Thursday, April 23, 2009

সেলিব্রেটিদের শৈশব স্মৃতি

১. বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমাযূন আহমেদ তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন-
আমি অতি সুবোধ বালকের মত ক্লাসে গিয়ে বসলাম। মেঝেতে পাটি পাতা। সেই পাটির উপর বসে পড়াশোনা। ছেলেমেয়ে সবাই পড়ে। মেয়েরা বসে প্রথমদিকে, তাদের পেছনে ছেলেরা। আমি খানিক্ষণ বিচার-বিবেচনা করে সবচেয়ে রূপবতী বালিকার পাশে ঠেলেঠুলে জায়গা করে বসে পড়লাম। রূপবতী বালিকা অত্যন্ত হৃদয়হীন ভঙ্গিতে তুই তুই করে সিলেটি ভাষায় বলল, এই তোর প্যান্টের ভেতরের সবকিছু দেখা যায়।

ক্লাসের সবকটা ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে হেসে উঠল। মেয়েদের আক্রমণ অনুচিত বিবেচনা করে সবচেয়ে উচ্চস্বরে যে ছেলেটি হেসেছে, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হাতের কুনুইয়ের প্রবল আঘাতে রক্তারক্তি ঘটে গেল। দেখা গেল ছেলেটির সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গ গেছে। হেডমাস্টার সাহেব আমাকে কান ধরে সারাক্ষণ দাড়িয়েঁ থাকার নির্দেশ দিলেন। ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দিলেন-এ মহাগুন্ডা। তোমরা সাবধানে থাকবে। খুব সাবধান। পুলিশের ছেলে গুন্ডা হওয়াই স্বাভাবিক।
ক্লাস ওয়ান বারটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। এই দুই ঘন্টা আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

ক্লাস টুতে উঠে আমি আরেকটি অপকর্ম করি। যে রুপবতী বালিকা আমার হৃদয় হরণ করেছিল, তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলি। গম্ভীর গলায় জানতে চাই বড় হয়ে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী আছে কিনা। প্রকৃতির কোন এক অদ্ভূত নিয়মে রুপবতীরা শুধু যে হৃদয়হীন হয় তাই না, খানিকটা হিংস্র স্বভাবের হয়। সে আমার প্রস্তাবে খুশি হবার বদলে বাঘিনীর মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খামচি দিয়ে হাতের দু-তিন জায়গার চামড়া তুলে ফেলে। স্যারের কাছে নালিশ করে। শাস্তি হিসেবে দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে আমাকে নীল ডাউন হয়ে বসে থাকতে হয়।

প্রেমিক পুরুষদের প্রেমের কারণে কঠিন শাস্তি ভোগকার নতুন কোন ব্যাপার নয়, তবে আমার মত এত কম বয়সে প্রেমের এমন শাস্তির নজির বোধহয় খুব বেশি নেই।

২. বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর স্কুল জীবনের এক শিক্ষক সম্পর্কে স্মুতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন-
স্যারের কানমলা চিরকালই ছিল অত্যন্ত শিল্পসম্মত ও উচ্চস্তরের। কোন ছাত্র কোন ভুল উত্তর দিয়েছে কি অমনি ডান হাতের তর্জনি দিয়ে ফিল্মী রংবাজদের কায়দায় দুবার তাকে নিজের দিকে আহবান করতেন। তারপরেই ডান হাতে খপ করে তার কান চেপে ধরতেন। হ্যাঁ, কাচের গুড়োঁয় মাঞ্জা দেওয়া সেই বিখ্যাত হাতের চেপে ধরা। কানের গোড়াসুদ্ধ মাথাটাকে হ্যাঁচকা টানে তাঁর দিকে টেনে নিতেন। আর তারপরই দ্বিতীয় পর্যায়। এক ধাক্কায় কান-মাথাসুদ্ধ ছাত্রটাকে সোজা পাঠিয়ে দিতেন বেঞ্চের সিটে। সেদিনও ঘটল একই ব্যাপার। উত্তর ভুল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্যারের ব্যতিক্রমহীন আহবান শোনা গেল। আমার কানের ওপর হাত পড়তেই খুশিতে বড় বড় হয়ে উঠল স্যারের দুই চোখ, যেন অভাবিত কোন খাবার দেখেছেন সামনে। গভীর পরিতৃপ্তির সঙ্গে গড়গড় শব্দও হচ্ছে মনে হয় গলা থেকে-বাহ্ তোর কান দুটো বেশ বড় রে।
আলতো ভাবে কানদুটো নেড়েচেড়েও দেখলেন কিছুক্ষণ-বাহ্, বেশ নরমও তোর কান দুটো।
আর তারপরে সেই অতিপরিচিত দৃশ্যকাব্য। কান মাথাসুদ্ধ নিজের সিটে আমার প্রত্যাবর্তন। গোড়াসুদ্ধ সারাটা কান তখন যন্ত্রণায় চিঁ চিঁ করছে।
সেদিন থেকে স্যার আমার কানের একনিষ্ট ভক্ত হয়ে গেলেন। জোড় বেতের বিদ্যুত ঝলক আমার জন্য প্রায় নিষিদ্ধই করে দিলেন। পরিবর্তে আমার বড় বড় আর নরম কান দুটোকে মধ্যাহ্নফলার হিসেবে ব্যবহার শুরু করলেন।

৩. প্রখ্যাত কবি-লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতির কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেছেন-
এ বছরই প্রথম দেখি গ্রামোফোন যন্ত্রটি। বাংলায় যার নাম কলের গান। অমন গ্রামদেশে ওই বস্তুটি খুবই অভিনব। আমাদের মত বাচ্চাদের অবস্থা হিজ মাস্টার্স ভয়েস-এর কুকুরটিরই মতন, আমরা হাঁটু গেড়ে অবাক বিস্ময়ে শুনতে শুনতে ভাবতাম, ওই বাক্সটির মধ্যে গুটিশুটি মেরে একজন লোক গানগুলো গাইছে। এটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নয়, এর মধ্যে যথেষ্ট সংশয়ও ছিল। একই লোক বিভিন্ন গান, বিভিন্ন রকম গলায়, এমনকি মেয়েদের মতন গলাতেও গায় কী করে? কমিক গুলিতে চার-পাঁচজন লোকের গলা এক সঙ্গে শোনাযায়। এই বাক্সের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ থাকা তো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়!


সংগৃহীত: আসমার ওসমান সম্পাদিত বিখ্যাতদের সত্যি জোকস্

No comments: