বিগত অনেক বছর যাবত প্রতি বছর বাংলাদেশে সর্ব্বেচ্চ ভ্যাটদাতা কোম্পানীর দুর্লভ সন্মান লাভ করে একটি বহুজাতিক টোব্যাকো কোম্পানী। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এই সব কোম্পানীগুলিই বোধহয় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। এই ভ্যাটের টাকাটা আসলে কে দিচ্ছে ঐ কোম্পানী না কি এই টাকাটা জনগণের পকেট থেকে কেটে রাখা হচ্ছে। প্রতি শলাকা সিগারেটের জন্য সরকারকে যে ভ্যাট দিতে হয় তা কোম্পানী কনজুমারদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে।
১. জাতীয় আয়ের এক শতাংশ ব্যায় হচ্ছে সিগারেটের পেছনে।
২. দেশে প্রতি বছর ধুমপান জনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায় প্রায় ৫৭,০০০ জন। আরও প্রায় ২ লক্ষ লোক বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়।
৩. যত টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে তার চেয়ে বেশী টাকা চলে যাচ্ছে চিকিৎসা খাতের পেছনে।
৪. তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশী।
৫. তামাক থেকে সরকার যে রাজস্ব পায় তা বাদ দিলে বছরে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের ফলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
৬. বাংলাদেশে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে দেশে উৎপাদিত সিগারেটের পরিমাণ ছিল ১৬০০ কোটি শলাকা যা ২০০৯-২০১০ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০০ কোটি শলাকা।
৭. জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষের সূত্র অনুযাযী দেশে মোট জনসংখ্যার ৪৩.৩ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে।
৮. তামাক চাষে ব্যবহার হয় ৪৯ হাজার হেক্টর জমি। উৎপাদিত হয় ৯৮ হাজার টন তামাক। বেসরকারী হিসাবে এর পরিমাণ অন্তত আরও তিনগুণ বেমী।
৯. একজন ধূমপাযী গড়ে প্রতিদিন ৫টি সিগারেট খান। সেই হিসাবে একজন ধূমপায়ী সিগারেটের পেছনে মাসে খরচ করেন গড়ে ৩৭৮ টাকা।
১০. রংপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্তত বিশটি জেলায় তামাক চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন বিড়ি ও সিগারেট কোম্পানী চাষীদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কিটনাশক দিয়ে সহায়তা করছে। অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে কৃষকের তামাক চাষে তিনগুণ বেশী লাভ হয়।
১১. বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ এ সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, বাংলাদেশে তামাক চাষের প্রসারের ফলে শাক-সবজির আবাদ কমায় এসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। বৃহত্তর রংপুরে মঙ্গার জন্য তামাক চাষ দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন-অর্তনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে তামাক।
১২. তামাক চাষীরা থাকে সবচেয়ে ঝুকির মধ্যে। ত্বকের ক্যান্সার এর মধ্যে অন্যতম। সিগারেট কোম্পানীগুলি বাড়তি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অন্য ফসলের পরিবর্তে চাষীদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছে।
১৩. সিগারেটে মোট ৩০০০ এরও উপরে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে।
১৪. ধূমপান হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, এর ঝুকি বাড়ায়। ধূমপায়ীদের তামাকের ধোয়ার আশে পাশে যারা থাকে তারাও সমান ঝুকির মধ্যে থাকে।
১৫. টোব্যাকো কোম্পানীগুলির মূল টার্গেট হচ্ছে ৩০ বছরের নীচের ধূমপায়ীরা। কারণ এরা হবে ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী সম্পন্ন ভোক্তা।
১৬. World Health Organization (WHO) এর মতে ২০০৪ সাল নাগাদ বিশ্বে ধূমপানজনিত কারণে ৫.৪ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু ঘটেছে। এই আনুপাতিক হারে বিশ শতকের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন লোক ধূমপানজনিত কারণে মারা যাবে।
১৭. ২০০০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ধূমপায়ীর সংখ্যা ছিল ১.২২ বিলিয়ন। ২০১০ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৪৫ বিলিয়ন। ২০২৫ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াবে ১.৯ বিলিয়ন।
১৮. ২০০২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে শতকরা ২৫ ভাগ কিশোর (যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছর) ধূমপানে আসক্ত। ৮০০০০ থেকে ১০০০০০ শিশু প্রতিদিন ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেক শিশু এশিয়ান। এর মধ্যে অর্ধেক হচ্ছে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের জন্য একেক জন ভোক্তা।
১৯. WHO এর মতে ২০০৪ সালে ৫৮.৮ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু ঘটে এর মধ্যে ৫.৪ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয় তামাক জনিত কারণে।
২০. প্রচারণার পেছনে সিগারেট কোম্পানীগুলি প্রতি বছর ১২.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। এর বেশীর ভাগই ব্যয় হয়ে থাকে তৃতীয় বিম্বের দেশগুলিতে যেখানে টোব্যাকো সংক্রান্ত আইনগুলি তুলনামূলকভাবে শিথিল।
২১. একজন ধূমপায়ী পুরুষ এর জীবন থেকে গড়ে ১৩.২ বছর এবং একজন ধূমপায়ী মহিলার জীবন থেকে গড়ে ১৪.৫ বছর আয়ু হারিয়ে যাচ্ছে।
২২. বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক জরিযপ দেখা ১০ শতাংশ হারে তামাকের মূল্য বৃদ্ধির ফলে উন্নত বিশ্বে তামাকের ব্যবহার চার শতাংশ কমে। আর বাংলাদেমের মত উন্নয়শীল দেশে তামাকের ব্যবহার কমে ৮ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. এম মোস্তফা জামান এর মতে দেশে তামাকের ব্যবহার বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অন্য দ্রব্যের তুলনায় বিড়ি, সিগারেটের দাম বৃদ্ধি না পাওয়া।
তথ্য ষূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন পত্রিকা।
ছবি সূত্র: ইন্টারনেট।
Monday, April 5, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment