Monday, May 17, 2010

প্রবাসের দিনরাত্রি

আজ সকাল থেকেই হাসানের মন খুব খারাপ। কাজে যেতে ইচ্ছে করছে না। কত কাল হয়ে গেছে দেশ ছেড়ে সে প্রবাসে পড়ে রয়েছে। এখন আর মাস বছর মনে থাকে না। পরিবারের লোকজনের চেহারাও এখন অনেকটা ঝাপসা হয়ে এসেছে।
কত দিন বাবা-মা, ভাই-বোনদের দেখে না। ছোট ভাই-বোনটা কত বড় হয়েছে। হাসানের কাছে তাদের বয়স বাড়েনি। সেই অনেক কাল আগে তাদের সেই ছোট্রটি দেখে এসেছে। এখনও তার চোখে তাদের সেই ছেলেবেলাটাই ভেসে উঠে।


দেশে এখন কোন কাল চলছে। শীতকাল নাকি বর্ষা কাল। এই মরুর দেশেও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানিতে দেশের বৃষ্টির মত মন আকুলি বিকুলি করে না।


শরীরটা কয়েক দিন ধরে ভাল যাচ্ছে না। থেকে থেকে জ্বর আসে। কিন্তু কাজে না গিয়ে কোন উপায় নেই। যে মালিকের কারখানায় সে কাজ করে সেই মালিক নিজের দামী হাত ঘড়িটা হারিয়ে ফেললে যেটুকু দুঃখ পাবে হাসান মারা গেলে সেটুকুও পাবে না। মালিকের কাছে তার পাসপোর্ট আটকানো রয়েছে। মালিক যতদিন না চাইবে ততদিন হাসান দেশে ফিরে যেতে পারবে না। অনেক দিন দেশের সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ। মাস শেষে শুধু নাম মাত্র বেতন আর তিন বেলা খেতে দেয়া হয়। বাকী বেতন মালিক কেটে রেখে দেয় । মালিক যখন তাকে দেশে ফিরতে দেবে তখন তাকে তার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে। হাসান জানে বেশির ভাগ শ্রমিকের ক্ষেত্রেই মালিক তাদের কথা রক্ষা করে না। কিছু বলতে গেলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। অবৈধ বাঙালী শ্রমিকদের সাথে এই দেশের পুলিশ জন্তুর মত আচরণ করে।


মাঝে মাঝে রাতে হাসান চুপি চুপি কাঁদে। তার তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে-বাবা ও বাব আমাকে তুমি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আমি আর এখানে থাকব না। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ভাল চাকরির লোভে দেশে বাবার জমিজমা মার গহনা বিক্রি করে বিদেশে এসেছে। এখন ইচ্ছে করলেও খালি হাতে দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে হাসান দেশে ফোন করলে মা ফোন ধরে কাঁদেন আর বলেন ও বাব তুই ভাল আছিস। হাসান কোন উত্তর দিতে পারে না। শুধু তার বুকের ভেতর কান্না দলা পাকিয়ে উঠে।


অনেক দেশে পোষা প্রাণীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্যে অনেক মানবাধিকার সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মতো অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকদের জন্যে কেউ কি কখনও মাথা ঘামায়। তারাতো ঐ সব পোষা প্রাণীদের চেয়েও মানবেতর দিনযাপন করে থাকে।


হাসান সময় মতই অফিসে এসে পৌছে। আজ মালিক অফিসে আসেননি। প্রবাসীদের নিয়ে এখানে কি একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। দেশ থেকে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে অনেক লোকজন এসেছে। পুরো অনুষ্ঠান যারা স্পন্সর করছেন, তার মধ্যে হাসানের মালিকও একজন। হাসানের মতো লোকদের ঐ সব অনুষ্ঠানে যাওয়ার সৌভাগ্য কখনই হবে না। সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রমের পর রাতে বাড়ী ফিরে টিভিতে হাসান অনুষ্ঠানের পুনঃপ্রচার দেখতে পায়। অনুষ্ঠানের সবাই খুব আনন্দ করছে। চারদিকে চোখ ধাঁধাঁনো লেজার শো। আনন্দ শুধুই আনন্দ। হাসানের চোখ এক সময় ঝাপসা হয়ে আসে। এখন আর সে টিভিতে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।


প্রতি বছর প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে এমনি আরও অনেক অনুষ্ঠান হবে কিন্তু তার মত লোকদের ভাগ্যের কখনও কোন পরিবর্তন হবে না। কারও কাছে এত সময় নেই যারা তাদের নিয়ে মাথা ঘামাবে। তাদের হয়ে সবার কাছে দুটি কথা বলবে। সবাই আছে অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। দর্শকদের যে কোন ভাবে একটি উপভোগ্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান তাদের উপহার দিতে হবে। দেশের সব টিভি চ্যানেল ব্যস্ত হয়ে পড়বে কার আগে কে ঐ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হবে-মরুর বুকে হয়ে গেল প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে আনন্দঘন এক জমকালো অনুষ্ঠান। প্রবাসীদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশী বেশী হওয়া দরকার। কারণ এরাই হচ্ছেন আমাদের দেশের চালিকা শক্তি। এদের পাঠানো কষ্টের উপার্জনের টাকা দিয়েই দেশে চলছে।


** কিছুদিন পূর্বে কুয়েতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনের পরবর্তী ফলাফল আমরা জানি। কয়েকজন শ্রমিকের ভুল সিদ্ধান্তের দায় দায়িত্ব নিতে হয়েছে শত শত শ্রমিকদের। প্রবাসী শ্রমিকরা যখন দেশে ফেরত আসে তখন এয়ারপোর্টে তাদের নামার ছবি ছাপা হয় বিভিন্ন দৈনিকে। সেখানে শ্রমিকদের পায়ে কোন জুতা নেই। যাদের আছে তাদের দুই পায়ে দুই ধরনের জুতা। এই ছবির পর আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রবাসে তারা কিরকম দীন হীন অবস্থায় বাস করে এটা হচ্ছে তার নমুনা।


কুয়েত সরকার তাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে তখন সেখানকার বাংলাদেশী দুতাবাসের কাজ কি ছিল। তারা কেন তখন একটি কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। প্রবাসে কখনও বাঙালীরা কোন সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশী দূতাবাসের খুব ভাল সহায়তা পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। যার জন্যে একই কাজের জন্যে একজন বাঙালীকে যে অর্থ দেয়া হয় সেই একই কাজের জন্যে একজন ইন্ডিয়ান কে তার তিন গুন অর্থ দেয়া হয়। তাহলে এত অর্থ অপচয় করে বিদেশে এই সব দূতাবাস রাখার দরকার কি। তাই এদের কাছ থেকে আমরা আজ আর কোন কিছু প্রত্যাশা করি না।


মিডিয়া প্রবাসে বেশ কিছু প্রশংসনীয় কাজ করছে। প্রবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিদেশে দেশের সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তারা যদি ঐ সব হতভাগ্য প্রবাসী বাঙালীদের কথা সমগ্র প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরতে পারে তবে তা অনেক বড় একটা কাজ হবে। মিডিয়ার শক্তি অনেক তবে সে যদি তার শক্তিকে শুধু মাত্র ব্যাবসায়িক কাজে না লাগিয়ে যথাযথ ভাবে তার শক্তিকে মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগায়।







Wednesday, May 12, 2010

ভালোবাসার অশ্রু

রিক্সাওয়ালা ছোকরার চেহারা দেখলে মনে হবে বেচারা এই মাত্র সদ্য ভুমিষ্ট হয়েছে। হাসান মনে মনে গাল দেয়-হারামজাদা। রিক্সা নয় যেন হারামজাদা হেলিকপ্টার চালাচ্ছিল। তবে হাসানই তাকে তাড়াতাড়ি চালানোর জন্যে উৎসাহ দিচ্ছিল। আনিকা তার জন্যে কলা ভবনের সামনে অপেক্ষা করছে। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে।

ছোকরা রিক্সাওয়ালা ১০-১২ বছরের ছোট একটি বাচ্চা ছেলের গায়ের উপর রিক্সা উঠিয়ে দিয়েছে। একটু সুযোগ পেলে অবশ্য হাসান কেটে পড়তে পারত। কিন্তু লোকজন এরই মধ্যে জটলা পাকিয়ে ফেলেছে। রক্তে বাচ্চাটির কাপড় চোপড় ভিজে যাচ্ছে।

আহারে কার বাচ্চা এমন করে এক্সিডেন্ট করল। চারদিক থেকে বিভিন্ন মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে। তাড়াতাড়ি একে হাসপাতালে পৌঁছানো দরকার। দেখা যাচ্ছে লোকজন সবাই বেশ সহানুভুতি সম্পন্ন।

পাবলিক সেন্টিমেন্টস খুব ভয়ঙ্কর জিনিস। মারপিটের কাজ পাবলিক খুব ভাল পারে। আর পাবলিক একবার মার শুরু করলে ইন্নালিল্লাহি না পড়ে ক্ষান্ত হয় না। তাই খুব সাবধানে এগুতে হবে। চিন্তা ভাবনা করে চাল দিতে হবে। চালে ভুল হলে সর্বনাশ।

হাসান ঠাস ঠাস করে রিক্সাওয়ালা ছোকরার দুই গালে চড় বসিয়ে দেয়। ফাজিল তোকে কে বলেছিল এভাবে রিক্সা চালাতে। আমি বার বার করে তোকে সাবধান করলাম। তোরা হলি গিয়ে লাত্থি-উষ্টার মানুষ। মুখের কোন কথা তোদের ভাল লাগে না।

প্রথম পর্ব শেষ। এবার লোকজন ভাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

হাসান চোখ মুখ করুন করে ফেলে।
আহারে কোন মায়ের বুকের ধন। ভাইরা আসুন একটু সাহায্য করেন। একে হাসপাতালে পৌছানোর ব্যবস্থা করি।
এবার কাজ হল। একজন দুইজন করে লোকজন আস্তে আস্তে কেটে পড়তে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত হাসান আর রিক্সাওয়ালা রয়ে গেল।

কে যায় উটকো ঝামেলাতে জড়াতে। রাস্তায় ভিড় করে এক্সসিডেন্টে আহত কোন ব্যক্তিকে দেখে আহা উহু করা এক জিনিস। এখানে যে কোন সময় কেটে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর দায়িত্ব নিয়ে তাকে হাসপাতালে পৌছে দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আরেক জিনিস। এর মানেই হল বজ্র আঁটুনিতে আটকে পড়া। তার অভিভাবককে খবর দাও। বেশী আহত হলে পুলিশ এসে জেরা করবে। যত্তসব ফালতু দরবার।

হাসান রিক্সাওয়ালা ছোকরাকে কেটে পড়তে ইশারা দিয়ে নিজেও কেটে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। কিছুদূর গিয়ে পেছনে ফিরে দেখে ছোকরা তার গায়ের শার্ট খুলে বাচ্চাটির মাথার রক্ত মুছে দিচ্ছে। শালার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি। তাকে ঝামেলা থেকে বাচানোর চেষ্টা করছি আর সে কিনা গাধার মত কাজ করছে।

হাসান হন হন করে এগিয়ে আসে।
এ্যাই তুই বসে রয়েছিস কি মনে করে তাড়াতাড়ি ভাগ এখান থেকে।
এ্যাইটুকু একটা বাচ্চারে এইভাবে একলা ফাল্যাইয়া চ্যইললা যামু। এরে হাসপাতালে না নিলে এতো মইরা যাইব।

হাসানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ব্যাটা বলে কি। তুই হাতেম তাই এর শেষ বংশধর নাকি। এখন সমস্যা হচ্ছে রিক্সাওয়ালা ছোকরাকে কোনভাবেই নাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে হাসানও যেতে পারছে না। কারণ এখন সে চলে গেলে সামান্য এই রিক্সাওয়ালার কাছে হেরে যেতে হবে। এটা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। কোথায় আমি হাসান একজন ইউনিভার্সিটিতে পড়া ব্রিলিয়ান্ট একজন স্টুডেন্ট আর কোথায় এই রিক্সা ড্রাইভার। যে কাজটা আমার করা দরকার তা এই ছোকরা করে ফেললে আমার তো মান সন্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।

হাসান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। হাসান বাচ্চাটাকে নিয়ে রিক্সার সিটে উঠে বসে। রক্তে অবশ্য হাসানের কাপড় নষ্ট হচ্ছে। কি আর করা। আনিকার সাথেও আজ আর দেখা হচ্ছে না। আজ হাসানের জন্মদিন। আনিকা তাকে উইশ করার জন্যে গিফট নিয়ে অপেক্ষা করছে। খুব রেগে যাবে। এমনিতেই আনিকা অল্পতেই রেগে অস্থির হয়ে যায়। হাসানের একবার মনে হয় সব ফেলে সে চলে যায়। কিন্তু সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সায় বসে থাকে।

এ্যাই তুই কাছের কোন হাসপাতালে রিক্সা নিয়ে চল।
আনন্দে ছোকরার দাঁত বেরিয়ে পড়ে। মহা উৎসাহে সে রিক্সা টেনে নিয়ে চলে। হাসান বুঝতে পারছে না গর্দ্ধভটা এত খুশির কি দেখল।

সারাদিন হাসানের হাসপাতালেই কাটে। আজকাল হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করানোও মহা ঝামেলার ব্যাপার। কিভাবে এক্সসিডেন্টে হল। পেশেন্ট আপনার কি হয়। প্রভৃতি নানান ধরনের প্রশ্ন।

বাচ্চাটির পকেটে তার স্কুলের আইডি কার্ড থাকাতে সেখান থেকে তার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে তার মা-বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এসে পড়লে হাসানের ছুটি। বাকী ঝামেলা তারাই সামলাক। এর মধ্যে অবশ্য হাসান উধাও হয়ে যেতে পারত। কিন্তু বাচ্চার মা-বাবা অনুরোধ করেন তারা না আসা পর্যন্ত সে যেন হাসপাতালেই থাকে।

বাচ্চার মা-বাবা চলে এসেছেন। মা থেকে থেকে চোখ মুছছেন। বাবা কয়েকটা পাঁচশত টাকার নোট হাসানের পকেটে গুজে দেন।
বাবা তুমি আমার ছেলের মত। আমাদের একমাত্র ছেলের জন্যে তুমি যা করলে তোমার এই ঋণ আমরা কখনও শোধ করতে পারব না। না হলে আজকাল কে কার জন্যে এতকিছু করে। শুধু চিকিৎসার খরচ বাবদ তোমাকে এই টাকা কটি দিলাম। ফিরিয়ে দিলে আমরা মনে খুব কষ্ট পাব।

হাসান মনে মনে ভাবে এরা বোধ হয় জানে না তাদের ছেলে হাসানেরই রিক্সা দিয়ে এক্সসিডেন্টে করেছে। আর আসলেই তার হাসপাতালের ডাক্তার ওষুধ প্রভৃতির পেছনে অনেক টাকা চলে গেছে। তাই এই টাকা সে ফিরিয়ে দেবে এত বোকা সে নয়। তারপরও সে চেহারায় গোবেচারা একটি ভাব ফুটিয়ে তোলে যেন খুব অনিচ্ছা সত্বেও সে এই টাকা নিচ্ছে।

এবার বিদায়ের পালা। সৌজন্যমূলক দু একটা কথা বলে হাসান বিদায় নেয়। একটু পরে হাসান ঘাড় ফিরিয়ে দেখে মা-বাবা দু জনেই তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। দু জনের চোখেই পানি টলমল করছে। সেন্টিমেন্টস জিনিসটা হাসান একদম সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এই মুহূর্তে সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই সে তাড়াতাড়ি ঘাড় ফিরিয়ে নেয়। কারণ তাদের এই অশ্রু ভালোবাসার অশ্রু। এর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তার চোখও ভিজে আসবে। সে তার চোখের পানি কাওকে দেখতে দিতে চাচ্ছে না।

বাইরে বেরিয়ে সে অবাক হয়, সেই রিক্সাওয়ালা ছোকরা এখনও রয়েছে। বাইরে বারান্দার এক কোনে বসে রয়েছে।
হাসান তাকে ধমক দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। রাগী গলায় বলে- কিরে তুই বসে আছিস কি মনে করে। তোরতো এমনিতেই সারাদিন কোন রোজগার হয়নি।
কেমন গাধা দেখ। ধমক শুনেও কি রকম দাঁত বের করে রেখেছে। যেন সারাদিন রোজগার না হওয়াটা কোন চিন্তার বিষয় না। হাসান ঘোর লাগা চোখে ছোকরার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সামান্য পুঁচকে ছোকরা নিজের অজান্তে আজ হাসানকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে।

হাসান তার পকেট থেকে পাঁচশত টাকার নোট কটি বের করে ছোকরার হাতে ধরিয়ে দেয়।
বাড়ী চলে যা। বাচ্চা ভাল আছে। তার মা-বাবা চলে এসেছেন। আর কোন চিন্তা নেই।
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাসান হন হন করে হাঁটতে শুরু করে দেয়। একবারও সে পিছনে ফিরে তাকায় না।

** একদিন মা তার মধ্যে আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করে। ধীরে ধীরে মাতৃত্বের লক্ষণগুলি প্রকট হতে শুরু করে। মা প্রতিক্ষার প্রহরগুণে। তারপর একদিন বাবুটা পৃথিবীতে আসে। মা বাবুটাকে সর্বক্ষণ আগলে রাখে। তাকে নিয়ে মার কত স্বপ্ন। মার হাত ধরে সে হাঁটতে শিখে। 

একসময় বাবুটা বড় হতে শুরু করে। দৈহিক উচ্চতায় একদিন মাকেও সে ছাড়িয়ে যায়। এখন আর মার দুর্বল হাতের তার আর কোন প্রয়োজন নাই। মা চেয়ে চেয়ে দেখে বাবুটা কত দ্রুত বদলে যাচ্ছে। দিনে দিনে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। এক সময় বাবুটা কেমন অচেনা হয়ে পড়ে। মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দুই চোখ বেড়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। ভালোবাসার অশ্রু তার বাবুটার জন্য।

৯ মে বিশ্ব মা দিবস। আমার মনে হয় মা দিবস বলে আসলে আলাদা কোন কিছু নেই। বছরের সব দিনই হোক মায়ের জন্য।







Saturday, May 8, 2010

জাস্টিস!

১. যুক্তরাষ্ট্রের বেটি বুলক (বয়স ৬৪) নামে এক মহিলা ফুসফুস ক্যান্সারে মারা যান ২০০৩ সালে। তিনি টানা ৪৭ বছর ফিলিপ মরিস কোম্পানীর সিগারেট পান করেছেন। তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলে ২০০১ সালে ঐ কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে লস এঞ্জেলেসের একটি আদালত ২০০২ সালে এক রায়ে ঐ কোম্পানীকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলেন। পরে কোম্পানী আপিল করলে আদালত সম্প্রতি চূড়ান্ত রায়ে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমিয়ে ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার করেন এবং তা বুলকের মেয়েকে দেয়ার নির্দেশ দেন।– সূত্র: বিবিসি নিউজ।


২. অন্যায্যভাবে দাম নির্ধারণের জন্য যুক্তরাজ্যের ডজনখানেক সিগারেট কোম্পানী, চেইনশপ ও খুচরা বিপনন সংস্থাকে রেকর্ড পরিমাণ জরিমানা করেছে অফিস অব ফেয়ার ট্রেডিং (OFT)। প্রতিষ্ঠানটি সাত বছর ধরে তদন্ত করে দেখেছে সিগারেট কোম্পানীগুলি খুচরা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে গোপন কারসাজি করে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ধরে রাখে। এতে মুক্তবাজার অর্থনীতির মৌল ধারনারই লঙ্ঘন হয়। এই অনৈতিক কর্মকান্ডের দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২২ কোটি ৫০ লক্ষ পাউন্ড জরিমানা করেছে OFT। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ কোটি ২০ লক্ষ পাউন্ড জরিমানা গুণতে হয়েছে ইম্পেরিয়াল টোব্যাকো কোম্পানীকে। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ১৩ বিলিয়ন ডলারের সিগারেট বিক্রি হয়। - সূত্র: গার্ডিয়ান, ১৯ এপ্রিল ২০১০।


উপরের দুটি ঘটনার কোনটাই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ঘটেনি। কিন্তু সম্ভব। অনেকে হয়ত হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছেন। যে দেশের সিগারেট কোম্পানীগুলি সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে। মিডিয়াগুলিও যাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস পায় না। তাদেরকে আবার করা হবে জরিমানা!


নীচের নিউজ ২ টা দেখুন-


১. কক্সবাজারের বাকশালী নদীর ফেরিঘাট বরাদ্দের টেন্ডার বাতিল করে রেট, টোল ও সীমানা নির্ধারণ করে পুনঃটেন্ডার আহবানের জন্য গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশ অমান্য করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ পূর্বের টেন্ডার বহাল রাখেন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে একাধিক আদেশ দেয়ায় গত ২০ এপ্রিল আদালত অবমাননার মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করে ও গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে সশরীরে হাজির হবার নির্দেশ দেন।


আদালত অবমাননার অভিযোগে জেলা প্রশাসক গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে ৩ ঘন্টা ৫ মিনিট আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এই সময় হাইকোর্ট তাকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করে বলেন-তিনি আমাদের (আদালতের) একাধিক আদেশ অমান্য করেছেন। তিনি তো নিজেকে লর্ড ভাবেন। জেলা প্রশাসক জনসাধারণের গোলাম। তিনি তো জেলার মালিক নন। জনগণের সেবক। জনগণের করের টাকায় তিনি বেতন পান। এটা তাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং আইন মেনে চলতে হবে। হাইকোর্টে আদেশ পাবার পরেও তিনি কিভাবে তা অমান্য করে ৪/৫ টি আদেশ দেন। তিনি আদালতের আদেশ অমান্য করে ধৃষ্টতার চরমে দেখিয়েছেন।


এ সময় গিয়াসউদ্দিন আহমেদের পক্ষের কৌসুলী বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত তাকে শর্ত স্বাপেক্ষে ক্ষমা করে দেন।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধূরী ও বিচারপতি মো. দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন। - সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ মে ২০১০।


২. পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায় সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনে পুরিশের নিস্ক্রিয়তার বিষয়ে ব্যাখা দিতে পুলিশ সুপার (এসপি) কে হাইকোর্ট থেকে গতকাল সকালে কোর্টে হাজির হবার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সে সময় না আসায় বিকেলে তাকে জরুরি তলব করে এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করান বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি দেরোয়ার হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।এ সময় এসপি নাফিউল তার কৃতকর্মের জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।


হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা জনস্বার্থের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এসপিকে আদালতে তলব করা হয়। মঠবাড়িয়ায় সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের নিজস্ব বাড়ি-ঘরে বসবাসে সুযোগ করে দিতে পিরোজপুরের এসপি ও মঠবাড়িয়া থানার ওসি কে গতকাল নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সূত্র: আমাদের সময়, ৭ মে ২০১০


-যে দেশে বিচারের জন্য আদালতের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে একটি লোক হয়ে পড়ে নিঃস্ব, তার জীবনের বেশীরভাগ মূল্যবান সময় চলে যায় ন্যায় বিচার পাবার আশায় আশায়। সেখানে এ ধরনের খবর অবশ্যই আমাদেরকে আশাবাদী করে তোলে।


** একটি দেশের আদালতের রয়েছে অফুরন্ত ক্ষমতা। কিন্তু আফসোস বিচারপ্রতিরা তা সব সময় প্রয়োগ করেন না।

Wednesday, May 5, 2010

ঈশ্বরের ঠিকানা


মাঝে মাঝে এই হাসপাতালের চার দেয়ালের ভিতরে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। শাহেদ খুবই যুক্তিবাদী একটি ছেলে। সে কখনও প্রকৃতির মাঝে রহস্য খোঁজার চেষ্টা করেনি। প্রকৃতিতে রহস্য বলে কোন কিছু নেই। তার বিশ্বাস প্রকৃতিতে কোন কিছু এমনিতেই ঘটে না। সব কিছুর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। যুক্তির বাইরে কোন কিছুতে সে কখনই বিশ্বাস করে না।

বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কি এমন কোন শক্তি লুকিয়ে আছে যা এই মহাবিশ্বের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তার মতে এটা একদমই বাজে কথা। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন একটি বিন্দু থেকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। তারপর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে গ্রহ, নক্ষত্র আর সব কিছুর। যদিও এই থিওরি তার মনে জন্ম দিয়েছে অনেক অজানা সব প্রশ্নের। বিগব্যাং এর পূর্বে কি ছিল? প্রাণের সৃস্টি কিভাবে হল? নিজে নিজে যদি প্রাণের সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে ল্যাবরেটরিতে কেন আমরা প্রাণ সৃষ্টি করতে পারছি না? তবে তার বিশ্বাস একদিন মানুষ এই সব প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজে বের করে ফেলবে। তখন আর সৃষ্টির রহস্য বলে কোন কিছু থাকবে না।

তার মতে ভাল মন্দের শিক্ষা দেয়ার জন্য ও সৎ জীবন যাপনের জন্য ধর্মগ্রন্থগুলি মানুষই বিভিন্ন সময়ে তৈরী করে গেছে। এখানে যে সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হয়েছে তা শুধুই মানুষকে ভয় দেখাবার জন্য। যাতে করে তারা অন্যায় কাজ করতে ভয় পায়।

ধীরে ধীরে শাহেদের জীবন রেখা সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে। সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছেন। এগিয়ে আসছে মৃত্যু। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষ অমর নয়, মরণশীল। শাহেদেরও তা ভাল করে জানা আছে। মরতেতো হবেই, একদিন আগে আর একদিন পরে।

তারপরও মাঝে মাঝে মন বিদ্রোহী হয়ে উঠে। মনে হয় যদি এই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কোন এক সুপার পাওয়ার থাকত, যে সব কিছুই করতে পারত তবে শাহেদ তার কাছে আরও কয়েকটা দিন সময় চাইতে পারত। ধুর, কি সব বোকা আস্তিকবাদীদের মতো সে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছে। সৃষ্টিকর্তা বলতে কোন কিছু নেই। মানুষ তার কল্পনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে তৈরী করে নিয়েছে। সে নিজে একজন ঘোর নাস্তিকবাদী। তাহলে কেন সে এই সব যুক্তি ছাড়া জিনিস কল্পনা করবে। প্রকৃতির সব কিছু তার নিজস্ব নিয়মে চলবে। এখানে কারও ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু যায় আসে না।

আজ বাইরে বর্ষার প্রথম বৃষ্টি হচ্ছে। শাহেদ হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। নিঃশ্বাসে ভেসে আসছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ। গাছের পাতাগুলি সব বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। আহা কত সাধারণ, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কি অপূর্ব একটি দৃশ্য। ইচ্ছা করলেও সে আজ বৃষ্টির পানি ছুতে পারবে না। ক্যান্সার তার সারা শরীরে বাসা বেধে ফেলেছে। এখন সে বিছানা থেকেই উঠতে পারে না। অনেক চেষ্টা করে তার হাতটুকু সামনে বাড়িয়ে দেয়। সে জানে এতদূর থেকে সে বৃষ্টি স্পর্শ করতে পারবে না। ধপ করে তার হাতটা বিছানার উপর এলিয়ে পড়ে ।

একসময় শাহেদের সব চিন্তা ভাবনা কেমন এলোমেলো হয়ে আসে। মাথায় আবার ভোতা যন্ত্রনা শুরু হয়। নিজের অজান্তেই মনে মনে বলতে থাকে-হে মহাশক্তি, আমাকে একবার শুধু ঐ জানালা পর্যন্ত পৌছার শক্তিটুকু দান কর। প্রাণপন চেষ্টা করে সে উঠে বসে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে জানালার দিকে। অনেক দিন পর আজ সে উঠে দাঁড়াতে পারছে। আরেকটু, তাহলেই সে পৌছে যেতে পারবে। অবশেষে সে পৌছতে পারে। শাহেদ চমকে উঠে। তাহলে কি কোন অদৃশ্য শক্তি তার মনের ইচ্ছা পূরণ করে চলেছে। শাহেদ হাত বাড়িয়ে দেয় জানালার বাইরে। কত দিন পর আজ বৃষ্টির স্পর্শ অনুভব করছে। আহ্ কি শান্তি। শাহেদের দুই চোখ ভিজে আসে। হায়! বেঁচে থাকা এত আনন্দের কেন।

ইস্ এখন যদি কোন মিরাকল ঘটত। ঐশ্বরিক কোন শক্তির কল্যাণে সে যদি হঠাৎ করে ভাল হয়ে যেত। তবে কি তার এত দিনের বিশ্বাসে চিড় ধরতে আরম্ভ করেছে। শাহেদ মাথা থেকে এ ধরণের চিন্তা সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ঈশ্বর বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ সব শুধুই মানুষের অবচেতন মনের কল্পনা। কিন্তু শাহেদের চোখ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে কি যেন খোঁজে ফিরে। আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে তার দৃষ্টি চলে যায় দূরে, আরো দূরে। এই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোথাও কি তাহলে লুকিয়ে রয়েছে এমন কোন ঐশ্বরিক শক্তি বা ঈশ্বর যিনি সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। যার জাদুর স্পর্শে সব কিছু বদলে যেতে পারে।

শাহেদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফিস ফিস করে বলতে থাকে-হে অজানা ঐশ্বরিক শক্তি, আমাকে আর কয়েকটা দিনের আয়ু দান কর। আমি এই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর কয়েকটি দিন দেখে যেতে চাই।

শাহেদ মারা যায় এর কিছুক্ষণ পরই । একজন ক্যান্সার আক্রান্ত লোকের স্বাভাবিক মৃত্যু। কোন মিরাকল ঘটেনি । প্রকৃতিতে সব কিছু তার মত করে ঘটে। প্রকৃতি তার সব রহস্য মানুষের কাছে প্রকাশ করে না। স্রষ্টা সব সময় তার সৃষ্টি নিজের মত করে পরিচালনা করেন। স্রষ্টা তার সব ক্ষমতা মানুষকে দেখাতে পছন্দ করেন না।

(** মে ফ্লাওয়ার। শুধু মে মাসেই এই ফুল ফোটে। এই ফুলটিকে দেখে আমি হঠাৎ করে চমকে উঠি। বুঝতে পারি মে মাস এসে গেছে। এই সাইকেলের কোন ব্যতিক্রম ঘটে না। প্রকৃতি অনিয়ম পছন্দ করে না। মনে হয় যেন সামান্য এই ফুলের মাধ্যমে প্রকৃতি তার সীমাহীন ক্ষমতার একটি ক্ষুদ্র নমুনা আমাদের সামনে রেখে দিয়েছে।)



Tuesday, May 4, 2010

টিপস: কিভাবে অল্প সময়ের মধ্য একজন জনপ্রিয় লেখক হবেন।

স্যার, আমায় চিনতে পেরেছেন?’
-না।

ফাস্ট ইয়ার, সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট। আমি আপনার সবগুলি ক্লাস নিয়মিত এটেন্ড করতাম।’
-হ্যা, এই বার চিনতে পেরেছি। আমার সবগুলি পরীক্ষায় তুমি নিয়মিত ফেল মারতে। তা এখন কি করছ?

‌এই স্যার, লেখালেখি করে পেট চালাই আরকি।‌’
-আচ্ছা। তাহলে কেউ যদি তোমার পেটের দায়িত্ব নিয়ে নেয় তবে তুমি আর লেখালেখি করবে না।

ঠিক তা নয় স্যার। আমার স্বপ্ন আপনার মত একজন জনপ্রিয় সাই-ফাই লেখক হওয়া।’
-সাই বাবার নাম শুনে ছিলাম। সাই-ফাই আবার কি জিনিস, ঠিক বুঝলাম না।

ও আল্লা! এটা আধুনিক সায়েন্স ফিকশন। সংক্ষেপে সাই-ফাই। আমার ধারণা সায়েন্সের ছাত্র হওয়াতে আমি এই লাইনে ভাল করব। তাই আপনার কাছে এসেছি একটি ভাল সায়েন্স ফিকশন নামাতে হলে কি কি লাগে তার টিপস জানতে।’
-তোমার ধারণা বাজারের ফর্দ লেখার মত যে কেউ চাইলেই লেখালেখি শুরু করে দিতে পারে।

স্যার আমার এই স্ক্রিপ্টটা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন আমি কত জাদরেল লেখক।’
-ঠিক আছে তুমি রেখে যাও আমি সময় করে দেখব।

স্যার আমি আপনাকে একটু পড়ে শুনাই।
এতো ভালই মুসিবতে পড়া গেল।

এক দল অভিযাত্রী উত্তর মেরু অভিযানে বের হয়েছে। জুল ভার্নের-ক্যাপটেন হ্যাটেরাস’ নামে এ রকম একটি কাহিনী আছে। আমারটা আরও ভয়াবহ। টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ। যেখানে শূন্য ডিগ্রীতে পানি বরফ হয়ে যায়। তাহলে বুঝেন অবস্থা। কঠিন অবস্থা। সবার অবস্থা কেরাসিন। সব চেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে পেশাব করা নিয়ে। কেউ পেশাব করতে পারছে না। পেশাব জমে বরফ হয়ে গেছে। তারপর……..’

-থামো, আমরা ধারণা জুলভার্ন বেঁচে থাকলে তোমার এই কাহিনী শুনে নির্ঘাত সুইসাইড করার চেষ্টা করতেন। পদার্থ বিদ্যার সূত্র অনুযায়ী -২৭৩ ডিগ্রীর নীচে টেম্পেরেচার পৌছতে পারে না। সেখানে টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ তুমি কোথায় পেলে।

স্যার, এবার তাহলে আরেকটা শুনাই। এবার একদল অভিযাত্রী মহাকাশ পর্যবেক্ষণে বের হয়েছে। নভোযান পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে পৌছে গেল মহাকাশে। আমি জুলভার্নের- এ জার্নি টু দ্যা মুন’ গল্পটিকে কাট ছাট করে চালিয়ে দেব। কেউ ধরতে পারবে না। অভিযাত্রীদের মধ্যে রয়েছে এক পাড় মাতাল। এক মুহূর্ত এ্যালকোহল না হলে তার চলে না। পকেট থেকে একটু পর পর বোতল বের করে চুমুক দিচ্ছে। তারপর তারা নামল চন্দ্র পৃষ্টে। চাঁদে হাঁটা খুব কষ্টকর। একেক জনের পা যেন দশ মণ ভারী হয়ে রয়েছে। উঠতেই চায় না।’

-স্টপ। লেখক চিৎকার দিয়ে উঠেন। আরে আগেতো সায়েন্স, তারপর না ফিকশন। মহাশূন্যে গিয়ে কেউ চুমুক দিয়ে তরল পান করছে এটাতো আমি বাপের জন্মে শুনিনি। কোন নভোযান যখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে অতিক্রম করে যাবে তখন মহাশূন্যে থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করলেও বোতল থেকে উপুড় করে পানি ঢালা যাবে না। আর চন্দ্র পৃষ্টেও একই জিনিস ঘটবে। অভিকর্ষ বলের কারণে মানুষ তার ওজন হারাবে। অভিযাত্রীরা এমনিতেই নিজেদের ওজনশূন্য অনুভব করবেন। সেই জায়গায় পা দশ মণ ভারী হয়ে আছে-যত্তসব।

স্যার তাহলে আরেকটা শুনাই।’
আমাকে এবার মুক্তি দাও। আর তুমি অন্য লাইনে চেষ্টা কর।

স্যার প্লীজ, এই লাস্ট। এবারের কাহিনী অতি আধুনিক । মেট্রিক্স ছবিতো আপনি নিশ্য়ই দেখে থাকবেন। অনেকটা তার ছায়া অবলম্বনে লেখা। আমার গল্পের নায়ক পুলিশ অফিসার ক্রিমিনল ধরতে ছুটে বেরাচ্ছে। পরনে তার বিশেষ পোশাক। নীল প্যান্ট, নীচে লাল আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে।

-এক মিনিট। প্যান্টের নীচে তুমি কিভাবে আন্ডারওয়্যার দেখতে পেলে।

এটা আধুনিক স্বচ্ছ পলিমারের প্যান্ট। আর আগের সুপারম্যান প্যান্টের উপরে আন্ডারওয়্যার পরত। কিন্তু আমার আধুনিক সুপার হিরো এত আবুল নয়। পাঠক যখন ভাবতে শুরু করে দিয়েছে পুলিশ ক্রিমিনাল ধাওয়া করছে এ আর এমন নতুন কি। তখনই আমি আসল চমক দেখাব। কারণ আমার হিরো কোন মানুষ নয়। মানুষের মত দেখতে একটি নবম স্কেলের রোবট।’

-থামো। তুমি এই মুহূর্তে তোমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে এখান থেকে বিদায় হবে। তুমি আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাকেও জুলভার্নের মত অকালে বিদায় নিতে হবে। নীল প্যান্টের নীচে, লাল আন্ডারওয়্যার। রঙ্গীন কাপড়ের নীচে অন্য কোন রঙ্গীন কাপড় কাল দেখাবে। আর তুমি দেখছ লাল।
তুমি এই কঠিন লাইনে চেষ্টা বাদ দিয়ে প্রথমে হালকা মানের লেখা দিয়ে শুরু কর। যেমন- বাচ্চাদের ছড়া। প্রেমের কবিতা ইত্যাদি।

ঠিক আছে স্যার, আমি পরবর্তীতে আরও ভাল স্ক্রীপ্ট নিয়ে আপনার কাছে আসব। আমাকে একজন ভাল সাই-ফাই লেখক হতেই হবে। ’

এক বছর পর। এই লেখক এখনও পুরো দমে তার লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি বাংলা সিনেমার কাহিনী লেখেন। এখানে যুক্তি-অযৌক্তিক এর কোন বালাই নেই।

নায়িকা রোড এ্যাকসিডেন্টে আহত। হাসপাতালে নেবার সময় নেই। রক্ত দরকার। নায়ক পকেট থেকে নেশা করার সিরিঞ্জ বের করে নিজের শরীরের রক্ত টেনে বের করে নায়িকার শরীরে ঢুকাতে শুরু করল। ব্লাড মেচিং এর কোন দরকার নেই। ভালোবাসার মাঝে রক্তের গ্রুপ কোন সমস্যা নয়। একটু পর নায়িকা চোখ মেলল। চৈত্রের ভর দুপুরে শুরু হল বৃষ্টি। আর তারসাথে বৃষ্টি ভেজা হেভী জোসীলা নাচ-গান।

নায়ক গেয়ে উঠল- নেশা আছে হেরোইনে, নেশা আছে প্যাথেডিনে
তারচাইতেও অধিক নেশা কইন্যা তোমার যৌবন সুধাতে…এ…এ…এ।

নায়িকা গেয়ে উঠল- আমার আঁচল উড়াইয়া নিল মরার বাতাসে
আমার যৌবন ভাসিয়া গেল বৃষ্টির জলে….এ….এ….এ।

এখানে একটি তিন ঘন্টা ছবি চলার মত কাহিনী হলেই চলে। আর কাহিনীরও তেমন কিছু নেই। কয়েকটি হিন্দী-ইংরেজী ছবির কাহিনী কাট-পেস্ট করে দিলেই চলে। বর্তমানে তিনি এখন জনপ্রিয় একজন কাহিনী লেখক।

** সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর মিল খুঁজতে চাইলে যে কেউ নিজ দায়িত্বে তা করতে পারেন।

(আইজাক আসিমভ একজন জাদরেল সায়েন্স ফিকশন লেখক। ‌ফাউন্ডেশন’ উনার বিশ্ব বিখ্যাত একটি উপন্যাস। বইটি কিনেছিলাম বহু আগে কিন্তু আজ পর্যন্ত শেষ করে উঠতে পারিনি। সম্ভবত এর কঠিন সব টেকনিক্যাল ব্যাপার স্যাপারের কারণে।

আর্থার সি ক্লার্ক আরেকজন জাদরেল সায়েন্স ফিকশন লেখক। বর্তমানে বাস করছেন শ্রীলঙ্কায়। উনার বেশ কিছু চমৎকার গল্প রয়েছে কিন্তু বেশীরভাগ লেখাই আমার বোধগম্যের বাইরে। এটা লেখকের সমস্যা না, আমার সমস্যা।

সায়েন্স ফিকশন এর সব পাঠকতো আর সায়েন্স এর বিষয়গুলি খুব ভাল ভাবে বোঝেন এমন নয়। তাহলে এই লেখাগুলি কি সাধারণ পাঠকদের জন্য নয়?

জুল ভার্নের বেশীর ভাগ লেখাই আমি এক নিঃশ্বাসে পড়ে গিয়েছি। তিনি এডভেঞ্চার গল্পের ফাঁকে ফাঁকে সায়েন্স এর বিষয়গুলি বর্ণনা করে গেছেন। জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন বুঝতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। সায়েন্স ফিকশন এর মধ্যে তিনি সাধারণ মানুষের মানবিক দিকগুলি ফুটিয়ে তুলেছেন। অথচ এই লেখাগুলিকে বিশ্ব বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশনের সাথে এক কাতারে না ফেলে কোন উপায় নেই।

সম্ভবত বোদ্ধাদের মাঝে এই ধারণা চালু আছে যত কঠিন করে লেখা হবে সায়েন্স ফিকশন ততই উন্ততমানের হবে। পাঠক বুঝুক বা নাই বুঝুক। বাচ্চারা এটা তোমাদের জন্য নয়।)

Monday, May 3, 2010

অন্ধকারের যাত্রী

তুহিন তুই বোস, তোর ট্রেন তিন ঘন্টা পর আসবে- আমি আসছি।'
আসলাম সেই যে উধাও হল এখন র্পযন্ত কোন খবর নেই।

তুহিনের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই ভুতূড়ে স্টশেনে ট্ট্রেনের জন্যে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে। কয়েক দিন ধরে এমনিতেই তার দম ফেলার সময় নেই। তারপরও আসলামের বোনের বিয়েতে এক দিনের ছুটি নিয়ে এই মফস্বলে আসতে হয়েছে। আজই ঢাকা ফিরে যেতে হবে।

এমনিতেই স্টেশনে তেমন লোকজন নেই তারপর মাথার উপরে টিমটিম করে যে স্বল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে তাতে করে রাতের এই অন্ধকার তেমন দূর হচ্ছে না।

সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যপার হচ্ছে স্টেশনের বেঞ্চে তার পাশে বাইশ-তেইশ বছরের এক মেয়ে বসে রয়েছে। সম্ভবত এই ট্রেনেরই যাত্রী হবে। প্রথমে তুহনি ভূত ভেবে ভয় পেয়েছিল। নাহ্ ভূতের পা উল্টা হয়। এর পা ঠিকই আছে।

ভয়ে ভয়ে তুহিন জিজ্ঞেস করে, ‌আপনি কি ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করছেন? ট্ট্রেন তিন ঘন্টা লেট। আপনি একা আপনার সাথে কি আর কেউ নেই।

আপনার কোন অসুবিধা আছে। আর একা কই, আপনে আছেন না।
তুহনি কিছুই বুঝতে পারে না। এই মেয়ের সমস্যা কি।

কি ব্যপার আপনে এই ভাবে তাকাই আছেন কেন? কোন সময় মেয়ে মানুষ দেখেন নাই।
আপনি এ রকম বাজে ভাবে কথা বলছনে কেন?-তুহিন অবাক হয়।

আমি বাজে মেয়ে, এই জন্যে বাজে ভাবে কথা বলছি।
তুহিন হতভম্ব। কোন কথা বলতে পারে না।

আপনে কি করেন? - মেয়েটি একটু পর জানতে চায়।
আমি সফটওয়্যার বিক্রি করি। আর আপনি কি করেন?

আমি আত্না বিক্রি করি।
বুঝলাম না।

বেশী বুইঝা লাভ নাই। আপনের ঐ জিনিস কি ওয়্যার বিক্রি কইরা প্রতিদিন কত পান?
বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার নীচে কোন সফটওয়্যার আমরা বানাই না।

মেয়েটির চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠে। জানেন আত্না বিক্রি কইরা প্রতিদিন আমি মাত্র ১০০-২০০ টাকা পাই।
আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন?

আপনে ভদ্রলোক তো তাই বুঝতে পারছনে না। আপনার মত ভদ্রলোকরা প্রতিদিন আমার কাছে আসে, তারার নোংরা হাত আমার গায়ে রাখে তারপর ঘন্টা হিসাব কইরা তারা আমার আত্না কিননা নেয়।

হঠাৎ করে তুহিনের মনে হয় চারদিকে এতো খোলা বাতাস তারপরও সে ঠিক মতো নি:শ্বাস নিতে পারছে না। অনেক্ষণ পর জিঞ্জেস করে-তুমি এরকম এক অন্ধকার জীবন কেন বেছে নিলে?

মেয়েটির মুখে বিষন্ন হাসি দেখা দেয়। কেউ কি আর ইচ্ছা কইরা এই জীবন বাইছা নেয়। সৃষ্টিকর্তা আমার ভাগ্যে এইটা রাখছেন। প্রতদিনি সকালে যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখি তখন খুব লজ্জা হয়। নিজেকে ঘৃণা করতে ইচ্ছা করে। তারপর আবার সব কিছু ভুইলা যাইতে হয়।
দুনিয়াতে খাওয়ার কষ্ট সবচাইতে বড় কষ্ট। এর জন্যেই আপনে সফটওয়্যার বেচেন, আর আমি বেচি আত্না। দুইটাই ব্যবসা। পার্থক্য শুধু, একটা আলো আর একটা আঁধারের।

সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করছ কেন? তিনি তো কারো অমঙ্গল চান না।
শুনছি পরকালে দোজখে একটা লোকের বার বার মৃত্যু ঘটব, তারপর তারে বার বার জীবিত কইরা শাস্তি দেয়া হইব। আর এইখানে প্রতদিনি আমার আত্নার মৃত্যু ঘটে। এইটা সৃষ্টিকর্তার কেমন বিচার।

তুহিন কোন কথা বলতে পারে না। নিজের ভেতরে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব কর। এটা কি এই মেয়ের জন্য? সে জানে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুহনি বলে- আমি যদি তোমাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাই তবে কি তুমি আমার সাথে যাবে? অন্তত চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি, নতুন ভাবে আবার সব কিছু শুরু করা যায় কিনা।

ঢাকা তো আমি এই ট্রেনেই আপনার সাথে যাচ্ছি, কিন্তু তারপর আমি যাব আমার রাস্তায় আর আপনি আপনার পথে।
দেখ তুমি চাইলে আমি ঢাকাতে তোমার জন্যে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

উপরে তাকায় দেখেন ভোর হইয়া আসছে। ভোরের আলোয় রাতের অন্ধকারের কোন কথা আপনার মনে থাকব না। কারো থাকে না। মেয়েটির মুখে চাপা হাসি ফুটে উঠ।

ভোররে আলো আঁধারের মাঝে তুহিনের মনে হয়, এ রকম র্স্বগীয় হাসি সে অনেক দিন দেখেনি।

(** একবার একজনের মন্তব্যে আমি খুব আহত হয়েছিলাম। উনার কথা ছিল সেক্স ইন্ডাস্ট্রি বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। এটাকে কখনই পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। সমাজে এর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। সুতরাং এটা বন্ধ করা নিয়ে অযথা লাফালাফি করার কোন দরকার নাই।

আমি উনাকে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম- ধরুন আপনার পরিবারের কেউ সেখানে রয়েছে তারপরও কি আপনি এই কথাই বলবেন। তিনি আরেকটু হলেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তেন।

ফ্রান্সে বোরকা পড়লে ১০০০ ডলার জরিমানা। সম্প্রাত বেলজিয়ামেও রাস্তায় বোরকা পড়ে বের হবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বোরকার পড়ার কারণে নাকি নারীদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। একজন মুসলিম মহিলা যদি তার ধর্মীয় আবেগ থেকে কোন শালীন পোষাক বেছে নেয় তাহলে সমস্যা কোথায়। এমনতো না যে সেখানে মহিলাদের জোর করে বোরকা পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। স্বোচ্ছায় তারা এটাকে বেছে নিয়েছেন। তাহলে স্বাধীনতা খর্বের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে। আর যারা এই আইনটি পাশ করেছেন তারা এটা করার আগে কতজন মুসলিম মহিলার মতামত নিয়েছেন?

হায় সভ্য দেশ! সভ্য দেশের আইন! বোরকা পড়লে নারীদের স্বাধীনতা, অধিকার খর্ব হয়। আর বিলিয়ন ডলারের সেক্স ইন্ডাস্ট্রি থাকলে কোন সমস্য নাই। এটাতে নারীদের অধিকার খর্ব হচ্ছে না।)