Monday, April 13, 2009

টিপস: কিভাবে অল্প সময়ের মধ্য একজন জনপ্রিয় লেখক হবেন।


স্যার, আমায় চিনতে পেরেছেন?

না।

ফাস্ট ইয়ার, সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট। আমি আপনার সবগুলি ক্লাস নিয়মিত এটেন্ড করতাম।

হ্যা, এই বার চিনতে পেরেছি। আমার সবগুলি পরীক্ষায় তুমি নিয়মিত ফেল মারতে। তা এখন কি করছ?

এই স্যার, লেখালেখি করে পেট চালাই আরকি।

আচ্ছা। তাহলে কেউ যদি তোমার পেটের দায়িত্ব নিয়ে নেয় তবে তুমি আর লেখালেখি করবে না।

ঠিক তা নয় স্যার। আমার স্বপ্ন আপনার মত একজন জনপ্রিয় সাই-ফাই লেখক হওয়া।

সাই বাবার নাম শুনে ছিলাম। সাই-ফাই আবার কি জিনিস, ঠিক বুঝলাম না।

ও আল্লা! এটা আধুনিক সায়েন্স ফিকশন। সংক্ষেপে সাই-ফাই। আমার ধারণা সায়েন্সের ছাত্র হওয়াতে আমি এই লাইনে ভাল করব। তাই আপনার কাছে এসেছি একটি ভাল সায়েন্স ফিকশন নামাতে হলে কি কি লাগে তার টিপস জানতে।

তোমার ধারণা বাজারের ফর্দ লেখার মত যে কেউ চাইলেই লেখালেখি শুরু করে দিতে পারে।

স্যার আমার এই স্ক্রিপ্টটা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন আমি কত জাদরেল লেখক।

ঠিক আছে তুমি রেখে যাও আমি সময় করে দেখব।

স্যার আমি আপনাকে একটু পড়ে শুনাই।

এতো ভালই মুসিবতে পড়া গেল।

-এক দল অভিযাত্রী উত্তর মেরু অভিযানে বের হয়েছে। জুল ভার্নের-ক্যাপটেন হ্যাটেরাস’ নামে এ রকম একটি কাহিনী আছে। আমারটা আরও ভয়াবহ। টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ। যেখানে শূন্য ডিগ্রীতে পানি বরফ হয়ে যায়। তাহলে বুঝেন অবস্থা। কঠিন অবস্থা। সবার অবস্থা কেরাসিন। সব চেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে পেশাব করা নিয়ে। কেউ পেশাব করতে পারছে না। পেশাব জমে বরফ হয়ে গেছে। তারপর……..

থামো, আমরা ধারণা জুলভার্ন বেঁচে থাকলে তোমার এই কাহিনী শুনে নির্ঘাত সুইসাইড করার চেষ্টা করতেন। পদার্থ বিদ্যার সূত্র অনুযায়ী -২৭৩ ডিগ্রীর নীচে টেম্পেরেচার পৌছতে পারে না। সেখানে টেম্পেরেচার-২৯৯ ডিগ্রী সেঃ তুমি কোথায় পেলে।

স্যার, এবার তাহলে আরেকটা শুনাই। এবার একদল অভিযাত্রী মহাকাশ পর্যবেক্ষণে বের হয়েছে। নভোযান পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে পৌছে গেল মহাকাশে। আমি জুলভার্নের- এ জার্নি টু দ্যা মুন’ গল্পটিকে কাট ছাট করে চালিয়ে দেব। কেউ ধরতে পারবে না। অভিযাত্রীদের মধ্যে রয়েছে এক পাড় মাতাল। এক মুহূর্ত এ্যালকোহল না হলে তার চলে না। পকেট থেকে একটু পর পর বোতল বের করে চুমুক দিচ্ছে। তারপর তারা নামল চন্দ্র পৃষ্টে। চাঁদে হাঁটা খুব কষ্টকর। একেক জনের পা যেন দশ মণ ভারী হয়ে রয়েছে। উঠতেই চায় না।

স্টপ। লেখক চিৎকার দিয়ে উঠেন। আরে আগেতো সায়েন্স, তারপর না ফিকশন। মহাশূন্যে গিয়ে কেউ চুমুক দিয়ে তরল পান করছে এটাতো আমি বাপের জন্মে শুনিনি। কোন নভোযান যখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে অতিক্রম করে যাবে তখন মহাশূন্যে থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করলেও বোতল থেকে উপুড় করে পানি ঢালা যাবে না। আর চন্দ্র পৃষ্টেও একই জিনিস ঘটবে। অভিকর্ষ বলের কারণে মানুষ তার ওজন হারাবে। অভিযাত্রীরা এমনিতেই নিজেদের ওজনশূন্য অনুভব করবেন। সেই জায়গায় পা দশ মণ ভারী হয়ে আছে-যত্তসব।

স্যার তাহলে আরেকটা শুনাই।

আমাকে এবার মুক্তি দাও। আর তুমি অন্য লাইনে চেষ্টা কর।

স্যার প্লীজ, এই লাস্ট। এবারের কাহিনী অতি আধুনিক । মেট্রিক্স ছবিতো আপনি নিশ্য়ই দেখে থাকবেন। অনেকটা তার ছায়া অবলম্বনে লেখা। আমার গল্পের নায়ক পুলিশ অফিসার ক্রিমিনল ধরতে ছুটে বেরাচ্ছে। পরনে তার বিশেষ পোশাক। নীল প্যান্ট, নীচে লাল আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে।

এক মিনিট। প্যান্টের নীচে তুমি কিভাবে আন্ডারওয়্যার দেখতে পেলে।

এটা আধুনিক স্বচ্ছ পলিমারের প্যান্ট। আর আগের সুপারম্যান প্যান্টের উপরে আন্ডারওয়্যার পরত। কিন্তু আমার আধুনিক সুপার হিরো এত আবুল নয়। পাঠক যখন ভাবতে শুরু করে দিয়েছে পুলিশ ক্রিমিনাল ধাওয়া করছে এ আর এমন নতুন কি। তখনই আমি আসল চমক দেখাব। কারণ আমার হিরো কোন মানুষ নয়। মানুষের মত দেখতে একটি নবম স্কেলের রোবট।

থামো। তুমি এই মুহূর্তে তোমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে এখান থেকে বিদায় হবে। তুমি আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাকেও জুলভার্নের মত অকালে বিদায় নিতে হবে। নীল প্যান্টের নীচে, লাল আন্ডারওয়্যার। রঙ্গীন কাপড়ের নীচে অন্য কোন রঙ্গীন কাপড় কাল দেখাবে। আর তুমি দেখছ লাল।
তুমি এই কঠিন লাইনে চেষ্টা বাদ দিয়ে প্রথমে হালকা মানের লেখা দিয়ে শুরু কর। যেমন- বাচ্চাদের ছড়া। প্রেমের কবিতা ইত্যাদি।

ঠিক আছে স্যার, আমি পরবর্তীতে আরও ভাল স্ক্রীপ্ট নিয়ে আপনার কাছে আসব। আমাকে একজন ভাল সাই-ফাই লেখক হতেই হবে।

এক বছর পর। এই লেখক এখনও পুরো দমে তার লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি বাংলা সিনেমার কাহিনী লেখেন। এখানে যুক্তি-অযৌক্তিক এর কোন বালাই নেই।

নায়িকা রোড এ্যাকসিডেন্টে আহত। হাসপাতালে নেবার সময় নেই। রক্ত দরকার। নায়ক পকেট থেকে নেশা করার সিরিঞ্জ বের করে নিজের শরীরের রক্ত টেনে বের করে নায়িকার শরীরে ঢুকাতে শুরু করল। ব্লাড মেচিং এর কোন দরকার নেই। ভালোবাসার মাঝে রক্তের গ্রুপ কোন সমস্যা নয়। একটু পর নায়িকা চোখ মেলল। চৈত্রের ভর দুপুরে শুরু হল বৃষ্টি। আর তারসাথে বৃষ্টি ভেজা হেভী জোসীলা নাচ-গান।

নায়ক গেয়ে উঠল- নেশা আছে হেরোইনে, নেশা আছে প্যাথেডিনে
তারচাইতেও অধিক নেশা কইন্যা তোমার যৌবন সুধাতে…এ…এ…এ।

নায়িকা গেয়ে উঠল- আমার আঁচল উড়াইয়া নিল মরার বাতাসে
আমার যৌবন ভাসিয়া গেল বৃষ্টির জলে….এ….এ….এ।

এখানে একটি তিন ঘন্টা ছবি চলার মত কাহিনী হলেই চলে। আর কাহিনীরও তেমন কিছু নেই। কয়েকটি হিন্দী-ইংরেজী ছবির কাহিনী কাট-পেস্ট করে দিলেই চলে। বর্তমানে তিনি এখন জনপ্রিয় একজন কাহিনী লেখক।

(সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর মিল খুঁজতে চাইলে যে কেউ নিজ দায়িত্বে তা করতে পারেন।)


No comments: