়স ১৭ বছর। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর অর্থের অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারেনি। অভাবের তাড়নায় কয়েক বছর পূর্বে ঢাকায় চলে আসে। এর মধ্যে দুই বছর একটি গার্মেন্টএ কাজ করা কালে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পিচ্চি আল আমিনের সখ্যতা গড়ে উঠে। সন্ত্রাসীদের আড্ডায় গিয়ে অস্ত্র ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ নেয় সে। এরপর পিচ্চি আল আমিন ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হত্যাকান্ড, ছিনতাই, ডাকাতিসহ শুরু করে দেয় নানা অপরাধ। 

১৫ বছর বয়স থেকে সে এই সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তার বয়সী আরও ১৫-২০ জন সহযোগী রয়েছে তার। সম্প্রতি সে রেবের হাতে ধরা পড়ে। সে জানায় তার রেট খুব বেশী নয়। মাত্র ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দিলে সে মানুষ খুন করে। এর মধ্যে সে এক ডজন হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় কে বেঁচে আছে আর কে মরে গেছে এটা সে কখনো খতিয়ে দেখে না। হত্যাকান্ডে তার চরম শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারে এটা সে তোয়াক্কা করছে না। গ্রেফতার হলে সে সহজে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে আসে। এরজন্য তার বড় ভাইয়ারা তার পেছনে রয়েছে। হত্যাকান্ড সে তাদের নির্দেশে করে থাকে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র তার বড় ভাইয়ারা সরবরাহ করে থাকে।

ছবির ছেলেটির মায়াময় মুখ দেখলে কে বিশ্বাস করবে সে একজন প্রফেশনাল কিলার। মানুষ খুন করা যার পেশা। এসব ছেলের এখন স্কুল কলেজে পড়ার বয়স। এরা বড় হবে অনেক স্বপ্ন নিয়ে। সেই জায়গায় একেক জন একেকটি খুনি হিসেবে গড়ে উঠছে। এরা নিজেরাও জানে না এরা কি করছে, কি ভয়াবহ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তারা জানে না এদের কে শুধুমাত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কোল্ড ড্রিংস খাবার পর মানুষ যেমন খালি ক্যান ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেয় এদের কেও কাজ হয়ে গেলে এক সময় ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। কারণ এদের কাছে এরা মানুষ মারার একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।)



Thursday, July 9, 2009

পদক


জানেন এই একেকটা পদক আমার কাছে নিজের সন্তানের মত। সামনে দাঁড়ানো ভাঙাচোরা লোকটি পরম মমতায় পদকগুলির গায়ে হাত বুলাতে থাকে।

ক্যাশ বাক্সে বসা বিশাল বপুর অধিকারী সিল্কের পাঞ্জাবী গায়ে দেয়া দোকাদারের কোন ভাবান্তর হয় না। দোকানী মনে মনে হিসেব কষতে থাকে মেডেলগুলি গলালে কতটুকু সোনা আর কতটুকু খাদ বের হবে।

আমি এ্যাথলেটিকসে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এই সোনার মেডেলগুলি পেয়েছি।

লোকটার কথা শেষ হয় না। দোকানী মুখ বাঁকা করে জানতে চায়-দাম চান কত। এই সব রদ্দি মালে বেশীর ভাগই স্বার্নের পানি দেয়া থাকে।

লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে- দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন নিয়ে এক সময় যুদ্ধ করেছি। দেশ কি আমরা আসলেই স্বাধীন করতে পেরেছি। অভাবের তাড়নায় আজ আমাকে নিরুপায় হয়ে আমার সারা জীবনের সঞয় এই পদকগুলি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ যে আমার কাছে কত কষ্ট আর লজ্জার ব্যাপার আপনি তা বুঝবেন না।

নূরানী চেহারার অধিকারী দোকানী পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলতে থাকে-এই আপনাদের আর এক সমস্যা। খালি সেন্টিমেন্টস। যুদ্ধ করছেন দেশের জন্য এর মধ্যে আবার লাভের আশা করেন ক্যান। আপনার কপালে লেখা ছিল দরিদ্র হওয়া আপনি তা হইছেন। সব আল্লাহপাকের ইচ্ছা। দোকানী কয়েকটি নোট লোকটির দিকে ছুড়ে দেয়- নেন, ভাল দাম পাইছেন। আজান হইয়া গেছে নামাজে যামু। আপনেও যান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আর আল্লারে ডাকেন। তিনিই বিপদের মালিক তিনিই উদ্ধারকর্তা।


(মোস্তাক আহমেদ, গ্রামের বাড়ী সিলেটের বিয়ানী বাজারে বাহাদুরপুরের বারইগ্রামে। ১৯৭০ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্রগ্রামের ৪ নং সেক্টর থেকে যুদ্ধে অংশ নেন। সর্বশেষে অনারারী ক্যাপ্টেন হিসেবে ২০০২ সালে অবসরে যান। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এ্যাথলেটিকসে তিনি বহুবার দেশের হয়ে বিদেশে খেলেছেন। মোট ৬৯ টি স্বর্ণপদক পেয়ে বাংলাদেশের সোনার ছেলে অবিধায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি একটানা কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, হয়েছেন বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ।

এই কয়েকবার বর্ষসেরা এ্যাথলেট ও মুক্তিযোদ্ধা অভাবের তাড়নায় ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি থেকে পাওয়া সোয়া ভরি ওজনের স্বর্ণের দুইটা হরিণ বিক্রি করে দিয়েছেন। কয়েকদিন পূর্বে আবার সিলেট থেকে ঢাকায় আসেন ১৯৭৭ সালে সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে পাওয়া ১ম স্বাধীনতা পদকটি বিক্রি করার জন্য।)

*ষূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুলাই ২০০৯

Friday, May 1, 2009

আপনি কি বিখ্যাত হতে চান?

বিখ্যাতরা যা করেন তাই মজার কান্ড। আপনি আমি করলে তা হবে পাগলামী। নীচে এদের কিছু মজার কান্ডকীর্তি দেয়া হল। এখন আপনি চিন্তা করে বের করুন কোন কান্ডটি ঘটিয়ে আপনি ইতিহাসে এদের মত জায়গা করে নিতে পারবেন।

১. হামদার্দ এর প্রতিষ্ঠাতা হেকিম আজমল খানের চিকিৎসক হিসেবে খুব নাম ডাক ছিল। তিনি নাকি রোগীকে না দেখেই শুধু রোগীর প্রশ্রাব দেখেই রোগ নির্ণয় করতে পারতেন। এ কথা শুনে একবার এক ব্যক্তি পরীক্ষা করার জন্য নিজের প্রশ্রাব না পাঠিয়ে উটের প্রশ্রাব পাঠালেন রোগ নির্ণয়ের জন্য। আজমল খান প্রশ্রাব পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দিলেন-এই প্রশ্রাবের মালিককে আরও বেশী করে খড় এবং ভুষি খেতে হবে।

২. নামী হস্তরেখাবিদ কিরোর পান্ডিত্য পরীক্ষা করে দেখার জন্য একবার এক লোক চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জির হাতের ছাপ নিয়ে কিরোকে হাতের ছাপের মালিক সম্পর্কে কিছু বলতে অনুরোধ করেন। কিরো হাতের ছাপটি দেখে বলেন-এটি নিশ্চয়ই আপনার কোন ঘনিষ্ট আত্নীয়ের হাতের ছাপ হবে। তাকে বলবেন খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে আপনার সাথে থাকতে। তা হলে আপনাদের দুই জনের উন্নতি হবে।

৩. বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের সুনাম তখন চারদিকে । কে কতটুকু চার্লি চ্যাপলিনের মত অভিনয় করতে পারে এই নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে চার্লি চ্যাপলিনও ঐ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ফলাফল ঘোষণার দিন দেখা গেল স্বয়ং চার্লি চ্যাপলিন প্রতিযোগিতায় অভিনয় করে তৃতীয় হয়েছেন।

৪. এক ব্যাংকের কর্মকর্তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলে তিনি একটি পাথরের চোখ লাগান। এবং চোখটি এত নিখুত ছিল কেউ ধরতে পারত না কোনটা নকল চোখ। মার্ক টোয়েন একবার ঐ ব্যাংকে টাকা উঠাতে গেলে ঐ কর্মকর্তা মজা করার জন্য মার্ক টোয়েনকে বলেন আপনি যদি বলতে পারেন আমার কোন চোখটা নকল তবে আমি আপনাকে টাকা দেব।
মার্ক টোয়েন কিছুক্ষণ লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন-আপনার বাম চোখটা নকল।
লোকটি বিস্মিত হয়ে জানতে চায়-কিভাবে বুঝলেন?
মার্ক টোয়েন উত্তর দেন- কারণ আপনার বাম চোখের মাঝেই এখনও দয়া ও করুণার কিছু আভা দেখা যাচ্ছ।

৫. নামি চিত্রকর হেনরি মোশের বিমূর্ত ছবি লা বের প্রদর্শন চলছিল নিউ ইয়র্কের একটি জাদুঘরে। প্রদর্শনীতেলোকে ভিড় করে দেখতে এল ছবিটি। সবাই খুব প্রশংসা করলেন। প্রদর্শনীর সাতচল্লিশ দিনের মাথায় শিল্পী নিজে আসলেন প্রদর্শনী দেখতে। জাদুঘরের কিউরেটর জানাল- আপনার ছবিটির সবাই খুব প্রশংসা করছে।
কিন্তু শিল্পী মোটেও খুশি হলেন না। মুখ গোমড়া করে জানতে চাইলেন-ছবিটা কি সেই প্রথম থেকেই এখাবে উল্টা হয়ে ঝুলছে।

৬. রুটস খ্যাত লেখক আরেক্স হ্যালি রুটস বইয়ের তথ্য সংগ্রহে জাহাজে জাহাজে ঘুরে বেড়ান। তেমনি এক জাহাজে ইউরোপিয়ান এক মহিরা উনার কাছে জানতে চান-আপনারা আফ্রিকানরা নাকি মানুষের মাংস খান?
এমন প্রশ্ন শুনে রেগে বললেন হ্যালি-হ্যা, খাই।
শুনে ভড়কে গিয়ে সামনে থেকে সরে পড়লেন মহিলা।
রাতে খাবার টেবিলে ঐ মহিলার পাশের চেয়ারেই বসলেন হ্যালি। সবাইকে খাবার পছন্দ করার জন্য খাদ্য তালিকা দেয়া হল। মহিলাকে আরও ঘাবড়ে দেয়ার জন্য হ্যালি বেয়ারাকে ডেকে গম্ভীর গলায় বললেন-আমাকে জাহাজের যাত্রীদের তালিকাটি দিন।

৭. সকাল বেলা কাজের লোক বিজ্ঞানী নিউটনের হাতে একটি ডিম দিয়ে বলল-স্যার, আমি একটু বাজারে যাচ্ছি। চুলায় পানি ফুটতে দিয়েছি। ফুটে গেলে তাতে ডিমটা ছেড়ে দিয়ে সিদ্ধ করে নেবেন। একটু পর কাজের লোক ফিরে এসে দেখল ডিমটি নিউটনের হাতেই রয়ে গেছে, আর চুলায় সিদ্ধ হচ্ছে নিউটনের হাত ঘড়িটি।

৮. নিউটন একটি মেয়েকে ভালবাসতেন। একদিন বিকেলে বাগানে বসে মেয়েটির সাথে আলাপে মশগুল ছিলেন। নিউটনের চুরুট খাবার ইচ্ছে হল। হঠাৎ মেয়েটির চিৎকারে নিউটন লাফিয়ে উঠেন। চুরুট ভেবে তিনি মেয়েটির আঙ্গুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।


সংগ্রহ: আসমার ওসমান সম্পাদিত বিখ্যাতদের সত্যি জোকস।





Tuesday, April 28, 2009

বিখ্যাতদের মজার উত্তর

বিখ্যাতরা প্রায়ই বিভিন্ন প্রশ্নের মজার উত্তর দিয়ে থাকেন। তাই শিরোনাম- বিখ্যাতদের মজার উত্তর। যেহেতু তারা বিখ্যাত।
তবে এ ধরনের বেফাস মন্তব্য আমি করলে শিরোনাম হত- ছাগু ব্লগারের আতলামি। যেহেতু আমি অখ্যাত।

১. সুপারম্যান খ্যাত অভিনেতা ক্রিস্টোফার রীভকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল -সুপারম্যান আর জেন্টেলম্যান এর মধ্যে পার্থক্য কি?
তিনি গম্ভীর মুখে উত্তর দিলেন- সহজ পার্থক্য। জেন্টেলম্যানরা আন্ডারঅয়্যার পরে প্যান্টের নিচে আর সুপারম্যান পরে ওপরে।

২. কিংবদন্তীমুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে প্লেনে উড়বার আগে সিট বেল্ট বাঁধার কথা মনে করিয়ে দিলেন বিমানবালা। আলী অহংকারী গলায় উত্তর দিলেন- সুপারম্যানের সিট বেল্ট বাধার প্রয়োজন হয়না।
কিন্তু সত্যিকার সুপারম্যানের প্লেনে চড়বারও দরকার হয় না-বিমানবালা চটপট উত্তর দেয়।

৩. স্বামী বিবেকানন্দের বাবা তার বৈঠকখানায় অনেকগুলি হুকো রাখতেন যেন এক জনের পান করা হুকো মুখে দিয়ে অন্যের জাত না যায়। একদিন বিবেকানন্দ সবগুলো হুকোয় একবার করে টান দিলেন।
এ তুমি কি করলে -ক্ষেপে গিয়ে উনার বাবা জানতে চাইলেন।
দেখলাম জাত যায় কিনা-বিবেকানন্দের উত্তর।

৪. একবার এক মহিলা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য কিছু পিঠা বানিয়ে নিয়ে যান। কেমন লাগল পিঠা জানতে চাইলে কবি গুরু উত্তর দেন- লৌহ কঠিন, প্রস্তর কঠিন, আর কঠিন ইষ্টক, তাহার অধিক কঠিন কন্যা তোমার হাতের পিষ্টক।

৫. কবি মাইকেল মধুসুদনের অর্থিক অনটনের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। একদিন এক মাতাল উনার কাছে সাহায্য চাইতে এলে বিদ্যাসাগর বললেন-আমি কোন মাতালকে সাহায্য করি না।
কিন্তু আপনি যে মধুসুদনকে সাহায্য করেন তিনিওতো মদ খান-মাতালের উত্তর।
বিদ্যাসাগর উত্তর দেন -ঠিক আছে আমিও তোমাকে মধুসুদনের মত সাহায্য করতে রাজী আছি তবে তুমি তার আগে একটি মেঘনাথ বধ কাব্য লিখে আন দেখি।

৬. বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর মেধার তুলনায় চেহারা ছিল নিতান্তই সাদামাটা। একবার এক সুন্দরী অভিনেত্রী প্রস্তাব দেন-চলুন আমরা বিয়ে করে ফেলি। তাহলে আমাদের সন্তানের চেহারা হবে আমার মত সুন্দর আর মেধা হবে আপনার মত প্রখর।
কিন্তু যদি ঠিক এর উল্টোটা ঘটে তবে কি হবে-আইনস্টাইন নির্বিকার ভাবে উত্তর দেন।

৭. স্যার উইন্সটন চার্চিলের তর্ক হচ্ছিল নারী নেত্রী ন্যান্সি অ্যাস্টয়ের সাথে। তর্ক একসময় রীতিমতো ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যায়। গলা উচিয়ে ন্যান্সি বলেন-তোমার সাথে বিয়ে হলে কফিতে বিষ মিশিয়ে আমি তোমাকে খুন করতাম।
চার্চিল উত্তর দেন- তোমার মত বউ হলে বিষ খেয়ে মরতে আমার কোনও আপত্তি থাকত না।

৮. একবার এক ছাত্র মার্ক টোয়েনের কাছে এসে বলল-আমি ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের উপকার করতে চাই।
মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন-তুমি ডাক্তারী পড়া ছেড়ে দিয়ে এমনিতেই মানবজাতির অনেক উপকার করেছ। আর উপকার না করলেও চলবে।

৯. মার্ক টোয়েন একবার উনার এক সাংবাদিক বন্ধুকে বললেন বছর দশেক লেখালেখি করার পর বুঝতে পারলাম এ ব্যাপারে আমার কোনও প্রতিভা নেই।
তাহলে এটা বুঝবার পরও তুমি কেন লেখালেখি চালিযে যাচ্ছ-বন্ধু জানতে চায়।
মার্ক টোয়েন উত্তর দেন-কি করব, ততদিনে আমি রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছি যে।

১০. সমাধীস্থলের চারদিকেল দেয়ালের জন্য মার্ক টোয়েনের কাছে চাঁদা চাইতে গেলে তিনি উত্তর দেন-সমাধীস্থলের চারদিকে দেয়াল দেয়ার কোন প্রয়োজন দেখি না। কারণ যারা ওখানে থাকে তাদের বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা নেই। আর যারা বাইরে থাকেন তাদের ওখানে যাবার কোন ইচ্ছে আছে বলে আমার মনে হয় না।

সংগ্রহ: আসমার ওসমান সম্পাদিত বিখ্যাতদের সত্যি জোকস।









Monday, April 27, 2009

রাজনীতির কৌতুক

১. আলোচনা হচ্ছিল মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের এক মন্ত্রীর মধ্যে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী: আমরা আমাদের দেশের লোকদের বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। ধরা যাক শীতার্ত একজন লোক। তাকে আমরা আগুন জ্বালানো শিখিয়ে দেই। ফলে তার আর কখনই উষ্ণতার অভাব হয়না।
বাংলাদেশের মন্ত্রী: আমাদের নীতি আরও সহজ। একজন শীতার্তকে আগুন জ্বালানো শিখানো সমসাপেক্ষ কাজ। আমরা বলি একজন শীতার্তকেই আগুনে পুড়িয়ে দাও, তাহলে বাকী জীবন আর তার
উষ্ণতার দরকারই হবে না।

২. মারা গেছেন বুশ। ততদিনে আমেরিকা সারা বিশ্বে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত বিধ্বস্থ। তাই বুশের মৃত্যুতে আমেরিকানরা উল্লসিত। বুশকে কবর দেয়ার দায়িত্ব নিতে চাইল তার আজীবনের বন্ধু ইহুদীরা। ইহুদীদের প্রধান এ ব্যাপারে আমেরিকানদের কাছে আবেদন জানাল। কিন্তু আমেরিকানরা এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল-যা ব্যাটা, তোদের বিম্বাস নেই। তোরা যীশু খৃষ্টকে কবর দিয়েছিলি, তিনি তিনদিন পর বেঁচে উঠেছিলেন। বুশকে পুনর্জন্ম নেবার কোন রিক্স আমরা নিতে পারি না।

৩. জর্জ ওয়াশিংটন এক দিনের জন্য পৃথিবীতে আসার ইচ্ছা পোষণ করলে ঈশ্বর তার ইচ্ছা পূরণ করেন। কফিন থেকে পুর্নজন্ম নিয়ে বেরিয়ে এসে সামনে কবরস্থানের কেয়ারটেকারকে দেখতে পান। জর্জ ওয়াশিংটনের খুব ক্ষিদে পেয়েছে। কেয়ারটেকারকে বললেন-তুমি কি আমার জন্য একটু শিক কাবাবের ব্যবস্থা করতে পারবে। সামনে জলজ্যান্ত ওয়াশিংটনকে দেখে কেয়ারটেকারের ভিমরি খাবার অবস্থা। এক্ষুণি ব্যবস্থা করছি স্যার-কেয়ারটেকার পড়িমড়ি করে ছুট লাগাল। প্রথমেই সে গিয়ে ফোন দিল জর্জ বুশের কাছে। জর্জ বুশ কেয়ারটেকারকে নিয়ে ছুটে চলে আসেন কবরস্থানে। বুশকে দেখে ওয়াশিংটন বিরক্ত গলায় কেয়ারটেকারকে বলেন- তোকে আনতে বললাম শিক কাবাব, আর তুই কিনা আস্ত গরুটাই এখানে নিয়ে এলি।

৪. দেশের সেরা দশজন রাজনীতিবিদ নিয়ে দূর গ্রামে বিধ্বস্থ হয়েছে একটি হেলিকপ্টার। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দল রওয়ানা হল। গ্রামে পৌছে দেখল দশটি সারিবদ্ধ কবর। গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই তাদের কবর দিয়ে ফেলেছ। উদ্ধারকারী দলের নেতা পাশে দাড়ানো গ্রামবাসীর কাছে জানতে চাইলে- সবাই কি এক সাথেই মারা গিয়েছিল।
লোকটি দাঁত কেলিয়ে বলল-দুয়েক জন অবশ্য কবর দেয়ার আগ পর্যন্ত বলছিল যে, তারা মরেনি, বেঁচে আছে। আমরা তাদের কথা মোটেও বিশ্বাস করিনি। কারণ আপনারাতো জানেনই যে, রাজনীতিবিদ নেতারা কত মিথ্যা কথা বলে থাকেন। আমরা সবাইকেই কবর দিয়েছি।

৫. বাংলাদেশের টি.এন্ড.টি মন্ত্রী গেছেন ব্রিটেনে। ব্রিটেনের টি.এন্ড.টি মন্ত্রী উনাকে জংলা মত একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে বললেন-মাটি খুড়ুন।
বাংলাদেশের মন্ত্রী মাটি খুড়তে শুরু করলেন। দশ ফুট মাটি খুড়ে পাওয়া গেল জীর্ণ টেলিগ্রাফের তার। ব্রিটেনের মন্ত্রী সগর্বে বললেন-দেখলেনতো দুইশ বছর আগেও আমাদের দেশে টেলিগ্রাফের প্রচলন ছিল।
এর কিছুদিন পর ব্রিটেনের টি.এন্ড.টি মন্ত্রী এসেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মন্ত্রীও উনাকে জংগলে গিয়ে মাটি খুড়তে অনুরোধ করলেন। মন্ত্রী খুড়তে আরম্ভ করলেন। দশ-বিশ-ত্রিশ ফিট পর্যন্ত খোড়া হল। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। ব্রিটেনের মন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন-কই, কোন তারইতো পাচ্ছি না।
এবার গর্বের সাথে উত্তর দিলেন বাংলাদেশের মন্ত্রী-তাহলেই বুঝুন, দুইশ বছর আগেই আমাদের দেশে মোবাইল ফোনের প্রচলন ছিল।

৬. আমাদের দেশের এক রাজাকার মন্ত্রী যাচ্ছেন গ্রামের রাস্ত দিয়ে। হঠাৎ করে একটি শূকর ছানা উনার গাড়ীর নিচে চাপা পড়ল। মন্ত্রী ড্রাইভারকে বললেন -আহা, কার জানি শূকর ছানা। তুমি গ্রামের ভিতরে গিয়ে এর মালিককে উপযুক্ত দাম দিয়ে এস।
ঘন্টা খানেক পর মন্ত্রীর ড্রাইভার হাসতে হাসতে হাতে একটি ঝুড়িতে করে অনেক ফলমূল-শাকসব্জি নিয়ে আসছে-গ্রামবাসীরা ভালবেসে আমাকে এ সব উপহার দিয়েছে।
মন্ত্রী খুব অবাক হলেন। জানতে চাইলেন-তুমি তাদের গিয়ে আসলে কি বলেছ?
ড্রাইভার উত্তর দিল-আমি গিয়ে বললাম, আমি অমুক মন্ত্রীর ড্রাইভার। তারপর একটু থেমে বললাম, শুওরের বাচ্চাটাকে রাস্তায় আমিই মেরে ফেলেছি। তারপর সবাই খুশি হয়ে আমাকে এই সব দিল।

৭. বিরোধী দলীয় নেতা সমুদ্র সৈকতে একটি প্রাচীন বোতল কুড়িয়ে পেলেন। বোতলের ছিপি খুলতেই ভেতর থেকে এক দৈত্য। নেতাকে কুর্নিশ করে দৈত বলল-আপনি আমাকে জাদুর বোতল থেকে মুক্ত করেছেন, তাই আমি আপনার তিনটি ইচ্ছা পূরণ করব। তবে শর্ত হচ্ছে আপনি যা পাবেন আপনার প্রতিপক্ষ নেতা পাবে এর দুই গুণ।
ঠিক আছে-নেতা রাজী হলেন। আমার প্রথম ইচ্ছা একটি বিলাস বহুল বাড়ী, ২য় ইচ্ছা একটি বিলাস বহুল গাড়ী, আর শেষ ইচ্ছা আমি আমার একটি কিডনি জনস্বার্থে দান করে দিতে চাই।

৮. নির্বাচন সামনে রেখে এক ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানের মধ্যে কথা হচ্ছিল।
ডেমোক্রেট-আমি যখন কোন টেক্সিতে চড়ি তখন সেই টেক্সি ড্রাইভারের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করি। প্রথমে তার ছেলে মেয়ের কোজ খবর নেই, তাকে মোটা বকশিস দেই। এবং নামার সময় বলি ডেমোক্রেটদের ভোট দিও।
রিপাবলিকান-আমি টেক্সিতে উঠেই ড্রাইভারকে গালাগালি দিতে শুরু করে দেই। সিগারেট ধরিয়ে তার মুখে ধোয়া ছেড়ে দেই, এক টাকাও টিপস দেই না। তবে নামার সময় তোমার মতই বলি ডেমোক্রেটদের ভোট দিও।



সংগ্রহ: আরিফ জেবতিক সম্পাদিত পলিটিক্যাল জোকস।


Saturday, April 25, 2009

পৃথিবী বিখ্যাত সব ব্যর্থ কাহিনী

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিভিন্ন ব্যর্থতার কাহিনী। এখানে পৃথিবীর বিখ্যাত সব ব্যর্থতার কাহিনী দেয়া হল। যা পড়ে আমাদের নিজেদের ব্যর্থ জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসতে পারে। অতএব Don’t worry be happy.

১. ব্যর্থতম লেখক: জার্মানীর এক লেখক তার জীবনে ৬৪ টা বই লেখেন যার মধ্যে মাত্র ৩টি বই এর প্রকাশক ধরতে তিনি সমর্থ হন। এর মধ্যে একটি বই প্রকাশক তার নিজের নামে ছাপিয়ে ফেলে। দ্বিতীয়টি ভুলক্রমে লেখকের নাম ছাড়াই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর তৃতীয়টির ক্ষেত্রে এ রকম কোন সমস্যা হয়নি। পুরো বইযের বান্ডিল মার্কেটে যাবার পথে মিসিং হয় আর সে বই এর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য এক ঠোঙ্গা বিক্রেতার কাছে হারানো বই এর হদিস পাওয়া যায়। তবে বই হিসেবে নয় ঠোঙ্গা হিসেবে।

২. ব্যর্থতম ব্যাংক ডাকাত: ১৯৭১ সালে তিনজন ব্যাংক ডাকাত ডাকাতির উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের স্থানীয় একটি ব্যাংক এ ঢুকে পড়ে। এটা ছিল তাদের প্রথম ব্যাংক ডাকাতি। তাই উত্তেজনাবশত তারা ভুল করে ব্যাংক এ না ঢুকে পাশের ডির্পামেন্টাল স্টোরে ঢুকে পড়ে। হাতের অস্ত্র উচিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে আমরা ব্যাংক লুট করতে এসেছি। দোকানের কর্মচারীরা এটাকে উচুদরের রসিকতা ভেবে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। তাদের হাসি শুনে ডাকাতরা ঘাবড়ে গিয়ে কিছু না বুঝেই এক গাদা কয়েন চকলেট নিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।

৩. ব্যর্থতম কম্পিউটার প্রোগ্রামার: জার্মানীর জন মারথুস পেশায় একজন সৌখিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তার কাজ হচ্ছে এন্টি ভাইরাস প্রোগ্রাম তৈরী করা। একবার বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে তিনি একটি এন্টি ভাইরাস তৈরী করে পরীক্ষামূলক ভাবে বন্ধুর পিসিতে এটাকে টেস্ট রান করান। পিসিটি চালাতে গিয়ে দেখা গেল তার এন্টি ভাইরাসটি আসল ভাইরাস হয়ে বন্ধুর পিসির হার্ডডিস্ক ক্রাশ করে ফেলেছে।

৪. ব্যর্থতম বই: পশ্চিমা লেখক রুডলফ স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি নামে একটি গবেষণামূলক বই লেখেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বইটি বেস্ট সেলার বই এর তালিকায় চলে যায়। এর মধ্যে আকস্মাৎ লেখকের মৃত্যূ হলে ময়না তদন্ত করে ডাক্তার সার্টিফিকেট দেন। তাতে মৃত্যুর কারণ দেখানো হয় পুষ্টিহীনতা। এ খবর প্রচার হলে পরের সপ্তাহেই বই এর বিক্র বেস্ট সেলার থেকে ওর্স্ট সেলারে নেমে আসে।

৫. ব্যর্থতম আর্কিওলজিস্ট: মরক্কোর আবিওয়ালা আল রাজি একজন সৌখিন আর্কিওলজিস্ট। পেশায় তিনি একজন ইন্জিনিয়ার হলেও তার নেশা হচ্ছে প্রাচীণ কালের হাড়-গোড় খুজে বের করা। দীর্ঘ বার বছর পরিশ্রম করে তিনি নিজের এলাকাতেই নিয়ানডারথল যুগের মানুষের চোয়াল খুজে পান। যা নিয়ে আর্কিওলজিস্টদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পরে কার্বন টেস্টে ধরা পড়ে যে ঐ চোয়ালটি কোন নিয়ানডারথল যুগের মানুষের নয় তারই মৃত দাদার চোয়াল।

৬. ব্যর্থতম শিক্ষক: আফ্রিকার এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক প্রাইমারী স্কুল। স্কুলের অবস্থা খুবই করুণ। ঐ স্কুলে কোন ঘন্টা ছিল না। ফলে তারা ক্লাশ শেষ হলে বা ছুটির আগে স্কুলের বাইরে অপেক্ষমান এক আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে ঘন্টা ধার করে এনে বাজাত। কিন্তু এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আইসক্রিমওয়ালা ঐ স্কুলে ঘন্টার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকুরী দাবী করে বসে। স্কুলে শিক্ষকের কিছু স্বল্পতাও ছিল আবার ঘন্টারও দরকার তাই তার চাকরী হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর ঐ ঘন্টা স্কুল থেকে চুরি হয়ে গেলে ঐ আইসক্রিমওয়ালা শিক্ষকের চাকরী চলে যায়।

৭. ব্যর্ততম ধূমপায়ী: কলম্বিয়ার মাইকেল জর্জ কখনই ধূমপান করতেন না। কিন্তু বিয়ের পর তার স্ত্রী তাকে ধূমপান করতে উৎসাহিত করেন। কেননা তার স্ত্রীর ধারণা পুরুষ মানুষ সিগারেট না খেলে ম্যনলি লাগে না। স্ত্রীর অনুরোধে জর্জ একদিন বিমর্ষ মুখে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে এনে একটি ধরালেন। সিগারেটে টান দেয়া মাত্র তিনি কাশতে কাশতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে আসলে তিনি একটি চিঠি পান। তার স্ত্রীর ডিভোর্স লেটার।

৮. ব্যর্থতম উদ্ধার অভিযান: ১৯৭৮ সালের ১৪ জানুয়ারী সম্ভবত পৃথিবীর সব চাইতে সফল পশু উদ্ধার ঘটনাটি ঘটে বৃটেনে। এক বৃদ্ধার পোষা বিড়াল ছানাটি কি ভাবে যেন এক বিশাল বৃক্ষের মগডালে উঠে আটকে যায়। তখন দমকল বাহিনীর ধর্মঘট চলছিল বলে বৃটিশ সৈন্যরা বিপুল উদ্যমে ঐ বিড়ালটিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। এবং অসাধারণ দক্ষতায় বিড়ালটিতে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। সমস্ত ব্যাপরটিতে বৃদ্দা এতই খুশি হন যে তিনি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সৈন্যদের না খাইয়ে ছাড়েন না। সৈন্যরা বিদায় পর্ব শেষ করে গাড়ীতে উঠে যাওয়ার সময় উদ্ধারকৃত বিড়ালটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। কারণ কোন ফাকে বিড়ালটি বৃদ্ধার কোল থেকে নেমে গাড়ীর চাকার নিচে অবস্থান করছিল তা কেউই লক্ষ্য করেনি।

৯. ব্যর্থতম সার্কাস: ফ্রান্সে মিস রিটা থান্ডারবার্ড নামে এক মহিলা কামানের গোলা হিসেবে খেলা দেখাতেন সার্কাসে। খেলার নিয়ম অনুযায়ী তিনি কামানের ভেতর গিয়ে ঢুকতেন, কামান দাগা হলে তিনি ছিটকে গিয়ে দূরবর্তী জালে গিয়ে পড়তেন। একদিন শহরের মেয়র আসলেন খেলা দেখতে। যথারীতি কামান দাগা হল। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে মিস রিটার পরিবর্তে তার অর্ন্তবাসটি ছিটকে গিয়ে মেয়রের মাথায় পড়ে। কামানের ভেতর মিস রিটার কাছে দ্বিতীয় অর্ন্তবাসটি পৌছানো পর্যন্ত সার্কাস বন্ধ রাখতে হয়।

১০. ব্যর্থতম রাজনৈতিক হত্যা প্রচেষ্টা: ফিদেল কাস্ট্রো ভাগ্যবানদের একজন। ১৯৭৪ সালের ভেতরেই উনাকে অন্তত ২৪ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। এবং প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়। একবার কোল্ড ক্রিমের ডিব্বায় বিষ ভরা ক্যাপসুল রাখলে তা গলে যায়। আরেকবার কালো চুলের এক মায়াবিনী ঘাতক উল্টো্ উনার প্রেমে পড়ে যায়। আরেকবার ফ্রিজে রাখা চকলেট মিল্ক শেকে বিষ মিশিয়ে রাখা হয়। কিন্তু তা জমে বরফ হয়ে গিয়ে খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ে। উনাকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন সময়ে প্রচুর পয়জন পেলেটস ছোড়া হয় যা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। আরেকবার এক আস্ত বাজুকা নিয়ে মারতে আসা দুই ঘাতক ধরা পড়ে যায়। বিস্ফোরিত একগাদা সী শেল মাত্র চল্লিশ মিনিটের জন্য ক্যাস্ট্রোকে মিস করলেও মূল হাভানা শহরের সমস্ত ট্রাফিক লাইট ফিউজ করে দিতে সক্ষম হয়।

১১. ব্যর্থতমবিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী: বাংলাদেশের বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে দেশের বিদ্যুত সমস্যাকে টর্নেডো, সুনামির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে তুলনা করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেমন মানুষের সাধ্যের বাইরে তেমনি বর্তমানে দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতিও সমাধান করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। খুবই চমৎকার যুক্তি। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিদ্যুত খাতের সমস্যা সমাধান করার জন্য। তিনি যেন শীঘ্রই একজন দেবদূত পাঠিয়ে আমাদের দেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করে দেন।

* মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি পৃথিবীর বর্থ্যতম একজন মানুষ হিসেবে এই জীবনে কিছুইতো করা হল না । মাঝে মাঝে মা-বাবাকে বলতে ইচ্ছে করে তোমরা ভুল মানুষকে নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখলে? ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে আয়ু। হায়! জীবন এত ছোট কেন?

সংগৃহীত: আহসান হাবীব সম্পাদিত পৃথিবী বিখ্যাত সব ফেলটুস। (১১ নম্বরটি বাদে)

Thursday, April 23, 2009

সেলিব্রেটিদের শৈশব স্মৃতি

১. বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমাযূন আহমেদ তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন-
আমি অতি সুবোধ বালকের মত ক্লাসে গিয়ে বসলাম। মেঝেতে পাটি পাতা। সেই পাটির উপর বসে পড়াশোনা। ছেলেমেয়ে সবাই পড়ে। মেয়েরা বসে প্রথমদিকে, তাদের পেছনে ছেলেরা। আমি খানিক্ষণ বিচার-বিবেচনা করে সবচেয়ে রূপবতী বালিকার পাশে ঠেলেঠুলে জায়গা করে বসে পড়লাম। রূপবতী বালিকা অত্যন্ত হৃদয়হীন ভঙ্গিতে তুই তুই করে সিলেটি ভাষায় বলল, এই তোর প্যান্টের ভেতরের সবকিছু দেখা যায়।

ক্লাসের সবকটা ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে হেসে উঠল। মেয়েদের আক্রমণ অনুচিত বিবেচনা করে সবচেয়ে উচ্চস্বরে যে ছেলেটি হেসেছে, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হাতের কুনুইয়ের প্রবল আঘাতে রক্তারক্তি ঘটে গেল। দেখা গেল ছেলেটির সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গ গেছে। হেডমাস্টার সাহেব আমাকে কান ধরে সারাক্ষণ দাড়িয়েঁ থাকার নির্দেশ দিলেন। ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দিলেন-এ মহাগুন্ডা। তোমরা সাবধানে থাকবে। খুব সাবধান। পুলিশের ছেলে গুন্ডা হওয়াই স্বাভাবিক।
ক্লাস ওয়ান বারটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। এই দুই ঘন্টা আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

ক্লাস টুতে উঠে আমি আরেকটি অপকর্ম করি। যে রুপবতী বালিকা আমার হৃদয় হরণ করেছিল, তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলি। গম্ভীর গলায় জানতে চাই বড় হয়ে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী আছে কিনা। প্রকৃতির কোন এক অদ্ভূত নিয়মে রুপবতীরা শুধু যে হৃদয়হীন হয় তাই না, খানিকটা হিংস্র স্বভাবের হয়। সে আমার প্রস্তাবে খুশি হবার বদলে বাঘিনীর মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খামচি দিয়ে হাতের দু-তিন জায়গার চামড়া তুলে ফেলে। স্যারের কাছে নালিশ করে। শাস্তি হিসেবে দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে আমাকে নীল ডাউন হয়ে বসে থাকতে হয়।

প্রেমিক পুরুষদের প্রেমের কারণে কঠিন শাস্তি ভোগকার নতুন কোন ব্যাপার নয়, তবে আমার মত এত কম বয়সে প্রেমের এমন শাস্তির নজির বোধহয় খুব বেশি নেই।

২. বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর স্কুল জীবনের এক শিক্ষক সম্পর্কে স্মুতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন-
স্যারের কানমলা চিরকালই ছিল অত্যন্ত শিল্পসম্মত ও উচ্চস্তরের। কোন ছাত্র কোন ভুল উত্তর দিয়েছে কি অমনি ডান হাতের তর্জনি দিয়ে ফিল্মী রংবাজদের কায়দায় দুবার তাকে নিজের দিকে আহবান করতেন। তারপরেই ডান হাতে খপ করে তার কান চেপে ধরতেন। হ্যাঁ, কাচের গুড়োঁয় মাঞ্জা দেওয়া সেই বিখ্যাত হাতের চেপে ধরা। কানের গোড়াসুদ্ধ মাথাটাকে হ্যাঁচকা টানে তাঁর দিকে টেনে নিতেন। আর তারপরই দ্বিতীয় পর্যায়। এক ধাক্কায় কান-মাথাসুদ্ধ ছাত্রটাকে সোজা পাঠিয়ে দিতেন বেঞ্চের সিটে। সেদিনও ঘটল একই ব্যাপার। উত্তর ভুল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্যারের ব্যতিক্রমহীন আহবান শোনা গেল। আমার কানের ওপর হাত পড়তেই খুশিতে বড় বড় হয়ে উঠল স্যারের দুই চোখ, যেন অভাবিত কোন খাবার দেখেছেন সামনে। গভীর পরিতৃপ্তির সঙ্গে গড়গড় শব্দও হচ্ছে মনে হয় গলা থেকে-বাহ্ তোর কান দুটো বেশ বড় রে।
আলতো ভাবে কানদুটো নেড়েচেড়েও দেখলেন কিছুক্ষণ-বাহ্, বেশ নরমও তোর কান দুটো।
আর তারপরে সেই অতিপরিচিত দৃশ্যকাব্য। কান মাথাসুদ্ধ নিজের সিটে আমার প্রত্যাবর্তন। গোড়াসুদ্ধ সারাটা কান তখন যন্ত্রণায় চিঁ চিঁ করছে।
সেদিন থেকে স্যার আমার কানের একনিষ্ট ভক্ত হয়ে গেলেন। জোড় বেতের বিদ্যুত ঝলক আমার জন্য প্রায় নিষিদ্ধই করে দিলেন। পরিবর্তে আমার বড় বড় আর নরম কান দুটোকে মধ্যাহ্নফলার হিসেবে ব্যবহার শুরু করলেন।

৩. প্রখ্যাত কবি-লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতির কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেছেন-
এ বছরই প্রথম দেখি গ্রামোফোন যন্ত্রটি। বাংলায় যার নাম কলের গান। অমন গ্রামদেশে ওই বস্তুটি খুবই অভিনব। আমাদের মত বাচ্চাদের অবস্থা হিজ মাস্টার্স ভয়েস-এর কুকুরটিরই মতন, আমরা হাঁটু গেড়ে অবাক বিস্ময়ে শুনতে শুনতে ভাবতাম, ওই বাক্সটির মধ্যে গুটিশুটি মেরে একজন লোক গানগুলো গাইছে। এটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নয়, এর মধ্যে যথেষ্ট সংশয়ও ছিল। একই লোক বিভিন্ন গান, বিভিন্ন রকম গলায়, এমনকি মেয়েদের মতন গলাতেও গায় কী করে? কমিক গুলিতে চার-পাঁচজন লোকের গলা এক সঙ্গে শোনাযায়। এই বাক্সের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ থাকা তো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়!


সংগৃহীত: আসমার ওসমান সম্পাদিত বিখ্যাতদের সত্যি জোকস্

Monday, April 20, 2009

জনপ্রিয় ব্লগার হতে চাইলে কি করবেন?

স্যার, আমি কিভাবে আপনার মত একজন জাদরেল ব্লগার হতে পারব? অল্প দিনের মধ্যেই আপনার পেইজের হিটের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। একটি গাধার আত্ন কাহিনী লিখে ব্লগে ছেড়ে দিলেও হিটের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। শ দুয়েক মন্তব্য চলে আসে। বেশীর ভাগ ব্লগারের প্রিয় পোস্টের লিস্টে আপনার পোস্ট শোভা পায়। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে?

তুমি কি অল্প সময়ের মধ্যে একজন জনপ্রিয় ব্লগার হতে চাও?
জ্বী স্যার, কিন্তু আমি তো ভাল লেখতে জানি না।

তোমাদের নতুন ব্লগারদের এই একটি সমস্যা। চট করে একটি কমেন্টস করে বসবে। তোমাকে কে বলেছে যে ভাল ব্লগার হতে হলে ভাল লেখালেখি জানতে হবে। এই পদ্ধতিতে আগালে কয়েক বছর লেগে যাবে তোমার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে। আমার পলিসি হচ্ছে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন।

স্যার, আমাকে তাহলে দয়া করে কিছু টিপস দিয়ে দেন।

১ম টিপস: লগ ইন টা জরুরী। আমি অনেক সময় টানা কয়েক দিন লগ ইন অবস্থায় থাকি। তবে মনে করো না যে লগ ইন করে থাকা মানে তোমাকে সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে খাওয়া ,বাথরুম সেখানেই সারতে হবে। লগ ইন করে তুমি হাওয়া হয়ে গেলে কেউতো আর তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না। সা.মু তে ঢুকলে কিছু ব্লগারকে তুমি সব সময় লগ ইন অবস্থায় পাবে। তোমার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে এরা তাহলে ঘুমায় কখন।

২য় টিপস: তোমার কয়েকটা নিক থাকতে হবে। মানুষের যেমন কয়েকটি নাম থাকে। অফিসে এক নাম, বাড়ীতে এক নাম, গার্লফ্রেন্ড এর কাছে এক নাম। একটি পোস্ট দিবে তারপর নিজের অন্য একটি নিক থেকে সেই পোস্টে মন্তব্য করবে। মন্তব্য আর কিছুই নয়: + পিলাস দিলাম। এখানে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করলে হৃদয়ের টান বাড়ে। সবশেষে পোস্ট নিয়ে যাবে প্রিয় পোস্টের তালিকায়।

৩য় টিপস: আস্তিক নাস্তিক বিষয়ক পোস্ট। আস্তিক বিষয়ক পোস্ট হলে ড. জাকির নায়েকের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে। ইউ টিউব থেকে নিয়ে আসলেই হবে।
আর নাস্তিক বিষয়ক পোস্ট হলে আরজ আলী মাতুব্বর এর নাস্তিকের ধর্ম কথা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরতে হবে। জাস্ট, কপি পেস্ট করে দিলেই হবে।

৪র্থ টিপস: ধর্ম বিষয়ক পোস্ট। বাজার থেকে অখ্যাত কিছু মৌলানাদের সম্পাদিত হাদিসের সংকলন সংগ্রহ করা যেতে পারে। এর মধ্য থেকে যে সব হাদিস নিয়ে বেশী বিতর্ক রয়েছে সেগুলি দেয়া যেতে পারে। যেমন- ইসলামে পর্দা প্রথা, নারীর অধিকার, মাজার প্রসঙ্গ ইত্যাদি।

৫ম টিপস: ১৮ + কৌতুক। এ ব্যাপারে তোমার আদর্শ হতে পারেন সাবেক সাপ্তাহিক হায় হায় ম্যাগাজিনের সম্পাদক। তিনি সেক্সকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়ে ছিলেন। আর না হলে নেটে এ্যাডাল্ট জোকস এরতো কোন কমতি নেই সেখান থেকে দুই একটা মেরে দিলে কেউ বুঝতে পারবে না।

স্যার, আমি এভাবে জনপ্রিয় ব্লগার হতে চাই না। একজন ব্লগার এখানে লেখবে তার আনন্দের জন্য। একজন মমতা নিয়ে একটি পোস্ট দিবে অন্যরা সেখানে মন্তব্য করবে। ভাল লাগলে ভাল বলবে, নতুবা খারাপ লাগার কারণ ব্যাখা করবে। অবশ্যই তা শালীন এবং যৌক্তিক ভাবে।
জঙ্গলে একটি হরিণ সব সময় হিংস্র প্রাণীদের ভয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে থাকে। এই বুঝি কোন বাঘ তার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল। অরণ্যের যে একটু নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে একটি হরিণ কখনই তা উপলব্ধি করতে পারে না।
তেমনি আমাদের মত নতুন ব্লগাররা আপনার মত ব্লগারদের কারণেই এখানে লেখালেখি করতে ভয পায়। এই বুঝি কোন একটা পোস্ট বা মন্তব্যে আমি কোন ভুল করে ফেললাম। আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে সবাই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। ব্লগের যে একটা নিজস্ব চমৎকার পরিবেশ রয়েছে আপনাদের কারণে আমরা তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। আমরা ভুলে যাই প্রত্যেকেই আমরা এখানে মায়ার এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ। আবার এমন ব্লগারও এখানে আছেন যারা খুব সাধারণ একটি পোস্ট নিয়ে যে মন্তব্যটুকু করেন তা অনেক সময় হৃদয় ছুয়ে যায়। তাদের জন্যেই অনেক সময় লেখতে ইচ্ছে করে।

ব্যাটা ফাজিল তুই তাহলে এতক্ষণ আমার এত সময় নষ্ট করলি কেন। তুমি জান জিন্দা লাশ, মরা গাধা, জানের দুশমন- এগুলি কাদের নিক?
না স্যার, আমি জানি না।
তুমি কি ছাতার ব্লগার হে। কিছুই দেখি জান না। এরা সবাই বড় বড় ব্লগার। এরা আমার পদ্ধতি অনুসরণ করে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় ব্লগারে পরিণত হয়েছে।

স্যার, আপনি কি জানেন পরাণ ব্ন্ধু কার নিক?
না, আমি জানি না।

আপনিও দেখি কিছুই জানেন না। এটা হচ্ছে আপনার পাশের ভাড়াটিয়ার নিক।
তো, এটার সাথে আমার কি সম্পর্ক?

আপনি যখন ব্লগে আপনার রেটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন এই ভদ্রলোক আপনার বউ এর সাথে ডেটিং এ ব্যস্ত থাকে।

(এটি কোন উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট নয়। জাস্ট একটি ফান পোস্ট।)

বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা ও আমাদের করণীয়

বিশ্ব অর্থণীতির মন্দা প্রবেশ করেছে আমাদের অর্থনীতিতেও। কিন্তু আমাদের অর্থ মন্ত্রীকে তেমন একটা বিচলিত হতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি আগাম ভবিষ্যতবাণী করে বসে আছেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাতে আমাদের বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এরই মধ্যে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বিদেশে অনেক বাঙ্গালী চাকুরী হারাচ্ছে। অনেক বাঙ্গালীকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিদেশে আমাদের ঢিলেঢাল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিদেশে কোন কোম্পানী থেকে লোক ছাটাই হলে এর প্রথম শিকার হয় বাংলাদেশের শ্রমিকরা। এমনিতেই বেতন বৈষম্য তার উপর এ ধরণের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণের জন্য আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর দায়ী। তারা কঠোর অবস্থান নিলে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ আপনারা সময় থাকতেই এর গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। আপনাদের ধীরে চল নীতিতে চললে অনেক দেরী হয়ে যাবে তখন হয়ত আমাদের করার আর কিছুই থাকবে না। বিদেশে আমাদের অবস্থা হবে অনেকটা পুরনো সেই কৌতুকের মত -

নিয়ইয়র্কের ব্যস্ততম রাস্তা। হঠাৎ দেখা গেল কেথা থেকে যেন একটি পাগলা কুকুর ছুটে এসেছে । সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড়াচ্ছে। এ সময় পাশের পার্ক থেকে ছোট একটি শিশু বের হচ্ছিল। কুকুরটি ধেয়ে গেল তার দিকে। আতঙ্কে শিশুটি ততক্ষণে নীল হয়ে গেছে। এমন সময় এক সুঠাম যুবক লাফিয়ে পড়ল কুকুরটির সামনে। জাপটে ধরল কুকুরটিকে। ধস্তাধস্তি চলল কিছুক্ষণ। তারপর যুবকটি কুকুরটির গলা জড়িয়ে ধরল। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এক সময় কুকুরটি মারা গেল।
উপস্থিত লোকজন যুবকটির সাহস দেখে মুগ্ধ। ছুটে এসে হাত মিলাচ্ছেন অনেকেই। ঘটনাস্থলে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি এসে যুবকটিকে বললেন- আপনার সাহস অনেকের জন্যই অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে।

কালকের পত্রিকায় আমি শিরোনাম দেব- সাহসী আমেরিকান যুবক কর্তৃক শিশুর প্রাণ রক্ষা।

যুবক বিব্রত হয়ে বলে উঠল- আমি কিন্তু আমেরিকান নই। একজন ইমিগ্রান্ট।

সাংবাদিক একটু চিন্তা করে বললেন - কোন সমস্যা নেই। শিরোনাম হবে সাহসী ইন্ডিয়ান কর্তৃক শিশুর প্রাণরক্ষা।

যুবকটি পুনরায় বলে উঠল-আপনি আবারও ভুল করছেন। আমি ইন্ডিয়ান নই , একজন বাংলাদেশী।

সাংবাদিকটি যুবকের ছবি উঠিয়ে চলে গেলেন।

পরদিন ঠিকই পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হল। শিরোনাম হচ্ছে- বাংলাদেশী টেরোরিস্টদের হাত থেকে অবোধ পশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। নিউইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায় এক বাঙ্গালী যুবক কর্তৃক খুন হয়েছে নিরীহ এক কুকুর।

একটি কুইজ!


দেখুনতো ছবির এই ভদ্রলোককে চিনতে পারেন কিনা? মাথায় টুপি, মুখে সাদা দাড়ি, নূরানী চেহারা। ঠিক ধরেছেন তিনি ফেনীর সাবেক গডফাদার, প্লেবয় জয়নাল হাজারী। গত ১৫ এপ্রিল তিনি ছয়টি মামলায় আত্নপক্ষ সমর্থন করে জামিন প্রার্থনা করেন। পাঁচটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েও যান। যেখানে কোর্ট থেকে একটি জামিন পাওয়াই কষ্টকর সেখানে একই দিনে পাঁচটি মামলার জামিন পাওয়া রীতিমতোভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের দেশেই হয়ত এটা সম্ভব। কিন্তু তারপরও বাধ সাধেন একটি মামলার বিচারক। তিনি জামিন না মন্জুর করে দেন। হাজারী সাহেবও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি একে উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আদালত চত্বরেই হ্যান্ড মাইকের সাহায়্যে ১৫ মিনিট বক্তৃতা দেন। এবং এর দাঁত ভাঙা জবাব তিনি দেবেন বলে উনার ভক্তদের আশ্বস্ত করেন।

যে মামলায় উনার জামিন হয়নি সেই মামলার বিচারক অনুপস্থিত ছিলেন বিধায় উনার জামিন পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যদি বিচারক উপস্থিত থাকতেন তবে হাজারী সাহেব উনাকে একটি কুইজ দিতে পারতেন। জজ সাহেব যদি এর সমাধান বের করতে পারেন তবে জামিন হবে না, আর না পারলে জামিন দিতে হবে।
হাজারী- আচ্ছা জজ সাহেব, ধরুন আমার বাবর এক ছেলে, মার এক ছেলে অথচ আমার কোন ভাই বোন নেই তাহলে ছেলেটি কে?
জজ সাহেব উত্তর দিতে ব্যর্থ হলেন। হাজারী উত্তর দিলেন আরে এটাতো সহজ। সেই ছেলেটি আমি হাজারী। অতএব হাজারী সাহেব বীরের মত জামিন নিয়ে বের হয়ে আসলেন।

জজ চমৎকৃত হলেন। তিনি ঠিক করলেন তিনি উনার সহকারী জজকে এই প্রশ্নটি করবেন। যথারীতি তিনি তা করলেন- আচ্ছা তুমি বল দেখি, আমার বাবর এক ছেলে, মার এক ছেলে অথচ আমার কোন ভাই বোন নেই, তাহলে ছেলেটি কে?
সহকারী জজ অবাক হয়ে উত্তর দিল আরে এটাতো সহজ। সেই ছেলেটি হচ্ছেন গিয়ে আপনি।
জজ হেসে উত্তর দিলেন আমি জানতাম তুমি পারবে না। সঠিক উত্তর হচ্ছ-সেই ছেলেটি হচ্ছে জয়নাল হাজারী।

Monday, April 13, 2009

সাদা ঘোড়সওয়ারী

ছেলে বেলায় আমাদের কাছে তাকে এক রহস্যময় মানুষ বলে মনে হত। মাথায় লম্বা চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখ দুটি রাতে না ঘুমানো লোকের মত সব সময় লাল। এমনিতে কথা বার্তা খুব কম বলতেন। প্রতিদিন বিকালে পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন শতাব্দী প্রাচীন বট গাছের নিচে বসতেন। হাতে থাকত মাটির ছোট্র একটি নলের মত জিনিস যার ভেতরে আবার আগুন দেখা যায়। এতে মাঝে মাঝে টান দিতেন আর নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তেন। এই সময় তার মুখে কথার খই ফুটত।

ছেলে বেলায় বুঝতাম না এটা গাজার নেশার প্রলাপ। তখন শুরু হত সৃষ্টি ছাড়া সব গল্পের আসর। আমরা চোখ কপালে তুলে তা শুনতাম-
বুঝলা আমি কিন্তু তোমাদের এই মানুষের দুনিয়ার কেউ না। আমি হইলাম গিয়া জ্বীনদের দুনিয়ার লোক। তোমাদের মত জ্বীনদেরও দুনিয়া আছে। আমরা হইলাম আগুনের তৈরী। এই দেহ আমার হাতের এইডা থেইক্যা আগুন বাইর হয়। আমরা হা করে দেখতাম তার চোখ মুখ দিয়ে গলগল করে ধোয়া বের হচ্ছে।

তাকে আমরা জ্বীন মানুষ বলে ডাকতাম। তিনি থাকতেন পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন একচালা একটি কুড়েঘরে। কর্তৃপক্ষ তাকে এমনি এমনি দয়া করে থাকতে দেয়নি। এর বিনিময়ে তাকে কবরস্থান দেখা শুনা করতে হত। এক কথায় বলতে গেলে কবরস্থানের কেয়ারটেকার।
সাথে তার বউ আর এক ছেলে থাকত। সেই দুজনকে আবার সাধারণ মানুষ বলেই আমাদের মনে হত। আমরা বুঝতাম না তারা এই জ্বীন মানবের সাথে কিভাবে থাকে।

হেইদিন হইল কি শুন- রাত তখন তৃতীয় প্রহর হইব। বাইরে চাদনী পসর রাইত। আমি বাইর হইলাম কবরস্থানের দিকে। তখন দেখি কি....
এই টুকু বলে তিনি ঝিম মেরে যান। আমরা অস্থির হয়ে পড়ি তারপর কি হল জানার জন্যে। কিন্তু এখন যদি উনাকে তাগাদা দেয়া হয় তবে তিনি আজ আর মুখ খুলবেন না। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । তিনি প্রায়ই গল্পের মাঝে এ ধরনের কান্ড করে আমাদের দেখে মজা পান।

ঐ দিন এক ছোট বাচ্চার নতুন এক কবর হইছে। আমি দেখি কে যেন উপুর হইয়া সেই কবর থেইকা কি বাইর করতাছে। আমার ত বুক ধক কইরা উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম কে কে। কোন উত্তর নাই। তখন আমি সাহস কইরা আগাইয়া গেলাম। যা দেখলাম তোমরা পুলাপান মানুষ তোমাদের কাছে না কইলেই ভাল হইব। তারপর তিনি আবার চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে যান। উনার এই পদ্ধতির সাথে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। জানি এর একটু পরই তিনি আবার মুখ খুলবেন।

দেহি এক লোক কবর থাইকা বাচ্চার লাশ টাইননা বাইর করতাছে। রক্ত ছাড়া ধবধইববা ফরসা মুখ। চোখ দিয়া যেন আগুন বাইর হইতাছে। আমারে দেইখা এক লাফ দিয়া উইঠা দাড়ায়। আমিত চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে দুয়া দুরুদ পড়তে শুরু কইরা দিছি। একটু পরে চোখ খুইলা দেহি সাদা এক ঘোড়ার পিঠে চইড়া ঐ লোক হাওয়া। সকাল বেলা আবার লাশ কবরে ঢুকাইয়া কবর ঠিক ঠাক কইরা দিছি।
কে এই লোক-আমরা সমস্বরে জানতে চাই। লাশ নিয়ে সে কি করবে।

সে এই জগতের কেউ না। বাচ্চারাতো ফেরেশতা। সে বাচ্চাদের লাশ তার জগতে নিয়া যাইব তারপরে তারমাঝে জান দিব। যদি ভাল মা বাবা হয় তবে একদিন হেই বাচ্চা তার বাবা মার কাছে ফিরা আসব।

এখন পর্যন্ত কি কোন বাচ্চা ঐ জগত থেকে ফিরত এসেছে? আমরা জানতে চাই।

না। এখনকার মানুষ পাপী হইয়া গেছে। তবে সাচ্চা মানুষ হইলে তার বাচ্চা ঠিকই ফিরা আসব।

তখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নতুন কবর থেকে লাশ গায়েব হয়ে যায়। এ তাহলে সেই সাদা ঘোড়সওয়ারের কান্ড। তখন বুঝতাম না নতুন কবরের মাটি নরম থাকার কারণে অনেক সময় শিয়াল লাশ বের করে ফেলে।

এর পর থেকে সাদা ঘোড়সওয়ার আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতংকে পরিণত হয়। সব সময় মনে হত এই বুঝি আসছে।

একদিন এই জ্বীন মানবের ছেলে হঠাৎ করে মারা গেল। আমরা তাকে পেলাম কবর খুড়তে থাকা অবস্থায়। এই কবরেই তার ছেলেকে শোয়ানো হবে। তাহলে আজ রাতে আবার সেই ঘোড়সওয়ার আসবে জ্বীন মানবের বাচ্চার লাশ নিতে।

পরদিন বিকালে জ্বীন মানবকে দেখলাম হতে আগুন ছাড়া। এই প্রথম আমরা একটি অদ্ভূত জিনিস দেখলাম। জ্বীন মানবের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরে জ্বীনেরা কি আবার কাঁদে নাকি। তাদের আবার দুঃখ কষ্ট আছে নাকি।

এরমধ্যে আমরা উশখুশ করতে শুরু করেছি গল্প শুনার জন্য। কাল রাতে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারী এসে ছিল কিনা জানতে। কিন্তু আজ আর জ্বীন মানব কোন গল্প বলল না। তারপর থেকে আমরা প্রতিদিন তাকে ঐ জায়গায় একই রকম বসা অবস্থায় দেখতে পেতাম। তার চোখ দুটি এক দৃষ্টিতে তার ছেলের কবরের দিকে নিবদ্ধ থাকত। কি যেন খুঁজে ফিরত তার দুই চোখ।

সবাই বলত ছেলের মৃত্যুতে জ্বীন মানবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানতাম আসল কারণটা। জ্বীন মানব আসলে সেই সাদা ঘোড় সওয়ারকে খোঁজে ফিরত। যে এসে তার ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই ঘোড় সওয়ারী আর আসে না।
হচ্ছে।

তাকে আমরা জ্বীন মানুষ বলে ডাকতাম। তিনি থাকতেন পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন একচালা একটি কুড়েঘরে। কর্তৃপক্ষ তাকে এমনি এমনি দয়া করে থাকতে দেয়নি। এর বিনিময়ে তাকে কবরস্থান দেখা শুনা করতে হত। এক কথায় বলতে গেলে কবরস্থানের কেয়ারটেকার।
সাথে তার বউ আর এক ছেলে থাকত। সেই দুজনকে আবার সাধারণ মানুষ বলেই আমাদের মনে হত। আমরা বুঝতাম না তারা এই জ্বীন মানবের সাথে কিভাবে থাকে।

হেইদিন হইল কি শুন- রাত তখন তৃতীয় প্রহর হইব। বাইরে চাদনী পসর রাইত। আমি বাইর হইলাম কবরস্থানের দিকে। তখন দেখি কি....
এই টুকু বলে তিনি ঝিম মেরে যান। আমরা অস্থির হয়ে পড়ি তারপর কি হল জানার জন্যে। কিন্তু এখন যদি উনাকে তাগাদা দেয়া হয় তবে তিনি আজ আর মুখ খুলবেন না। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । তিনি প্রায়ই গল্পের মাঝে এ ধরনের কান্ড করে আমাদের দেখে মজা পান।

ঐ দিন এক ছোট বাচ্চার নতুন এক কবর হইছে। আমি দেখি কে যেন উপুর হইয়া সেই কবর থেইকা কি বাইর করতাছে। আমার ত বুক ধক কইরা উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম কে কে। কোন উত্তর নাই। তখন আমি সাহস কইরা আগাইয়া গেলাম। যা দেখলাম তোমরা পুলাপান মানুষ তোমাদের কাছে না কইলেই ভাল হইব। তারপর তিনি আবার চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে যান। উনার এই পদ্ধতির সাথে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। জানি এর একটু পরই তিনি আবার মুখ খুলবেন।

দেহি এক লোক কবর থাইকা বাচ্চার লাশ টাইননা বাইর করতাছে। রক্ত ছাড়া ধবধইববা ফরসা মুখ। চোখ দিয়া যেন আগুন বাইর হইতাছে। আমারে দেইখা এক লাফ দিয়া উইঠা দাড়ায়। আমিত চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে দুয়া দুরুদ পড়তে শুরু কইরা দিছি। একটু পরে চোখ খুইলা দেহি সাদা এক ঘোড়ার পিঠে চইড়া ঐ লোক হাওয়া। সকাল বেলা আবার লাশ কবরে ঢুকাইয়া কবর ঠিক ঠাক কইরা দিছি।
কে এই লোক-আমরা সমস্বরে জানতে চাই। লাশ নিয়ে সে কি করবে।

সে এই জগতের কেউ না। বাচ্চারাতো ফেরেশতা। সে বাচ্চাদের লাশ তার জগতে নিয়া যাইব তারপরে তারমাঝে জান দিব। যদি ভাল মা বাবা হয় তবে একদিন হেই বাচ্চা তার বাবা মার কাছে ফিরা আসব।

এখন পর্যন্ত কি কোন বাচ্চা ঐ জগত থেকে ফিরত এসেছে? আমরা জানতে চাই।

না। এখনকার মানুষ পাপী হইয়া গেছে। তবে সাচ্চা মানুষ হইলে তার বাচ্চা ঠিকই ফিরা আসব।

তখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নতুন কবর থেকে লাশ গায়েব হয়ে যায়। এ তাহলে সেই সাদা ঘোড়সওয়ারের কান্ড। তখন বুঝতাম না নতুন কবরের মাটি নরম থাকার কারণে অনেক সময় শিয়াল লাশ বের করে ফেলে।

এর পর থেকে সাদা ঘোড়সওয়ার আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতংকে পরিণত হয়। সব সময় মনে হত এই বুঝি আসছে।

একদিন এই জ্বীন মানবের ছেলে হঠাৎ করে মারা গেল। আমরা তাকে পেলাম কবর খুড়তে থাকা অবস্থায়। এই কবরেই তার ছেলেকে শোয়ানো হবে। তাহলে আজ রাতে আবার সেই ঘোড়সওয়ার আসবে জ্বীন মানবের বাচ্চার লাশ নিতে।

পরদিন বিকালে জ্বীন মানবকে দেখলাম হতে আগুন ছাড়া। এই প্রথম আমরা একটি অদ্ভূত জিনিস দেখলাম। জ্বীন মানবের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরে জ্বীনেরা কি আবার কাঁদে নাকি। তাদের আবার দুঃখ কষ্ট আছে নাকি।

এরমধ্যে আমরা উশখুশ করতে শুরু করেছি গল্প শুনার জন্য। কাল রাতে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারী এসে ছিল কিনা জানতে। কিন্তু আজ আর জ্বীন মানব কোন গল্প বলল না। তারপর থেকে আমরা প্রতিদিন তাকে ঐ জায়গায় একই রকম বসা অবস্থায় দেখতে পেতাম। তার চোখ দুটি এক দৃষ্টিতে তার ছেলের কবরের দিকে নিবদ্ধ থাকত। কি যেন খুঁজে ফিরত তার দুই চোখ।

সবাই বলত ছেলের মৃত্যুতে জ্বীন মানবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানতাম আসল কারণটা। জ্বীন মানব আসলে সেই সাদা ঘোড় সওয়ারকে খোঁজে ফিরত। যে এসে তার ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই ঘোড় সওয়ারী আর আসে না।

টিপস: কিভাবে অল্প সময়ের মধ্য একজন জনপ্রিয় লেখক হবেন।


স্যার, আমায় চিনতে পেরেছেন?

না।

ফাস্ট ইয়ার, সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট। আমি আপনার সবগুলি ক্লাস নিয়মিত এটেন্ড করতাম।

হ্যা, এই বার চিনতে পেরেছি। আমার সবগুলি পরীক্ষায় তুমি নিয়মিত ফেল মারতে। তা এখন কি করছ?

এই স্যার, লেখালেখি করে পেট চালাই আরকি।

আচ্ছা। তাহলে কেউ যদি তোমার পেটের দায়িত্ব নিয়ে নেয় তবে তুমি আর লেখালেখি করবে না।

ঠিক তা নয় স্যার। আমার স্বপ্ন আপনার মত একজন জনপ্রিয় সাই-ফাই লেখক হওয়া।

সাই বাবার নাম শুনে ছিলাম। সাই-ফাই আবার কি জিনিস, ঠিক বুঝলাম না।

ও আল্লা! এটা আধুনিক সায়েন্স ফিকশন। সংক্ষেপে সাই-ফাই। আমার ধারণা সায়েন্সের ছাত্র হওয়াতে আমি এই লাইনে ভাল করব। তাই আপনার কাছে এসেছি একটি ভাল সায়েন্স ফিকশন নামাতে হলে কি কি লাগে তার টিপস জানতে।

তোমার ধারণা বাজারের ফর্দ লেখার মত যে কেউ চাইলেই লেখালেখি শুরু করে দিতে পারে।

স্যার আমার এই স্ক্রিপ্টটা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন আমি কত জাদরেল লেখক।

ঠিক আছে তুমি রেখে যাও আমি সময় করে দেখব।

স্যার আমি আপনাকে একটু পড়ে শুনাই।

এতো ভালই মুসিবতে পড়া গেল।

-এক দল অভিযাত্রী উত্তর মেরু অভিযানে বের হয়েছে। জুল ভার্নের-ক্যাপটেন হ্যাটেরাস’ নামে এ রকম একটি কাহিনী আছে। আমারটা আরও ভয়াবহ। টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ। যেখানে শূন্য ডিগ্রীতে পানি বরফ হয়ে যায়। তাহলে বুঝেন অবস্থা। কঠিন অবস্থা। সবার অবস্থা কেরাসিন। সব চেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে পেশাব করা নিয়ে। কেউ পেশাব করতে পারছে না। পেশাব জমে বরফ হয়ে গেছে। তারপর……..

থামো, আমরা ধারণা জুলভার্ন বেঁচে থাকলে তোমার এই কাহিনী শুনে নির্ঘাত সুইসাইড করার চেষ্টা করতেন। পদার্থ বিদ্যার সূত্র অনুযায়ী -২৭৩ ডিগ্রীর নীচে টেম্পেরেচার পৌছতে পারে না। সেখানে টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ তুমি কোথায় পেলে।

স্যার, এবার তাহলে আরেকটা শুনাই। এবার একদল অভিযাত্রী মহাকাশ পর্যবেক্ষণে বের হয়েছে। নভোযান পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে পৌছে গেল মহাকাশে। আমি জুলভার্নের- এ জার্নি টু দ্যা মুন’ গল্পটিকে কাট ছাট করে চালিয়ে দেব। কেউ ধরতে পারবে না। অভিযাত্রীদের মধ্যে রয়েছে এক পাড় মাতাল। এক মুহূর্ত এ্যালকোহল না হলে তার চলে না। পকেট থেকে একটু পর পর বোতল বের করে চুমুক দিচ্ছে। তারপর তারা নামল চন্দ্র পৃষ্টে। চাঁদে হাঁটা খুব কষ্টকর। একেক জনের পা যেন দশ মণ ভারী হয়ে রয়েছে। উঠতেই চায় না।

স্টপ। লেখক চিৎকার দিয়ে উঠেন। আরে আগেতো সায়েন্স, তারপর না ফিকশন। মহাশূন্যে গিয়ে কেউ চুমুক দিয়ে তরল পান করছে এটাতো আমি বাপের জন্মে শুনিনি। কোন নভোযান যখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে অতিক্রম করে যাবে তখন মহাশূন্যে থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করলেও বোতল থেকে উপুড় করে পানি ঢালা যাবে না। আর চন্দ্র পৃষ্টেও একই জিনিস ঘটবে। অভিকর্ষ বলের কারণে মানুষ তার ওজন হারাবে। অভিযাত্রীরা এমনিতেই নিজেদের ওজনশূন্য অনুভব করবেন। সেই জায়গায় পা দশ মণ ভারী হয়ে আছে-যত্তসব।

স্যার তাহলে আরেকটা শুনাই।

আমাকে এবার মুক্তি দাও। আর তুমি অন্য লাইনে চেষ্টা কর।

স্যার প্লীজ, এই লাস্ট। এবারের কাহিনী অতি আধুনিক । মেট্রিক্স ছবিতো আপনি নিশ্য়ই দেখে থাকবেন। অনেকটা তার ছায়া অবলম্বনে লেখা। আমার গল্পের নায়ক পুলিশ অফিসার ক্রিমিনল ধরতে ছুটে বেরাচ্ছে। পরনে তার বিশেষ পোশাক। নীল প্যান্ট, নীচে লাল আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে।

এক মিনিট। প্যান্টের নীচে তুমি কিভাবে আন্ডারওয়্যার দেখতে পেলে।

এটা আধুনিক স্বচ্ছ পলিমারের প্যান্ট। আর আগের সুপারম্যান প্যান্টের উপরে আন্ডারওয়্যার পরত। কিন্তু আমার আধুনিক সুপার হিরো এত আবুল নয়। পাঠক যখন ভাবতে শুরু করে দিয়েছে পুলিশ ক্রিমিনাল ধাওয়া করছে এ আর এমন নতুন কি। তখনই আমি আসল চমক দেখাব। কারণ আমার হিরো কোন মানুষ নয়। মানুষের মত দেখতে একটি নবম স্কেলের রোবট।

থামো। তুমি এই মুহূর্তে তোমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে এখান থেকে বিদায় হবে। তুমি আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাকেও জুলভার্নের মত অকালে বিদায় নিতে হবে। নীল প্যান্টের নীচে, লাল আন্ডারওয়্যার। রঙ্গীন কাপড়ের নীচে অন্য কোন রঙ্গীন কাপড় কাল দেখাবে। আর তুমি দেখছ লাল।
তুমি এই কঠিন লাইনে চেষ্টা বাদ দিয়ে প্রথমে হালকা মানের লেখা দিয়ে শুরু কর। যেমন- বাচ্চাদের ছড়া। প্রেমের কবিতা ইত্যাদি।

ঠিক আছে স্যার, আমি পরবর্তীতে আরও ভাল স্ক্রীপ্ট নিয়ে আপনার কাছে আসব। আমাকে একজন ভাল সাই-ফাই লেখক হতেই হবে।

এক বছর পর। এই লেখক এখনও পুরো দমে তার লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি বাংলা সিনেমার কাহিনী লেখেন। এখানে যুক্তি-অযৌক্তিক এর কোন বালাই নেই।

নায়িকা রোড এ্যাকসিডেন্টে আহত। হাসপাতালে নেবার সময় নেই। রক্ত দরকার। নায়ক পকেট থেকে নেশা করার সিরিঞ্জ বের করে নিজের শরীরের রক্ত টেনে বের করে নায়িকার শরীরে ঢুকাতে শুরু করল। ব্লাড মেচিং এর কোন দরকার নেই। ভালোবাসার মাঝে রক্তের গ্রুপ কোন সমস্যা নয়। একটু পর নায়িকা চোখ মেলল। চৈত্রের ভর দুপুরে শুরু হল বৃষ্টি। আর তারসাথে বৃষ্টি ভেজা হেভী জোসীলা নাচ-গান।

নায়ক গেয়ে উঠল- নেশা আছে হেরোইনে, নেশা আছে প্যাথেডিনে
তারচাইতেও অধিক নেশা কইন্যা তোমার যৌবন সুধাতে…এ…এ…এ।

নায়িকা গেয়ে উঠল- আমার আঁচল উড়াইয়া নিল মরার বাতাসে
আমার যৌবন ভাসিয়া গেল বৃষ্টির জলে….এ….এ….এ।

এখানে একটি তিন ঘন্টা ছবি চলার মত কাহিনী হলেই চলে। আর কাহিনীরও তেমন কিছু নেই। কয়েকটি হিন্দী-ইংরেজী ছবির কাহিনী কাট-পেস্ট করে দিলেই চলে। বর্তমানে তিনি এখন জনপ্রিয় একজন কাহিনী লেখক।

(সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর মিল খুঁজতে চাইলে যে কেউ নিজ দায়িত্বে তা করতে পারেন।)


Tuesday, April 7, 2009

ঈশ্বরের ঠিকানা

মাঝে মাঝে এই হাসপাতালের চার দেয়ালের ভিতরে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। শাহেদ খুবই যুক্তিবাদী একটি ছেলে। সে কখনও প্রকৃতির মাঝে রহস্য খোঁজার চেষ্টা করেনি। প্রকৃতিতে রহস্য বলে কোন কিছু নেই। তার বিশ্বাস প্রকৃতিতে কোন কিছু এমনিতেই ঘটে না। সব কিছুর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। যুক্তির বাইরে কোন কিছুতে সে কখনই বিশ্বাস করে না।

বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কি এমন কোন শক্তি লুকিয়ে আছে যা এই মহাবিশ্বের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তার মতে এটা একদমই বাজে কথা। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন একটি বিন্দু থেকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। তারপর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে গ্রহ, নক্ষত্র আর সব কিছুর। যদিও এই থিওরি তার মনে জন্ম দিয়েছে অনেক অজানা সব প্রশ্নের। বিগব্যাং এর পূর্বে কি ছিল? প্রাণের সৃস্টি কিভাবে হল? নিজে নিজে যদি প্রাণের সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে ল্যাবরেটরিতে কেন আমরা প্রাণ সৃষ্টি করতে পারছি না? তবে তার বিশ্বাস একদিন মানুষ এই সব প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজে বের করে ফেলবে। তখন আর সৃষ্টির রহস্য বলে কোন কিছু থাকবে না।

তার মতে ভাল মন্দের শিক্ষা দেয়ার জন্য ও সৎ জীবন যাপনের জন্য ধর্মগ্রন্থগুলি মানুষই বিভিন্ন সময়ে তৈরী করে গেছে। এখানে যে সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হয়েছে তা শুধুই মানুষকে ভয় দেখাবার জন্য। যাতে করে তারা অন্যায় কাজ করতে ভয় পায়।

ধীরে ধীরে শাহেদের জীবন রেখা সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছেন। এগিয়ে আসছে মৃত্যু। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষ অমর নয়, মরণশীল। শাহেদেরও তা ভাল করে জানা আছে। মরতেতো হবেই, একদিন আগে আর একদিন পরে।

তারপরও মাঝে মাঝে মন বিদ্রোহী হয়ে উঠে। মনে হয় যদি এই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কোন এক সুপার পাওয়ার থাকত, যে সব কিছুই করতে পারত তবে শাহেদ তার কাছে আরও কয়েকটা দিন সময় চাইতে পারত। ধুর, কি সব বোকা আস্তিকবাদীদের মতো সে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছে। সৃষ্টিকর্তা বলতে কোন কিছু নেই। মানুষ তার কল্পনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে তৈরী করে নিয়েছে। সে নিজে একজন ঘোর নাস্তিকবাদী। তাহলে কেন সে এই সব যুক্তি ছাড়া জিনিস কল্পনা করবে। প্রকৃতির সব কিছু তার নিজস্ব নিয়মে চলবে। এখানে কারও ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু যায় আসে না।

আজ বাইরে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি হচ্ছে। শাহেদ হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। নিঃশ্বাসে ভেসে আসছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ। গাছের পাতাগুলি সব বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। আহা কত সাধারণ, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কি অপূর্ব একটি দৃশ্য। ইচ্ছা করলেও সে আজ বৃষ্টির পানি ছুতে পারবে না। ক্যান্সার তার সারা শরীরে বাসা বেধে ফেলেছে। এখন সে বিছানা থেকেই উঠতে পারে না। অনেক চেষ্টা করে তার হাতটুকু সামনে বাড়িয়ে দেয়। সে জানে এতদূর থেকে সে বৃষ্টি স্পর্শ করতে পারবে না। ধপ করে তার হাতটা বিছানার উপর এলিয়ে পড়ে ।

একসময় শাহেদের সব চিন্তা ভাবনা কেমন এলোমেলো হয়ে আসে। মাথায় আবার ভোতা যন্ত্রনা শুরু হয়। নিজের অজান্তেই মনে মনে বলতে থাকে-হে মহাশক্তি, আমাকে একবার শুধু ঐ জানালা পর্যন্ত পৌছার শক্তিটুকু দান কর। প্রাণপন চেষ্টা করে সে উঠে বসে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে জানালার দিকে। অনেক দিন পর আজ সে উঠে দাঁড়াতে পারছে। আরেকটু, তাহলেই সে পৌছে যেতে পারবে। অবশেষে সে পৌছতে পারে। শাহেদ চমকে উঠে। তাহলে কি কোন অদৃশ্য শক্তি তার মনের ইচ্ছা পূরণ করে চলেছে। শাহেদ হাত বাড়িয়ে দেয় জানালার বাইরে। কত দিন পর আজ বৃষ্টির স্পর্শ অনুভব করছে। আহ্ কি শান্তি। শাহেদের দুই চোখ ভিজে আসে। হায়! বেঁচে থাকা এত আনন্দের কেন।

ইস্ এখন যদি কোন মিরাকল ঘটত। ঐশ্বরিক কোন শক্তির কল্যাণে সে যদি হঠাৎ করে ভাল হয়ে যেত। তবে কি তার এত দিনের বিশ্বাসে চিড় ধরতে আরম্ভ করেছে। শাহেদ মাথা থেকে এ ধরণের চিন্তা সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ঈশ্বর বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ সব শুধুই মানুষের অবচেতন মনের কল্পনা। কিন্তু শাহেদের চোখ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে কি যেন খোঁজে ফিরে। আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে তার দৃষ্টি চলে যায় দূরে, আরো দূরে। এই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কি তাহলে লুকিয়ে রয়েছে এমন কোন ঐশ্বরিক শক্তি বা ঈশ্বর যিনি সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। যার জাদুর স্পর্শে সব কিছু বদলে যেতে পারে।

শাহেদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফিস ফিস করে বলতে থাকে-হে অজানা ঐশ্বরিক শক্তি, আমাকে আর কয়েকটা দিনের আয়ু দান কর। আমি এই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর কয়েকটি দিন দেখে যেতে চাই।

শাহেদ মারা যায় এর কিছুক্ষণ পরই । একজন ক্যান্সার আক্রান্ত লোকের স্বাভাবিক মৃত্যু। কোন মিরাকল ঘটেনি । প্রকৃতিতে সব কিছু তার মত করে ঘটে। প্রকৃতি তার সব রহস্য মানুষের কাছে প্রকাশ করে না। স্রষ্টা সব সময় তার সৃষ্টি নিজের মত করে পরিচালনা করেন। স্রষ্টা তার সব ক্ষমতা মানুষকে দেখাতে পছন্দ করেন না।

(আমি সব সময় দুইটা বিষয় সযত্নে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক বির্তক, অপরটি ধর্মীয় বির্তক। দুটি ক্ষেত্রেই লোকজন খুব আক্রমণাত্নক হয়ে উঠে। মুহুর্তেই পক্ষে বিপক্ষে দুটি দল তৈরী হয়ে যায়।

আমি কোন বির্তক করার জন্য এই পোস্ট দিচ্ছি না। আমার কথা হচ্ছে মতভেদ থাকতেই পারে। সেই পুরনো কৌতুকের কথা মনে পড়ছে।
জজ আসামীকে বলছেন- তোমাকে অন্তত ৫ জন লোক চুরি করতে দেখেছে।
আসামী উত্তর দিচ্ছে-স্যার, আমি অন্তত ৫০ জনকে এই কোর্টে হাজির করতে পারব যারা আমাতে চুরি করতে দেখেনি।

পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি পাল্টা যুক্তি থাকবেই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই রয়েছে। প্রত্যেক মানুষেরই রয়েছে নিজস্ব দর্শন । আমি আমার দর্শন অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমার দর্শন সাদরে গ্রহণ করছে।

আমরা বিজ্ঞানের মতবাদ বিশ্বাস করি না। আবার পরক্ষণেই জানতে চাই- আকাশ কেন নীল।
আমরা সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করি না। কিন্তু যখন বিপদে পড়ছি, তখন আবার সেই সৃষ্টিকর্তার কাছেই প্রার্থনা করছি আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য।
এখানে দুইটাকেই পাশাপাশি চলতে দেয়া যায়। একটিকে অপরটির প্রতিপক্ষ ভাবার কোন কারণ নেই। বিজ্ঞান হোক আর ধর্মই হোক প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতবাদ রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব যুক্তি। আমার মতবাদই ঠিক, তোমারটা ভুল এমন ভাবার কোন কারণ নেই। প্রতিনিয়তই আমরা নতুন কিছু শিখছি। তারপরও কি কেউ দাবী করতে পারবেন যে তিনি সৃষ্টির সমস্ত রহস্য জেনে বসে আছেন। এখন পর্যন্ত এই বিশ্বব্রম্মান্ডের সব কিছুর ব্যখা কি মানুষ আদৌ করতে পেরেছে। যদি না পারে তবে সেই দিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যেদিন আমরা বলতে পারব সৃষ্টির রহস্য বলতে আসলে কোন কিছু নেই। তার আগে তোমার ধর্ম অযৌক্তিক আর আমার বিজ্ঞান যুক্তি সম্পন্ন এমন বলার কোন অধিকার আমার নেই।)

Monday, March 2, 2009

না ভুলতে পারা কষ্টগুলি

আমরা বাঙালীদের খুব বড় গুণ হচ্ছে আমরা যে কোন ধাক্কা খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারি। সিডরে আমদের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তারপরও আমরা বেঁচে থাকি, আবার আশায় বুক বাঁধি। প্রকৃতি হয়ত এভাবেই মানুষকে সৃষ্টি করেছে। যে কোন শোক মানুষ বেশী দিন মনে রাখতে পারে না।

বর্তমান সময়ে গোটা জাতি গভীর শোকে নিমজ্জিত। সাইক্লোনে হাজার হাজার মানুষ মারা পড়ে। আমরা মনকে সান্ত্বনা দিতে পারি। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তা ঠান্ডা মাথায় খুন ছাড়া আর কিছুই নয়। মিডিয়াগুলি সব খবর প্রচারে ব্যস্ত। ধীরে ধীরে এক সময় সব স্তিমিত হয়ে আসবে। পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে দ্বিতীয় পাতায়, তারপর শেষ পাতায়, এক সময় সবাই ভুলে যাবে এদের কথা।

কিন্তু যে পরিবারগুলি তাদের আপন জনদের হারিয়েছে, যাদের আপন জনরা এখনও নিখোঁজ রয়েছে, তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে এটাও তাদের জানা নাই। তাদের কি হবে। তারা কি এই অপ্রত্যাশিত শোককে কোন দিন ভুলতে পারবে।
যে স্ত্রী তার স্বামীকে, যে মা তার সন্তানকে, যে বোন তার ভাইকে, যে সন্তান তার বাবকে হারিয়েছে সে কি এই শোক কোনদিন কাটিয়ে উঠতে পারবে। সব কিছু ভুলে কি আবার সব আগের মত হয়ে যাবে।

যারা মারা গেছে তারা কি আর্মি না বিডিআর সেই বিতর্কে গিয়ে কোন লাভ নেই। এদের এক মাত্র পরিচয় এরা সবাই বাঙালী। আমাদের দেশের সন্তান। যারা বেঁচে গেছে তার মধ্য থেকে অনেককে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এদের মধ্য থেকে অনেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। অপরাধীদের সাথে মারা পড়বে অনেক নিরীহ বিডিআর। আবার পার পেয়ে যাবে এমন অনেক লোক যারা এদের কে এই অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সবাই এই বিদ্রোহের সাথে জড়িত নয়। কারণ বিদ্রোহীদের সাথে যারা যোগ দিতে রাজী হয়নি এমন অনেক বিডিআরকে বিদ্রোহীরা মেরে ফেলেছে। তার মানে সবাই এখানে অপরাধী নয়। তাদের পরিবার এক অনিম্চিত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কি হবে তাদের প্রিয় জনের। প্রতিটি পরিবারে একই চিত্র সেটা আর্মি হোক আর বিডিআর হোক।

সন্তান মার কাছে জানতে চাচ্ছে -মা, বাবা কখন আসবে। এই প্রশ্নের কোন উত্তর মার কাছে নেই।
এই মা কিভাবে তার বাচ্চাকে বলবেন-তোমার বাবা আর কখনও ফিরে আসবে না।
যে মা উদ্বিগ্ন-বিচারে তার ছেলের কি শাস্তি হবে। সেই মাকে কে আশার বাণি শুনাবে।

এখন দরকার ঐ সব অসহায় পরিবারের পাঁশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। তাদের আপন জনদের আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু এখন তাদের দরকার মমতার স্পর্শ। পারিবারিক, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। এটা আর্মি হোক আর বিডিআর পরিবার হোক তাতে কি যায় আসে। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তার পরিবার কেন তা ভোগ করবে। তারাতো কোন পাপ করেনি। মা তার ছেলেকে, স্ত্রী তার স্বামীকে, ছেলে তার বাবাকে, বোন তার ভাইকে যে ভালোবাসা দিয়েছে তাতেতো কোন খাদ ছিল না। তাহলে তাদের কথা কেন আমরা ভুলে যাব।

সবাই ব্যস্ত কতজন আর্মি আর কতজন বিডিআর মারা গেল সেই খবর সংগ্রহে। পত্রিকার পাতায়, মিডিয়াতে বিভৎস সব লাশের ছবি আর তার বর্ণনা। কে কার আগে কয়টা বেশী লাশের ছবি দেখাতে পারছে তার যেন প্রতিযোগিতা চলছে। রিপোর্টাররা প্রাণের ঝুকি নিয়ে খবর সংগ্রহ করে থাকেন। এর জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এধরণের ছবি ছাপানোর আগে আমি মনে করি সম্পাদককে আরেকটু দায়িত্বশীল ও সচেতন হবার দরকার। তা যেন শুধুই পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য না হয়। কারণ সব কিছুর উপর হচ্ছে মানবতা। কারণ একটি মৃতদেহের ছবি আমাদের কাছে শুধুই একটি লাশের ছবি। কিন্তু ঐ পরিবারের কাছে তা কখনও না ভুলতে পারা তীব্র যন্ত্রণার ছবি। ঐ ছবি দেখে তাদের প্রিয়জনের কেমন কষ্ট হচ্ছে তা আমাদের একটু বোঝা উচিত।

Sunday, February 22, 2009

ভাষা সৈনিক ও আমাদের এই প্রজন্ম


আলম সাহেব উনার কর্মজীবন থেকে রিটায়ার্ড করেছেন। প্রতিদিন সকাল বেলা তিনি পার্কে হাঁটতে বের হন। সারাজীবন কাজের মধ্যে থেকেছেন। কর্মহীন জীবন তিনি মোটেও উপভোগ করতে পারছেন না। খালি মনে হয় এই বুঝি বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। ছোট ছোট কিছু বাচ্চা ছেলে প্রতিদিন পার্কে কাগজ কুড়াতে আসে। পার্কের বেঞ্চে বসে তিনি তাদের কাজ দেখে অনেকটা সময় কাটান। এক সময় নিজের অজান্তেই এদের সাথে উনার সখ্য গড়ে উঠে। ঠিক করেন এদের তিনি পড়তে শেখাবেন। প্রথম প্রথম এরা এটাকে নতুন একটি খেলা ভেবে মজা পায়। তারপর খেলাচ্ছলেই একসময় তারা শিখতে শুরু করে। আলম সাহেব জানেন তিনি এদের বেশী দূর নিয়ে যেতে পারবেন না। সেই সার্মথ্য উনার নেই। তারপরও তিনি চান অন্তত বাংলা ভাষায় এদের হাতেখড়ি টুকু হোক।

শহীদ মিনার চত্বরটা যেন বহু দিন পর আবার প্রাণ ফিরে পেল। চারদিক ধুয়ে মুছে ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে। আর করা হবে না কেন। আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারী। অনেক গণ্য মান্য লোকজন, নেতা, নেত্রীরা আসবেন এখানে পুস্প অর্পণ করতে। সারা বছর এখানে জমে থাকে ফেরীওয়ালা, ছিনতাইকারী আর মাদক সেবীদের আড্ডা। তবে আজকের কথা ভিন্ন। কাল থেকে আবার শহীদ চত্বর তার পূর্বের রূপে ফিরে যাবে।

আলম সাহেব উনার শিষ্যদের নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন। কিন্তু ভিতরে যাওয়া সম্ভব হয় না। সিকিউরিটি গার্ড পথেই উনাকে আটকে দেয়। একটু পর প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রী আসবেন এখানে ফুল দিতে। অতএব এখন সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষেধ।

ভোর হতেই শুরু হয় হুড়াহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি। কে কার আগে খালি পায়ে ফুল দেবে তারই যেন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। যে রাজনৈতিক দল সবার আগে এখানে এসে ফুল দিতে পারবে বুঝতে হবে এরাই হচ্ছে আসল ভাষা প্রেমিক। বাংলা ভাষা নিয়ে আজ এরা যে বক্তৃতা দেবেন তা শুনলে যে কারো চোখ ভিজে আসবে। এদের ছেলে মেয়েদের অবশ্য এরা পড়াবেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। কারণ প্রতিযোগীতার বাজারে টিকতে হলে জানতে হবে ইংরেজী। বাংলা শিখে কি লাভ! এখনকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলির নিয়ম আবার বেশ কড়া। স্কুলে ভুলেও ইংরেজী ছাড়া বাংলায় কথা বলা যাবে না।

আলম সাহেব ফুল না দিয়ে ফিরে চলে আসেন। উনার মনে হয় শুধু বছরের একটি দিনে আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা সৈনিকদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। যারা এ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে এ দিনটিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে আমরা তাদের প্রতি খুব দায় সারা ভাবে আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। অথচ আমরা কত সৌভাগ্যবান জাতি যাদের রাষ্ট্রে এমন একটি বড় ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের আর কোন দেশে কেউ তাদের মায়ের ভাষার জন্য প্রান দিয়েছে বলে উনার জানা নাই।

ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরও আমাদের দেশে শিক্ষার হারের খুব একটা অগ্রগতি নেই। শুদ্ধ করে এখনও অনেকে বাংলা বলতে লিখতে জানে না। সাইনবোর্ডগুলিতে ভুল বাংলার ছড়াছড়ি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাংলা বাদ দিয়ে ইংরেজী শিক্ষার চর্চা চলছে। আজকের সমাজে অনেকে শুদ্ধ ইংরেজী বলতে না পারলে লজ্জিত হন। অথচ শুদ্ধ বাংলা না বলতে পারার জন্য কাউকে তিনি লজ্জিত হতে দেখেননি। এখনকার প্রজন্ম হচ্ছে ডি অর্থাৎ জিজুস নামক নতুন এক প্রজন্ম। এরা বাংলা ইংরেজী মিশিয়ে নতুন এক ভাষায় কথা বলে। এখনকার বাচ্চারা ঠাকুরমার ঝুলি শুনতে পচ্ছন্দ করে না। তাদের প্রিয় চরিত্র হ্যারি পটার। এক সময় ছাত্ররা তাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। আজও ছাত্ররা প্রাণ দিচ্ছে তবে ভাষার জন্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলের লড়াইয়ে। একুশে বই মেলায় বিদেশী ভাষার লেখকের বইয়ের ছড়াছড়ি। বাড়ীতে আমরা হিন্দি সিরিয়াল দেখি আর নাটকের চরিত্রগুলির দুঃখ দেখে চোখের জল ফেলি।

বিদেশী ভাষা শিখা নিয়ে উনার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা যখন নিজের ভাষা সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে বিদেশী সংস্কৃতিকে অনুসরণ করতে শুরু করি তখন তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। এ যেন নিজের মাকে বাদ দিয়ে বিমাতার প্রতি ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আগে নিজের ভাষা সংস্কৃতিকে জানুক বুঝুক। তারপর বিদেশী ভাষা সংস্কুতির শিক্ষা লাভ করুক। ভাষা সৈনিকরা আমাদের কাছে ফুল চান না। তারা চান যে ভাষার জন্য তারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন দেশের প্রতিটি মানুষ সেই ভাষায় মিক্ষা লাভ করুক। আমরা যদি দেশের একটি নিরক্ষর লোককেও অক্ষর শিক্ষা দিতে পারি তবে ভাষা সৈনিকদের প্রতি কিছুটা হলেও আমরা আমাদের ঋণ শোধ করতে পারব।

যেদিন দেশে একটিও নিরক্ষর লোক থাকবে না, সবাই শুদ্ধ ভাবে বাংলা ভাষা লিখতে, পড়তে, বলতে জানব সেদিন অন্তত আমরা বলতে পারব- হে, ভাষা সৈনিক আমাদের এ প্রজন্ম কিছুটা হলেও তোমাদের ঋণ শোধ করতে পেরেছে।








Saturday, February 21, 2009

ঈশপের গল্প ও একটি মোবাইলের বিজ্ঞাপনের গল্প


ঈশপের গল্পের প্রথম অংশ:
এক দেশে ছিল এক রাখাল বালক। সে মাঠে ভেড়া চরাতে গেলে প্রায়ই মজা করার জন্য বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করত। তার ডাক শুনে লোকজন তাকে বাঁচাতে ছুটে আসলে সে মজা পেয়ে হাসত।

ঈশপের গল্পের দ্বিতীয় অংশ:
একদিন সত্যি সত্যি বাঘ আসল। কিন্তু তার চিৎকারে কেউ সাড়া দিল না। সবাই ভাবল সে আজো বুঝি মজাই করছে। ফলে রাখাল গেল বাঘের পেটে।

ঈশপের উপদেশ: কখনও মিথ্যা বলে লোকজনকে বোকা বানাবে না। এমনকি মজা করার জন্যও নয়।

আধুনিক ঈশপের গল্পের প্রথম অংশ:
এক দেশে ছিল এক মোবাইল কোম্পানী। এরা প্রায়ই মজা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বানিয়ে লোকজনকে বোকা বানাত। এক বার তারা পত্রিকায় এক মডেলের নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করল। পত্রিকা অফিসে উদ্বিগ্ন অগণিত ভক্তকূলের ফোন আসতে শুরু করল। এর কয়েক দিন পর ঐ মডেলকে পাওয়া গেল। তিনি আসলে নিখোঁজ হননি। মোবাইল কোম্পানী মজা করার জন্য এই নাটক সাজিয়েছে। এটা তাদের নতুন ধরনের এক বিজ্ঞাপন।

আধুনিক ঈশপের গল্পের দ্বিতীয় অংশ:
এক দিন সত্যি সত্যি এক মডেল নিখোঁজ হল। কিন্তু এবার আর কেউ বিশ্বাস করল না। সবাই ভাবল এটাও মোবাইল কোম্পানীরই কোন নতুন ধরনের বিজ্ঞাপনেরই কৌশল হবে। ফলে এক সময় ঐ মডেল নিখোঁজ হয়ে চিরতরে হারিয়ে গেল।

আধুনিক ঈশপের উপদেশ: কখনও মিথ্যা বলে লোকজনকে বোকা বানাবে না। এমনকি মজা করার জন্যও নয়।


(এদেশের মিডিয়া বর্তমানে মোবাইল কোম্পানীগুলির পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। আর পয়সা দিলে মডেলদের দিয়ে যে কোন ধরনের কাজ করানো সম্ভব।
বাংলালিংক মোবাইল কোম্পানী কিছুদিন পূর্বে যে কান্ড করল তা এক কথায় ক্ষমার অযোগ্য। অচিরেই দেশে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ আইন করা জরুরী। আর এদের পক্ষ নিয়ে অভিনেত্রী জয়া আহসান নির্লজ্জ সাফাই গাইলেন। নতুন ধরনের কোন কিছুকে নাকি আমরা বাঙালীরা স্বাভাবিক ভাবে নিতে অভ্যস্থ নই।

জয়া আহসান আপনার পরিবারের কোন সদ্যস্যের যদি সত্যি সত্যি এমন ধরনের বিপদ হয় তাহলে আপনার কেমন লাগবে। তখনওকি আপনি সাফাই গেয়ে যাবেন। আপনার কি কোন ধারণা রয়েছে একটা পরিবারের কোন সদস্য হারিয়ে গেলে ঐ পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন এদের কেমন লাগে?
আর আপনি আপনার ভক্তদের ভালোবাসা নিয়ে যে প্রতারণা করলেন তাতে করে তাদের কাছে কি আপনার ইমেজ বাড়ল না কমল?

আর দেশের মোবাইল কোম্পানীগুলি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এরা প্রতিনিয়তই এদের গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে বোকা বানিয়ে চলেছে। একটা একটা করে এদের বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর অফারের বর্ণনা দিতে গেলে পুরো মহাভারত তৈরী হয়ে যাবে। অতএব অচিরেই এ দাবনদের নিয়ন্ত্রণ কার হোক। না হলে ভবিষ্যতে অমাদেরকে অনেকগুলি ফ্রাঙ্কেস্টাইনের সম্মুখিন হতে হবে।)


Monday, February 16, 2009

প্ল্যানচেট


অপালাদের ফ্ল্যাটে মিসেস গোমেজ নামে এক খ্রিস্টান মহিলা থাকেন। তিনি দিনে দুপুরে মৃত আত্না ডেকে নিয়ে আসতে পারেন। কিছুদিন আগে নাকি তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এনেছিলেন। তবে জীবিত না, উনার আত্না। স্বর্গে রবি ঠাকুর খুব সুখেই আছেন। খাওয়া দাওয়ার কোন অভাব নেই। যা ইচ্ছে তা খাওয়া যায়। বাথরুম করার কোন ঝামেলা নেই। সারা জীবন কবিতা লিখে কাটিয়েছেন। এখন আর কবিতা ছাড়া ভালো লাগে না। স্বর্গের অপ্সরারা প্রতিদিন বিকেলে উনার কাছে কবিতা শুনতে আসে। রবি ঠাকুর মিসেস গোমেজের কাছে কবিতা লেখার কিছু কাগজ চেয়েছেন। কারণ উনাদের ঐখানে আবার এসব জিনিস পাওয়া যায় না। রবি ঠাকুর উনাকে একদিন এসে কবিতাও শুনিয়ে গেছেন-

মেযেটি যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন সে ডেকেও ঈশ্বরকে কাছে পায় নি।
দারিদ্রতার কাছে পরাজিত হয়ে মা তার নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে ।
আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে, ঈশ্বর আপনি তখন কোথায় ছিলেন?
ঈম্বর মৃদু হেসে উত্তর করেন- এ কুৎসিত সমাজ ব্যবস্থা তোমাদেরই তৈরী আমার নয়।

প্রতিদিন মহিলার কাছে শুনে শুনে অপালা খুব আগ্রহী হয়ে উঠে। অনেক দিন মহিলার পেছনে ঘুরঘুর করার পর মহিলা শেষ পর্যন্ত রাজী হন। মিসেস গোমেজ তাকে ঠিক রাত বারটা সময় আসতে বলে দেন। আত্নারা আবার খুব পাংচুয়াল হয়ে থাকে। দিনে আত্নাদের বিরক্ত করা যাবে না। এ সময় তাদের বিশ্রামের সময়।

অপালা রাত বারটা বাজার আগেই এসে পড়ে। মিসেস গোমেজ তাকে নিয়ে ছোট্র একটি টেবিলে মুখোমুখি বসেন। ঘরের সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। টেবিলে শুধু একটি মোমবাতি জ্বলছে। ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ। স্বল্প আলো আঁধারের মাঝে গা ছমছমে এক পরিবেশ। মিসেস গোমেজের সামনে একটি বোর্ড। এর নাম উইজা বোর্ড। বোর্ডে ইংরেজী সব অক্ষর বসানো। মিসেস গোমেজের অপালাকে বুঝাতে থাকেন, এই যে ছোট্র ঘুটিটি দেখতে পারছ আমি এটার উপর একটি আঙ্গুল রেখে আত্নাকে ডাকতে শুরু করব। যদি আত্না আসে তবে ঘুটি বোর্ডের ইয়েস লেখা ঘরে চলে যাবে। আর না আসলে নো লেখা ঘরে। আমি প্রশ্ন করলে তিনি তার উত্তর দেবেন। মুখে তা দেবেন না। উইজা বোর্ডের মাধ্যমে দেবেন। ধর আমি যদি উনার নাম জানতে চাই আর উনার নাম যদি হয় জন তবে ঘুটি প্রথমে ইংরেজী জে অক্ষরে যাবে, তারপর ও, এইচ এবং শেষে এন লেখা অক্ষরের উপর। এভাবেই তুমি জানতে পারবে যে উনার নাম জন। অপালা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকে।

আচ্ছা আন্টি, ভূত যদি ইংরেজী না বুঝে তবে কি বাংলায় উত্তর দেবে।
দেখ আমি রসিকতা মোটেই পছন্দ করি না। আর তুমি ভূত বলছ কেন। এরা হচ্ছে বিদেহী আত্না। কোন দূর্ঘটনায় পড়ে যাদের অকালে মৃত্যু হয় তাদের আত্না ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোকে যেতে পারে না। তাদের আত্না এই জগতেই ঘুরপাক খেতে থাকে।

মিসেস গোমেজ আজকে উনার স্বামীর আত্না ডেকে আনবেন। এক বছর আগে উনার স্বামী এক রোড এ্যাকসিডেন্টে মারা যান। মিসেস গোমেজ নিচু গলায় বিড়বিড় করে বলতে থাকেন- হে দুষ্ট আত্না সকল দূর হয়ে যান।
আত্নাদের আপনি করে না বললে এরা নাকি খুব মাইন্ড করে। মৃত্যুর পর জগতে আছে দুই ধরনের আত্না। ভাল আর মন্দ। এদের মধ্যে প্রায়ই ঝঁগড়াঝাঁটি মারামারি চলতে থাকে। কিছুদিন আগেই এক আত্না এসে নাকি মিসেস গোমেজের কাছে নালিশ করে গেছে উনার স্বামী মিস্টার গোমেজ তার প্রেমিকাকে নিয়ে ভেগে গেছেন। যদি ভুল করে দুষ্ট আত্না নামিয়ে ফেলা হয় তবে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তখন আর তাকে সহজে বিদেয় করা যায় না।

মিসেস গোমেজ চোখ বন্ধ করে নাঁকি সুরে বলতে আরম্ভ করেন-হে আমার স্বামী, আপনি দয়া করে দেখা দিন.........
অপালার ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। হঠাৎ মিসেস গোমেজ চিৎকার করে উঠেন-অপালা তিনি এসেছেন। তুমি উনার নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শুনতে পাচ্ছ না।
অপালা ফিসফিস করে বলে-জ্বী, শুনতে পাচ্ছি। তবে নিঃশ্বাসের নয়, বিড়ালের মিঁউমিঁউ শব্দ। আমার মনে হয় আপনার স্বামী বিড়ালের রূপ ধরে এসে হাজির হয়েছেন।

মিসেস গোমেজ গম্ভীর স্বরে বলে উঠেন-এটা আমার পোষা বেড়ালের ডাক। টেবিলের নিচে বসে আছে। আর আত্নাদের নিয়ে ঠাট্রা করবে না। এদের সেন্স অব হিউমার খুব কম। একবার আত্না এসে তোমার উপর ভর করলে তখন টের পাবে। প্ল্যানচেট কোন ছেলে খেলা বিষয় নয়। অনেক সাধনার পর আমি এ বিদ্যা লাভ করেছি। এখানে ধৈর্য্য ধরে ধ্যান করতে হয়।

মিসেস গোমেজ পুনরায় চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় প্রলাপ শুরু করেন-আসেন আমার স্বামী, আপনি কোথায়। আমরা আপনার অপেক্ষায় বসে আছি।

অপালা নিজেও জানে না কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙতে দেখে বাইরে সকাল হয়ে গেছে। মোমদানিতে মোম পুড়ে শেষ। মিসেস গোমেজ সামনের সোফায় মুখ গোমড়া করে বসে আছেন। অপালা চলে আসতে আসতে হাসি মুখে বলে- আন্টি, আঙ্কেল কি চলে গেছেন? ইস্। একটুর জন্য উনার সাথে দেখা হল না। পরের বার আসলে আমার তরফ থেকে সরি বলে দেবেন, প্লীজ।

অপালার কথা শেষ হবার আগেই মিসেস গোমেজ দুম করে তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন।

Sunday, February 15, 2009

ভালোবাসা ও মৃত্যুর গল্প

এটা কি?
দেখতেইতো পারছ, আবার জনতে চাচ্ছ কেন।
তুমি এরকম কুৎসিত নোংরা একটা কুকুর ছানা নিয়ে ঘরে ঢুকেছ কেন?
রাস্তার কয়েকটা ছেলে মিলে বাচ্চাটাকে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁস লাগিয়ে মারছিল। আমি গিয়ে নিয়ে এসেছি। বাচ্চাটা খুব অসুস্থ, এখন এটাকে ছেড়ে দিলে মরে যাবে। কয়েকটা দিন আমাদের এখানে থাকুক, তারপর সুস্থ হলে বাইরে ছেড়ে দিয়ে আসব।
জেনী প্রাণপন চেষ্টা করছে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে-এক্ষুণি এটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আস।
ফয়সল কোন উত্তর দেয় না।
এখন ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না। জেনী সামনে থেকে সরে আসে।

ফয়সল খেতে আস। জেনী টেবিলে ভাত দিয়ে ফয়সলকে ডাকতে আসে।
ড্রয়িংরুমে ঢুকে জেনীর রাগ সপ্তমে চড়ে যায়। ফয়সল কুকুরের বাচ্চাটিকে সোফার উপর বসিয়ে রেখেছে।
ফয়সল জেনীর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে-আজকের রাতটা এটা এখানে থাকুক, কাল সকালে এটাকে বিদেয় করে দেব।

ফয়সল খেতে বসে। জেনী তুমি চোখ মুখ এমন শক্ত করে রেখেছ কেন। আরাম করে খাও। টেবিলে এই বাড়তি প্লেটটা কার জন্যে?
ওমা, আমাদের বাড়িতে নতুন মেহমান এসেছেন। উনাকে ভাল মন্দ রান্না করে খাওয়াতে হবে না। এই প্লেটটা উনার জন্যে। তা কুকুর বাবু নিজে খেতে পারবে তো নাকি আমি খাইয়ে দেব।
জেনী তুমি খুব সামান্য একটি ব্যাপার নিয়ে হৈ চৈ করছ। একি ভাত না খেয়ে উঠে যাচ্ছ কেন?

জেনী হাত ধুয়ে কিচেনে চলে আসে। খাবার সব উঠিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর ড্রয়িংরুমে উকি দিয়ে দেখে-ফয়সল হাতে একটি রুটির টুকরো নিয়ে কুকুরের বাচ্চাটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কুকুরটি মানুষের এ ধরনের আচরণে অভ্যস্থ নয়। এটি আনন্দে কিছুক্ষণ পর পর কুঁই কুঁই শব্দ করছে।

ফয়সল সিগারেট ধরাতে বারান্দায় চলে আসে। জেনী একটা চেয়ারে বসে রয়েছে। জেনী এখানে বসে রয়েছ কেন, ঘুমুতে চল।
জেনী ঝটকা মেরে ফয়সলের হাত সরিয়ে দেয়। ফয়সল, তোমার ঢং দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি। নিজের বাচ্চার প্রতি তোমার এত মমতা দেখিনি, যতনা তুমি একটা কুকুরের বাচ্চার প্রতি দেখাচ্ছ।
ফয়সল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জেনী আবার সেই অপ্রিয় প্রসঙ্গটি তুলেছে। জেনী, আমি আগেও অসংখ্যবার বলার চেষ্টা করেছি, বাবুর মৃত্যুর উপর আমাদের কোন হাত ছিল না। তখন আমাদের আসলে কিছুই করার ছিল না।

ফয়সল-জেনীর দুই বছরের বাচ্চা তুষারের হঠাৎ করে একদিন রাতে শ্বাস কষ্ট আরম্ভ হয়। তাকে দ্রূত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বাইরে তখন প্রচন্ড বৃষ্টি। ফয়সল বেরিয়ে পড়ে গাড়ীর খোঁজে। দুই ঘন্টা ধরে চেষ্টা করেও কোন গাড়ী যোগাড় করতে পারে না। অনেকগুলি গাড়ী তার সামনে দিয়ে পানি ছিটাতে ছিটাতে চলে যাচ্ছে। ছিটানো পানিতে তার শরীর মাখামাখি। শেষ পর্যন্ত এক টেক্সিওয়ালাকে অনেক হাতে পায়ে ধরে রাজী করাতে পারে।
ফয়সল বাসায় ফিরে দেখে জেনী তুষারকে তার বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ভঙ্গিটা দেখে তার বুক ধক্ করে উঠে। বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে দেখে গা বরফের মত ঠান্ডা।
তারপর থেকে কিভাবে যেন জেনীর মাথায় ঢুকে যায় ফয়সল যদি সময় মতো গাড়ী যোগাড় করতে পারতে তাহলে তাদের বাবুটাকে বাঁচানো যেত। তুষারের মৃত্যুর জন্য সে ফয়সলকে দায়ী ভাবতে শুরু করে।

ফয়সলের চোখে সে দিনের দৃশ্যটি ভেসে উঠে।
নিজ হাতে সে তুষারের কবর খুঁড়ছে। এটা নিযে পরে কত সমালোচনা হয়। এত লোক থাকতে বাবা কেন ছেলের কবর খুঁড়বে। এটা নিয়ম বর্হিভূত। হায়রে! মৃত্যুর পরও কত নিয়ম থেকে যায়।
সেদিন খুব বৃষ্টি ছিল। কবরের গর্তে পানি জমে যাচ্ছিল। ফয়সল সারা দুপুর পলিথিনে মোড়ানো তুষারের লাশ নিয়ে হাঁটু গেড়ে কবরের সামনে বসে থাকে। সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত সেদিন ইচ্ছে করেই বৃষ্টি দিয়েছিলেন। বৃষ্টির পানি যাতে করে তার চোখের পানিকে ধুয়ে দিতে পারে।

জেনী চল। ফয়সল তার একটা হাত জেনীর কাঁধে রাখে।
তুমি তোমার কুত্তা নিয়ে ঘুমুতে যাও। তোমার পাশে তার বিছানা করে দেয়া হয়েছে-জেনী ঝাঁঝিয়ে উঠে।
ফয়সল বুঝতে পারে না কখন সে জেনীর গালে চড় মেরে বসেছে।

ফয়সল ড্রয়িংরুমে চলে আসে। কুকুরের ছানাটিকে তুলে নেয়। এটা সম্ভবত বুঝে ফেলেছে তাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসা হবে। দুই চোখে করুণ মিনতি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

জেনী দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। অনেক দিন আগের একটি দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ফয়সল দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তার কোলে তুষারের মৃত দেহ। এ মুহুর্তে সামনের মানুষটিকে তার খুব অপরিচিত বলে মনে হতে থাকে। এত দিন ধরে তারা দুইজন এক সাথে রয়েছে তারপরও কেন তারা একজন আরেকজনকে বুঝতে পারে না। দীর্ঘ দিন এক সাথে থাকার পরও একটা মানুষকে সম্ভবত কখনই পুরোপুরিভাবে জানা যায় না।

ফয়সল দাঁড়াও-জেনী পেছন থেকে ডেকে উঠে।
জেনীর কন্ঠশ্বরে এমন কিছু ছিল ফয়সল পেছনে ফিরে তাকায়।
জেনী এসে কুকুরের ছানাটিকে ফয়সলের হাত থেকে নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
আই অ্যাম সরি ফয়সল। নিয়তির উপরে আমাদের আসলে কারোও হাত নেই। জীবনতো কারো জন্যে থেমে থাকে না। শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যায়।

আজকের দিনটির কথাই ধর। আমরা দুইজনেই প্রাণপনে আজকের দিনটির কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি। খুব স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি কই। আমরা দুইজনেই জানি আমরা তা পারব না। কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না। মিথ্যে ভান করে যাচ্ছি।
আজকের দিনেই আমাদের তুষার মারা যায়। কেন আমরা নিজেদের কষ্ট একজন আরেকজনের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারছি না।

ফয়সল জেনীর দুই কাধে হাত রাখে। তাকিয়ে থাকে জেনীর মুখের দিক। জেনীর মুখটা তার কাছে কেমন যেন খুব অপরিচিত বলে মনে হতে থাকে ।

Friday, February 13, 2009

অপার্থিব ভালোবাসা

জামিল আহমেদ রুনুকে বসতে নির্দেশ করেন।
আপনি এখন যা দেখবেন তা কেবলই একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। বাস্তবের সাথে একে কম্পেয়ার করার কিছু নেই। আমি কি শুরু করব?
হ্যাঁ। রুনু সহজ ভাবে উত্তর দেয়।

আপনি এখানে বসুন প্লীজ।
অদ্ভুত দর্শন একটি চেয়ারে রুনু বসে পড়ে। জামিল আহমেদ এবার রুনুর হাতের বিভিন্ন অংশে অনেকগুলি সেন্সর লাগানো তার টেপ দিয়ে আটকে দেন। মাথায় হেলমেটের মতো দেখতে একটি জিনিস পড়িয়ে দেন। এতে রুনুর চোখ ঢাকা পড়ে যায়। এখন আর সে কিছু দেখতে পারছে না। কানের দুই পাশে লাগানো ইয়ার ফোনে জামিল আহমেদের ধাতব কন্ঠস্বর ভেসে আসে-আমরা শুরু করছি।

রুনুর কানের পাশে ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ। চোখের সামনে আবছা আবছা আলোতে বিচিত্র বর্ণের খেলা। গাঢ় কুয়াশায় ঢাকা মনে হচ্ছে চারপাশের জগতকে। কুয়াশা ভাব ধীরে ধীরে কেটে যেতে শুরু করে। আবছা আবছা কিছু লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। এবার পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। কয়েক জনকে সে চিনতেও পারছে। তার আত্নীয় স্বজন। এরা সবাই তার বাড়ীতে কি করছে। ঘটনাটা যেন আগেও একবার ঘটেছে। মনে পড়ছে না।

দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। অনেক লোক একটি টেবিলকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলের মাঝখানে একটি কেক, কয়েকটি মোমবাতি জ্বলছে। সম্ভবত কারো জন্মদিন, কিন্তু কার?

সামনের দৃশ্য আবার বদলে যেতে শুরু করে। একটি ছোট ছেলে কেক কাটছে। পাশে তার মা দাঁড়ানো। ছোট ছেলেটি কাব্য, তার মা রুনু নিজেই। কাব্য একটি কেকের টুকরো তার মাকে খাওয়াচ্ছে। রুনু নিচু হয়ে তার মুখ ছেলের মুখের সামনে নিয়ে আসে। রুনুর মনে হচ্ছে তার শরীরের ভিতর দিয়ে হাজার ভোল্টের বিদ্যুত প্রবাহিত হচ্ছে। তার মুখে কাব্যের নিঃশ্বাস এসে পড়ছে। রুনু ছেলেকে চুমু খেল। তার প্রতিটি স্নায়ুতে কাব্যের স্পর্শ ছড়িযে পড়ছে। কাব্য দৌড়ে দু’তলা যাবার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে, পেছনে তার মা। হঠাৎ পিছলে কাব্য পড়ে যায়। তার হাঁটু ছড়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ব্যাঁথায় চোখ মুখ কুঁচকে গেছে। উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। একটা হাত রুনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আম্মু আম্মু করে ডাকছে।

রুনু ছুটে যেতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। কোন এক অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে রেখেছে। চোখের পানিতে তার দু’গাল ভিজে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই রুনু চিৎকার করে উঠে। চিৎকার করার সাথে সাথে আবার সব কিছু আগের মত হযে যায়। রুনু টের পায় মাথার উপর হেলমেটের মতো চেপে বসা যন্ত্রটি সরে যাচ্ছে।

অনেকক্ষণ লাগে রুনু বুঝে উঠতে সে কোথায় আছে। হার্ট বিট বেড়ে যাওয়াতে রুনু হাপাচ্ছে। চট করে গাল স্পর্শ করে দেখে তার দু’গালই ভেজা। সত্যিই সে কাঁদছিল। জামিল আহদমদ এগিয়ে এসে তার হাতের তারগুলি খুলে দেন।
তা আজকে কেমন লাগল আমাদের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এই জগত?
কথা বলতে রুনুকে প্রচন্ড মানসিক শক্তি প্রয়োগ করতে হয়।
আমার কাব্য ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে, তার সাহায্য দরকার।
রুনু, আমি আগেও বলেছি কাব্য বলে বাস্তবে কেউ নেই। সে শুধুই একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এখানে প্রোগ্রামার যেভাবে প্রোগ্রামটি তৈরী করবেন আপনি সেভাবেই দেখতে পাবেন।

রুনু হাপাতে হাপাতে বলে পুরো ব্যাপারটি শুধুই একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম হতে পারে না। আমার ছেলের স্পর্শ এখনও আমার গালে লেগে রয়েছে। আপনি আমাকে আমার ছেলের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যান।
দেখুন রুনু, আমাদের তৈরী এই ভার্চূয়াল জগত আমাদের ব্যাবসারই একটি অংশ। এর মাধ্যমে আমরা মানুষকে বিনোদন দিয়ে থাকি। বিনিময়ে আমার টাকা পাই। কাউকে কষ্ট দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

আমার ছেলে কাব্য রোড এ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে আজ ছয়টা মাস পেরিয়ে গেছে। এখনও আমি রাতে ঠিক মতো ঘুমুতে পারি না। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠি। মনে হয় আমার ছেলে দরজার বাইরে থেকে আমাকে ডাকছে। পরম মমতায় দরজা খুলে দেখি কোথাও কেউ নেই। এরপর সারা রাত আর ঘুমুতে পারি না। খালি মনে হয় আমি ঘুমিয়ে পড়েল আমার ছেলে এসে আমাকে না পেয়ে ফিরে চলে যাবে। তারপর একদিন আপনাদের বিজ্ঞাপন দেখে এখানে চলে আসি। আপনারা যে ছেলেটিকে তৈরী করেছেন সে অবিকল আমার কাব্যের মতো। তার ভালোবাসার টানে আমি আজ এক সপ্তাহ ধরে রোজ এখানে ছুটে আসি। এই ছেলেটিকে আমি কাব্যের মতোই ভালোবাসতে শুরু করেছি। মনে হচ্ছে আমার কাব্যই আবার ফিরে এসেছে।

জামিল আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ঠিক আছে এবার আমি আপনাকে প্রোগ্রামের বাকী অংশটুকু দেখাচ্ছি। তবে আপনি তা না দেখলেই ভাল করতেন।

রুনু আবার গিয়ে আগের চেয়ারটিতে বসে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যেই রুনু পৌছে যায় ভার্চুয়াল রিয়ালিটির জগতে। আগে যেখানে শেষ হয়েছিল এবার তার পর থেকে শুরু হয়। রুনু কাব্যকে মেঝে থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে। রুনু কাঁদছে। ছেলের মুখে হাসি।

এবার দৃশ্যপট সম্পূর্ন বদলে যেতে আরম্ভ করে।
রাতের সময় একটি গাড়ী রাস্তা দিয়ে তীব্র বেগে ছুটে চলেছে। গাড়ী চালাচ্ছে কাব্যের বাবা জয়। রুনু পিছনের সিটে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে। কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে। রুনুর চোখেও ঘুম। জয় ঘন ঘন হাই তুলছে। হঠাৎ কয়েক মুহুর্তের জন্য ঝিমুনি এসে পড়ে। এই কয়েক সেকেন্ডেই গাড়ী রাস্তা থেকে পাশের মাঠে ঢুকে পড়ে। জয় স্টিয়ারিং এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গাড়ী নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই পাশের এক গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। তারপর শুধু কাঁচ ভাঙার শব্দ।

আবার দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটে।
রুনুর জ্ঞান ফিরে আসছে। সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথা। মাথাটা মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পড়ে যাবে। সামনে জয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। সামনে ড্যাশবোর্ডে তার মাথা ঠুকে আছে। কাব্যের শরীরের নিচের অংশটা এখনও রুনুর হাতে ধরা রয়েছে। কিন্তু উপরের অংশটুকু গাড়ীর জানালার কাচ ভেঙে বাইরে বের হয়ে রয়েছে। মাথাটা থেতলে গেছে। রুনুর গলা দিয়ে জবাই করা পশুর চিৎকার বেরিয়ে আসে। হঠাৎ করে রুনু বাস্তবতায় ফিরে আসে । সামনে জামিল আহমেদের ভীত মুখ আবিস্কার করে। তার মানে আসলেই সে এতক্ষণ চিৎকার করছিল। রুনু উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। সে রীতিমতো টলছে। ধপ করে আবার চেয়ারে বসে পড়ে।

জামিল আহমেদ এগিয়ে আসেন। আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন। রুনু মাথা নাড়ে। কোন মতে উচ্চারণ করে আমার ছেলে আবার মারা গেছে।
জামিল আহমেদ এক গ্লাস পানি রুনুর দিকে এগিযে দিয়ে বলেন- আপনার কাব্যের মৃত্যূ একবারই হয়েছে। এখন যে মারা গেছে সে আপনার ছেলে নয় । শুধুই একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। আমি এজন্যেই আপনাকে এ অংশটুকু দেখাতে চাচ্ছিলাম না।

আমি কি আবার আমার ছেলেকে দেখতে পারি।
জামিল আহমেদ কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে রুনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। না আপনি আর এই জগতে ঢুকতে পারবেন না। আমার প্রোগ্রামটি নষ্ট করে ফেলেছি। আপনার জন্য আমাদের তৈরী করা প্রোগ্রামের এটাই ছিল শেষ অংশ। আমাদের প্রোগ্রাম এখানেই শেষ।

রুনু কিছুক্ষণ জামিল আহমেদের মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন খোঁজার চেষ্টা করে। তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
জামিল সাহেব আপনি এক সন্তান হারা মাকে তার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা নতুন করে উপলব্ধি করিয়েছেন। হোক তা ক্ষণিকের কাল্পনিক ভালোবাসা। আপনাকে ধন্যবাদ। এই টুকু বলে রুনু চলে আসে।

জামিল আহমেদের মনটা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। একজন মার সাথে তিনি প্রতারণা করেছেন। প্রোগ্রামটা আসলে নষ্ট করা হয়নি। সম্পূর্ন অক্ষত আছে। এটা করা ছাড়া আসলে উনার কোন উপায় ছিল না। রুনু কাল্পনিক জগতের কাব্য নামক এক চরিত্রকে ভালোবাসতে শুরু করে ছিল। কাল্পনিক এই কাব্যকে বাস্তব জগতের তার ছেলে কাব্যের সাথে মেলাতে চেষ্টা ক

রছিল। এ এক অপার্থিব ভালোবাসা। এত করে শুধু তার কষ্টটুকুই বাড়ত। তারচেয়ে বরং এটাই ভাল হয়েছে। পার্থিব এই জগতে অপার্থিব ভালোবাসার কোন স্থান নেই।

Wednesday, February 11, 2009

অপেক্ষা


জ্যামি পাথরের মূর্তির মতো তার বাবার সামনে বসে আছে। কী নিশ্চিন্তেই না তার বাবা শুয়ে আছেন। একটু আগে কি ভয়ানক ম্বাস কষ্টটাই না তার শুরু হয়েছিল। গলার রগ ফুলে উঠেছিল। সারা শরীর মৃত্যূ যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার-নার্সদের মধ্যে ছুটোছুটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এখন সব কেমন নিশ্চুপ। মনে হচ্ছে চারদিকে কোথাও যেন আর কেউ নেই।
তার মনে পড়ে না আগে কখনও এভাবে সে তার বাবার পাশে এসে বসেছে কিনা। অন্য সময় হলে সে অস্বস্তিতে মরে যেত। বাবা-ছেলের সহজ সম্পর্ক তাদের মধ্যে কখনও ছিল না। তার বাবা কখনও তাকে জোরে একটা ধমক পর্যন্ত দেননি। অথচ তারপরও বাবার সামনে আসলে তার গলা শুকিয়ে যেত।
জ্যামি আসলে বড় হয়েছে একটা ঘোরের মধ্যে। তার ছিল নিজের তৈরী অন্য একটি জগত। সে কখনও তার চেনা সেই জগতের বাইরে আসতে চায়নি। তার বাবাও ছেলের এই ভুবনে প্রবেশের চেষ্টা করেননি। জ্যামিও তার এই ঘর থেকে কখনো্ মুক্তি চায়নি। ফলে নিজের অজান্তেই তারা একটু একটু করে একজন আরেকজনের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
অথচ আজ মৃত্যর মতো অসম্ভব এক কুৎসিত জিনিস তার এত দিনের তৈরী শৃঙ্খল থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে। অদৃশ্য ঘরের দেয়াল ভেঙে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
জ্যামি খুব ধীরে তার বাবার কপালে হাত রাখে। ফিসফিস করে বলতে থাকে-হে করুনাময় আমার বাবার প্রতি একটু দয়া করো। জ্যামি খুব শক্ত করে তার বাবাকে ধরে রাখে। মৃত্যূকে পরাজিত করার এক ছেলেমানুষী প্রচেষ্টা।
রাতের আধাঁরে সব কিছু কেমন ভীতিকর মনে হয়। জ্যামি ভোরের অপেক্ষা করতে থাকে। সে জানে না নতুন একটা ভোর তার জন্যে কি নিয়ে আসছে।
জ্যামি বুঝতে পারে না কখন মৃত্যু এসে চুপিচুপি তাকে পরাজিত করে গেছে। জ্যামির বাবা মারা যান ৪.৩০ মিনিটে। নিঃশব্দ এক মৃত্যূ। বাইরে ভোরের তখনও অনেক দেরী।

Saturday, January 31, 2009

ভালোবাসার অশ্রু

রিক্সাওয়ালা ছোকরার চেহারা দেখলে মনে হবে বেচারা এই মাত্র সদ্য ভুমিষ্ট হয়েছে। হাসান মনে মনে গাল দেয়-হারামজাদা। রিক্সা নয় যেন হারামজাদা হেলিকপ্টার চালাচ্ছিল। তবে হাসানই তাকে তাড়াতাড়ি চালানোর জন্যে উৎসাহ দিচ্ছিল। আনিকা তার জন্যে কলা ভবনের সামনে অপেক্ষা করছে। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে।
ছোকরা রিক্সাওয়ালা ১০-১২ বছরের ছোট একটি বাচ্চা ছেলের গায়ের উপর রিক্সা উঠিয়ে দিয়েছে। একটু সুযোগ পেলে অবশ্য হাসান কেটে পড়তে পারত। কিন্তু লোকজন এরই মধ্যে জটলা পাকিয়ে ফেলেছে। রক্তে বাচ্চাটির কাপড় চোপড় ভিজে যাচ্ছে।
আহারে কার বাচ্চা এমন করে এক্সিডেন্ট করল। চারদিক থেকে বিভিন্ন মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে। তাড়াতাড়ি একে হাসপাতালে পৌঁছানো দরকার। দেখা যাচ্ছে লোকজন সবাই বেশ সহানুভুতি সম্পন্ন।
পাবলিক সেন্টিমেন্টস খুব ভয়ঙ্কর জিনিস। মারপিটের কাজ পাবলিক খুব ভাল পারে। আর পাবলিক একবার মার শুরু করলে ইন্নালিল্লাহি না পড়ে ক্ষান্ত হয় না। তাই খুব সাবধানে এগুতে হবে। চিন্তা ভাবনা করে চাল দিতে হবে। চালে ভুল হলে সর্বনাশ।
হাসান ঠাস ঠাস করে রিক্সাওয়ালা ছোকরার দুই গালে চড় বসিয়ে দেয়। ফাজিল তোকে কে বলেছিল এভাবে রিক্সা চালাতে। আমি বার বার করে তোকে সাবধান করলাম। তোরা হলি গিয়ে লাত্থি-উষ্টার মানুষ। মুখের কোন কথা তোদের ভাল লাগে না।
প্রথম পর্ব শেষ। এবার লোকজন ভাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
হাসান চোখ মুখ করুন করে ফেলে। আহারে কোন মায়ের বুকের ধন। ভাইরা আসুন একটু সাহায্য করেন। একে হাসপাতালে পৌছানোর ব্যবস্থা করি।
এবার কাজ হল। একজন দুইজন করে লোকজন আস্তে আস্তে কেটে পড়তে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত হাসান আর রিক্সাওয়ালা রয়ে গেল। কে যায় উটকো ঝামেলাতে জড়াতে। রাস্তায় ভিড় করে এক্সসিডেন্টে আহত কোন ব্যক্তিকে দেখে আহা উহু করা এক জিনিস। এখানে যে কোন সময় কেটে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর দায়িত্ব নিয়ে তাকে হাসপাতালে পৌছে দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আরেক জিনিস। এর মানেই হল বজ্র আঁটুনিতে আটকে পড়া। তার অভিভাবককে খবর দাও। বেশী আহত হলে পুলিশ এসে জেরা করবে। যত্তসব ফালতু দরবার।
হাসান রিক্সাওয়ালা ছোকরাকে কেটে পড়তে ইশারা দিয়ে নিজেও কেটে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। কিছুদূর গিয়ে পেছনে ফিরে দেখে ছোকরা তার গায়ের শার্ট খুলে বাচ্চাটির মাথার রক্ত মুছে দিচ্ছে। শালার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি। তাকে ঝামেলা থেকে বাচানোর চেষ্টা করছি আর সে কিনা গাধার মত কাজ করছে।
হাসান হন হন করে এগিয়ে আসে। এ্যাই তুই বসে রয়েছিস কি মনে করে তাড়াতাড়ি ভাগ এখান থেকে।এ্যাইটুকু একটা বাচ্চারে এইভাবে একলা ফাল্যাইয়া চ্যইললা যামু। এরে হাসপাতালে না নিলে এতো মইরা যাইব।
হাসানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ব্যাটা বলে কি। তুই হাতেম তাই এর শেষ বংশধর নাকি। এখন সমস্যা হচ্ছে রিক্সাওয়ালা ছোকরাকে কোনভাবেই নাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে হাসানও যেতে পারছে না। কারণ এখন সে চলে গেলে সামান্য এই রিক্সাওয়ালার কাছে হেরে যেতে হবে। এটা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। কোথায় আমি হাসান একজন ইউনিভার্সিটিতে পড়া ব্রিলিয়ান্ট একজন স্টুডেন্ট আর কোথায় এই রিক্সা ড্রাইভার। যে কাজটা আমার করা দরকার তা এই ছোকরা করে ফেললে আমার তো মান সন্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।
হাসান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। হাসান বাচ্চাটাকে নিয়ে রিক্সার সিটে উঠে বসে। রক্তে অবশ্য হাসানের কাপড় নষ্ট হচ্ছে। কি আর করা। আনিকার সাথেও আজ আর দেখা হচ্ছে না। আজ হাসানের জন্মদিন। আনিকা তাকে উইশ করার জন্যে গিফট নিয়ে অপো করছে। খুব রেগে যাবে। এমনিতেই আনিকা অল্পতেই রেগে অস্থির হয়ে যায়। হাসানের একবার মনে হয় সব ফেলে সে চলে যায়। কিন্তু সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সায় বসে থাকে।
এ্যাই তুই কাছের কোন হাসপাতালে রিক্সা নিয়ে চল।আনন্দে ছোকরার দাঁত বেরিয়ে পড়ে। মহা উৎসাহে সে রিক্সা টেনে নিয়ে চলে। হাসান বুঝতে পারছে না গর্দ্ধভটা এত খুশির কি দেখল।
সারাদিন হাসানের হাসপাতালেই কাটে। আজকাল হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করানোও মহা ঝামেলার ব্যাপার। কিভাবে এক্সসিডেন্টে হল। পেশেন্ট আপনার কি হয়। প্রভৃতি নানান ধরনের প্রশ্ন।
বাচ্চাটির পকেটে তার স্কুলের আইডি কার্ড থাকাতে সেখান থেকে তার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে তার মা-বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এসে পড়লে হাসানের ছুটি। বাকী ঝামেলা তারাই সামলাক। এর মধ্যে অবশ্য হাসান উধাও হয়ে যেতে পারত। কিন্তু বাচ্চার মা-বাবা অনুরোধ করেন তারা না আসা পর্যন্ত সে যেন হাসপাতালেই থাকে।
বাচ্চার মা-বাবা চলে এসেছেন। মা থেকে থেকে চোখ মুছছেন। বাবা কয়েকটা পাঁচশত টাকার নোট হাসানের পকেটে গুজে দেন। বাবা তুমি আমার ছেলের মত। আমাদের একমাত্র ছেলের জন্যে তুমি যা করলে তোমার এই ঋণ আমরা কখনও শোধ করতে পারব না। না হলে আজকাল কে কার জন্যে এতকিছু করে। শুধু চিকিৎসার খরচ বাবদ তোমাকে এই টাকা কটি দিলাম। ফিরিয়ে দিলে আমরা মনে খুব কষ্ট পাব।
হাসান মনে মনে ভাবে এরা বোধ হয় জানে না তাদের ছেলে হাসানেরই রিক্সা দিয়ে এক্সসিডেন্টে করেছে। আর আসলেই তার হাসপাতালের ডাক্তার ওষুধ প্রভৃতির পেছনে অনেক টাকা চলে গেছে। তাই এই টাকা সে ফিরিয়ে দেবে এত বোকা সে নয়। তারপরও সে চেহারায় গোবেচারা একটি ভাব ফুটিয়ে তোলে যেন খুব অনিচ্ছা সত্বেও সে এই টাকা নিচ্ছে।
এবার বিদায়ের পালা। সৌজন্যমূলক দু একটা কথা বলে হাসান বিদায় নেয়। একটু পরে হাসান ঘাড় ফিরিয়ে দেখে মা-বাবা দু জনেই তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। দু জনের চোখেই পানি টলমল করছে। সেন্টিমেন্টস জিনিসটা হাসান একদম সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এই মুহূর্তে সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই সে তাড়াতাড়ি ঘাড় ফিরিয়ে নেয়। কারণ তাদের এই অশ্রু ভালোবাসার অশ্রু। এর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তার চোখও ভিজে আসবে। সে তার চোখের পানি কাওকে দেখতে দিতে চাচ্ছে না।
বাইরে বেরিয়ে সে অবাক হয়, সেই রিক্সাওয়ালা ছোকরা এখনও রয়েছে। বাইরে বারান্দার এক কোনে বসে রয়েছে। হাসান তাকে ধমক দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। রাগী গলায় বলে- কিরে তুই বসে আছিস কি মনে করে। তোরতো এমনিতেই সারাদিন কোন রোজগার হয়নি।কেমন গাধা দেখ। ধমক শুনেও কি রকম দাঁত বের করে রেখেছে। যেন সারাদিন রোজগার না হওয়াটা কোন চিন্তার বিষয় না। হাসান ঘোর লাগা চোখে ছোকরার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সামান্য পুঁচকে ছোকরা নিজের অজান্তে আজ হাসানকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে।
হাসান তার পকেট থেকে পাঁচশত টাকার নোট কটি বের করে ছোকরার হাতে ধরিয়ে দেয়। বাড়ী চলে যা। বাচ্চা ভাল আছে। তার মা-বাবা চলে এসেছেন। আর কোন চিন্তা নেই।
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাসান হন হন করে হাঁটতে শুরু করে দেয়। একবারও সে পিছনে ফিরে তাকায় না।
(ব্রিটিশ গায়ক ইউসুফ ইসলাম গাজার শিশুদের জন্য একটি গান গেয়েছেন। এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার সহায়তা তহবিলে দান করা হবে। অন্য ব্রিটিশ চ্যানেলগুলি সেই গান প্রচারে রাজী হলেও বিবিসি চ্যানেল অপারগতা প্রকাশ করেছে। বিবিসির মহাপরিচালক এর যুক্তি হচ্ছে এতে করে সবাই ভাববে আমরা গাজা এবং ইসরাইলের মধ্যে যে যুদ্ধ হল সেখানে আমরা গাজার জনগণের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছি। কি চমৎকার যুক্তি! সভ্য দুনিয়ার সভ্য একজন লোকের একি ভাষ্য।
১৯৭১ এ জর্জ হ্যারিসন নামে এক বিদেশী গায়ক হাতে গিটার তুলে নিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহের আশায়। গেয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত মর্মস্পর্শী এক গান। গানের প্রতিটি সুরে ঝরে পড়েছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ ছিল অসম্ভব হৃদয়বান এক মানুষের আমাদের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সব কিছুর উপরে এখানে স্থান পেয়েছে মানুষের প্রতি মমতা, ভালোবাসা। অন্য কোন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য এখানে কাজ করেনি।
তাই বিবিসির এ ধরনের আচরণে বলতে বাধ্য হচ্ছি- হায়! বিবিসি তোমার অপার লীলা কে বুঝিতে পায়।)