Thursday, December 25, 2008

কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড


তুহিন আহমেদ দেশের একটি মাল্টিন্যাশনাল টোব্যাকো কোম্পানীর প্রোজেক্ট ম্যানেজার। বিভিন্ন ধরনের সাইকেল প্রোগ্রামিং প্ল্যানগুলি উনি করে থাকেন। তিনি উনার কর্মজীবনের সব কিছু করেছেন যুক্তি দিয়ে বিচার করে। কখনও আবেগকে প্রশ্রয় দেননি। এ জন্যেই তিনি এত উপরে উঠতে পেরেছেন। কর্পোরেট দুনিয়ার রুলসই হচ্ছে এটা। স্মাপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া জার্মান কোম্পানী সিমেন্স এর কেলেঙ্কারীর ঘটনা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখানে নীতির কোন বালাই নেই। কাজ উদ্ধার করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেটা ঘুষ বা অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে হোক সেটা বড় কথা নয়।

যতক্ষণ তোমার প্রয়োজন, তুমি এখানে আছ। তারপর তোমাকে কারো দরকার নেই। নতুন আরেকজন এসে তোমার জায়গা দখল করে নেবে।

সামনে উনার কোম্পানী নতুন প্রডাক্ট লঞ্চ করতে যাচ্ছে। এখানে উনার ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। যদি উনার প্ল্যান সাকসেসফুল হয় তবে উনাকে প্রমোশন দিয়ে আরও উপরের কোন পোস্ট দেয়া হবে।
আর ব্যার্থ হলে উনাকে এখান থেকেই বিদায় নিতে হবে। ব্যর্থতার দায় ভার সম্পূর্ন তোমার। এখানে কোম্পানী তোমাকে কোন সাপোর্ট ধরনের দেবে না।

যার কারণে সিমেন্সের হিসাব রক্ষক অফিসার সিকাখচেক কে বর্তমানে জেল খাটতে হচ্ছে। যদিও কোম্পানীর সম্মতিতেই তিনি এ কাজ করেছেন। এ সব কাজের জন্যে কোম্পানীর বছরে ৫ কোটি ডলারের বাজেটই বরাদ্দ ছিল। তারপরও শেষ পর্যন্ত কোম্পানী পার পেতে পারেনি। গত ১২ ডিসেম্বর আদালতের্ একটি রায়ে সিমেন্স কে ১৬০ কোটি ডলার এবং অতিরিক্ত আরও ১০০ কোটি ডলারের জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

তুহিন আহমেদ এখন কাজ করছেন ৩০ বছরের কম বয়সী ধূমপায়ীদের নিয়ে। কোম্পানীর ভাষায় SMOKER UNDER 30‌ । এর মানে হচ্ছে বয়স্ক ধূমপায়ীদের নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই কারণ কিছুদিনের মধ্যেই তাদের আয়ু ফুরিয়ে যাবে। তাই ইয়ং জেনারেশনকে টোব্যাকোর প্রতি আসক্ত করে তুলতে হবে কারণ এরাই হবে দীর্ঘ মেয়াদী সম্পন্ন কনজুমার।

মিডিয়া উপরে উপরে যতই এটা নিয়ে চিল্রা ফাল্রা করুক কখনই তারা এমন কোন ধরনের নিউজ প্রচার করে না যাতে করে ঐ সব কোম্পানীর ব্যাবসার কোন ধরনের ক্ষতি হোক। কারণ আর কিছুই নয় ঐ সব কোম্পানী মাসে মাসে বিভিন্ন ভাবে মিডিয়ার পেছনে বিপুল পরিমাণে টাকা খরচ করে থাকে। অতএব কি দরকার এদের পেছনে লেগে।

যদিও বর্তমানে আইন করে টোব্যাকোর সব ধরনের প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের প্রচারণা থেমে নেই। কোন না কোন ভাবে তারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের প্রচারনা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে টোব্যাকো-ল ধীরে ধীরে কঠিন করা হচ্ছে তাই এখন ব্যাবসার জন্যে এদের প্রথম পছন্দ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলি। এখানে আইনকে ফাকি দেয়া সহজ। সরকারও খুশি কারণ প্রতি বছর ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ প্রচুর টাকা রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে।

তুহিন আহমেদ একজন চেইন স্মোকার। উনার ছেলের বয়স কত হবে ১০-১২। একদিন সে বড় হবে এবং এক সময় উনার মতই একজন চেইন স্মোকারে পরিণত হবে। কিছুই করার নেই। যে বিষ বৃক্ষ তিনি আজ রুপণ করে দিয়ে যাচ্ছেন তার থেকে কারো রেহাই নেই। এমন কি উনার আপন জনেরও।


Saturday, December 20, 2008

শুধু তোমার জন্যে স্বাধীনতা

ঝরে পড়ল অনেকগুলি তাজা প্রাণ। রক্তে রঞ্জিত হল রাজপথ। জন্ম নিল একটি ভাষা। আমার মায়ের ভাষা। আর ঐ বিশেষ দিনটি হয়ে গেল আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস।
মাঝে কেটে গেল অনেকটি বছর। তারপর লাখো মানুষের মিলিত কন্ঠ রুপ নিল সমুদ্রের গর্জনে। খালি হল অনেক মায়ের বুক। ভাই হারাল বোন। সন্তান হারাল বাবা। তাদের সব রক্ত মিলে তৈরী হল একটি সমুদ্র। এত আত্নত্যাগ, ভালোবাসা সব কিছুর বিনিময়ে সূচনা হল আমাদের বিজয়ের। জন্ম হল একটি নতুন রাষ্ট্রের। পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর দেশ। অপূর্ব প্রাকৃতিক রুপ নিয়ে নববধূর সাজে আমার বাংলাদেশ।
লাল টকটকে রক্ত আর সবুজ বনভুমি মিলে তৈরী হল একটি লাল-সবুজ পতাকা।
তারপর অশুভ শক্তি বার বার বিস্তার করতে চেয়েছে তার অশুভ থাবা। কিন্তু লাখো মানুষের আত্নত্যাগের আর ভালোবাসার দেয়ালে আবদ্ধ এই দেশ। সেই দেয়াল ভেদ করবে এমন সাধ্য কার।

Wednesday, December 17, 2008

বুশের সাথে একান্ত আলাপন

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ অনেক দিন পর আবার আলোচনায় চলে এসেছেন। একদিনেই তিনি মিডিয়ার কল্যাণে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। ব্লগেও উনাকে নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। তবে এই মুহুর্তে বুশ কি ভাবছেন একটু কল্পনা করা যাক-

প্রশ্ন: ইরাক যুদ্ধ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
বুশ: আমি আসলে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেছি। আমার বাবা ক্ষমতায় থাকাকালীন উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা শেষ করে যেতে পারেননি। আমি উনার অসমআপ্ত যুদ্ধটা শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমিও শেষ পর্যন্ত তা পারিনি। এখন আমার ছেলেই শেষ ভরসা।

প্রশ্ন: আপনি এতটা নিম্চিত ছিলেন কিভাবে যে ইরাকে লুকানো অস্ত্রের ভান্ডার রয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
বুশ: ইরাকের কাছে আমেরিকা বিভিন্ন সময়ে অনেক ধরনের অস্ত্র বিক্রি করেছে। আর কিছু না হোক ইরাকের কাছে সেই সব অস্ত্র থাকার কথা।
প্রশ্ন: তাহলে অস্ত্র বিক্রি করাতে কোন অন্যায় নেই। অস্ত্র মজুদ

১৯৭১

ইনি এবার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। একাত্তর এর পর থেকে উনার সাফল্যের যাত্রা শুরু। একাত্তরে ছিলেন অল বদর বাহিনীর কমান্ডার। তারপর যখন যে দলে সুযোগ পেয়েছেন সেই দলেই যোগ দিয়েছেন। দু বার হজ পালন করেছেন। প্রতি বছরই ওমরা পালন করার উদ্দেশ্যে আরব দেশে যান। রয়েছে উনার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। গত কয়েক নির্বাচনে তিনিই জয়ী হয়েছেন। কারণ এই গ্রামে উনার প্রতিদ্বন্দীতা করবে এমন সাহস কারও নেই।

এই বার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। লোকজন আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়ে গেছে। এখন আর ভয় দেখিযে সব কাজ আদায় করা যায না। তাই এবার ঠিক করেছেন পাবলিক সেন্টিমেন্টস কে কাজে লাগাবেন। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস হওয়াতে সুযোগ পেয়ে গেছেন। ঠিক করেছেন এবার ১৬ ডিসেম্বরে হাই স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের ১০০ টাকা আর নিজ হাতে স্বাক্ষর করা সনদ প্রদান করবেন।

মুশকিল হল গায়ের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধাদের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ বর্তমানে বেচে নেই। ঐ একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার কে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। আর বাদবাকী চেয়ারম্যান সাহেবের পছন্দের লোকজনের নাম দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার লিস্ট বানানো হয়েছে।

নির্ধারিত দিনে চেয়ারম্যানের দেশপ্রেমের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। চেয়ারম্যান সাহেব নিজ হাতে প্রত্যেককে ১০০ টাকা আর সনদ প্রদান করছেন। চারদিক থেকে হাততালির মাধ্যেম মাঠ প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে রয়েছে। সনদপ্রাপ্ত সবাই চেয়েরম্যান সাহেবের সাফল্য কামনা করে তাদের বক্তব্য শেষ করছেন।

সব শেষে তিনি শেষ মুক্তিযোদ্ধার হাতে সনদ তুলে দিতে গেলেন। এই লোক সনদ গ্রহন না করেই ‌আমার কিছু কথা আছে’- বলে এগিয়ে গেল স্টেজের মাইক্রোফোনের দিকে।

-আমাদের মুক্তিযোদ্ধ অনেক বড় একটি ব্যাপার। এর আগে পর্যন্ত আমরা মৃত মানুষের মত বেচে ছিলাম। এ সময়েই আমরা শিখলাম সত্যিকারের আত্নত্যাগ কি জিনিস। আমার শিখলাম ঘৃনা করতে, ভালোবাসতে, জীবন দিতে।
১৯৭১ এ আমি যুদ্ধ করেছি। কখনও যুদ্ধ করব আমি ভাবিনি। কিভাবে যুদ্ধ করতে হয় আমার জানা ছিল না।
ঐ সময় আমার দেশের লোকজন খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। তখন আমার ভিতর থেকে তাড়া আসল যাও তাদের পাশে গিয়ে দাড়াও। আমি শুধু তাই করলাম।

নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধা যারা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাদের পরিবার বেচে রয়েছে। যারা বেচে রয়েছেন তাদের খবর রাখার প্রয়োজনও আমরা বোধ করি না। তাদের আত্নত্যাগের কাছে আমার এই আত্নত্যাগতো কিছুই না।

আমি একজন হতদরিদ্র স্কুল মাস্টার। আমি সবাইকে লেখাপড়া শিখাই আর অর্থের অভাবে আমি আমার ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারছি না। এটা নিয়ে হয়ত আমার কষ্ট রয়েছে। তারপরও সেই কষ্ট চেষ্টা করে ভুলে থাকা যায়। ভাল খেতে পারব, ভাল পড়তে পারব এর জন্যেতো আমরা যুদ্ধ করিনি। নিজের স্বার্থের জন্যেতো দেশের মানুষ জীবন দেয়নি। হয়ত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখে ছিলাম সেই দেশ পাইনি। কিন্তু এর জন্যেতো দেশের প্রতি অজস্র মানুষের ভালোবাসা বিফলে যেতে পারে না। হয়ত সত্যিকারের স্বাধীনতা এখনও আমরা পাইনি, তাই বলে স্বাধীনতার জন্যে মানুষের আত্নত্যাগতো অর্থহীন হতে পারে না।

সব কিছু ভুলে থাকা যায়। কিন্তু যখন এত বছরেও দেশের যুদ্দ অপরাধিদের বিচার হয়না। একজন রাজাকার দেশের পতাকা লাগানো গাড়ীতে ঘুরে বেড়ায়। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তার সন্মান ভিক্ষা হিসেবে দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিতরণ করে একজন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। তখন খুব কষ্ট হয়। সেই কষ্ট আমরা ভুলে থাকতে পারি না। তখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে খুব লজ্জা হয়।

মাস্টারের হয়ত আরও কিছু বলার ছিল। কিন্তু তার কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেয়া হয়। ক্যাডার বাহিনী টেনে হিচড়ে উনাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেয়। সবাই বলাবলি করতে থাকে- আহারে অনাহারে থেকে থেকে এবার বোধ হয় আসলেই মাস্টারের মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে।

পরদিন থেকে গ্রামে তিনি পাগলা মাস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।




Sunday, December 14, 2008

আমার আমি

মা বাবার হয়ত ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে একটা কিছু হবে। হতে পারলাম না কিছুই।
শৈশবে ভাবতাম কখন বড় হব। শৈশব কাল এত দীর্ঘ কেন। ইচ্ছে হলেই বৃষ্টির পানির পানিতে গা ভেজানো যাবে না। রয়েছে ঠান্ডা লেগে যাবার ভয়। খালি সীমাবদ্ধতা। এরই মাঝে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা।
তারপর একদিন বড় হলাম। হয়নি কিছুই। মাঝে মাঝে শুধু পিছনে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া। হায় কোথায় হারিয়ে ফেললাম আমার সেই সোনালী শৈশব। এখনও সীমাবদ্ধতার শেকল পিছু ছাড়েনি। এখন আর বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে না। মনে হয ছেলেমানুষী।
কিছুইতো দেখা হল না। করা হয়নি অনেক কিছুই। কাছ থেকে শুনা হয়নি সমুদের গর্জন। দেখা হয়নি আকাশ ছুতে চাওয়া পাহাড়ের সারি। নেয়া হয়নি অরণ্যের বুনো গন্ধ। কি অর্থ এই বেচে থাকার।
তারপরও দেখা হয়েছে অনেক কিছুই। দেখা হয়েছে মাথার উপরে বিশাল আকাশ। কারণ আকাশ দেখতে কোথাও যেতে হযনা। ইচ্ছে হল উপরে তাকিয়ে দেখে নাও। পেজা তুলার মত মেঘ যখন ভেসে বেড়ায় প্রতিবারই মনে হয় আগেতো এটা দেখা হয়নি। দেখা হয়েছে ভোরের প্রথম আলো যখন কুয়াশার চাদর ভেদ করে পৃথিবীতে এসে পড়ে। যেন কোন নবজাতক মাতৃ গর্ভ থেকে পৃথিবীতে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।দেখা হয়েছে পৃথিবী যখন রাতের আধারে ঢেকে যেতে শুরু করে সেই সময়ে গোধূলীর আলো আধারের খেলা। নেযা হয়েছে বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভেসে আসা মাটির ঘ্রাণ।বৃষ্টির পর আকাশের গাযে ভেসে উঠা চোখ ধাধানো রংধনুর রং দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়েছে। কৃ্ষণচূড়া গাছে যখন প্রথম ফুল আসে মনে হয় যেন সমস্ত গাছটাতে আগুন ধরে গেছে।বর্ষায় ফোটা কদম ফুলের গাছ দেখে মনে হয় হায় বর্ষার পর গাছটির এই অপার্থিব সোন্দর্য কোথায় মিলিয়ে যাবে।
তারপরও অনেক সীমাবদ্ধতা, না পাবার যন্ত্রনার মাঝেও কেন বার বার মনে হয় হায় জীবন এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাচ্ছে কেন। এক জীবনের এই স্বল্প আয়ুর মাঝে এখনতো বাকী রয়ে গেছে অনেক কিছু করার অনেক কিছু দেখার।

Saturday, December 13, 2008

প্রার্থনা

ইনি দেশের একটি ইসলামিক দলের প্রধান। এই মাত্র ফজরের নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসে তসবি জপ করছেন। এরই ফাকে আজকের সারাদিনের প্ল্যান করে নিচ্ছেন। ইদের নামাজ শেষ করেই যেতে হবে ম্যাডামের সাথে দেখা করতে। বাসায ছেলেরা রয়েছে তারাই কোরবানীর ঝামেলা সামলাবে। ইদের কুশল বিনিময়ের ফাকেই আসন বন্টন নিয়ে ম্যাডামের সাথে আলোচনা শেষ করে ফেলতে হবে।
আচ্ছা তিনি যখন ম্যাডামের সাথে দেখা করতে যাবেন তখন কি উনার পা ছুযে সালাম করতে হবে। নাকি হাত দিয়ে সালাম দিলেই চলবে। কোনটা করলে ম্যাডাম বেশী খুশি হবেন। ইসলামে অবশ্য এ ভাবে পা ছুয়ে সালামের ব্যাপারে নিষেধ করা আছে। তবে কিছু পেতে হলে কিছুতো বিসর্জন দিতেই হবে। পরে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে।
কয়েকদিন ধরেই ছোট মেয়েটার শরীর ভাল যাচ্ছে না। ।। উনার স্ত্রী অবশ্য চাচ্ছিলেন নিজেই মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। তিনি পরিস্কার না করে দিযেছেন। মেয়ে লোকেরা থাকবে পদার্র ভিতরে। তারা বাইরে বের হবে কেন। তারা ঘরের কাজ করবে আর স্বামীর সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখবে। ইসলামেও এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাঞ্জা রয়েছে। একমাত্র স্বামীরই অধিকার রয়েছে নিজ স্ত্রীর চেহারা দেখার। স্বামীদের তার স্ত্রীকে ভোগ করার পূর্ন অধিকার রয়েছে। স্বামী অসন্তুষ্ট হলে সেই মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
বড় ছেলেকে বলেছিলেন ছোট মেয়েটির জন্যে ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টম্যান্ট নেবার জন্যে। গাধা এক পুরুষ ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টম্যান্ট নিয়ে বসে আছে। এদের দিযে কিছুই হবে না। মেয়েকে দেখাতে হলে দেখাবেন মহিলা ডাক্তার দিয়ে।
তারপর মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার নিকট সমগ্র মানবজাতিকে হেদাযেত করার অনুরোধ জানিয়ে উনার নামাজ শেষ করেন।

Thursday, December 11, 2008

কোরবানী বিনোদন

কোরবানী ঈদ আসন্ন। বর্তমানে আমাদের দেশে এক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগ অনুভুতি কতটুকু কাজ করে আমার জানা নাই। কারণ আমরা বাঙালীরা এরই মধ্যে একে চরম বিনোদনের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি। কমন কিছু ব্যাপার প্রতি বছরই ঘটে থাকে। রাস্তায় বের হরেই বিভিন্ন প্রশ্নে সম্মুখীন হতে হয়। যেমন-
১. ভাই আপনি ছাগল না গরু? অর্থ হচ্ছে-আপনি ছাগল না গরু কি কুরবানী দিচ্ছেন।২. দাম কত? ৩. গোস্ত কতটুকু হবে? ধর্মীয় ভাবে মাংস শব্দটি উচ্চারণ করা নাকি নিষেধ। সম্ভবত এটা আমাদের দেশের হুজুর নিজস্ব আবিস্কার । বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ তাদের বাংলা ডিকশনারীর পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশের আগে এই শব্দটি এডিট করে নেবেন প্লিজ।৪. তারপর মন্তব্য। আপনি কি জিতেছেন নাকি ঠকেছেন।
একেক জন ধারালো দা ছুরি নিয়ে রাস্তায় বের হবে। ভয় পাবার কিছু নেই গরু জবাই করার জন্যে এগুলি লাগবে।
পত্রিকায় গলায় মালা পরা গরুর ছবি দিয়ে হেডলাইন হবে আজ হাটের সবচেয়ে বড় গরুটি কিনে নিয়েছেন অমুক ব্যবসায়ী। সম্ভবত বর্তমানে দেশে আর এর চেয়ে জরুরী কোন নিউজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইনি এবার সংসদ প্রদপ্রার্থী হিসেবে সবার দোয়া চেয়েছেন্। যদিও এই ভদ্রলোকের নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ আছে উনার বছরে আয় মাত্র ২৫ হাজার টাকা। অতএব এই বড় গরু কেনার রহস্য আমরা আন নাই বা বললাম। পেছনে গলায় মালা পরা, হাতে গরুর রশি নিয়ে গরুর মালিকের ছবি। যদিও নিন্দুকেরা এটাকে আরেকটা গরুর ছবি বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করে থাকে।
মোবাইল কোম্পানিগুলি আমাদের সেবায় সবার আগে এগিয়ে আসবে। গরু-ছাগলের হাটের অবস্থান জানতে আপনি আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন...তারপর সেন্ড করুন....নাম্বারে। দাম জানতে হলে গরু বা ছাগল লিখে সেন্ড করুন....নাম্বারে। প্রথনে আপনি খুশি হতে পারেন এই ভেবে মোবাইল কোম্পানীগুলি সম্ভবত ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। কিন্তু না অচিরেই আপনার ভুল ভেঙে যাবে যেই মাত্র আপনি মেসেজ পাঠাতে শুরু করবেন। কারণ বিঞ্জাপনের নীচে মাইক্রোস্কোপিক ফন্টে লেখা ছিল কন্ডিশন এ্যাপ্লাই। যা আপনি তাড়াহুড়ায় খেয়াল করেননি বা দেখলেও এর রহস্য ভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।এরই মধ্যে আপনার মোবাইলের ব্যালেন্সের দফারফা।
তারপর রয়েছে বিনোদন ম্যাগাজিনগুলিতে রান্নার মজাদার সব রেসেপি।গরুর কোন অংশ না ফেলে পুরা গরুটাকে কিভাবে রান্না করা যায় তার ইউনিক সব আইডিয়া।
ফ্রিজের দোকানগুরিতে ভিড়ের কারণে ঢুকা যাবে না। একটা ডিপ ফ্রিজ কোম্পানীর বিঞ্জাপন ছিল এ রকম-একটি গরু ফ্রিজের ভিতরে বসে আছে। মানে হচ্ছে এই কোম্পানীর ফ্রিজে এত জায়গা যে পুরো একটি গরুকে এর ভিতরে ঢুকানো যাবে। বলা বাহুল্য ঐ ফ্রিজের বিক্রি এবার সবোর্চ্চ ছিল। কারণ বাঙালী হচ্ছে হুজুগে জাতি।
টিভিতে কোমল পানীর বিঞ্জাপনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। কারণ গরুতো শুধু খেলেই হবে না একে হজমও করতে হবে। এদের ভাষা হবে এরকম-গরু হাম্বা হাম্বা করে, ঈদের আনন্দ বাড়ে.....।
টিভি অনুষ্ঠানের নামে কিছু বস্তা পচা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। যাতে গরু ছাগল নিয়ে কিছু স্থুল রসিকতা করে দর্শক হাসানোর চেষ্টা করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলির যদি ৫০ ভাগও আপনার ক্ষেত্রে মিলে যায় তবে আমাদের এই পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমরা ধরে নেব।

Friday, December 5, 2008

প্রবাসের দিনরাত্রি

আজ সকাল থেকেই হাসানের মন খুব খারাপ। কাজে যেতে ইচ্ছে করছে না। কত কাল হয়ে গেছে দেশ ছেড়ে সে প্রবাসে পড়ে রয়েছে। এখন আর মাস বছর মনে থাকে না। পরিবারের লোকজনের চেহারাও এখন অনেকটা ঝাপসা হয়ে এসেছে।
কত দিন বাবা-মা, ভাই-বোনদের দেখে না। ছোট ভাই-বোনটা কত বড় হয়েছে। হাসানের কাছে তাদের বয়স বাড়েনি। সেই অনেক কাল আগে তাদের সেই ছোট্রটি দেখে এসেছে। এখনও তার চোখে তাদের সেই ছেলেবেলাটাই ভেসে উঠে।
দেশে এখন কোন কাল চলছে। শীতকাল নাকি বর্ষা কাল। এই মরুর দেশেও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানিতে দেশের বৃষ্টির মত মন আকুলি বিকুলি করে না।
শরীরটা কয়েক দিন ধরে ভাল যাচ্ছে না। থেকে থেকে জ্বর আসে। কিন্তু কাজে না গিয়ে কোন উপায় নেই। যে মালিকের কারখানায় সে কাজ করে সেই মালিক নিজের দামী হাত ঘড়িটা হারিয়ে ফেললে যেটুকু দুঃখ পাবে হাসান মারা গেলে সেটুকুও পাবে না। মালিকের কাছে তার পাসপোর্ট আটকানো রয়েছে। মালিক যতদিন না চাইবেন ততদিন হাসান দেশে ফিরে যেতে পারবে না। অনেক দিন দেশের সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ। মাস শেষে শুধু নাম মাত্র বেতন আর তিন বেলা খেতে দেয়া হয়। বাকী বেতন মালিক কেটে রেখে দেয় । মালিক যখন তাকে দেশে ফিরতে দেবে তখন তাকে তার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে। হাসান জানে বেশির ভাগ শ্রমিকের ক্ষেেত্রই মালিক তাদের কথা রক্ষা করে না। কিছু বলতে গেলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। অবৈধ বাঙালী শ্রমিকদের সাথে এই দেশের পুলিশ জন্তুর মত আচরণ করে।
মাঝে মাঝে রাতে হাসান চুপি চুপি কাঁদে। তার তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে-বাবা ও বাব আমাকে তুমি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আমি আর এখানে থাকব না। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ভাল চাকরির লোভে দেশে বাবার জমিজমা মার গহনা বিক্রি করে বিদেশে এসেছে। এখন ইচ্ছে করলেও খালি হাতে দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।মাঝে মাঝে হাসান দেশে ফোন করলে মা ফোন ধরে কাঁদেন আর বলেন ও বাব তুই ভাল আছিস। হাসান কোন উত্তর দিতে পারে না। শুধু তার বুকের ভেতর কান্না দলা পাকিয়ে উঠে।
অনেক দেশে পোষা প্রাণীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্যে অনেক মানবাধিকার সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মতো অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকদের জন্যে কেউ কি কখনও মাথা ঘামায়। তারাতো ঐ সব পোষা প্রাণীদের চেয়েও মানবেতর দিনযাপন করে থাকে। হাসান সময় মতই অফিসে এসে পৌছে। আজ মালিক অফিসে আসেননি। প্রবাসীদের নিয়ে এখানে কি একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। দেশ থেকে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে অনেক লোকজন এসেছে। পুরো অনুষ্ঠান যারা স্পন্সর করছেন, তার মধ্যে হাসানের মালিকও একজন। হাসানের মতো লোকদের ঐ সব অনুষ্ঠানে যাওয়ার সৌভাগ্য কখনই হবে না। সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রমের পর রাতে বাড়ী ফিরে টিভিতে হাসান অনুষ্ঠানের পুনঃপ্রচার দেখতে পায়। অনুষ্ঠানের সবাই খুব আনন্দ করছে। চারদিকে চোখ ধাঁধাঁনো লেজার শো। আনন্দ শুধুই আনন্দ। হাসানের চোখ এক সময় ঝাপসা হয়ে আসে। এখন আর সে টিভিতে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।
প্রতি বছর প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে এমনি আরও অনেক অনুষ্ঠান হবে কিন্তু তার মত লোকদের ভাগ্যের কখনও কোন পরিবর্তন হবে না। কারও কাছে এত সময় নেই যারা তাদের নিয়ে মাথা ঘামাবে। তাদের হয়ে সবার কাছে দুটি কথা বলবে। সবাই আছে অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। দর্শকদের যে কোন ভাবে একটি উপভোগ্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান তাদের উপহার দিতে হবে। দেশের সব টিভি চ্যানেল ব্যস্ত হয়ে পড়বে কার আগে কে ঐ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হবে-মরুর বুকে হয়ে গেল প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে আনন্দঘন এক জমকালো অনুষ্ঠান। প্রবাসীদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও বেশী বেশী হওয়া দরকার। কারণ এরাই হচ্ছেন আমাদের দেশের চালিকা শক্তি। এদের পাঠানো কষ্টের উপার্জনের টাকা দিয়েই দেশে চলছে।
(কিছুদিন পূর্বে কুয়েতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনের পরবর্তী ফলাফল আমরা জানি। কয়েকজন শ্রমিকের ভুল সিদ্ধান্তের দায় দায়িত্ব নিতে হয়েছে শত শত শ্রমিকদের। প্রবাসী শ্রমিকরা যখন দেশে ফেরত আসে তখন এয়ারপোর্টে তাদের নামার একটি ছবি ছাপা হয় প্রথম আলো প্রত্রিকায়। সেখানে শ্রমিকদের পায়ে কোন জুতা নেই। যাদের আছে তাদের দুই পায়ে দুই ধরনের জুতা। এই ছবির পর আর কিছু বলার অেপক্ষা রাখে না। এই একটি মাত্র ছবি প্রবাসে তাদের দীন হীন অবস্থা তুলে ধরেছে।
কুয়েত সরকার তাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে তখন সেখানকার বাংলাদেশী দুতাবাসের কাজ কি ছিল। তারা কেন তখন একটি কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। প্রবােস কখনও বাঙালীরা কোন সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশী দূতাবাসের খুব ভাল সহায়তা পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। যার জন্যে একই কাজের জন্যে একজন বাঙালীকে যে অর্থ দেয়া হয় সেই একই কাজের জন্যে একজন ইন্ডিয়ান কে তার তিন গুন অর্থ দেয়া হয়। তাহলে এত অর্থ অপচয় করে বিদেশে এই সব দূতাবাস রাখার দরকার কি। তাই এদের কাছ থেকে আমরা আজ আর কোন কিছু প্রত্যাশা করি না।
মিডিয়া প্রবাসে বেশ কিছু প্রশংসনীয় কাজ করছে। প্রবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিদেশে দেশের সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তারা যদি ঐ সব হতভাগ্য প্রবাসী বাঙালীদের কথা সমগ্র প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরতে পারে তবে তা অনেক বড় একটা কাজ হবে। মিডিয়ার শক্তি অনেক তবে সে যদি তার শক্তিকে শুধু মাত্র ব্যাবসায়িক কাজে না লাগিয়ে যথাযথ ভাবে তার শক্তিকে মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগায়।)

মুক্তি

আজ বাংলাদেশের জন্যে খুব কষ্টের একটি দিন। কারণ কোর্ট থেকে দুই দেশ রতেœর জামিন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। জনাব মতিউর রহমান নিজামী ও জনাব মুজাহিদ। জনাব মুজাহিদ অবশ্য আমাদের এর মধ্যেই অনেক চোর পুলিশ খেলা দেখিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেষ রক্ষা করতে পারেননি। জেলের ভিতর উনার পদধূলি দিয়ে জেলারের মুখ উজ্জল করেছে।
ইতিমধ্যে উনাদের অনুসারীরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন, এই দুই জন মহান নেতার মুক্তির দাবীতে। সহজ পন্থা হচ্ছে রাস্তা ঘেরাও করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া। এতে অনেক লোককে দুর্ভোগে পড়তে হতে পারে। কোন রুগীকে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। সময়মত চিকিৎসার অভাবে ঐ রুগীকে হয়ত রাস্তায়ই ইন্নালিল্লাহে পড়তে হতে পারে। বাচ্চারা সময মত স্কুলে পৌছতে পারবেনা। চাকুরিজীবিরা ঠিকমত অফিসে না পৌছার কারণে হয়ত তার চাকরিটাই হারাবে।
দেখুন দেখি অবস্থা, দেশ এত বড় একটি সংকটে আছে আর আমি কিনা সাধারণ লোকজনকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। কই মতিউর-মুজাহিদ আর কই আমার মত সলিমুল্লাহ। কই আগরতলা আর কই পাছারতলা (সেন্সর)।এদরেকে কেন আটকানো হয়েছে, এরা কি আসলেই নিদোর্ষ। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি।
মিয়া এ সবতো পত্রিকায় লেখাই আছে। আমাদের এত সময় আছে নাকি বসে বসে পত্রিকা পড়ার। আমাদের কত কাজ। আমাদের এত কিছু জানার দরকার নেই। আমরা এদের মুক্তি চাই। না হলে সামনে আরও কঠিন কর্মসূচী আসছে। তখন টের পাবে বাপ ধনেরা।
দু জনেই আল্লাওয়ালা মানুষ। এই দুজন মানুষ জেলে বসে বসে তসবি জপবেন আর আমরা বাইরে বসে বসে ইয়ে কামাব (সেন্সর) নাকি। ১৯৭১ এর মত সব কিছু জালিয়ে পুড়িয়ে ছার খার করে দেব না।
এক সময় দেশের বোকা জনগণ ঠিকই বুঝতে পারবে ১৯৭১ এ আমরা যা করেছি তা একদম সঠিক কাজ হয়েছে। না হলে এত দিনে দেশে ইসলাম বলে কিছু থাকতো না। পাকিস্তানী ভাইদের এই দেশ থেকে তাড়ানো মোটেই ঠিক হয়নি। নইলে এতদিনে সবার মুখে দাঁড়ি, মাথায় পাগড়ি থাকতো। লম্বা লম্বা জোব্বা লাগিয়ে লোকজনেরা পানের পিক ফেলতে ফেলতে রাস্তা দিয়ে হেটে যেত আর উপর থেকে হুররা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত। আহা তা কি সুন্দর একটি দৃশ্য হতো। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হল কই। কিছু গর্ধভ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে দিল সব মাটি করে। আমি জানতে চাই তোমরা বাংলাদেশ করে এতদিনে কি চ্যাটটা (সেন্সর) করেছ। পারলি কিছু করতে আমাদের। কোন চুদির ভাই (সেন্সর) এর বুকের পাটা এত বড় আমাদের গায়ে হাত দিতে সাহস করবে।আছে কোন মার পুত (সেন্সর) ?

আসন্ন নির্বাচন ও আমাদের ভাবনা

২০০৮ এর ডিসেম্বর মাস। যে কোন অবস্থায় নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচনের পর কি হবে?
আমরা এখনই তা বলে দিতে পারি। যেমন বাংলা ছবি দেখতে দেখতে আমরা এমনই অভিঙ্ হয়ে গেছি, ছবির একটু কাহিনী দেখলেই ছবির বাকী অংশটুকু বলে দিতে পারি। তেমনি আমাদের দেশের নেতা নেত্রীদের বর্তৃতার কিছু অংশ শুনলেই আমরা বাকী অংশটুকু বলে দিতে পারি। সেই ভাঙা রেকর্ড আর কতকাল ধরে বাজবে আমরা জানি না।
তাই ডিসেম্বরে কি হবে এখনই আগাম বলে দেয়া যায়। এক দল ক্ষমতায় যাবে। বাকী দলগুলি রাজপখ মিিসলে গরম করে ফেলবে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হযেছে। আমরা ফলাফল মানি না। এই সাজানো নির্বাচন আমরা প্রত্যাক্ষান করছি।
পত্রিকাওয়ালাদের পত্রিকার কাটতি অনেক বেড়ে যাবে। পত্রিকার কোনায় সম্পাদক মহাশয় ঘটা করে লিখবেন-আজ আমাদের পত্রিকা ছাপা হয়েছে মোট...কপি। আমরা আজ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছি। এর সমস্ত কৃতিত্ব আমাদের পাঠকের (পত্রিকাতো পাঠকদের জন্যেই ছাপানো হয়! নাকি এর আর অন্য কোন ব্যবহার আছে?) আমরা এখন দিন দিন নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দী হয়ে উঠছি হা হা হা। ভাবতে ভালোই লাগছে।
টিভি চ্যানেলগুলির ব্যসস্তা খুব বেড়ে যাবে। টিভি সাংবাদিকরা ছুটে যাবেন রাজপথে নিউজ কাভার করার জন্যে। একজন রিক্সাওয়ালার সামনে মাইক ধরে প্রশ্ন করবেন-আচ্ছা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মতামত কি? দেশ এখন কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বেচারা কিছু বুঝতে না পেরে ভয়ে ভয়ে পন্ডিতের মতো উত্তর দিবে- আসলে দেশ এখন খুব কঠিন অবস্তার মইধ্যে দিয়া যাইতাছে।
যেমন একটি উদাহরণ দেবেন?-সাংবাদিক মহাশয় পুনরায় জানতে চান।দেশ হইল গিয়া ধরেন আমার এই রিক্সাডার মতন। এর অনেকগুলি চাক্কা। কোন সময় এর সবগুলি চাক্কা বনবন কইরা ঘুরে, আবার কোন সময় থাইমমা থাহে। এই যেমন অকখন।
প্রিয় দর্শক-আমরা এতক্ষণ দেশ নিয়ে জনাব... এর কথা শুনলাম এর থেকেই নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন বর্তমানে দেশ নিয়ে সাধারন লোকজন কি ভাবছেন।
কিছু টিভি চ্যানের লাইভ টেলিকাস্ট এর নামে রাত্র ১২ টা সময় টিভি পর্দার সামনে একজন বুদ্ধিজীবি কে বসিয়ে দেবেন।

তিনি ঘুম ঘুম চোখে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উনার মূল্যবান বক্তব্য বয়ান করবেন। বেচারার জন্যে আমার বড় মায়া হয়। উনি ঘুমাবেন কখন।
দুই তিন দিন ধরে এরকম চলবে। কয়েক দিন বাদে লোকজনের একঘেয়েমি এসে যাবে। এক সিনেমা আর কত দেখতে ভাল লাগে। তারপর সব আবার আগের মত।
তাই এবার আমরা আশা করছি একটা নতুন কিছু হবে। কারণ আমরা অভাগা বাঙালী। আমাদের জীবনে বিনোদনের পরিমাণ খুব কম।
তাই একটা নতুন কিছু করো, একটা নতুন কিছু করোআর যদি কিছু না পারো, তো গাড়ী ঘোড়া ভাঙোনয়তো লোকজনকে ধরে মারোতবুও একটা নতুন কিছু করো।

টেরোরিজম

মুম্বাইয়ের একটি পাচতারা হোটেলে টেরোরিস্টরা অবস্থান নিয়েছে। ভেতরের লোকজনদের জিম্মি করা হয়েছে। অতিথীরা সবাই সমাজের হোমরা চোমরা লোকজন। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশী ট্যুরিস্টও রয়েছে। সাধারণ কোন লোকে এ ধরনের হোটেলে ঢুকার কল্পনাও করতে পারবেনা। টেরোরিস্টদের এ হোটেলটা বেছে নেবার এটাও একটা কারণ।
এদের সব বিদ্বেষ সমাজের উপরতলার পয়সাওয়ালা লোকদের প্রতি। মাঝে মধ্যে অবশ্য অপারেশন চালাতে গিয়ে নিরীহ লোকজনও মারা পড়ে। এটা তেমন কিছু নয়। বড় কিছু পেতে হলে ছোট খাট কিছু আত্নত্যাগ সবাইকেই করতে হয়।
সবাই খুব টেনশনে রয়েছে। সরকার কি এদের অন্যায্য দাবী মেনে নেবে। এদের গ্রুপ লিডার বলেছে সরকার তাদের দাবী মেনে না নিলে কাউকেই বাইরে যেতে দেয়া হবে না। এক সময় এরা কেউই আর জীবিত থাকবে না।
সবাই মনে মনে প্রার্থনা করছে সরকার এদের দাবী মেনে নিক। যদিও এদের দাবী কি তারা কেউই তা জানেন না। অন্য সময় হলে এরা সবাই প্রতিবাদের ঝড় উঠাত। দরকার হলে প্রাণ দিয়ে দেব কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না।
কিন্ত এই জীবন মৃত্যুর মাঝখানে সেই সব চিন্তা ভাবনা কেমন হাস্যকর মনে হচ্ছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রতিদিনের সংবাদপত্র পড়ে দেশ আর সমাজ নিয়ে মন্তব্য করা কত সহজ। অথচ প্রকৃতিপক্ষে বাস্তবতা কত কঠিন জিনিস।

প্রত্যেকেই চাচ্ছে এরা গুলি করা শুরু করলে তার সিরিয়াল য়েন সবার শেষে আসে। এতে কিছু বেশী সময় ধরে বেচে থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। অন্য সময় হলে এ ধরনের চিন্তাভাবনা কত স্বার্থপরের মত শুনাত। কিন্তু এখন তা কত স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।
আচ্ছা এরা কোন ধর্মের। ভারত সরকার দাবী করছে এরা পাকিস্তানী। তাহলে এই টেরোরিস্টরা মুসলিম টেরোরিস্ট। কিন্তু টেরোরিজমের তো কোন ধর্ম নেই। তাহলে মুসলিম টেরোরিস্ট-হিন্দু টেরোরিস্ট বলে কোন কিছু নেই। টেরোরিস্টদের একটাই পরিচয়। তারা টেরোরিস্ট। এদের কোন জাতি নেই, কোন ধর্ম নেই। এদের কোন দেশ নেই। সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে এদের ধর্ম। তাই টেরোরিস্টরা কি পাকিস্তানের না ভারতের তাতে কি আসে যায়।
এদের অস্ত্র থেকে যে বুলেট বের হবে সেই বুরেটের গায়ে কোন কিছু লেখা থাকবে না। এক নিমিষে তা কোন মায়ের বুক খালি করে দেবে। এখন এই মুহুর্তে হোটেলে আটকা পড়া লোকজন আর এই সন্ত্রাসীরা, এদের হাতের অস্ত্রই বাস্তব। আর সব কিছু অবাস্তব। জাতি, ধর্ম, দেশ, সমাজ, রাজনীতি অবেগ, মূল্যবোধ সবকিছু।


দায়বদ্ধতা

ঢাকা শহরের মেয়র দুপুরে অফিসে বসে লাঞ্চ করছেন। টেবিলে মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে শুরু করে বিদেশী জুস কোন কিছু বাদ নেই। তারপরও মেয়র সাহেব একটু টেনশন নিয়ে খাচ্ছেন। কারণ চারদিকে যে রকম ভেজাল চলছে ভয় পাওয়ারইতো কথা। এই যে মিনারেল ওয়াটার তিনি খাচ্ছেন এর ভিতরে কি আসলেই মিনারেল ওয়াটার আছে নাকি ট্যাপের পানি বোতলে ভরে কোম্পানী বাজারজাত করছে। কোম্পানীগুলি আজকাল এমন হারামী হয়ে উঠেছে বলার মতো না। লাভের জন্যে এরা পারে না এমন কিছু নেই। আর এই যে বিদেশী জুস এটা কতটুকু নিরাপদ। বিদেশী কোম্পানীগুলিতো আরও এক কাঠি বাড়া। এরা যতসব বাতিল মেযাদ উত্তীন্ন জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেবে আমাদের দেশে। আর আমরা কোন কিছু না দেখেই তা দেদারসে খাচ্ছি। বিদেশী লেবেল দেখলে আমাদের মাথা ঠিক থাকে না।বাইরে কিসের হইচই হচ্ছে। মেয়র সাহেব ভ্রূ কুচকে পি.এ কে তলব করেন। -স্যার বাইরে কিছু লোক এসে জড় হয়েছে।-কি চায় তারা?-আপনার সাথে দেখা করতে চায়।-কারা এরা?-এরা সুইপার। এরা মূলত সুইপার এর কাজ করে। গতকাল যে সুইপার কলোনীতে আগুন লেগে ছিল এরা সেখানকার বাসিন্দা।মেয়র সাহেবের খাবার রুচি নষ্ট হয়ে গেল। কোথায় দুপুর বেলা একটু খেয়ে বিশ্রাম করবেন তানা কোথা থেকে কোন উটকো ঝামেলা এসে হাজির। -আগুন লাগলেতো ফায়ার ব্রিগেডের কাছে যাবে আমার কাছে কি?-না, স্যার আগুনে এদর সমস্ত কিছু পুড়ে গেছে। ঘরে পড়ার জন্যে কাপড়, খাবার জন্যে ভাত কিছুই নেই। এলাকার মেয়র হিসেবে আপনার সহযোগিতা চাচ্ছে তারা।-ঠিক আছে এদের বলে দাও- আমরা একটি তদন্ত টিম গঠন করে এদের এলাকায় পাঠাব। তদন্ত টিম, তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে আগুন কেন লাগল, কিভাবে লাগল। জান-মালের কি রকম ক্ষয় ক্ষতি হল। তারপর আমরা সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করব। তারপর সরকার ফাইনাল রিপোর্ট দিলে আমরা পরবর্তীতে তাদের পূর্নবাসনের জন্যে করণীয় ঠিক করব।পি.এ ছেলেটা কম বয়সী। সে সরকারী অফিসের মার প্যাচের সাথে তেমন অভ্যস্ত নয়। তার মাথায় ঢুকছে না এভাবে তদন্ত কমিটি নিয়ে কাজ শুরু করা হলে কয়েক মাস লেগে যাবে সিদ্ধান্ত নিতে। আর তদন্ত কমিটি তদন্ত করে কি বের করবে আগুনে পুড়ে যে ছাই তৈরী হয়েছে তা দিয়ে কতগুলি বাসন মাজা যাবে। যারা মারা গেছে তারা কি সত্যিই আগুনে পুড়ে মরেছে, নাকি হার্ট এট্যাক করেছে।-কি হল ছাগলের মতো দাড়িয়ে আছ কেন?-না স্যার, আমি ভাবছিলাম এভাবে তো অনেক সময় লেগে যাবে। ততদিন তারা কি খেয়ে বেচে থাকবে।-দেশের ১৫ কোটি লোকের খাবারের ব্যবস্থা করাতো আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এদের দুখে দুখি। কিন্ত সামনে নির্বাচন। মেয়র হিসেবে আমার কত কাজ। এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মত আমার মাথা কোথায়-সরি আমার সময় কোথায়। যাও এদের দু একটা আশার কথা শুনিয়ে আপাতত বিদেয় করে দাও।মেয়র সাহেবের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। থেকে থেকে টক ঢেকুর উঠছে। খাবারটা সম্ভবত ঠিক মতো হজম হয়নি। মেয়র সাহেব জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। বাইরে কয়েকশ লোক জড়ো হয়েছে। বেশীর ভাগের পরনে শতছিন্ন কাপড়। তা লজ্জা ঢাকার বদলে তাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। বিশেষত্বহীন ভাঙ্গাচোরা চেহারা। নোংরা চুল দাড়ি জট পাকিয়ে রয়েছে। দুই চোখে কোন জীবিত মানুষের অনুভুতি নেই। যেন কোন মরা মানুষের চোখ। তাহলে এরাই সুইপার। এদের কাজ সমাজের আবর্জনা পরিস্কার করা।এক সময় লোকগুলি ধীরে ধীরে চলে যায়। কিন্তু চারপাশটা এরা কেমন নোংরা করে দিয়ে গেছে।মেয়র সাহেবের হুংকারে পি.এ ছুটে আসে। কি হয়েছে স্যার?-বাইরে এত নোংরা কেন। পরিস্কার করার ব্যবস্থা কর।পি.এ ভয়ে ভয়ে বলে স্যার বাইরে সব ঠিক আছে, কোন আবর্জনা নেই।-আবার মুখে মুখে তর্ক। আমি কি ভুল দেখছি নাকি। কি আশ্চর্য উনার এসি রুমটা কিভাবে যেন আবর্জনা দিয়ে ভরে যাচ্ছে। আবর্জনার র্দূগন্ধে তিনি ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছেন না।পি.এ বুঝতে পারছে না তার স্যার রুমে পাগলের মতো এয়ার ফ্রেশনার ছড়াচ্ছেন কেন।

চায়ের কাপে রাজনীতি

রহিম আলীর বয়স প্রায় ৬০ ছুই ছুই। পরিবারে ৪ সদস্য। সারাদিন রিকসা টানেন। সেই টাকায় কোন রকমে না খেয়ে দিন কাটে। এখন বয়স হয়ে গেছে। দূর্বল শরীরে রিকসা টানতে পারেন না। তারপরও কিছু করার নেই। না হলে না খেয়ে থাকতে হবে। ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে।এখন আর উনাকে তাদের প্রয়োজন নেই। উনার বরং তাদেরকে প্রয়োজন। কিন্তু একজন রিকসাওয়ালা বাবার সন্তান হওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই গর্বের কিছু নেই। তারাও তাই কাউকে উনার পরিচয় দিতে আগ্রহী নয়। উনার সাথে তারা থাকেও না।
বুড়ো রিকসাওয়ালার রিকসায় কেউ সাধারণত চড়তে আগ্রহী নয়। কারণ ব্যাটা বড় ধীরে টানে। কিন্তু তিনি কি আর করবেন। এই শরীরে যথাসম্ভব জোরে চালানোর চেষ্টা করে যান।
সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে তিনি বসেছেন এক চা দোকানে। দোকানের মালিক দোকানে টিভি লাগিয়েছে। এত করে কাস্টোমার ধরা যায়। কাস্টোমাররা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে টিভি দেখে। ব্যবসার ভাল পদ্ধতি। চা স্টলে তুমুল বির্তক হচ্ছে। লোকজনের চোখে মুখে উল্লাস খেলা করে। টিভিতে এই মাত্র অসম্ভব এক সার্কাস (থুক্কু অনুষ্টান) দেখিয়েছে। যেখানে দুই নেত্রী এক সাথে বসেছেন। আল্লার কি কুদরত তারা আবার নিজেদের মধ্যে কথাও বলেছেন। ইয়া মাবুদ রক্ষা কর- তারা পরস্পর কুশল বিনিময়ও করেছেন।
এবার হবে দেশের একটা বড় কিছু হবে। হতেই হবে। চারদিকে সুখ শান্তির বন্যা বয়ে যাবে। দেশের লোকজন তিন বেলা পদ্মার ইলিশ দিয়ে পেট ঢিম করে ভাত খাবে। কেউ আর দরিদ্র থাকবে না। মারহাবা-মারহাবা চারদিক থেকে লোকজনের কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে।
রহিম আলী অস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে আসেন। চা খাওয়ার মতো টাকা উনার কাছে নেই। চারদিকের আনন্দ উল্লাস রহিম আলীকে স্পর্শ করে না। মাছ-ভাত তিনি কখন খেতে পাবেন উনার জানা নেই। কিন্তু আজ রাতে উনার পরিবার নিয়ে তিনি কি খাবেন উনার জানা নেই। সারা দিন আজ কোন রোজগার পাতি নেই। পকেটে নেই একটি টাকাও।
সামনে এগিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর এক ক্ষুধার্ত রাত। উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। পেটে অসম্ভব ক্ষুধা আর মাথায় এক রাশ চিন্তা নিয়ে রাজপথ ধরে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন ক্লান্ত দেহ আর ক্লান্ত পা নিয়ে।

ক্ষমার উপর কিছু নাই

অপারেশন থিয়েটার থেকে ক্লান্ত চেহারা নিয়ে ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন। বাইরে রোগীর আত্নীয়রা দুরু দুরু বুকে বিরস মুখে অপেক্ষা করছেন। সবাই ভয়ে ভয়ে ডাক্তারের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন্, কিন্তু কেউই কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। আচমকা ডাক্তার চেচিয়ে উঠেন-আপারেশন সাকসেসফুল। সবাই হাপ ছেড়ে বাচেন। সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে।
ডাক্তার সুযোগ পেয়ে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেন- এটা খুব জটিল একটি অপারেশন ছিল। রোগীর ডান কিডনিতে টিউমার ছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ পর্য়ন্ত ডান কিডনি কেটে বাদ দিতে হয়েছে। সমস্যা নেই। বাম কিডনি যেটা ভাল রয়েছে সেটা দিয়ে রোগী কাজ চালাতে পারবে।
রোগীর আত্নীয়দের মধ্য থেকে একজন হতভম্ব চেহারা নিয়ে হা করে ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন-কিন্তু ডাক্তার সাহেব, রোগীর তো টিউমার হয়েছিল বাম কিডনিতে তাহলে আপনারা ডান কিডনি বাদ দিলেন কেন।
তাই নাকি এবার ডাক্তার হতভম্ব। কিন্তু আমার সহকারীতো বলল ডান কিডনিতে সমস্যা। মনে হয় তাড়াতাড়িতে বেচারা ভুল করে ফেলেছে। সরি তার হয়ে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। কোন চিন্তা করবেন না। আমরা আবার অপারেশন করে রোগীর টিউমার অক্রান্ত বাম কিডনিটা বাদ দিয়ে দেব। এর জন্যে আপনাদের কোন ফি দিতে হবে ন্। আমার ফ্রি করে দেব।
রোগীর আত্নীয়দের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠে।
পূর্বের আত্নীয়টি পুনরায় বলে উঠে-কিন্তু ডাক্তার সাহেব, ডান কিডনিতো আপনারা আগেই বাদ দিয়েছেন। এবার বাম কিডনিও বাদ দিতে যাচ্ছেন। দুই কিডনি ছাড়া রোগী বাচবেতো। ভয়ের কিছু নেই তো।
ডাক্তার কোন উত্তর দেন না। কটমট করে বক্তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যেন এরকম আহাম্মকের মত প্রশ্ন কখনও শুনেননি।

(ভারতীয় বি.এস.এফ এর এক সদস্য বাংলাদেশের সীমানায় এক গ্রামে ঢুকে তিন জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে মেরে ফেলল।এর মধ্যে এক মা ও তার এক বছরের বাচ্চা ছিল। এধরনের কান্ড তারা সুযোগ পেলেই করে থাকে। অবশেষে দুই দেশের প্রধানদের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। সে দেশের প্রধান ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। আমরা অভিযুক্ত বি.এস.এফ এর বিরুদ্ধে (যে মাতাল অবস্থায় এই কান্ড করেছে) যথাযথ ব্যবস্থা নেব। । তবে তিনি আরও কিছু কথা বলতে পারতেন। যেমন ভাইসব আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেন। বেচারা একটা ভুল করে ফেলেছে। ভুলতো মানুষই করে। আর কবিতো বলেছেনই পাপকে ঘৃনা কর পাপীকে নয়। আপনারা সুযোগ দিলে সে পুনরায় ভাল হয়ে যাবে।
খুব আনন্দের কথা আমাদের গম্ভীর মুখে পুনরায় হাসি ফুটে উঠল। আমরা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে শুরু করলাম। কিন্তু আমরা ভুলে গেলাম যে পরিবারের তিন জন সদস্য মারা গেছে সেই অসহায় পরিবারের কথা। সীমান্তবতী গ্রামের হাজার হাজার মানুষের কথা যারা নিরাপত্তার অভাবে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কার এত বড় সাহস-অপারেশন থিয়েটারের বাইরে রোগীর অপারেশন নিয়ে ডাক্তার কে প্রশ্ন করব। দি ডাক্তার ইজ অলওয়েজ রাইট।)