Monday, February 16, 2009

প্ল্যানচেট


অপালাদের ফ্ল্যাটে মিসেস গোমেজ নামে এক খ্রিস্টান মহিলা থাকেন। তিনি দিনে দুপুরে মৃত আত্না ডেকে নিয়ে আসতে পারেন। কিছুদিন আগে নাকি তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এনেছিলেন। তবে জীবিত না, উনার আত্না। স্বর্গে রবি ঠাকুর খুব সুখেই আছেন। খাওয়া দাওয়ার কোন অভাব নেই। যা ইচ্ছে তা খাওয়া যায়। বাথরুম করার কোন ঝামেলা নেই। সারা জীবন কবিতা লিখে কাটিয়েছেন। এখন আর কবিতা ছাড়া ভালো লাগে না। স্বর্গের অপ্সরারা প্রতিদিন বিকেলে উনার কাছে কবিতা শুনতে আসে। রবি ঠাকুর মিসেস গোমেজের কাছে কবিতা লেখার কিছু কাগজ চেয়েছেন। কারণ উনাদের ঐখানে আবার এসব জিনিস পাওয়া যায় না। রবি ঠাকুর উনাকে একদিন এসে কবিতাও শুনিয়ে গেছেন-

মেযেটি যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন সে ডেকেও ঈশ্বরকে কাছে পায় নি।
দারিদ্রতার কাছে পরাজিত হয়ে মা তার নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে ।
আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে, ঈশ্বর আপনি তখন কোথায় ছিলেন?
ঈম্বর মৃদু হেসে উত্তর করেন- এ কুৎসিত সমাজ ব্যবস্থা তোমাদেরই তৈরী আমার নয়।

প্রতিদিন মহিলার কাছে শুনে শুনে অপালা খুব আগ্রহী হয়ে উঠে। অনেক দিন মহিলার পেছনে ঘুরঘুর করার পর মহিলা শেষ পর্যন্ত রাজী হন। মিসেস গোমেজ তাকে ঠিক রাত বারটা সময় আসতে বলে দেন। আত্নারা আবার খুব পাংচুয়াল হয়ে থাকে। দিনে আত্নাদের বিরক্ত করা যাবে না। এ সময় তাদের বিশ্রামের সময়।

অপালা রাত বারটা বাজার আগেই এসে পড়ে। মিসেস গোমেজ তাকে নিয়ে ছোট্র একটি টেবিলে মুখোমুখি বসেন। ঘরের সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। টেবিলে শুধু একটি মোমবাতি জ্বলছে। ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ। স্বল্প আলো আঁধারের মাঝে গা ছমছমে এক পরিবেশ। মিসেস গোমেজের সামনে একটি বোর্ড। এর নাম উইজা বোর্ড। বোর্ডে ইংরেজী সব অক্ষর বসানো। মিসেস গোমেজের অপালাকে বুঝাতে থাকেন, এই যে ছোট্র ঘুটিটি দেখতে পারছ আমি এটার উপর একটি আঙ্গুল রেখে আত্নাকে ডাকতে শুরু করব। যদি আত্না আসে তবে ঘুটি বোর্ডের ইয়েস লেখা ঘরে চলে যাবে। আর না আসলে নো লেখা ঘরে। আমি প্রশ্ন করলে তিনি তার উত্তর দেবেন। মুখে তা দেবেন না। উইজা বোর্ডের মাধ্যমে দেবেন। ধর আমি যদি উনার নাম জানতে চাই আর উনার নাম যদি হয় জন তবে ঘুটি প্রথমে ইংরেজী জে অক্ষরে যাবে, তারপর ও, এইচ এবং শেষে এন লেখা অক্ষরের উপর। এভাবেই তুমি জানতে পারবে যে উনার নাম জন। অপালা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকে।

আচ্ছা আন্টি, ভূত যদি ইংরেজী না বুঝে তবে কি বাংলায় উত্তর দেবে।
দেখ আমি রসিকতা মোটেই পছন্দ করি না। আর তুমি ভূত বলছ কেন। এরা হচ্ছে বিদেহী আত্না। কোন দূর্ঘটনায় পড়ে যাদের অকালে মৃত্যু হয় তাদের আত্না ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোকে যেতে পারে না। তাদের আত্না এই জগতেই ঘুরপাক খেতে থাকে।

মিসেস গোমেজ আজকে উনার স্বামীর আত্না ডেকে আনবেন। এক বছর আগে উনার স্বামী এক রোড এ্যাকসিডেন্টে মারা যান। মিসেস গোমেজ নিচু গলায় বিড়বিড় করে বলতে থাকেন- হে দুষ্ট আত্না সকল দূর হয়ে যান।
আত্নাদের আপনি করে না বললে এরা নাকি খুব মাইন্ড করে। মৃত্যুর পর জগতে আছে দুই ধরনের আত্না। ভাল আর মন্দ। এদের মধ্যে প্রায়ই ঝঁগড়াঝাঁটি মারামারি চলতে থাকে। কিছুদিন আগেই এক আত্না এসে নাকি মিসেস গোমেজের কাছে নালিশ করে গেছে উনার স্বামী মিস্টার গোমেজ তার প্রেমিকাকে নিয়ে ভেগে গেছেন। যদি ভুল করে দুষ্ট আত্না নামিয়ে ফেলা হয় তবে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তখন আর তাকে সহজে বিদেয় করা যায় না।

মিসেস গোমেজ চোখ বন্ধ করে নাঁকি সুরে বলতে আরম্ভ করেন-হে আমার স্বামী, আপনি দয়া করে দেখা দিন.........
অপালার ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। হঠাৎ মিসেস গোমেজ চিৎকার করে উঠেন-অপালা তিনি এসেছেন। তুমি উনার নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শুনতে পাচ্ছ না।
অপালা ফিসফিস করে বলে-জ্বী, শুনতে পাচ্ছি। তবে নিঃশ্বাসের নয়, বিড়ালের মিঁউমিঁউ শব্দ। আমার মনে হয় আপনার স্বামী বিড়ালের রূপ ধরে এসে হাজির হয়েছেন।

মিসেস গোমেজ গম্ভীর স্বরে বলে উঠেন-এটা আমার পোষা বেড়ালের ডাক। টেবিলের নিচে বসে আছে। আর আত্নাদের নিয়ে ঠাট্রা করবে না। এদের সেন্স অব হিউমার খুব কম। একবার আত্না এসে তোমার উপর ভর করলে তখন টের পাবে। প্ল্যানচেট কোন ছেলে খেলা বিষয় নয়। অনেক সাধনার পর আমি এ বিদ্যা লাভ করেছি। এখানে ধৈর্য্য ধরে ধ্যান করতে হয়।

মিসেস গোমেজ পুনরায় চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় প্রলাপ শুরু করেন-আসেন আমার স্বামী, আপনি কোথায়। আমরা আপনার অপেক্ষায় বসে আছি।

অপালা নিজেও জানে না কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙতে দেখে বাইরে সকাল হয়ে গেছে। মোমদানিতে মোম পুড়ে শেষ। মিসেস গোমেজ সামনের সোফায় মুখ গোমড়া করে বসে আছেন। অপালা চলে আসতে আসতে হাসি মুখে বলে- আন্টি, আঙ্কেল কি চলে গেছেন? ইস্। একটুর জন্য উনার সাথে দেখা হল না। পরের বার আসলে আমার তরফ থেকে সরি বলে দেবেন, প্লীজ।

অপালার কথা শেষ হবার আগেই মিসেস গোমেজ দুম করে তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন।

No comments: