Tuesday, February 23, 2010

দেশ কাঁপানো এক দিন।

গ্রামীণ ফোন এর দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট। মিডিয়া পার্টনার প্রথম আলো, চ্যানেল আই। পুরো দুনিয়াকে এরা কাঁপাতে পেরেছেন কিনা জানি না। তবে মিডিয়াকে ভাল ভাবেই কাঁপাতে পেরেছেন। এদের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নমুনা-


মোবাইল কোম্পানীগুলি টয়লেটে কোন টিস্যু পেপার ব্যবহার করে প্রতিকাওয়ালারা এটাও ফলাও করে প্রকাশ করে। কিন্তু এই খবরটি বেমালুম হজম করে ফেলেছে।


বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীগুলি থেকে শুরু করে দেশীয় আলকাতরা কোম্পানী কেউই পিছিয়ে নেই। পত্রিকা টিভিতে অনেক টাকা খরচ করে এদের একেক জনের ঢাউস সাইজের বিজ্ঞাপন-ভাষা আন্দোলনের সকল সৈনিক ও অমর শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


শহীদ মিনারে ভোর বেলায় খালি পায়ে কার আগে কোন দল ফুল দেবে তা নিয়ে রীতিমতো মারামারি লেগে যায়। একজন বুদ্ধিজীবি টিভিটে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন-আজকাল একুশের চেতনা সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়েছে। আমার কাজের মেয়েটি বলছে-স্যার কাইল আমারে ছুটি দেন। শহীদ মিনারে ফুল দিতে যামু।


বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গরা (সবাই নন) সেখানে তাদের বক্তব্য পেশ করেন। টিভিতে শহীদ দিবসের নাটক, অনুষ্ঠান প্রচারের ধুম পড়ে যায়।


চা-পান-সিগারেটের দোকানগুলিতে সারাদিন বাজতে থাকে-আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি।


এরকম এক আবেগপ্রবণ জাতি আমরা। একজন বাঙালী হিসেবে আমাদের আর এর বেশী কিই বা চাইবার থাকতে পারে।


সারা বছর আমরা ঘুমিয়ে থাকি শুধু বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে আমরা হঠাৎ করে ঘুম থেকে জেগে উঠি। ঐ এক দিনেই দুনিয়া না হোক দেশকে অন্তত আমরা কাঁপিয়ে ফেলি।


১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ আবুল বরকতের ছোট ভাই এর ছেলে আলাউদ্দিন বরকত বলেন- চাচা শহীদ হবার পর আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশের অনুষ্ঠানে কিংবা বই মেলায় আমাদের কেউ কোন দিন ডাকেনি। ডাকা হয় না জেলা পর্যায়ের কোন অনুষ্ঠানেও। যাঁদের আত্নত্যাগ নিয়ে এত আয়োজন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শহীদ দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না। এ বছরও প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন বরকতের পরিবারের সদস্যরা। যোগাযোগও করেছিলেন বাংলা একাডেমীর কর্তৃপক্ষের সাথে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে তাদের সেখানে যাবার অনুমতি দেয়া হয়নি। (তথ্য সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ)


আমরা বাঙালীরা সব কিছুতেই ব্যবসা খুজে ফিরি। একজন দেহপসারিণী তার দেহ বিক্রি করে। কিন্তু আমরা বিক্রি করি জন্মভূমি দেশকে, মায়ের ভাষা কে।


তারপরও দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি বুকের কোথায় যেন এক ধরণের বেদনার অনুভব হয়। যারা নিঃস্বার্থ ভাবে প্রাণ দিয়ে এ দেশকে দেশের ভাষাকে রক্ষা করেছেন তারাও এ দেশেরই সন্তান।





No comments: