Tuesday, December 29, 2009

তদন্ত কমিটি

রোগীর আত্নীয় স্বজনরা খুবই হই চই শুরু করে দিল। বেচারার দুইটা মাত্র পা। তার মধ্যে ভুলে ডাক্তাররা ভাল পাটা কেটে বাদ দিয়ে ফেলেছে। এখন বাকী যে একটা পা রয়েছে সেটাও যদি কেটে ফেলতে হয় তবে রোগী হাঁটবে কেমন করে। 

সবাই মিলে হাসপাতালের জিনিসপত্র মনের আনন্দে (আসলে মনের দুঃখে হবে) ভাঙতে শুরু করে দিল। সাথে এসে যোগ দিল আরও লোকজন যারা রোগীর আত্নীয় নন এবং কখনও রোগীকে দেখেননি। কিন্তু এই ধরনের সুযোগতো আর প্রতিদিন আসে না। লক্ষ টাকা দামের যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেল কেউ তোমাকে কিছু বলতে পারবে না। কারো হয়ত কোন পুরনো ক্ষোভ রয়েছে এদের প্রতি। এখন তার শোধ নাও।


অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাইকে আশ্বস্ত করলেন। তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং রোগীকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
রোগী প্রতিক্ষার প্রহর গুণে। তদন্ত আর শেষ হয় না। এক দিন, দুই দিন, এক সপ্তাহ করে পার হয়ে যায় এক মাস। অবশেষে রোগী তার এক পা সম্বল করে ভয়ে ভয়ে হাসপাতারের প্রধান চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়।

-স্যার আমার কেইসটা একটু দেখবেন।
-তদন্ত কমিটিতো তাদের রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে। আপনার যে পাটা কাটা হয়েছিল সেই পায়ে গ্যাংগ্রিন ছড়িয়ে পড়ে ছিল। পা না কাটলে তা আপনার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ত। তখন আপনাকে বাঁচানোই মুসকিল হত। আমিতো সেই তরিৎকর্মা ডাক্তারের প্রশংসা করি।


-কিন্তু স্যার আমার পা কাটতে হলে তো আমার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর আমার পায়ে তেমন বড় কোন সমস্যা ছিল না যে পা একে বারেই কেটে ফেলতে হবে।
- সেটাতো আর আপনি বললে হবে না। আপনিতো আর ডাক্তার নন। তারপরও আমরা ঐ ডাক্তার প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে তিন দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর আপনার জন্য ভাল খবর হচ্ছে আপনার অপারেশনের টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফেরত দিয়েছে। এখন আপনি আপনার পা নিয়ে যেতে পারেন। ফরমালিনে চুবানো একটি বড় পাত্রে করে কাটা পা ডাক্তার রোগীর সামনে এনে হাজির করেন।


-স্যার আমি এই পা দিয়ে কি করব। এই পা আমার কি কাজে লাগবে।
-সেটাতো ভাই আমি জানি না। আপনার জিনিস আপনি নিয়ে যান। আর এক মাস ধরে আপনার এই পা যত্নের সহিত সংরক্ষণ করতে গিয়ে আমাদের যে খরচ হয়েছে তার বিল আপনি দিয়ে যান।


-রোগী চোখ কপালে তুলে ফেলে। আপনাকে কে বলেছে পা রেখে দিতে। এখন আমি টাকা দেব কোথা থেকে।
-তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ততো আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ঠিক আছে বিলের টাকা দিতে না পারলে অপারেশনের যে টাকা আপনি ফেরত পেতেন সেখান থেকে আমরা তা কেটে রাখছি। তা কেটে রাখার পরও হাসপাতাল আপনার কাছে টাকা পাওনা হয়। সেটা আমরা আপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ মাফ করে দিচ্ছি। আমাদরেকে আপনার এখন আর কোন টাকা দিতে হবে না। কি, এবার খুশি তো।


(আমাদের দেশে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটে। তদন্ত করার দায়িত্ব পড়ে ডাক্তারদের উপর। পুলিশের হাতে আসামির মৃত্যু হয় তদন্তের ভার থাকে পুলিশের হাতে।

সম্প্রতি পর পর কয়েকটি লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এখানেও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা এই টুকুই জানি। তার পরের খবর আর পাই না। সেই তদন্ত কি কখনও আলোর মুখ দেখে আমরা জানতে পারি না। বেশীর ভাগ লঞ্চেরই ফিটনেস নেই। নেই যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। যে লোকগুলি মারা গেল। যে পরিবারগুলি তাদের আপন জনদের হারাল তাদের খবর আর আমরা পরবর্তীতে নেই না।


লঞ্চ ডুবির ছাব্বিশ ঘন্টা পর উদ্ধারকারী জাহাজ (সবেধন নীল মণি রুস্তম আর হামজা) ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌছ। মানুষ না শুধু লাশ উদ্ধার করার জন্য। বড় জাহাজ উত্তোলনের মত ক্ষমতা তাদের নেই। রাজনৈতিক নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেন।

কয়েক দিন পত্রিকার পাতায় লেখা লেখি হবে তারপর সব হারিয়ে যাবে। বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগলে টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট দেখানো হয়। সব পত্রিকার সাংবাদিক কে কার আগে খবর সংগ্রহ করবেন তার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আর লঞ্চ ডুবিতে বড় জোর কি হয়। কয়েকশ দরিদ্র কিছু মানুষের সলিল সমাধি ঘটে। ১৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে এ আর এমন কি। )











No comments: