Sunday, September 14, 2008

চুক্তি

সিংহ যখন তখন বনের পশুদের ধরে খেয়ে ফেলে। সবাই মিলে সিংহের কাছে আরজি নিয়ে গেল-হুজুর আপনি প্রতিদিন কেন কষ্ট করে শিকার ধরবেন আমরাই আপনার কাছে প্রতিদিন একটা করে নাদুস নুদুস দেখে পশু পাঠিয়ে দেব আর আপনি মজা করে খাবেন আর কটমট করে হাড় চিবাবেন।

সিংহ দেথল মন্দ নয় বিনা পরিশ্রমে এভাবে খাবারের যোগান পাওয়া গেলে চিন্তা কি। বসে বেসে থবরের কাগজ পড়া, সারাদিন ঘুম আর খাওয়া। সিংহ বলল-তথাস্তু।

বনের পশুরা চিন্তা করে দেখল এতে করে যখন তখন সিংহের অত্যাচার থেকে সাময়িক রেহাই পাওয়া গেল । অনেকটা মন্দের ভালো।

এভাবে কিছুদিন গেল। তারপর যেই আলু সেই চপ। সিংহের অত্যাচার আরো বেড়ে গেল।

বনের পশুরা আবার গেল সিংহের কাছে। শিয়াল মিনমিন করে বলতে শুরু করল- হজুর আপনার সাথে তো আমাদের সম্ভবত একটা চুক্তি হয়েছিল আপনি যখন তখন বনের পশুদের খাবেন না, কিন্তু এখনতো দেখছি আপনি চুক্তি বাতিল করছেন।

‌খামোশ বেয়াদব- সিংহ গরজে উঠল। আমি বনের রাজা আমি যখন ইচ্ছে চুক্তি বাতিল করতে পারি।

এবার শিয়াল পুনরায বলে উঠল- কিন্তু হুজুর চুক্তি বাতিলের তো কোন একটা কারণ থাকে। আমরা প্রতিদিন যে একটা করে পশু আপনার খাওয়ার জন্যে পাঠাচ্ছি এতে করে কি আপনার পেট ভরছে না, তা হলে রোজ দুইটা করে পাঠিয়ে দেই।

এবার সিংহ একটু নরম হয়ে বলল- নারে আসলে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। এভাবে বসে বসে রোজ শিকার খেতে আর ভালো লাগছে না। এতে আগের সেই মজা নেই। শরীরে অলসতা এসে ভর করছে। শিকারের পেছনে ধাওয়া করে তার ঘাড় মটকানো, ঘ্যাচ করে তার ঘাড়ে দাত বসিয়ে দেয়ার যে আনন্দ এখানে সেই মজা কোথায়। প্রাণ ভয়ে একটা শিকার পালাচ্ছে আর আমি তার পেছনে ধাওয়া করে তার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ছি, এটা ভাবতেই আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে। খালি পেট ভরে কি হবে, জীবনে যদি কোন রোমাঞ্চই না থাকে।
অতএব আবার সব আগের নিয়মেই চলবে। চুক্তি-ফুক্তি সব হাওয়া।

(বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে তার সাথে বাড়ছে আমাদের দেশের খবরের কাগজের্ উষ্ঞতা। প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা খুললেই চমকপ্রদ সব খবর। এতদিন আমরা প্রায় ভুলতে বসে ছিলাম আমাদের সেই সব জনদরদী নেতাদের কথা, তাদের জ্বালাও পোড়াও সব আন্দোলনের কথা।

হরতাল, ভাঙচুর ছাড়া আর ভালো লাগছিল না। এবার হয়তো একটা কিছু হতে যাচ্ছে। কি হবে সব চুক্তি করে আর শর্ত আরোপ করে। কদিন বাদেই সব হাওয়া। অতএব আবার সব আগের মতোই চলবে। কারণ এটা আমাদের রক্তের সাথে মিশে রয়েছে। একে বদলাবে- কার বাপের সাধ্য।

No comments: