Tuesday, December 29, 2009

শপথ

দেশে এখন শুধু শপথ এর ছড়াছড়ি। এত সব শপথ যদি আসলেই বাস্তবায়িত হত তবে বিরাট কাজের কাজ হত। এখন চলছে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার শপথ। সরকারী দলের লোকজনেরা এই কাজে ঝাপিয়ে পড়েছেন। চারদিকে মিটিং, মিছিল, ব্যানার আর বক্তৃতার ছড়াছড়ি।


সবাই শপথ করছেন। অনেক বুদ্ধিজীবি, মডেল, মিডিয়ার লোকজনরা রয়েছেন এই কাতারে। তবে আমি আর বাদ থাকি কেন। না হলে মান সন্মান বুঝি আর থাকে না। তাই একটি শুভ দিন দেখে আমিও শপথ করলাম-আমি দেশকে একটি দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। নিজেই নিজের পিঠ চাপরাতে ইচ্ছে করছে। অনেক বড় একটি কাজের কাজ হয়েছে।


এখন সমস্যা হল শপথতো করলাম কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশকে আমি কিভাবে ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত দেশ করব সেটাইতো জানি না। এই দেশের কত জন লোক বেকার, কত জন লোক তিন বেলা খেতে পায় না-এই পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। এই দেশের লোকদের গড় আয় কত, আমাদের দেশের বার্ষিক বাজেট ঘাটতি কত- সে হিসেব করতে গেলে আমার মাথা ঘুরায়। আরে বোকার দল এটাতো অর্থনীতিবিদদের কাজ, আমার এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ কি। আমার দরকার ছিল শুধু মাত্র শপথ করা তা আমি দায়িত্বপূর্ণ ভাবে সম্পাদন করেছি। সবাই করেছে, আমিও করলাম- ব্যাস। ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে এখন বলতে পারব-আমি শপথ করেছি, আপনি করেছেন কি। মনে মনে বলব- আতলামি আর কাকে বলে রে।


চারদিকে রঙিন বেলুন আর রঙ বেরঙ এর ব্যানারে রাজপথ ছেয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কে কার থেকে আকর্ষনীয় ভাবে সংবাদ উপস্থাপন করবেন। বিষয়- দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার শপথ চলছে চারদিকে। যারা এই দলে যোগ দেবেন না, তারা আসলে দেশের ভাল চান না।


চারদিক আনন্দের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। এক দল দরিদ্র ক্ষুধার্ত শিশু রোদের মাঝে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে-আসলে কি হচ্ছে। এরা অপেক্ষা করে আছে খাবারের জন্য, এক টুকরো রুটির জন্যে। অলোচনা শেষ হলে যদি তাদের কিছু খেতে দেয়া হয় সেই আশায়। সবার আনন্দ তাদেরকে স্পর্শ করছে না।


এই মুহুর্তে ক্ষুধাটাই হচ্ছে বাস্তব, আর সব কিছুই অবাস্তব-মেকী।



No comments: