ঈদ আসন্ন। টিভি চ্যানেলগুলি আমাদেরকে এরিমধ্যে বিরক্তির চুড়ান্ত সীমায় পৌছে দিয়েছে। তারকারা ইনিয়ে বিনিয়ে প্রতি মুহুর্তে বলে যাচ্ছেন ঈদে টিভিতে কার কি প্রোগ্রাম দেখাবে। একদল কি সব আজগুবি ঈদ স্পেশাল রেসিপি নিয়ে এসে হাজির হচ্ছেন। খেয়ে নিজেই প্রশংসা করছেন খুব ভাল রান্না হয়েছে। আরেক দল আছেন তারা কয়েকজন মিলে নিজেদের মধ্যে অলোচনা করতে বসে যান। তাদের ছেলে বেলার ঈদ কেমন ছিল এখন কেমন, সারাদিন কিভাবে কাটিয়েছেন, ঈদে কি পোষাক নিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। একেক জন নিজের ছেলে বেলার ঈদের বর্ণনা দিচ্ছেন আর কোন মজার ঘটনা মনে পড়ে যাওয়াতে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছেন। তারপর আছে আরেক দল তারা কে কোন নাটকে, কে কোন সিনেমায় অভিনয় করেছেন তা আমাদেরকে ঘটা করে জানাচ্ছেন। তারপর সেই সিনেমা বা নাটকের কাহিনীর ফিরিস্তি শুরু হয়ে যায়। আপনি শুনতে না চাইলেও আপনাকে শুনতে হবে। আর আছে বিঞ্জাপনের যন্ত্রনা। সমস্ত কোম্পানীগুলি আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করে দেবে। এ থেকে আপনার রেহাই নেই। নীচে তেমনি একজন ফিল্ম স্টারের টিভি সাক্ষাতকার প্রচার করা হল-
ঈদে এবার ঢালিউড থেকে আমার একটা মাত্র ছবিই মুক্তি পাচ্ছে। নামটা খুবই সুন্দর ‘কদম আলী কেন ঝাড়ুদার’। খুবই বেতিক্রমধর্মী একটা ছবি। এখানে আমার চরিত্রটা হচ্ছে একজন ঝাড়ুদারের। যে প্রতিদিন সকালে ঝাড়ু নিয়ে উপস্থিত হয়। তারপর সে শহরের রাস্তা ঝাড়ু দিতে শুরু করে। ডাইরেক্টার এখানে খুবই সুন্দর ভাবে আমার চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। একেকটা ঝাটার বাড়িতে আবর্জনা কি সুন্দর ভাবে বাতাসে মিশে যাচ্ছে।
তারপর আমি কদম আলী আমার একসময় প্রেম হয় শহরের মেয়রের মেয়ের সাথে। তবে এই ছবিটার কাহিনী আর দশটা ছবির প্রেম কাহিনীর মত না। মেয়রের মেয়ে একদিন আমাকে জিন্স-টি শার্ট পড়ে রাস্তা ঝাড়ু দিতে দেখে ফেলে। আমার ঝাড়ু দেয়ার দক্ষতা দেখে সে মুগ্ধ হয়। আমাকে তাদের বাড়ীতে ঝাড়ুদারের চাকরী অফার করে। অনেক পীড়াপিড়ীর পরে আমি রাজী হই। আমি নীচে লনে তাদের বাড়ী ঝাড়ু দিতাম আর উপর থেকে সে তাদের বাড়ীর জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমাদের চোখে চোখে কথা বলা শুরু হয়। তারপর মোবাইলে এফ এন এফ নাম্বার এর মাধ্যমে কথা বলা শুরু। তারপর চলে ইন্টারনেট চেটিং। আপনারা হয়তো ভাবছেন একজন ঝাড়ুদার এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে। সেই চিন্তা আমার না, প্রযোজকের। বাংলা ছবিতে সবই সম্ভব। ধীরে ধীরে এক সময় আমাদের প্রেম কাহিনী পূর্ণতা লাভ করে।
তারপরই মুরু হয় ক্লাইমেক্সের। মেয়র সাহেব জেনে যান আমাদের প্রেম কাহিনী। একদিন নায়িকা জরিনা বিবিকে নিয়ে আমি পাহাড়ের উপরে উঠে গলা ছেড়ে গান গাচ্ছিলাম। নায়িকা ঐ সময় আমার কাধের উপরে ছিল। নায়িকা খুব ভারী হওয়াতে আমি বেলেন্স ঠিক রাখতে পারিনি। নায়িকাকে নিয়ে ধড়াম করে পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে যাই। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ী এসে অতি কষ্টে আমাদেরকে উদ্ধার করে।
তারপরতো বুঝতেই পারছেন, নায়িকা তার বাবার হাতে বন্দী হয়ে পড়ে আর নায়িকার বাবা আমাকে শায়েস্তা করার জন্যে আমার পেছনে কুকুরের মতো গুন্ডা লেলিয়ে দেন। নায়িকা দিনরাত প্রতিবাদের গান গাইতে থাকে আর আমি এক এক করে সমস্ত বাধা টপকে যেতে থাকি। শেষ পর্যন্ত কিভাবে ভিলেন বাবার হাত থেকে নায়িকাকে উদ্ধার করে আমাদের মিলন হয় তা জানতে হলে আপনাদেরকে সপরিবারে হলে এসে এই মিষ্টি প্রেমের সুন্দর রোমান্টিক ছবিটি অবশ্যই দেখতেই হবে। সেন্সর বোর্ড যদিও দুই একটা আপত্তিকর দৃশ্যের কারণে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। আরে ঘরে ঘরে স্যাটেলাইট চ্যানেল সেখানে এই সামান্য কারণে ছবি আটকে দিতে হবে। সেন্সর বোর্ড কবে এডাল্ট হবে। আমরা কিন্ত মানব না, শেষ পর্যন্ত ঠিকই ছাড়পত্র বের করে আনব। কত বড় বড় ক্রিমিনাল ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে আর এতো সামান্য একটা ছবি।
তবে পরিবার নিয়ে আসলে আগেভাগে একটু খোজ নিয়ে আসবেন, কোন হলে কাটপিস বিহীন ছবি প্রর্দশিত হচ্ছে। নইলে বুঝতেইতো পারছেন ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।
(উপরের সাক্ষাতকারটি সম্পূর্ন কার্ল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে কোন সম্পর্ক নেই।)
Monday, September 29, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment