ছেলে বেলায় আমাদের কাছে তাকে এক রহস্যময় মানুষ বলে মনে হত। মাথায় লম্বা চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখ দুটি রাতে না ঘুমানো লোকের মত সব সময় লাল। এমনিতে কথা বার্তা খুব কম বলতেন। প্রতিদিন বিকালে পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন শতাব্দী প্রাচীন বট গাছের নিচে বসতেন। হাতে থাকত মাটির ছোট্র একটি নলের মত জিনিস যার ভেতরে আবার আগুন দেখা যায়। এতে মাঝে মাঝে টান দিতেন আর নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তেন। এই সময় তার মুখে কথার খই ফুটত।
ছেলে বেলায় বুঝতাম না এটা গাজার নেশার প্রলাপ। তখন শুরু হত সৃষ্টি ছাড়া সব গল্পের আসর। আমরা চোখ কপালে তুলে তা শুনতাম-
বুঝলা আমি কিন্তু তোমাদের এই মানুষের দুনিয়ার কেউ না। আমি হইলাম গিয়া জ্বীনদের দুনিয়ার লোক। তোমাদের মত জ্বীনদেরও দুনিয়া আছে। আমরা হইলাম আগুনের তৈরী। এই দেহ আমার হাতের এইডা থেইক্যা আগুন বাইর হয়। আমরা হা করে দেখতাম তার চোখ মুখ দিয়ে গলগল করে ধোয়া বের হচ্ছে।
তাকে আমরা জ্বীন মানুষ বলে ডাকতাম। তিনি থাকতেন পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন একচালা একটি কুড়েঘরে। কর্তৃপক্ষ তাকে এমনি এমনি দয়া করে থাকতে দেয়নি। এর বিনিময়ে তাকে কবরস্থান দেখা শুনা করতে হত। এক কথায় বলতে গেলে কবরস্থানের কেয়ারটেকার।
সাথে তার বউ আর এক ছেলে থাকত। সেই দুজনকে আবার সাধারণ মানুষ বলেই আমাদের মনে হত। আমরা বুঝতাম না তারা এই জ্বীন মানবের সাথে কিভাবে থাকে।
হেইদিন হইল কি শুন- রাত তখন তৃতীয় প্রহর হইব। বাইরে চাদনী পসর রাইত। আমি বাইর হইলাম কবরস্থানের দিকে। তখন দেখি কি....
এই টুকু বলে তিনি ঝিম মেরে যান। আমরা অস্থির হয়ে পড়ি তারপর কি হল জানার জন্যে। কিন্তু এখন যদি উনাকে তাগাদা দেয়া হয় তবে তিনি আজ আর মুখ খুলবেন না। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । তিনি প্রায়ই গল্পের মাঝে এ ধরনের কান্ড করে আমাদের দেখে মজা পান।
ঐ দিন এক ছোট বাচ্চার নতুন এক কবর হইছে। আমি দেখি কে যেন উপুর হইয়া সেই কবর থেইকা কি বাইর করতাছে। আমার ত বুক ধক কইরা উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম কে কে। কোন উত্তর নাই। তখন আমি সাহস কইরা আগাইয়া গেলাম। যা দেখলাম তোমরা পুলাপান মানুষ তোমাদের কাছে না কইলেই ভাল হইব। তারপর তিনি আবার চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে যান। উনার এই পদ্ধতির সাথে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। জানি এর একটু পরই তিনি আবার মুখ খুলবেন।
দেহি এক লোক কবর থাইকা বাচ্চার লাশ টাইননা বাইর করতাছে। রক্ত ছাড়া ধবধইববা ফরসা মুখ। চোখ দিয়া যেন আগুন বাইর হইতাছে। আমারে দেইখা এক লাফ দিয়া উইঠা দাড়ায়। আমিত চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে দুয়া দুরুদ পড়তে শুরু কইরা দিছি। একটু পরে চোখ খুইলা দেহি সাদা এক ঘোড়ার পিঠে চইড়া ঐ লোক হাওয়া। সকাল বেলা আবার লাশ কবরে ঢুকাইয়া কবর ঠিক ঠাক কইরা দিছি।
কে এই লোক-আমরা সমস্বরে জানতে চাই। লাশ নিয়ে সে কি করবে।
সে এই জগতের কেউ না। বাচ্চারাতো ফেরেশতা। সে বাচ্চাদের লাশ তার জগতে নিয়া যাইব তারপরে তারমাঝে জান দিব। যদি ভাল মা বাবা হয় তবে একদিন হেই বাচ্চা তার বাবা মার কাছে ফিরা আসব।
এখন পর্যন্ত কি কোন বাচ্চা ঐ জগত থেকে ফিরত এসেছে? আমরা জানতে চাই।
না। এখনকার মানুষ পাপী হইয়া গেছে। তবে সাচ্চা মানুষ হইলে তার বাচ্চা ঠিকই ফিরা আসব।
তখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নতুন কবর থেকে লাশ গায়েব হয়ে যায়। এ তাহলে সেই সাদা ঘোড়সওয়ারের কান্ড। তখন বুঝতাম না নতুন কবরের মাটি নরম থাকার কারণে অনেক সময় শিয়াল লাশ বের করে ফেলে।
এর পর থেকে সাদা ঘোড়সওয়ার আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতংকে পরিণত হয়। সব সময় মনে হত এই বুঝি আসছে।
একদিন এই জ্বীন মানবের ছেলে হঠাৎ করে মারা গেল। আমরা তাকে পেলাম কবর খুড়তে থাকা অবস্থায়। এই কবরেই তার ছেলেকে শোয়ানো হবে। তাহলে আজ রাতে আবার সেই ঘোড়সওয়ার আসবে জ্বীন মানবের বাচ্চার লাশ নিতে।
পরদিন বিকালে জ্বীন মানবকে দেখলাম হতে আগুন ছাড়া। এই প্রথম আমরা একটি অদ্ভূত জিনিস দেখলাম। জ্বীন মানবের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরে জ্বীনেরা কি আবার কাঁদে নাকি। তাদের আবার দুঃখ কষ্ট আছে নাকি।
এরমধ্যে আমরা উশখুশ করতে শুরু করেছি গল্প শুনার জন্য। কাল রাতে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারী এসে ছিল কিনা জানতে। কিন্তু আজ আর জ্বীন মানব কোন গল্প বলল না। তারপর থেকে আমরা প্রতিদিন তাকে ঐ জায়গায় একই রকম বসা অবস্থায় দেখতে পেতাম। তার চোখ দুটি এক দৃষ্টিতে তার ছেলের কবরের দিকে নিবদ্ধ থাকত। কি যেন খুঁজে ফিরত তার দুই চোখ।
সবাই বলত ছেলের মৃত্যুতে জ্বীন মানবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানতাম আসল কারণটা। জ্বীন মানব আসলে সেই সাদা ঘোড় সওয়ারকে খোঁজে ফিরত। যে এসে তার ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই ঘোড় সওয়ারী আর আসে না।
হচ্ছে।
তাকে আমরা জ্বীন মানুষ বলে ডাকতাম। তিনি থাকতেন পুরনো কবরস্থান সংলগ্ন একচালা একটি কুড়েঘরে। কর্তৃপক্ষ তাকে এমনি এমনি দয়া করে থাকতে দেয়নি। এর বিনিময়ে তাকে কবরস্থান দেখা শুনা করতে হত। এক কথায় বলতে গেলে কবরস্থানের কেয়ারটেকার।
সাথে তার বউ আর এক ছেলে থাকত। সেই দুজনকে আবার সাধারণ মানুষ বলেই আমাদের মনে হত। আমরা বুঝতাম না তারা এই জ্বীন মানবের সাথে কিভাবে থাকে।
হেইদিন হইল কি শুন- রাত তখন তৃতীয় প্রহর হইব। বাইরে চাদনী পসর রাইত। আমি বাইর হইলাম কবরস্থানের দিকে। তখন দেখি কি....
এই টুকু বলে তিনি ঝিম মেরে যান। আমরা অস্থির হয়ে পড়ি তারপর কি হল জানার জন্যে। কিন্তু এখন যদি উনাকে তাগাদা দেয়া হয় তবে তিনি আজ আর মুখ খুলবেন না। তাই আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় । তিনি প্রায়ই গল্পের মাঝে এ ধরনের কান্ড করে আমাদের দেখে মজা পান।
ঐ দিন এক ছোট বাচ্চার নতুন এক কবর হইছে। আমি দেখি কে যেন উপুর হইয়া সেই কবর থেইকা কি বাইর করতাছে। আমার ত বুক ধক কইরা উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম কে কে। কোন উত্তর নাই। তখন আমি সাহস কইরা আগাইয়া গেলাম। যা দেখলাম তোমরা পুলাপান মানুষ তোমাদের কাছে না কইলেই ভাল হইব। তারপর তিনি আবার চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে যান। উনার এই পদ্ধতির সাথে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। জানি এর একটু পরই তিনি আবার মুখ খুলবেন।
দেহি এক লোক কবর থাইকা বাচ্চার লাশ টাইননা বাইর করতাছে। রক্ত ছাড়া ধবধইববা ফরসা মুখ। চোখ দিয়া যেন আগুন বাইর হইতাছে। আমারে দেইখা এক লাফ দিয়া উইঠা দাড়ায়। আমিত চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে দুয়া দুরুদ পড়তে শুরু কইরা দিছি। একটু পরে চোখ খুইলা দেহি সাদা এক ঘোড়ার পিঠে চইড়া ঐ লোক হাওয়া। সকাল বেলা আবার লাশ কবরে ঢুকাইয়া কবর ঠিক ঠাক কইরা দিছি।
কে এই লোক-আমরা সমস্বরে জানতে চাই। লাশ নিয়ে সে কি করবে।
সে এই জগতের কেউ না। বাচ্চারাতো ফেরেশতা। সে বাচ্চাদের লাশ তার জগতে নিয়া যাইব তারপরে তারমাঝে জান দিব। যদি ভাল মা বাবা হয় তবে একদিন হেই বাচ্চা তার বাবা মার কাছে ফিরা আসব।
এখন পর্যন্ত কি কোন বাচ্চা ঐ জগত থেকে ফিরত এসেছে? আমরা জানতে চাই।
না। এখনকার মানুষ পাপী হইয়া গেছে। তবে সাচ্চা মানুষ হইলে তার বাচ্চা ঠিকই ফিরা আসব।
তখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের নতুন কবর থেকে লাশ গায়েব হয়ে যায়। এ তাহলে সেই সাদা ঘোড়সওয়ারের কান্ড। তখন বুঝতাম না নতুন কবরের মাটি নরম থাকার কারণে অনেক সময় শিয়াল লাশ বের করে ফেলে।
এর পর থেকে সাদা ঘোড়সওয়ার আমাদের কাছে মূর্তিমান এক আতংকে পরিণত হয়। সব সময় মনে হত এই বুঝি আসছে।
একদিন এই জ্বীন মানবের ছেলে হঠাৎ করে মারা গেল। আমরা তাকে পেলাম কবর খুড়তে থাকা অবস্থায়। এই কবরেই তার ছেলেকে শোয়ানো হবে। তাহলে আজ রাতে আবার সেই ঘোড়সওয়ার আসবে জ্বীন মানবের বাচ্চার লাশ নিতে।
পরদিন বিকালে জ্বীন মানবকে দেখলাম হতে আগুন ছাড়া। এই প্রথম আমরা একটি অদ্ভূত জিনিস দেখলাম। জ্বীন মানবের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আরে জ্বীনেরা কি আবার কাঁদে নাকি। তাদের আবার দুঃখ কষ্ট আছে নাকি।
এরমধ্যে আমরা উশখুশ করতে শুরু করেছি গল্প শুনার জন্য। কাল রাতে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারী এসে ছিল কিনা জানতে। কিন্তু আজ আর জ্বীন মানব কোন গল্প বলল না। তারপর থেকে আমরা প্রতিদিন তাকে ঐ জায়গায় একই রকম বসা অবস্থায় দেখতে পেতাম। তার চোখ দুটি এক দৃষ্টিতে তার ছেলের কবরের দিকে নিবদ্ধ থাকত। কি যেন খুঁজে ফিরত তার দুই চোখ।
সবাই বলত ছেলের মৃত্যুতে জ্বীন মানবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানতাম আসল কারণটা। জ্বীন মানব আসলে সেই সাদা ঘোড় সওয়ারকে খোঁজে ফিরত। যে এসে তার ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই ঘোড় সওয়ারী আর আসে না।
Monday, April 13, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment