Thursday, July 9, 2009

পদক


জানেন এই একেকটা পদক আমার কাছে নিজের সন্তানের মত। সামনে দাঁড়ানো ভাঙাচোরা লোকটি পরম মমতায় পদকগুলির গায়ে হাত বুলাতে থাকে।

ক্যাশ বাক্সে বসা বিশাল বপুর অধিকারী সিল্কের পাঞ্জাবী গায়ে দেয়া দোকাদারের কোন ভাবান্তর হয় না। দোকানী মনে মনে হিসেব কষতে থাকে মেডেলগুলি গলালে কতটুকু সোনা আর কতটুকু খাদ বের হবে।

আমি এ্যাথলেটিকসে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এই সোনার মেডেলগুলি পেয়েছি।

লোকটার কথা শেষ হয় না। দোকানী মুখ বাঁকা করে জানতে চায়-দাম চান কত। এই সব রদ্দি মালে বেশীর ভাগই স্বার্নের পানি দেয়া থাকে।

লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে- দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন নিয়ে এক সময় যুদ্ধ করেছি। দেশ কি আমরা আসলেই স্বাধীন করতে পেরেছি। অভাবের তাড়নায় আজ আমাকে নিরুপায় হয়ে আমার সারা জীবনের সঞয় এই পদকগুলি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ যে আমার কাছে কত কষ্ট আর লজ্জার ব্যাপার আপনি তা বুঝবেন না।

নূরানী চেহারার অধিকারী দোকানী পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলতে থাকে-এই আপনাদের আর এক সমস্যা। খালি সেন্টিমেন্টস। যুদ্ধ করছেন দেশের জন্য এর মধ্যে আবার লাভের আশা করেন ক্যান। আপনার কপালে লেখা ছিল দরিদ্র হওয়া আপনি তা হইছেন। সব আল্লাহপাকের ইচ্ছা। দোকানী কয়েকটি নোট লোকটির দিকে ছুড়ে দেয়- নেন, ভাল দাম পাইছেন। আজান হইয়া গেছে নামাজে যামু। আপনেও যান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আর আল্লারে ডাকেন। তিনিই বিপদের মালিক তিনিই উদ্ধারকর্তা।


(মোস্তাক আহমেদ, গ্রামের বাড়ী সিলেটের বিয়ানী বাজারে বাহাদুরপুরের বারইগ্রামে। ১৯৭০ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্রগ্রামের ৪ নং সেক্টর থেকে যুদ্ধে অংশ নেন। সর্বশেষে অনারারী ক্যাপ্টেন হিসেবে ২০০২ সালে অবসরে যান। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এ্যাথলেটিকসে তিনি বহুবার দেশের হয়ে বিদেশে খেলেছেন। মোট ৬৯ টি স্বর্ণপদক পেয়ে বাংলাদেশের সোনার ছেলে অবিধায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি একটানা কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, হয়েছেন বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ।

এই কয়েকবার বর্ষসেরা এ্যাথলেট ও মুক্তিযোদ্ধা অভাবের তাড়নায় ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি থেকে পাওয়া সোয়া ভরি ওজনের স্বর্ণের দুইটা হরিণ বিক্রি করে দিয়েছেন। কয়েকদিন পূর্বে আবার সিলেট থেকে ঢাকায় আসেন ১৯৭৭ সালে সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে পাওয়া ১ম স্বাধীনতা পদকটি বিক্রি করার জন্য।)

*ষূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুলাই ২০০৯

No comments: