Thursday, February 25, 2010

কবি আপনিও!!!

লোকটাকে প্রথম দেখে আমি চমকে উঠি। আরে ইনি যে অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত দেখতে। মুখে লম্বা দাড়িঁ। চোখে চশমা। হাঁটেন মাথা নীচু করে। স্বল্পভাষী লোকটা সব সময় কি যেন চিন্তা করেন। অনেকটা আপন খেয়ালে মগ্ন।


পরে জানতে পারলাম ইনি কবি নির্মলেন্দু গুণ। কবিতা আমি বুঝি না। কিন্তু কবি নির্মলেন্দু গুণ কি এক অজানা কারণে আমাকে আকৃষ্ট করতেন। হয়ত উনার সাধাসিধা চলন। হয়তবা উনার ব্যক্তিত্ব। আমি ঠিক জানি না।


‘আবদুল গাফফার চৌধুরী ও নির্মলেন্দুগুণের দৃষ্টিতে জয়নাল হাজারী’-তরফদার প্রকাশনী। বইটি একুশের বই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। দাম ২০ টাকা। আমি বিস্মিত হইনি। এখন আর আমি কোন কিছুতে তেমন একটা বিস্মিত হই না।


বইটি আমি পড়িনি, পড়ার কোন আগ্রহও নেই। বইয়ে কি লেখা আছে আমার জানা নাই। কিন্তু আমি যেটা জানি সেটা হচ্ছে-প্রতিনিয়ত আমরা দানবীয় শক্তির কাছে কত সহজেই না পরাজিত হচ্ছি। কিন্তু তারপরও বুকের মাঝে কেমন এক চাপা কষ্টের অনুভূতি এসে ভিড় করে। মন বিদ্রোহ করে উঠে। কেন এমন হয়। এত সহজে কেন আমরা হার মানি।


শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবি গুণ দা শেষ পর্যন্ত আপনিও.......


ছবি সূত্র: কালের কন্ঠ, ২২.০২.২০১০

Tuesday, February 23, 2010

দেশ কাঁপানো এক দিন।

গ্রামীণ ফোন এর দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট। মিডিয়া পার্টনার প্রথম আলো, চ্যানেল আই। পুরো দুনিয়াকে এরা কাঁপাতে পেরেছেন কিনা জানি না। তবে মিডিয়াকে ভাল ভাবেই কাঁপাতে পেরেছেন। এদের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নমুনা-


মোবাইল কোম্পানীগুলি টয়লেটে কোন টিস্যু পেপার ব্যবহার করে প্রতিকাওয়ালারা এটাও ফলাও করে প্রকাশ করে। কিন্তু এই খবরটি বেমালুম হজম করে ফেলেছে।


বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীগুলি থেকে শুরু করে দেশীয় আলকাতরা কোম্পানী কেউই পিছিয়ে নেই। পত্রিকা টিভিতে অনেক টাকা খরচ করে এদের একেক জনের ঢাউস সাইজের বিজ্ঞাপন-ভাষা আন্দোলনের সকল সৈনিক ও অমর শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


শহীদ মিনারে ভোর বেলায় খালি পায়ে কার আগে কোন দল ফুল দেবে তা নিয়ে রীতিমতো মারামারি লেগে যায়। একজন বুদ্ধিজীবি টিভিটে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন-আজকাল একুশের চেতনা সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়েছে। আমার কাজের মেয়েটি বলছে-স্যার কাইল আমারে ছুটি দেন। শহীদ মিনারে ফুল দিতে যামু।


বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গরা (সবাই নন) সেখানে তাদের বক্তব্য পেশ করেন। টিভিতে শহীদ দিবসের নাটক, অনুষ্ঠান প্রচারের ধুম পড়ে যায়।


চা-পান-সিগারেটের দোকানগুলিতে সারাদিন বাজতে থাকে-আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি।


এরকম এক আবেগপ্রবণ জাতি আমরা। একজন বাঙালী হিসেবে আমাদের আর এর বেশী কিই বা চাইবার থাকতে পারে।


সারা বছর আমরা ঘুমিয়ে থাকি শুধু বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে আমরা হঠাৎ করে ঘুম থেকে জেগে উঠি। ঐ এক দিনেই দুনিয়া না হোক দেশকে অন্তত আমরা কাঁপিয়ে ফেলি।


১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ আবুল বরকতের ছোট ভাই এর ছেলে আলাউদ্দিন বরকত বলেন- চাচা শহীদ হবার পর আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশের অনুষ্ঠানে কিংবা বই মেলায় আমাদের কেউ কোন দিন ডাকেনি। ডাকা হয় না জেলা পর্যায়ের কোন অনুষ্ঠানেও। যাঁদের আত্নত্যাগ নিয়ে এত আয়োজন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শহীদ দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না। এ বছরও প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন বরকতের পরিবারের সদস্যরা। যোগাযোগও করেছিলেন বাংলা একাডেমীর কর্তৃপক্ষের সাথে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে তাদের সেখানে যাবার অনুমতি দেয়া হয়নি। (তথ্য সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ)


আমরা বাঙালীরা সব কিছুতেই ব্যবসা খুজে ফিরি। একজন দেহপসারিণী তার দেহ বিক্রি করে। কিন্তু আমরা বিক্রি করি জন্মভূমি দেশকে, মায়ের ভাষা কে।


তারপরও দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি বুকের কোথায় যেন এক ধরণের বেদনার অনুভব হয়। যারা নিঃস্বার্থ ভাবে প্রাণ দিয়ে এ দেশকে দেশের ভাষাকে রক্ষা করেছেন তারাও এ দেশেরই সন্তান।





Saturday, February 20, 2010

একটি গাধার আত্নজীবনী

ফেনীর গড ফাদার জয়নাল হাজারী তার আত্নজীবনী ‘জয়নাল হাজারী বলছি’ এই বারের বই মেলায় প্রকাশ করতে যাচ্ছেন আর এর মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রখ্যাত কলামিষ্ট আববদুল গাফফার চৌধুরী। আপনিও আমন্ত্রিত।


কিছু দিন পূর্বে জেনেছি হাজারী সাহেব সিনেমায় মাফিয়া ডন এর ভূমিকায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন। ছেলেবেলা থেকেই নাকি উনার অভিনয়ের শখ। এইবার জানলাম তিনি একজন লেখকও বটে। হায় এত গুণের অধিকারী এই লোকটি এত দিন কোথায় লুকিয়ে ছিলেন।


বইয়ের মোড়ক উন্মোচন জিনিসটা বই মেলায় প্রথম কে চালু করেছেন আমার জানা নাই। লেখক প্রকাশক সবাই ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে দাড়াবেন। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে মোড়ক আবদ্ধ বইটি ধরিয়ে দেয়া হবে। তিনি ধীরে ধীরে নববধূর অবগুন্ঠন উন্মোচনের মত বই এর মোড়ক খুলবেন। ক্লিক ক্লিক করে ক্যামেরার ফ্লাশ ঝলসে উঠবে। বিশিষ্ট ব্যক্তিটি কাপা কাপা গলায় লেখক আর তার বই এর গুণগান করতে শুরু করে দেবেন। সেই বিশিষ্ট বেচারা জানেও না যে বই এর ভিতরে কি আছে। এটা দেখার উনার সময়ই বা কোথায়। পরক্ষণেই উনাকে আরেক বই এর মোড়ক উন্মোচনের জন্য ছুটতে হবে।


প্রখ্যাত কলামিষ্ট আববদুল গাফফার চৌধুরী। উনাকে এই টাইটেল কে দিয়েছেন? তিনি প্রখ্যাত না অখ্যাত সেই বিতর্কে আমি যেতে চাচ্ছি না। আমি খালি সবিনয়ে জানতে চাই, স্যার আপনার রেইট কত? কলগার্লদের সাথে আগে ভাগে দর দাম ঠিক না করে রাখলে পরে সমস্যায় পড়তে হয়। স্যার আপনি মাইন্ড করবেন না। এটা অন্য প্রসঙ্গে বলা। আপনার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আপনার জন্য নীচে আমার একটি অফার রয়েছে-


আমরা আত্নজীবনী ‘আমি গাধা বলছি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য আকর্ষনীয় প্যাকেজে একজন প্রখ্যাত কলামিস্ট প্রয়োজন। আগ্রহীরা অতিসত্বর যোগাযোগ করুন। সময় সীমিত।


না এইবারের বই মেলায় আমার কোন বই যাচ্ছে না। আমি লেখক নই। তবে যে হারে সবাই বই লেখা শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে জয়নাল হাজারী সেখানে আমিই বা পিছিয়ে থাকি কেন। চেষ্টা করতেই বা দোষ কোথায়। এই বার সম্ভব না হলে আগামী বছর ইনশাল্লাহ। আর বিশিষ্ট কলামিষ্টরাতো বই এর মোড়ক উন্মোচন করার জন্যতো মুখিয়েই থাকেন। আর কাউকে না পাওয়া গেলে প্রখ্যাত কলামিষ্ট আববদুল গাফফার চৌধুরীতো রয়েছেনই। কারণ উনিতো আবার কাউকে না বলতে পারেন না।






ছবি সূএ: দৈনিক কালের কন্ঠ
০৭.০২.২০১০





এপিটাফ

কত দিন এখানে আসা হয় না। চারদিকে কেমন ঘাসের জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। চারদিকে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যের আলো উকি ঝুকি মারছে। ঘাসের ডগায় ফোটা ফোটা শিশির জমে রয়েছে। রোদ পড়ে কেমন ঝলমল করছে। কাব্য হাত দিয়ে ছোযার চেস্টা করে। শিশির ফোটা কেমন হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। তার বাবার এপিটাফের লেখাগুলি কালের বিবর্তনে অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে । কাব্যের লজ্জা লাগে। হাত বাড়িয়ে এপিটাফের উপর জমে থাকা ধুলা পরিস্কার করতে চেষ্টা করে।


ছেলে বেলায় বাবার সাথে কাটানো অসংখ্য স্মুতি মনের পর্দায় এক সাথে এসে ভিড় করে। কাব্যের গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। কাব্য মুছার কোন চেষ্টা করে না। কারো সমাধির সামনে দাড়িয়ে নাকি চোখের পানি ফেলতে নেই। কেন এই কথা বলা হয়েছে কাব্যের জানা নাই। সে কেমন করে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব ভাল লাগার স্মুতিগুলি তার মন থেকে মুছে ফেলবে।


নিজেকে তার কেমন স্বার্থপর মনে হয়। আজ কত দিন পর সে এখানে এসেছে। খুব ছোট বেলায় সে যখন হাটতে পারত না তখন বাবার হাত ধরে দাড়াতে চেষ্টা করত। বাবা তার হাত কখনও ছাড়েননি। আজ যখন তাকে তার বাবার সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সে কত অবলিলায় তার বাবার হাত ছেড়ে দিয়েছে।


মৃত্যুর সাথে সাথেই কি একটা মানুষের সব কিছু শেষ হয়ে যায়। সমস্ত স্মৃতি, ভাল লাগা, মন্দ লাগার সমস্ত অনুভূতি। তার সামনে বাবার নামের সেই মানুষটা নাই। বিপদে পড়লে আজ আর সেই মানুষটা তাতে আগলে দাড়াবে না। বলবে না- খোকা ভয় নেই আমি আছি। কিন্তু আর সব কিছুতো ঠিকই রয়ে গেছে। এই যে সে তার বাবার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে তার বাবাতো তাকে দেখতে পাচ্ছেন। এখনই বুঝি ধরা গলায় বলে উঠবেন-কিরে খোকা, কত কাল পরে এলি। এত দিন পরে বুঝি বাবার কথা মনে পড়ল।


কাব্য ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে তার বাবার সমাধিটা ছোয়ার চেষ্টা করে। ধরা গরায় বলে উঠে-বাবা আমি তোমার অপরাধী। ভুল মানুষকে নিয়ে তুমি স্বপ্ন দেখেছ। কই কোন স্বপ্নইতো আমি তোমার পূরণ করতে পারলাম না। কেন তবে ছেলে বেলায় শুনিয়েছ ঘুম পাড়ানির গান। কেন স্বপ্ন দেখেতে শিখিয়েছ। তা না হলেই বুঝি ভাল ছিল। আজ বুকের মাঝে এক কষ্ট অনুভব হত না।


কাব্য যখন ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে তখন বাবার ছেলে মানুষী কান্ডে খুব লজ্জা পেত। রাস্তা পার হবার সময় বাবা হাত ধরে রাখতেন, ছেলে দিলেই বুঝি কাব্য হারিয়ে যাবে। বাবা বুঝতেন না সে এখন বড় হয়ে গেছে। হাত ধরে রাখার এখন আর দরকার নেই। রাস্তার লোকজনরাই বা কি বলবে। দেখ দেখি কত বড় ছেলে বাবার হাত ধরে হেটে যাচ্ছে। বাবা কতই না বোকা ছিলেন। আজও কাব্য সেই ছেলে মানুষী লজ্জা অনুভব করে। বাবার উপর এক রাশ অভিমান এসে জমা হয়। বাবা কেন তুমি আমার হাত ছেড়ে দিলে। এখনও যে তোমার সেই ভালবাসার হাতখানি আমার বড়ই প্রয়োজন।


কাব্য এপিটাফটাতে হাত বুলায়। বাব তোমার কানে কানে বলি-আবার আমাদের দেখা হবে। যেখানেই তুমি থাক, যতই দূরে। তোমার হাত ধরে ছেলেবেলার মত আমরা দুইজনে আবার রাস্তা ধরে হেটে যাব। এখনও যে আমাদের অনেক পথ হাটা বাকী। বিদায় বাবা, ভাল থেকো।

টুকরো খবর।

খবর-১


চারদিনের ভারত সফর শেষ করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন স্তরের জনগণ বিমানবন্দরে উনাকে সংবর্ধনা জানায়। সংবর্ধনা দিতে আসা রাস্তার দুই পাশের মানুষ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানায়। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহর প্রধান সড়কে আসলে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে দুপুর থেকেই পুরো বিমানবন্দর এলাকা লোকেলোকারণ্য হয়ে উঠে। নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমান বন্দরে ট্রাক-বাসে করে আসা নেতাকর্মীরা সঙ্গে নিয়ে আসে ব্যান্ড পার্টি আর মাইক। ট্রাকের উপর নেচে গেয়ে তারা আনন্দ প্রকাশ করে। শুভেচ্ছাবার্তা সম্বলিত ব্যানারে ছেয়ে যায় পুরো বিমান বন্দর এলাকা।


অনেক দিন পর এমন আনেন্দর সংবাদ পড়লাম ভাল লাগল। আরও ভাল লাগল দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে এত ভালবাসে জেনে। কিন্তু তারপর নিচের খবরটি আর ভাল লাগল না-


খবর-২


গতকাল নগরবাসীকে দীর্ঘ যানজটের দুভোর্গ পোহাতে হয়েছে। পুরো এলাকায় ভয়াবহ জানজটের সৃষ্টি হয়। একদিকে শীতের তীব্রতা আর অপর দিকে ভয়াবহ যানজট। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত ২ ঘন্টা সড়কের একদিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব রাত ১১ টা পর্যন্ত বিরাজ করে। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের পদচারণায় উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের পোনে এক ঘন্টা আগেই যানচলাচল বন্ধ করে দেয় ডিএমপির প্রোটেকশন বিভাগ। এতে ঘরমুখী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থেকে যাত্রীরা বাস পায়নি। যারা বাসে চরতে পেরেছেন যানজটের কারণে তাদের গাড়ীগুলি ঠায় দাড়িয়ে থাকে। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাস থেকে নেমে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।


** আমার বক্তব্য হচ্ছে গতকাল কি সরকারী ছুটি ছিল। যদি না হয়ে থাকে তাহলে সারাদিন কাজ করে কর্মজীবি মানুষরা কিভাবে বাড়ী যাবেন এটা ভেবে দেখার মত কোন লোক কি সরাকারের ডিপার্টমেন্টে ছিলেন না। আর প্রধানমন্ত্রী কি এই প্রথম বিদেশ থেকে দেশে আসলেন। তাহলে হঠাৎ করে এত বিশাল আয়োজনের কি দরকার ছিল। উনার নেতাকর্মীদের যদি আনন্দ করার এতই ইচ্ছে থেকে থাকে তাহলে উনারা বিমানবন্দরের কাছাকাছি কোন খালি মাঠে গিয়ে নাচ গান করতে পারতেন, রাজপথে কেন। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই পত্রিকা পড়েন সেখান থেকে তিনি জনগণের কালকের দুর্ভোগের কথা জানতে পারবেন। তা থেকে তিনি কি ভবিষ্যতের জন্য উনার কর্মীদের সতর্ক করবেন নাকি তাদের সুরেই সুর মিলাবেন।


যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ঐ দিন তিনি যেন ঢাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে দেন। কারণ আমি নিজেও গতকালকের দুর্ভোগের একজন ভোক্তভূগী। পুনরায় আর এর পুনরাবৃত্তি কামনা করি না।

গ্রাহকসেবা

সিটিসেল মোবাইল থেকে SMS পাঠিয়েছে- এই শীতে আপনার ত্বকের যত্ন নিয়ে ভাবছেন? সিটিসেল নিয়ে এর শীতকালীন বিউটি টিপস। ডায়েল করুন ২৫২৫ আর জেনে নিন বিউটি টিপস। গুরুত্ব বুঝাতে একই ম্যাসেজ দুই বার পাঠানো হয়েছে। যাতে কোন ভাবে মিস না হয়ে যায়।

আহা মোবাইল কোম্পানীগুলির তাদের গ্রাহকদের প্রতি কত সজাগ দৃষ্টি। গ্রাহকদের সেবা দিতে দিতে এখন গ্রাহকের ত্বকের যত্ন নিয়েও উনারা মাথা ঘামাচ্ছেন। এ রকম এক মোবাইল কোম্পানীর গ্রাহক হতে পেরে আমি গ...গ....গর্বিত। আমি আমার ত্বকের যত্নের ভার নিশ্চিত্নে সিটি সেলের উপর ছেড়ে দিয়েছি, আর আপনি?


ম্যাসেজ পেয়েই আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে ছিলাম। ২৫২৫ এ ডায়াল করে এক্ষুণি জেনে নিতে হবে বিউটি টিপস। কিন্তু না বল চলে গেল মাঠের বাইরে। কারণ পুরো ম্যাসেজ এখনও শেষ হয়নি। নীচে লেখা রয়েছে- প্রতি মিনিট চার্জ ২ টাকা+ ভ্যাট। ধান্দাবাজি কত প্রকার ও কি কি তা এদের কাছ থেকে শিখতে হবে।


এবার সারা দেশে প্রচন্ড শীতের কারণে বহু লোকের মৃত্যু ঘটেছে। হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই পর্যন্ত লক্ষাধিক লোকের উপরে মারা গেছে। সেই জায়গায় শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে মাথা ঘামানোটা বোধ হয় ঠিক না। ত্বর্কবাগিশরা হয়ত বলতে পারেন আমি মাথা না ঘামালে কি এই মৃত্যুগুলি ঠেকানো যেত। আমি সেই বিতর্কে যেতে চাচ্ছি না।


মোবাইল কোম্পানীগুলির কথাবার্তা শুনলে মনে হবে এদের মত দেশ প্রেমিক আমাদের দেশে বোধ হয় আর একটাও নেই। আরেকবার আরেকটি মোবাইল কোম্পানী আবেগময় একটি বিজ্ঞাপন বানাল পপ সম্রাট আজম খানকে নিয়ে। সাধাসিধে একজন আজম খান, ৭১-এ যার হাতে স্ট্যান গান গর্জে উঠেছিল গিটারের ধ্বনির মত। বিজ্ঞাপন এর শেষে আরেক পপ গায়ক আইয়ুব বাচ্চু পপ সম্রাটকে স্যালুট করেন-গুরু তোমায় সালাম বলে।
বুকের মধ্যে এক ধরণের চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়-আহা মোবাইল কোম্পানী কি চমৎকার একটি বিজ্ঞাপনই না তৈরী করেছে।


এর কিছু দিন পর জানা যায় পপ সম্রাট আজম খান অসুস্থ। টাকার অভাবে উনার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে কষ্ট লাগে তখন যখন কোন একজনও শিল্পী উনাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে না। এমনকি সেই স্যালুট জনানো ব্যাক্তিটিও। প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মে সেই মোবাইল কোম্পানীটির প্রতি। তাদের পক্ষে কি একটু সহযোগিতার হাত বাড়ানো সম্ভব ছিল না। উনারা বিজ্ঞাপন তৈরী করেই উনাদের দায় সেরেছেন। কে মরল আর কে বাঁচল তাতে তাদের কি বা যায় আসে।


রাস্তায় মাঝে মধ্যে পিজা হার্ট এর মুক্তি যোদ্ধাদের ছবি সম্বলিত কিছু বিলবোর্ডে চোখ পড়বে। মুক্তি যোদ্ধের সেই সব সাহসী মানুষদের আমরা জানাই শ্রদ্ধা। আহা দেখলেই বুকের রক্ত কেমন ছলকে উঠে।
কিন্তু পিজা হার্ট আজ পর্যন্ত মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে কোন কিছু করেছে বলে আমার জানা নাই। তারা পিজা বিক্রি করতেই ব্যস্ত তাদের এত সময় কোথায়।


তাও আবার যেন তেন পিজা নয়।পিজা হার্ট এর এক বিক্রয় প্রতিনিধি একবার কতগুলি পিজা কেনার কূপন নিয়ে এসে হাজির। একটি কূপন কিনলে আরেকটি ফ্রি। অর্থাৎ একটি পিজা কিনলে সাথে আরেকটি পিজা ফ্রি। আজকেই অফার শেষ। আনন্দে আমি লাফিয়ে উঠলাম। কিন্তু না পরক্ষণেই আমার আশা ভঙ্গ হল। কারণ একেকটি পিজার মূল্য হাজার টাকার উপরে। আমি তাকে যতই বিদায় করার চেষ্টা করি সে ততই চীনা জোকের আঠার মত লেগে থাকে। আমি বিনীত ভাবে ঐ প্রতিনিধিকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম একটি পিজা কেনার পয়সা দিয়ে আমার সারা মাসের দুপুরের লাঞ্চ এর খরচ চলে। বেচারা সম্ভবত আমার কথা বুঝতে পারেনি ভাবল আমি বুঝি ঠাট্রা করছি। কারণ তাদের এই অফারে খুব সাড়া পাওয়া গেছে। অফারের সময় বাড়ানোর জন্য লোকজন তাদের অনুরোধ করছে। সভাবতই আমার এই উদাসিনতাকে সে ভাল ভাবে গ্রহণ করতে পারেনি।