Wednesday, February 11, 2009

অপেক্ষা


জ্যামি পাথরের মূর্তির মতো তার বাবার সামনে বসে আছে। কী নিশ্চিন্তেই না তার বাবা শুয়ে আছেন। একটু আগে কি ভয়ানক ম্বাস কষ্টটাই না তার শুরু হয়েছিল। গলার রগ ফুলে উঠেছিল। সারা শরীর মৃত্যূ যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার-নার্সদের মধ্যে ছুটোছুটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এখন সব কেমন নিশ্চুপ। মনে হচ্ছে চারদিকে কোথাও যেন আর কেউ নেই।
তার মনে পড়ে না আগে কখনও এভাবে সে তার বাবার পাশে এসে বসেছে কিনা। অন্য সময় হলে সে অস্বস্তিতে মরে যেত। বাবা-ছেলের সহজ সম্পর্ক তাদের মধ্যে কখনও ছিল না। তার বাবা কখনও তাকে জোরে একটা ধমক পর্যন্ত দেননি। অথচ তারপরও বাবার সামনে আসলে তার গলা শুকিয়ে যেত।
জ্যামি আসলে বড় হয়েছে একটা ঘোরের মধ্যে। তার ছিল নিজের তৈরী অন্য একটি জগত। সে কখনও তার চেনা সেই জগতের বাইরে আসতে চায়নি। তার বাবাও ছেলের এই ভুবনে প্রবেশের চেষ্টা করেননি। জ্যামিও তার এই ঘর থেকে কখনো্ মুক্তি চায়নি। ফলে নিজের অজান্তেই তারা একটু একটু করে একজন আরেকজনের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
অথচ আজ মৃত্যর মতো অসম্ভব এক কুৎসিত জিনিস তার এত দিনের তৈরী শৃঙ্খল থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে। অদৃশ্য ঘরের দেয়াল ভেঙে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
জ্যামি খুব ধীরে তার বাবার কপালে হাত রাখে। ফিসফিস করে বলতে থাকে-হে করুনাময় আমার বাবার প্রতি একটু দয়া করো। জ্যামি খুব শক্ত করে তার বাবাকে ধরে রাখে। মৃত্যূকে পরাজিত করার এক ছেলেমানুষী প্রচেষ্টা।
রাতের আধাঁরে সব কিছু কেমন ভীতিকর মনে হয়। জ্যামি ভোরের অপেক্ষা করতে থাকে। সে জানে না নতুন একটা ভোর তার জন্যে কি নিয়ে আসছে।
জ্যামি বুঝতে পারে না কখন মৃত্যু এসে চুপিচুপি তাকে পরাজিত করে গেছে। জ্যামির বাবা মারা যান ৪.৩০ মিনিটে। নিঃশব্দ এক মৃত্যূ। বাইরে ভোরের তখনও অনেক দেরী।

No comments: